Royal Enfield – ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের জানা অজানা
This page was last updated on 14-Jul-2024 10:16am , By Badhan Roy
Made like a gun – স্লোগানের সাথে যার পথচলা, সেই Royal Enfield ব্র্যান্ড টি শুধুমাত্র বাইকার নয়, এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন যিনি বলিউড কিংবা হলিউডের সিনেমায় ক্লাসিক ডিজাইনের বাইকগুলো দেখেননি অথবা এর সাথে পরিচিত নন । বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন এই মটরসাইকেল ব্র্যান্ডের যেমন রয়েছে শত বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস, একই সাথে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডটি সমাদৃত তাদের ঐতিহ্যবাহী ক্লাসিক লুক, অফরোডিং এবং বিল্ড কোয়ালিটির জন্য।
ইতিহাসের পাতায় Royal Enfield এর নাম বহুবার ঠাই পেয়েছে বিশ্বযুদ্ধ এবং বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনে আস্থার প্রতিক হিসেবে। অনেকের কাছেই আন্তর্জাতিক সুপারস্টারদের Royal Enfield বাইকের সাথে তোলা ছবি পোস্টার বা ওয়ালপেপার হিসেবে শোভা পায় দীর্ঘদিন ধরে। এতদিন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সিসি লিমিট থাকায় আফসোস করতেন বিশ্বব্যাপী আইকনিক Royal Enfield মোটরসাইকেল গুলো বাংলাদেশের রাস্তায় না দেখা যাওয়ার কারনে।
তবে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইফাদ মটরস এর হাত ধরে শীঘ্রই বাংলাদেশে লঞ্চ হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন এই মটরসাইকেল ব্র্যান্ডের সেরা কিছু মডেল। এই লেখায় আমরা Royal Enfield এর অজানা ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্র্যাক্টিকালিটি এবং বাংলাদেশে আসতে চলেছে এমন কিছু মডেলের অনেক তথ্য নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব।
Royal Enfield – ইতিহাস
রয়্যাল ইনফিল্ড কে অনেকে ভারতীয় ব্র্যান্ড মনে করলেও এর শুরু টা হয়েছিল রেডডিচ, ওরচেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ডে। শুরুতে The Enfield Cycle Company বাইসাইকেল নির্মাণ করতো। ১৮৯৬ সালে Royal Small arms factory কোম্পানিটিকে কিনে নেয় এবং তখন থেকেই Royal Enfield নামে মোটর সাইকেল তৈরিতে তারা মনোনিবেশ করে, কারন ১৮ শতকের শেষের দিকে মোটর সাইকেলের প্রতি ইংরেজগণ আগ্রহী হওয়া শুরু করেন। এরই ফলে ১৯০১ সালে বব ওয়াকার স্মিথ ও জুলেস গোটিয়েট এর হাত ধরে তাদের প্রথম বাইকটি নিয়ে আসে যেটি ছিল ২৩৯ সিসির টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট এবং মডেলটির নাম Royal Enfield Bullet.
হ্যাঁ, এটাই সেই আইকনিক বুলেট মডেল যা ইতিহাসের দীর্ঘস্থায়ী মোটরসাইকেল মডেল হিসেবে স্বীকৃত এবং ক্রমাগত আপগ্রেডের সাথে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে বাজারজাত হয়ে আসছে। এরপর থেকে Royal Enfield কে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। সময়ের সাথে প্রয়োজনীয়তা বুঝে বাইক নির্মাণ ও সরবরাহের কারনে বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে তারা বেশ সফল।
বিশ্বযুদ্ধ ও সামরিক বাহিনীর আস্থায় Royal Enfield
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর জন্য মোটরসাইকেলের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এর লক্ষ্যে Royal Enfield বেশ বড় আকারের মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭৭০ সিসির ভি-টুইন মোটরসাইকেল। তারা যুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাজ্যসহ বেলজিয়াম, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সরাসরি মোটরসাইকেল সরবরাহ করে। শক্তিশালী বিল্ড কোয়ালিটি এবং সবধরণের রাস্তায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সুবিধার কারণে সেনাবাহিনীর কাছে খুব জনপ্রিয় ছিল Royal Enfield।