New Suzuki Gixxer ১০,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - শোভন

This page was last updated on 30-Jul-2024 11:36am , By Shuvo Bangla

আমি শাহরিয়ার ইসলাম শোভন। থাকি ঢাকার শ্যামপুর এলাকায়। আমার প্রিয় বাইক New Suzuki Gixxer মডেলটি ১০,০০০ কিলোমিটার চালিয়ে মনে হলো যে আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করি।

new suzuki gixxer at bandarban

বাইকবিডি ফেসবুক পেজে পোষ্ট করার পরে জানতে পারলাম যে বাইকবিডির ওয়েবসাইটে রিভিউ লেখা যায়। তাই জানার পরেই লিখতে বসে পরলাম। আমার বাইকের অভিজ্ঞতা ছিলো খুবই চমৎকার। আমার প্রথমে বাইকের প্রতি তেমন কোনো নেশা ছিলো না বললেই চলে।

আস্তে আস্তে যখন বুঝতে পারি যে ঢাকা শহরে থাকতে হলে একটা বাইক খুবই দরকার হয়ে পরেছে তখনই বাইক কেনার নেশা মাথায় আসে। তবুও ভাবতাম বাসা থেকে কোনোদিনই টাকা দিবে না আমাকে বাইক কেনার জন্য। নিজে যখন ঘরে বসেই টুকটাক ইনকাম করা শুরু করলাম তখনই টার্গেট নিয়েছি নিজের টাকায় বাইক কিনবো।

তারপর আর অন্য কিছু ভাবতে হয়নি। ইনকাম শুরু করার ১ বছরের মধ্যে আমি বাইক কেনার মত টাকা জমিয়ে ফেলেছি। আমার বাজেট ছিলো ২,৫০,০০০ টাকা তার মধ্যে আমার বাইকটি সবথেকে ভালো মনে হয়েছে । কিন্তু সোনার হরিন হয়ে যাওয়া এই বাইকটির জন্য কতই না শোরুমে কল দিয়েছি।

new suzuki gixxer black colour

ঢাকা ছাড়াও প্রায় ১০-১৫ টা জেলার শোরুমেও কল দিয়েছি যে বাইকটি স্টক হলেই যেনো আমাকে জানানো হয়। কোথাও না পেয়ে হঠাত একদিন বের হয়ে যাই যে ঢাকার সবগুলো শোরুমে ঘুরবো। তারিখ টা ছিলো ১১ আগষ্ট ২০২১। যেটাতে পাবো বুকিং দিয়ে আসবো এই নিয়ত করে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে একটা শোরুমে যোগাযোগ করেছিলাম।

হুট করে ফোনে মেসেজ এলো বাইকটি এভেইলেভেল হয়েছে । সাথে সাথে ফোন দিয়ে বলার পরে বললো ১৫ মিনিটের মধ্যে আসতে পারলে বাইক আপনার। চলে গেলাম ঢাকার বংশালে অবস্থিত সুজুকির অফিসিয়াল শোরুম Omega Motors এ।

আমার কাছে পুরো টাকাও ছিলো না কেনার মত। যেকোনো ভাবেই হোক পুরো ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ম্যানেজ করে বাইক নিয়ে আসি বাসায় সাথে আরো ১৫,০০০ টাকা বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন বাবদ খরচ হয়েছে। চালাতেও পারতাম না ভালো করে তাই আমার কাজিনকে কল দিয়ে এনে তাকে দিয়ে বলি বাসায় নিয়ে যেতে। যাই হোক আমার বাইক কেনার দিন টা গুলো ভুলার মত না।


এবার আসি বাইক নিয়ে কিছু কথায়। এই দশ হাজার কিলোমিটার চালিয়ে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সমস্যা পাইনি আমি। ঢাকা শহরে নিয়মিতই রাইড করা হয়। সুজুকি থেকে অফিসিয়াল সার্ভিস করিয়েছিলাম ৪ বার এর পর থেকে আর সব কাজ করিয়েছি বাইরের মেকানিক শপ থেকে।

এই পর্যন্ত ৩ টা এয়ার ফিল্টার, বল রেসার একবার, ফ্রন্ট ব্রেক প্যাড একবার আর ইঞ্জিন ওয়েল সিন্থেটিক ১৫০০-২০০০ কিলোমিটার এর মধ্যেই পরিবর্তন করেছি। অবশ্যই 10W40 গ্রেডের ইঞ্জিল অয়েল ব্যবহার করা হয় সবসময়ই। তবে বেস্ট পারফরমেন্স পেয়েছি Mobil 1 Racing 4T 10W-40 ফুল সেন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল থেকেই যেটার বর্তমান বাজার মুল্য ১৫০০ টাকার আসে পাশে।

new suzuki gixxer bike picture

এত স্মুথ আর ভাইব্রেশন ফ্রি আর কোনো ইঞ্জিন অয়েলে পাইনি। তবে বর্তমানে এক্সপেরিমেন্ট বাবদ Shell Advance 10W40 Long Ride 100% Synthetic ইঞ্জিন অয়েল দিয়েছি যেটার দাম মাত্র ৮৫০ টাকা। খুব ভালোই পারফরমেন্স পাচ্ছি এটা থেকেও।

