দ্বি-চক্র যানে চড়ে স্বর্গ মোরা এলাম ঘুরে (শেষ পর্ব)

This page was last updated on 04-Jul-2024 04:21am , By Shuvo Bangla

 দিন ২: চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রাঙ্গামাটি

প্রথম দিন যাত্রার ধকল কাটিয়ে আমরা বেশ সকালেই নাস্তা ও গোসল শেষে কাপ্তাই এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিন্তু বিধি বাম। চট্টগ্রাম শহর থেকে বের হবার আগেই রাবিবের বাইকের টায়ার আর ব্রেক এ সমস্যা দেখা দিল। ওর বাইকের কাজ শেষ করতে করতে তখন প্রায় বেলা ১১টা।  যাহোক যতই আমরা বহদ্দারহাটের অসহনীয় যানজটের মধ্য দিয়ে কাপ্তাই যাবার রাস্তায় দিকে আগাতে থাকলাম ততই ক্লান্ত মন চাঙ্গা হতে থাকল। রাস্তার ধারে লেকের নীল জলরাশি আর দূরের ঐ সবুজ পাহাড় ও নীল আকাশের মিতালী মুগ্ধ নয়নে দেখতে দেখতে চলতে লাগলাম।

 travel stories chitagong rangamati khagrachari

সে দৃশ্য এত সুন্দর আর এত স্বর্গীয় যে ইচ্ছে করেই বাইকের গতি কমিয়ে দিলাম। প্রায় ৫০ কি.মি যাবার পর পাহাড়ি আঁকা বাঁকা সর্পিল রাস্তা শুরু হল। পাহাড়ি রাস্তার সরু বাঁক আর উঁচু-নিচু ঢালে বাইক চালাতে চালাতে আপন সুরে গান গাইতে লাগলাম ....“এই পথ যদি না শেষ হয় ......” আমাদের হাসিব ভাই এর কথা তো না বললেই নয়। তার বাইকে আবার পুরোদস্তুর মিওজিক প্লেয়ার আর স্পিকার লাগানো। তিনি মনের আনন্দে স্পিকারে গান ছেড়ে দিলেন। গানের তালে তালে বাইক চালাতে চালাতেই আমরা শরীর নাচাতে লাগলাম। সত্যি বলছি হাস্যকর হলেও এটাই সত্য। এই বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ প্রকাশ করার জন্য এইটুকু ছেলে মানুষি যে কিছুই নয় তা প্রিয় পাঠক যদি কখনও  বাইকে এরকম পথে যান তাহলে বুঝবেন যে এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। দুপুর দেড়টা নাগাদ কাপ্তাই পৌঁছে গেলাম। কাপ্তাই লেক এর পাশে খুব চমৎকার একটি রিসোর্ট আছে। সেখানে দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়েই আমরা বসে গেলাম।

কাপ্তাই লেক এর দৃশ্য দেখে আমরা সবাই খুব আনমনা রোমান্টিক হয়ে উঠলাম। মাসুম ভাই থেকে থেকে শিস্ দিচ্ছে, ইউসুফ তার নতুন প্রেমিকার সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত; সৈকত ব্যস্ত তার ফটোগ্রাফিতে; আর হাসিব ভাইকে তো আমরা খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষণের জন্য যে তিনি কোথায় নিরুদ্দেশ ছিলেন তা আজও আমাদের কাছে রহস্য। রাবিব আর আমি আমি দুজনেই কানে হেডফোন লাগিলে মহাসুখে আয়েশ করে সিগারেটে ফুঁ দিচ্ছি। কিছুক্ষণের জন্য বোধ হয় হারিয়েই গিয়েছিলাম কাপ্তাই এর এই স্বর্গীয় প্রকৃতিতে।

