Suzuki Gixxer বাইক নিয়ে অর্ধ লক্ষ কিলোমিটার + রাইড - আরিফ
This page was last updated on 30-Jul-2024 02:28pm , By Shuvo Bangla
আমি আরিফ। আমি একটি Suzuki Gixxer বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে আমার রাইডিং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।
আমার বাসা নরসিংদী জেলা, রায়পুরা থানা, ভিটি মরজাল। আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল ২০১৩ সালে Hero Splendor Plus+ 100cc । এর পরে ২০১৬ সালে ক্রয় করি Bajaj Pulsar 150cc ।
বর্তমানে আমি Suzuki Gixxer 155 বাইকটি ব্যবহার করছি। আজ আমার এই বাইকটির ব্যপারে আপনাদের সাথে বিশেষ কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
বাইক চালানো শিখেছি আমার বন্ধু জাকিরের হাত ধরে। তখন Dayang 80cc বাইক দিয়ে জাকির এর হাত ধরে আমি বাইক চালানো শিখি। ভালোভাবে বাইক চালানো শিখতে সময় লাগে ১৫ দিনের মত। কিছু দিন পরে হঠাৎ করে আমার বাবা Hero Honda 100cc মোটরবাইক ক্রয় করে। আর তখন আমার বাবা বাইক চালানো শিখে নাই। তখন আমার খুব আনন্দ লাগে। একটানা তিন বছর বাইক চালিয়ে পরে উক্ত বাইকটি বিক্রি করে দেই । তাঁর এক সপ্তাহের মধ্যে পুরাতন একটি Bajaj Pulsar 150cc বাইক রেজিস্টশন সহ দুই লক্ষ তের হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম।
সুজুকি জিক্সার বাইকটি ক্রয় করি নরসিংদী, আমার বড় ভাইয়ের Suzuki Showroom থেকে । বাইকটি ক্রয় করি ২,৪২,০০০ টাকায় রেজিস্ট্রেশন সহ M H মোটর্স সুজুকির অফিসিয়াল শোরুম থেকে। তখন ৬০০০ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছিল আমাকে। Suzuki Bike এর শোরুম মালিক সিজার ভাই সে একজন ভালো মনের মানুষ।
আমি যখন ফোন দিলাম বাইক নেওয়ার জন্য। বললাম আমার জন্য বাইক নিবো। তখন বললেন চলে আসো। আমি বললাম ভাই দুই দিন পরে আসবো। তখন বললেন কেন দুদিন পরে আসবা? আমি বললাম কিছু টাকার কমতি আছে। তিনি আমাকে বললেন কোন সমস্যা নাই,পরে দিলে হবে। তখন আমি চলে গেলাম তাঁর শোরুমে, তখন খুব আনন্দ পাই নতুন গাড়ি কিনব। দ্রুত চলে গেলাম তাঁর শোরুম নরসিংদীতে।
বাইকটি ভালোলাগার প্রথম কারন জাপানি প্রযুক্তি। বাইকটি বেশী দিন হয়নি বাজারে আসছে তখন। বিষয়টি খুব ভালো লাগে আমার। আমি একটা ব্যবসা করি। সবদিক বিবেচনা করে আমার বন্ধু নজরুল ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর, বললো বাইকটি খুব ভালো হবে মনে হয়। এই চিন্তা করে দুজন সুজুকি শোরুমে চলে গেলাম।
বাইক দিয়ে দেশের সকল সৌন্দর্য্য খুব কাছাকাছি থেকে উপভোগ করা যায়। এবং যেখানে সেখানে যাতায়াত করা যায়। তাই বাইক রাইডিং আমি অনেক ভালবাসি। বাইকটির কালার, লুক, ডিজাইন, এবং পার্ফমেন্স দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যায়।
বাইকটি আমি যেদিন কিনতে গিয়েছিলাম সেদিন কি যে আনন্দ লাগছিল আমার। তা আমি কাউকে বলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। আসলে সত্যি বলতে ছোট বেলা থেকেই বাইকের প্রতি অগাধ ভালো লাগা কাজ করত। তাই মূলত বাইক চালাই। আর আমি যে ব্যবসা করি তা বাইক ছাড়া সম্ভব না ।
আমার কাছে মনে মনে হয়, এই সেগমেন্টের সেরা একটি বাইক চালাচ্ছি। ২৫০০ কিলোমিটার এর আগে মাইলেজ পেতাম ৩৮ থেকে ৪০ কিলোমিটারের মত প্রতি লিটারে। ২৫০০ কিলোমিটার অতিক্রম করার পর, প্রতি লিটারে ৪৩ থেকে ৪৫ মাইলেজ পাচ্ছি।
