Roadmaster Velocity 100cc ১৫৫০০ কিলোমিটার রাইড - আদিল
This page was last updated on 27-Jul-2024 07:57pm , By Raihan Opu Bangla
আমি আদিল আহমদ । আমি বর্তমানে চাইনিজ Roadmaster Velocity 100cc বাইকটি ব্যবহার করছি। আমার Roadmaster Velocity 100cc বাইকটি বর্তমানে ১৫,৫০০+ কিলোমিটার চলছে । আজ আমার এই বাইকটির ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
Roadmaster Velocity 100cc ১৫৫০০ কিমি রাইড
আমি সিলেট জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে বসবাস করি। এটা আমার জীবনের ২নাম্বার বাইক। আমি আমার বাইকটা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। এই বাইক কখনও আমায় নিরাশ করেনি। তাই আজ চেষ্টা করবো এই বাইকটির ব্যাপারে ভালো মন্দ কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে । আমি যখন ক্লাস ফাইভ এ পড়ি তখন থেকেই বাইক এর প্রতি আমার ভালো লাগা কাজ করে।
বিশেষ করে ছোট বেলায় অনেক বাইকের নাম শুনেছি এবং আমার ভাইয়ার বাইক ছিলো হিরো স্প্লেন্ডার ১০০সিসি। তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি বাইক চালানো শিখবো। কিন্তু আমার পরিবার তার বিপরীত, আমার পরিবার চাইতো আমি যেনো বাইক চালানো না শিখি। কিন্তু আমি তখন বাইসাইকেল চালানো ও জানতাম না, কি করবো ফজরের নামাজের পর বাইক গ্যারেজ থেকে বের করে চেস্টা করতাম চালানোর। চাচাত ভাইদেরকে বলতাম সাহায্য করার জন্য।
প্রতিদিন এইভাবে করতে করতে হাত ক্লিয়ার হয়ে যায়। তারপর চাবি নিয়ে স্টার্ট দেওয়ার সাহস হয় একটু। তারপর অল্প অল্প করে অনেক জাগায় যেতে পারতাম নিজে নিজ।
সব থেকে মজার বিষয় হলো, যখন উঁচু নিচু জাগায় স্টার্ট বন্ধ হত। তখন আমি আবার স্টার্ট দিয়ে, ৩ নাম্বার গিয়ারে অথবা ৪নাম্বার গিয়ার দিয়ে উঁচু জাগায় উঠতে চেতাম কিন্তু পারতাম না । কারন আমি যানতাম না যে উচু জায়গায় উঠিতে হলে যে গিয়ার কমাতে হবে । ব্যর্থ হয়ে বাইক থেকে নেমে বাইক নিয়ে হেটেই উঁচু জায়গা পার করতাম।
কারন আমি নিজে থেকে বাইক চালানো শিখেছি। আমি তখন ভাবতাম গিয়ার যেতো বেশি ব্যবহার করবো, তত বেশি শক্তি পাবে উঁচু জায়গা উঠার জন্য। তারপর ভাইয়া আমাকে চালাতে দেখে অবাক কিভাবে শিখলে। আমি তারপর বললাম পরে বলবো কিভাবে শিখলাম, আগে বলো ভাইয়া ইতো বাজে বাইক কেনো কিনলে সামান্য উঁচু জায়গা উঠতে পারে না, ৩, ৪টা গিয়ার ব্যবহারের পরেও।
ভাইয়া বলে উঁচু জায়গায় উঠতে হলে ১নাম্বার গিয়ার ব্যবহার করতে হয়। তখন আমি মনে মনে ভাবতেছিলাম ৩, ৪ নাম্বার গিয়ার ব্যবহার করেও উঁচু জায়গা উটতেছে না, আর ১নাম্বার এ কিভাবে উঠবে। তাই একটু ট্রাই করলাম ১নাম্বার গিয়ার, তখন আমার জানা হয়েছে ১ নাম্বারে পাওয়ার কত বেশি দেয় উঁচু জায়গায় উঠার জন্য।
ছোটবেলা থেকেই বাইক ভালো লাগে, চিন্তা ভাবনা শুধুই বাইক ছিলো কিভাবে একটা বাইক হবে আমার। ভাইয়ার বাইক ব্যবহার করতাম মাঝে মধ্যে। তারপর ৩ বছর হলো Roadmaster Velocity 100cc বাইক নিয়ে নিলাম। বাইকটি নিয়ে আমি ক্লাসে যাতায়াত ও ছোট খাটো ট্যুর ও দিতাম। পারিবারিক ছোট বড় নানা রকম কাজে যাতায়াত একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহার করে থাকি ।
আমি আমার Roadmaster Velocity 100cc বাইকটি যখন ক্রয় করি তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিলো ১,১০০০০/- টাকা। আমি বড়লেখা শো-রুম থেকে বাইকটি ক্রয় করি। ওইদিন ছিলো আমার স্বপ্ন পূরনের স্মরণীয় দিন।