দুপুরের খাবার শেষে আমরা আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম পড়ন্ত বিকেলে রাঙ্গামাটি দর্শনে। রাঙ্গামাটির সুউচ্চ পাহাড়ি পথ দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল যে, স্বর্গে প্রবেশের কোন পথ দিয়ে যাচ্ছি। এই রাস্তা যতখানি বিপজ্জনক তার চেয়েও অনেক বেশি মায়াবী। কিছু রাস্তায় বাইকের স্টার্ষ্ট বন্ধ রেখেই এগুতে পারবেন।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, এ রাস্তাই আপনাকে নিয়ে যাবে বহুদূর। পাহাড়ি রাস্তার এই এক মজা। বাইক চালানোর প্রয়োজন পড়বে না আপনার। আপনার কাজ শুধু বাইকের হ্যান্ডেল ধরে বসে থাকা। এ যেন এক প্রাকৃতিক রোলার কোস্টার; যে অভিকর্ষ বাইককে পাহাড়েরর ঢাল বেয়ে নিচে নামাবে সেই শক্তি দিয়েই আপনি পরবর্তী উঁচু ঢালে উঠবেন। বাইক বন্ধ রাখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে অসহনীয় নীরবতা কাকে বলে। পিনপতন নিঃশব্দতার মাঝে ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা আওয়াজ আর পাহাড়ী ফুলের বন্য সুবাস আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলল। মোহাচ্ছন্ন হয়ে বাইক চালাতে চালাতে আমরা পার হতে লাগলাম এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাবার ব্রিজগুলো। শেষ ব্রিজটায় আমরা যখন নামলাম তখন মাসুম ভাই মিটমিট হাসছে।

আর আমরা আমাদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আশেপাশে সুউচ্চ পাহাড়, নিচে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নীল স্বচ্ছ জলরাশি আমরা দাড়িয়ে আছি তার ঠিক মাঝখানে এক ব্রিজের ওপরে। পাহাড়ী এক ছেলেকে দেখলাম ফ্লাক্সে করে রং চা বিক্রি করতে, সবাই এক কাপ চা খেয়ে নিলাম। সেই ছেলেটিকেই দিয়ে তুললাম আমাদের ছয়জনের একটি গ্রুপ ফটো।

 এই প্রথম ছবি যেখানে আমরা ছয়জনই এক সাথে পোজ দিলাম। সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসায় আর দেরি না করে কাপ্তাই সেনাবাহিনীতে আমাদের থাকার জায়গায় আমরা সেদিনকার মত যাত্রাবিরতি দিলাম। ডিনার করে আড্ডা আর গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেও পারিনি।

দিন-৩: কাপ্তাই-খাগড়াছড়ি

কাপ্তাই এ রাত্রিযাপনের পর ৩য় দিন আমরা একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠলাম। সূর্যমামা তখন ঘন কালো মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে গত রাতে বেশ এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট খুব ভেজা না থাকলেও বৃষ্টি হবার কারণে আরও অনেক পরিষ্কার ও কুচকুচে কালো লাগছে। নিকষ কালো পিচ ঢালা পথের ওপর যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিশির বিন্দু সূর্যের মিষ্টি রোদে স্বচ্ছ রূপোর মত ঝিকিমিকি করছে।

যাই হোক,নাস্তা শেষ করে গরম কফির কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে আমরা আমাদের বাইকের চাবি ঘুরালাম। কাপ্তাই এর নিঃশব্দতা ভেদ করে ভ্রুম ভ্রুম আওয়াজে গর্জে উঠলো আমাদের পোষা জন্তুগুলো। আঁকাবাঁকা পাহাড়ী স্বর্গীয় কাপ্তাই আর রাঙ্গামটির পথ বেয়ে বাইক তাড়িয়ে আমরা ছুটে চললাম খাগড়াছড়ির পথে। আমরা রাঙ্গামাটির পাহাড়ী পথ হয়ে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে তুমুল বেগে ছুটে চললাম। পথে পড়ল মাত্র একটি মাটির দেয়ালের তৈরী আদিবাসীদের একটি চায়ের দোকান। পাহাড়ীদের বানানো এই দোকানগুলোতে পাওয়া গেল চা, সিগারেট, মিনারেল ওয়াটার বোতল, বিস্কুট আর চিপস জাতীয় খাবার। ক্লান্তি দুর করতে আমরা