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার রয়েল এনফিল্ডের সঙ্গে চুক্তি করে মিলিটারি গ্রেড মোটরসাইকেল উৎপাদনের জন্য। এ সময় তারা ২৫০ সিসি, ৩৫০ সিসি এবং ৫৭০ সিসি ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল তৈরি করে। বিশেষভাবে নির্মিত Royal Enfield WRE মডেল টি ডিজাইন করা হয়েছিল প্লেন থেকে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে নিচে ফেলার জন্য। যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের বোমারু বিমানের আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওয়েস্টউডে একটি ভূগর্ভস্থ কারখানা নির্মাণ করা হয়েছিল।
বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৫৫ সালে Royal Enfield মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চেন্নাইতে একটি সংযোজন কারখানা করে। প্রথম দিকে শুধু মোটরবাইক অ্যাসেম্বলিং করা হতো। তৎকালীন ভারত সরকার যেটি সীমান্তে টহল দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর উপযোগী একটি প্যাট্রোলিং বাইক চাচ্ছিলেন যার জন্য রয়েল এনফিল্ডের বাইক গুলো ছিল একেবারে সঠিক পছন্দ। ভারতীয় সেনাবাহিনী ৮০০ ইউনিটের মত Royal Enfield বাইকের অর্ডার দেয়। ১৯৬২ সালের পর থেকে ভারতেই পূর্ণ উৎপাদন শুরু হয় Royal Enfield এর এবং যে ধারাবাহিকতা চলমান। বর্তমানে সারা বিশ্বে ৫০টির বেশি দেশে বাইক বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ঐতিহ্য ও ভাবগাম্ভীর্য্যের অপর নাম – Royal Enfield
৭০ এর দশক থেকেই Royal Enfield ব্র্যান্ড টি এত জনপ্রিয় হতে থাকে যে তৎকালীন অন্যান্য জাপানিজ ও ভারতীয় ব্র্যান্ডের থেকে সহজেই এটি মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কথিত আছে, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পর্যন্ত ভারতে যে ব্যাক্তির একটি ক্লাসিক অথবা বুলেট মডেল এর বাইক আছে সেই ব্যাক্তি ও তার পরিবার সামাজিক ভাবে আলাদা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানের অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তখনকার সময়ে যৌতুক হিসেবে অবস্থাসম্পন্ন শ্বশুরের কাছে বিবাহযোগ্য পাত্র Royal Enfield এর আবদার করা ছিল একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা।
হলিউড অভিনেতা ব্র্যাড পিট, জেসন স্ট্যাথাম সহ অনেকেই তাদের সিনেমায় বহুবার যেমন Royal Enfield ব্যবহার করেছেন তেমনি তাদের ব্যাক্তিগত কালেকশনেও এই বাইক টি দেখা যায় যা তাদের অবসর সময়ের সঙ্গী। অপরদিকে বলিউড বা কলকাতার সিনেমাতে Royal Enfield যেন সিনেমার এক একটি চরিত্রের ভাবগাম্ভীর্যতা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। জন আব্রাহাম, নানা পাটেকর, জ্যাকি শ্রফ, সোনাক্ষী সিনহা, বরুন ধাওয়ান, দেব, জিৎ, প্রসেনজিৎ, অনির্বান ভট্টাচার্য সহ আরো অনেক সেলিব্রেটিদের কেবল সিনেমাতেই না, ব্যাক্তিগত জীবনের সঙ্গী Royal Enfield এর বিভিন্ন মডেল এর বাইক।
বাংলাদেশে ROYAL ENFIELD
বহুল আকাঙ্খার পরে অবশেষে বাংলাদেশে শীঘ্রই লঞ্চ হতে চলেছে Royal Enfield দীর্ঘদিন ধরে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে সুনামের সাথে ব্যাবসা করা ইফাদ মটোরস বাংলাদেশ বাংলাদেশে পরিচয় করাতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন এই ব্র্যান্ড টির। ইতিমধ্যেই ইফাদ মটরস বাংলাদেশে এপোলো টায়ার ও অশোক লেল্যান্ড এর বাস এবং ট্রাক বাজারজাত করার জন্য আস্থার প্রতিক।
সেই আলোকে আশা করা যায় শতবর্ষী এই ব্র্যান্ড টির পরিবেশনার দায়ভার সঠিক জায়গাতেই এসেছে। বাংলাদেশে রয়াল এনফিল্ডের ৪ টি মডেলের বাইক এখন পর্যন্ত আসার কথা রয়েছে – Classic, Bullet, Meteor, Hunter. এর মধ্যে ক্লাসিক ও বুলেট ভিনটেজ মডেলের বাইক, মিটিওর ক্রুজার সেগমেন্ট এর এবং হান্টার রোডস্টার সেগমেন্ট এর বাইক।
পরবর্তী আপডেট এ বাইকগুলোর আলাদা আলাদা বর্ণনা দেওয়া হবে।
বাইক ও বাইকিং কম্যুনিটি এর সকল তথ্য সবার আগে পেতে বাইকবিডি এর সাথেই থাকুন।