মাইলেজ প্রথম ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩৫ করে পেলেও এর পর থেকে মাইলেজ পেয়েছি সিটিতে ৪০-৪২ কিলোমিটার প্রতি লিটার অকটেনে । ফুয়েল নেয়া হয় ঢাকার ভালো দুইটা ফুয়েল পাম্প থেকে। ফুয়েল কোয়ালিটি আমার কাছে যথেষ্ট ভালো মনে হয়। মাইলেজ নিয়ে আমি খুব সন্তুষ্ট। খোলা তেল কখনোই নেওয়া হয়নি।

সর্বোচ্চ গতি নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি একা রাইড করে এখন পর্যন্ত সোজা রাস্তায় সর্বোচ্চ ১১৩ পর্যন্ত উঠাতে পেরেছি এবং পিলিয়ন নিয়ে ডাউন হিলে ১১৮ পর্যন্ত উঠিয়েছি। আমি কখনই টপ স্পিডের পক্ষে না। হাইওয়েতে গেলে চেষ্টা করি ৮০ লিমিটে থাকার এবং ঢাকা সিটিতে চালালে অলয়েজ ৪০০০ থেকে ৫০০০ আরপিএম এর মধ্যেই চালাই।

লং ট্যুর দিয়েছি এখন পর্যন্ত দুইটা। প্রথম টা ঢাকা-রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই-বান্দরবন-চট্টগ্রাম-ঢাকা ( ১০০০ কিলোমিটার ) ও দ্বিতীয় ট্যুর ঢাকা-শ্রীমঙ্গল-সিলেট-ঢাকা ( ৮০০-৯০০ কিলোমিটার )। মাওয়া যে কতবার যাওয়া হয়েছে হিসাব নেই আপাতত। আর কুমিল্লা দুইবার গিয়েছিলাম।

new suzuki gixxer bike

পদ্মা সেতু তে মটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকায় দক্ষিনবঙ্গে যাওয়া হয়নি। আর উত্তরবঙ্গে যাওয়ার মত মনমানসিকতা এখন হয়নি যেহেতু সিঙ্গেল লেন রোড এবং রাস্তার কাজ চলছে। তবে বান্দরবন ট্যুরে নিলগিড়ি ও থানচি দুই যায়গাতেই যাওয়া হয়েছে। এতো মজা পেয়েছি পাহাড়ি আকাবাকা সড়কে রাইড করে সেটা বলে বুঝানো সম্ভব না যতখন না পর্যন্ত আপনি নিজে রাইড করবেন।

New Suzuki Gixxer বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • প্রথমেই ABS এর কথা আসবে। এর কারনে ব্রেকিং কন্ট্রোল অনেক স্মুথ
  • মাইলেজ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। FI টেকনোলজি থাকাতে ফুয়েল ইফিসিয়েন্ট একটা বাইক
  • কোনো ব্যাক পেইন হয়নি
  • লুকটা খুবই মাস্কুলার
  • হেডলাইট এর ডিজাইন একদম আলাদা। আর কোনো বাইকে এমন ডিজাইন এর লাইট ছিলো না

New Suzuki Gixxer বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • স্প্লিট সিট হওয়াতে লুকটা খুব সুন্দর কিন্তু পিলিয়ন সামনে চলে আসে ব্রেকের সময়। এটা আবার সব পিলিয়ন এর সময় ফিল করিনি
  • হেডলাইটের আলো সিটির জন্য পারফেক্ট হলেও হাইওয়ের জন্য আমার কাছে পারফেক্ট না। আরো আলো দরকার ছিলো।
  • হর্ন নিয়েও অভিযোগ দেয়া যায়। সিটিতে চললেও হাইওয়েতে কোনো বড় গাড়ি আপনাকে পাত্তাই দিবে না এই হর্নে।
  • ৮০-৯০ কিলোমিটার একটানা চালানোর পরে ব্যাক পেইন ইস্যু হয় । তাই ৭০-৮০ কিলোমিটার পর পর ১০ মিনিটের জন্য হলেও ব্রেক নেয়া দরকার হাইওয়েতে।
  • ইঞ্জিন হিটের সমস্যা পুরোপুরি না পেলেও হালকা হালকা পেয়েছি। তবে অয়েল কুল্ড ইঞ্জিন হলে ভালো হতো বিষয়টা।

new suzuki gixxer black

বাইক সবসময় ই সময় বাচানোর ভালো বন্ধু। যেই শহরে আমি বসবাস করি, সেখানে আমি বাইক ছাড়া কোনো বিকল্প দেখি না। এত এত জ্যামের মধ্যেই খুব ভালো ভাবেই বেস্ট পারফরমেন্স দিচ্ছে আমাকে এই বাইকটি। তাই সময়মত সব কাজ করতে পারছি এটাই অনেক কিছু।

সবাই দোয়া করবেন এবং সবসময় হেলমেট পরিধান করবেন এবং সেইফ রাইড করবেন। হাইওয়েতে রাইডিং সেইফটি গিয়ার পরিধান করার চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ ।

 

লিখেছেনঃ শাহরিয়ার ইসলাম শোভন
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।