আমার পরিবার থেকে যখন বললো, আমাকে বাইক কিনে দিবে। ঠিক সেই দিন থেকে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেলো। সারারাত ঘুম নেই শুধু বাইক নিয়ে চিন্তা, কখন বাইকটা হাতে পাবো। বাইক কিনার দিন খুব সকাল ঘুম থেকে উঠে ভাইয়ার কাছে যাই । তারপর ভাইয়াকে নিয়ে বড়লেখা বাজার এর উদ্দেশ্যে রওনা হই। তারপর যখন শো-রুম এর কাছে যাই, তখন আনন্দে আত্ম্যহারা হয়ে যাই।
শো-রুম অনেক বাইকই ছিলো Black & Red রঙের। কিন্তু তেমন একটা পছন্দ হয়নি, কিন্তু রোড মাস্টারের লুকিংটা অসাধারণ ছিলো। তাই Roadmaster Velocity 100cc বাইকটি ক্রয় করি ।
প্রথমবার বাইক চালানোর অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না। কখন বাইক নিয়ে বাড়ি যাবো । শো-রুম থেকে আমি নিজেই বাইক বেড় করলাম এবং ফুয়েল পাম্প থেকে বাইক এর ট্যাংক ফুল করলাম। বড়লেখা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিলাম সাথে ভাইয়াকে নিয়ে। ১২কিলোমিটার পথ। শো-রুম থেকে বলে দিলো ৫০স্পিড এর নিচে চালাতে। তাই ভাইয়াকে নিয়ে ৩৫-৪০ স্পিড এ চালিয়ে বাসায় আসলাম।
বাইকটি বর্তমান আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ই তৈরি হয়েছে। বাইকটিতে রয়েছে আধুনিক গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং লুকিং সব কিছুই আমার ভালো লেগেছে । ডিজিটাল স্পিডো মিটার, সিট, হ্যান্ডেলবারটা ভালো লাগেনি তাই আমি এফজেড বাইকের হ্যান্ডেলবার লাগিয়েছি। হ্যালোজেন হেড লাইট, ইন্ডিকেটর লাইট ও এলইডি ব্যাক লাইট অনেক ভালো । এই পর্যন্ত বাইকটি আমি বেশ কয়েকবার সার্ভিসিং করিয়েছি ।
মেকানিক এর মাধ্যমে এবং সে একজন অভিজ্ঞ মেকানিক তার থেকেই সব সময় সার্ভিসিং করাই । মেকানিক সব কিছু পর্যবেক্ষন করে দেখে শুনে তারপর কাজ করে থাকে। সার্ভিসিং করানোর সময় আমি বাইকের পাশে থেকে সবকিছু চেক করে কাজ করাই । ইঞ্জিনের কাজ একবার ও করাইনি, শুধুমাত্র ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স এডজাস্ট করছে ।
২০০০ কিলোমিটার এর আগে বাইকটি থেকে মাইলেজ প্রতি লিটারে ৪৫+ কিলোমিটার পেতাম। তারপর থেকে প্রতি লিটারে আমি গ্রামের রাস্তায় ৫০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ এবং হাইওয়েতে ৫৫+ কিলোমিটার প্রতি লিটার পেতাম। আর এখনো পর্যন্ত এরকম ই মাইলেজ পাচ্ছি । আমি আমার বাইকের নিয়মিত ১৫০০ - ২০০০ কিলোমিটার পর পর বাইকের স্পার্ক প্লাগ ও এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করে থাকি ।
নিয়মিত ওয়াশ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখি সব সময়। ২মাসে একবার করে সার্ভিস করাই। বাইকের যথা সময়েই ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করে থাকি । আমি বাইকে সবসময় Shell Advance 20w50 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে থাকি। মোটামুটি অনেক ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল এটা। এটা দিয়ে আমি ১২০০ কিলোমিটার চালাই।
এখন পর্যন্ত বাইকের হাইড্রোলিক ব্রেকের মাস্টার সিলিন্ডার এর বাকেট ২ বার পরিবর্তন করতে হয়েছে, চেইন পিনিয়ন ১বার পরিবর্তন করেছি৷ হেডলাইট কন্ট্রোলার ২বার পরিবর্তন করছি। বাইকের ইঞ্জিন গার্ড, পেছনের চাকার মাডগার্ড, ভালো আলোর জন্য এলইডি লাইট লাগিয়েছি ।
বাইক বিডির লেখা স্টিকার লাগাইছি এবং কিছু ইস্টিকার মডিফাই করছি। Roadmaster Velocity 100cc নিয়ে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, ভোলাগঞ্জ, বিছনকান্দি, জাফলং, আরো অনেক যায়গায় ট্যুর দিয়েছি, বাইকটি আমাকে কখনো হতাশ করেনি। সব সময় ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করবেন, আর সাবধানে বাইক চালাবেন, কারন আপনার জন্য আপনার পরিবার অপেক্ষা করতেছে । ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ আদিল আহমদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।