প্রথমে ইঞ্জিন অয়েল টি ব্যবহার করি গ্রেড 20w40 শোরুম থেকেই পরিবর্তন করি। এরপর Shell 20w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েলটি বাহিরের দোকান থেকে কিনে ব্যবহার করতাম। তার পর অন্য ব্রান্ড এর ইঞ্জিন অয়েল কিছু দিন ব্যবহার করেছি। এর পর Total 20w50 গ্রেড ব্যবহার করেছি।
আমার বাইকে ইঞ্জিন অয়েল ৯০০ মিলি গ্রাম দিয়ে থাকি। দাম ৩২০ টাকা। দীর্ঘ সময় ব্যবহার করে থাকি। তার পর থেকে মনে হচ্ছে বাইকের সাউন্ড অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। তার পর তাকে বাদ দিয়ে, এখন আমি Shell advance 20W40 ব্যবহার করতেছি। দাম ৪৫০ টাকা । তবে বাইকের সাউন্ড এখন আগের থেকে পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হয়।
চেইন স্পোকেট ২ বার পরিবর্তন করি। সামনের চাকার হাইড্রোলিক ব্রেক সু সেট পরিবর্তন করি তিনবার। সামনের সাসপেনশন এর অয়েল সিল পরিবর্তন করি দুইবার। বল রেসার পরিবর্তন করি দুইবার। পেছনের চাকার ড্রাম রাবার পরিবর্তন করি তিনবার। এয়ার ফিল্টার আটবার পরিবর্তন করি।
স্টক টায়ার পরিবর্তন করি একবার। আর মবিল ফিল্টার প্রতি পাঁচ হাজার কিলোমিটার পরপর পরিবর্তন করি। মিটার ক্যাবল , সামনের চেন পোকেট ,মাইল মিটার, কার্বোটার , একটি প্লাগ , সামনে হাইড্রলিক ব্রেক সুইচ এগুলো পরিবর্তন করেছি ।
বাইকটিতে ইয়ামাহা ফেজার ভার্সন ১ এর উইনশিল্ড ইন্সটল করি। পেছনের চাকার মাডগার্ড ইন্সটল করি। এলইডি হেড লাইট এবং এল ই ডি ফগ লাইট চার সেট প্যাসিফিক 7S ইন্সটল করি।
বাইকটি আমি ১২৯পর্যন্ত গতি তুলতে পেরেছি। টপ স্পিডে ব্রেকিং, ব্যালেন্সিং খুব ভালো ছিল ।
Suzuki Gixxer বাইকটির কিছু খারাপ দিকের কথা বলি -
- সাসপেনশন খুবই হার্ড।
- পিলিয়ন সিট খুবই সক্ত।
- হেড লাইটের আলো খুবই কম।
- ব্রেকিং আরো ভালো দরকার ছিল।
- বডি কিট কিছু দূর্বল মনে হয়।
Suzuki Gixxer বাইকটির কিছু ভালো দিকের কথা বলি -
- লুক অসাধারণ।
- বডি কালার, ডিজাইন অনেক ভালো।
- প্রচন্ড রেডি পিকাপ আছে।
- কন্ট্রোলিং অনেক অনেক ভালো।
- মাইলেজে আমি সন্তুষ্ট।
বাইকটি দিয়ে সিলেট মাজার জিয়ারত করি , বিছানা কান্দি , সাদা পাথর , শ্রীমঙ্গল , সুনামগঞ্জ তাহিরপুর , জাফলং , নিলার্দী লেক, কক্সবাজার, ইনানী , রাজশাহী রাজবাড়ি , কুষ্টিয়া, লালনশাহ সেতু, হাড্ডিঞ্জ ব্রিজ, মিঠামইন, অস্টগ্রাম, ইটনা, নিকলী, টাঙ্গাইল ২০১ গম্বুজ মসজিদ, সিন্দুকছড়ি , সাজেক সহ আরো অনেক নাম না জানা জায়গা ভ্রমণ করি । এর মধ্যে আমার বড় ট্যুর হলো পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া জিরো পয়েন্ট ।
বাইকটির বিশেষ আকর্ষণ হলো আমি ৫৭,০০০ অতিক্রম করার পরে স্টক টায়ার পরিবর্তন করিনি, কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হল কোনদিন পাংচার হয় নাই। আরও একটি ব্যপার হলো এই ৬০,০০০ হাজার কিলোমিটার রাইডের মধ্যে মাত্র একবার ফুল সার্ভিস করি। তাও আবার আমার এলাকার দক্ষ একজন হোন্ডা মেকানিক মোঃ আল আমিন এর কাছ থেকে।
তার একটি ভালো দিক হলো সে বাইকের ওয়ারিং খুব ভালো পারে। ঠিকানা বারৈচা বাজার,বেলাবো, নরসিংদী। ঢাকা সিলেট হাইওয়ে রোড, পেট্রোল পাম্প এর বিপরীত পাশে।
বাইকটির ব্যপারে আমার অলমোস্ট কোন অভিযোগ নেই। বাইকটির পারফরম্যান্সে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই ছিল Suzuki Gixxer 155 সিসি বাইকের ০৪ বছর ১০ মাস ০৮ দিনে ৬০,০০০ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা যা আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ আরিফ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।