চা বিস্কুট এর সাথে প্রচুর পানি পান করলাম। আর ডিহাইড্রেশন দূর করতে আমাদের ডিহাইড্রেশন প্যাক পানিপূর্ণ করে নিলাম। ইতোমধ্যে দেখি মাসুম ভাই তার বাইকে মাউন্ট ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে একেবারে তৈরি। পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণের এই স্মৃতি ভিডিও না করলেই যে নয়! পাহাড়ীদের বিশেষভাবে তৈরি করা বাশ দিয়ে তামাক খাওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করার পর আমরা আবারও ওঠে পড়লাম আমাদের বাইকে। যেতে যেতে পথে পড়ল রাঙ্গামাটির পাহাড়ের মধ্য দিয়ে নৌকা নিয়ে বয়ে যাওয়া স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের দল।

 শুধু নৌকাতেই নয়, পথের ধারে দেখা হল ছুটে চলা অনেক পাহাড়ী ছোট ছোট ছেলে মেয়ের দলের সাথে। ওদের সাথে ছবি তুলার ইচ্ছেটা আর দমাতে পারলাম না। বাইক থামিয়ে নেমে পড়লাম ফটোগ্রাফিতে। ওদের সাথে মজা করার পর সবাইকে লজেন্স দিয়ে আমরা আবারো ছুটতে লাগলাম পাগলা ঘোড়ার বেগে।

আকাশের মেঘ তখন অনেক পরিষ্কার। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে লাগলো সূর্যের তাপও। দুপুর তখন প্রায় ২টা। খিদেয় পেট চো চো করছে। যুদ্ধজয়ী সৈনিকের মত ক্লান্তি এসে ভর করল সবার ওপর। আমরা তখন প্রায় পৌঁছে গেছি খাগড়াছড়িতে। প্রায় ২০ মিনিট পর পৌছে গেলাম খাগড়াছড়ির বিখ্যাত সিস্টেম রেস্টুরেন্ট এ। খাবার তালিকা দেখে আর সুঘ্রাণে আমাদের ক্ষিদে তখন দ্বিগুন বেড়ে গেছে। কত রকমের যে সুস্বাদু পাহাড়ী আইটেম যা বলে শেষ করা যায় না। বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশেষ ভাজি, ডাল, ছোট মাছের বার-বি-কিউ, কাঁকড়া ভাজি, কয়েক রকমের ভর্তা, কবুতরের মাংস, আর পাহাড়ি স্টাইলে রান্না করা অন্যান্য মাছ আর মাংস তো আছেই। পাহাড়ী এই খাবারগুলো কিন্তু বেশ ঝাল আর সুস্বাদু।

এই ঝালের এমনই নেশা যে আপনার যত ঝাল লাগবে আপনি ততই বেশী ঝাল খেতে চাইবেন। প্রচন্ড ক্লান্তি আর খিদের কারণে আমরা ছয় রাক্ষস গোগ্রাসে তখন খাবার খাওয়ার আদিম নেশায় মেতে উঠেছি। আধঘন্টা পর যখন আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হল তখন শরীর আর বিন্দুমাত্র চাইছে না চেয়ার থেকে উঠতে। সবার মুখ দিয়ে যেন আগুন আর চোখ আর নাক দিয়ে পানি পড়ছে ঝালের চোটে। প্রায় একঘন্টা বিশ্রাম নেবার পর আমরা আলুটিলা গুহার দিকে রওনা হয়ে গেলাম। আমাদের স্বস্তি দিতেই হয়তো শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আলুটিলা গুহায় পৌছানোর পর হাতে ক্যামেরা আর মশাল নিয়ে আমরা হেটে চললাম গুহার উদ্দেশ্যে।


খাগড়াছড়ির এই গুহাটিতে রোমাঞ্চকর সব ধরণের অভিজ্ঞতাই হলো আমাদের। কি নেই সেখানে ? গুহার মধ্য দিয়েই চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা সরু বেশ কিছুটা গভীর জলধারা। থেকে থেকে সাপের গর্ত। নানাধরণের আশ্চর্য সব প্রাকৃতিক নিখুত কারুকার্য করা পাথর যা দেখে মনুষ্যসৃষ্ট বলে বিভ্রম হয়। আর গুহার ভিতরের ভয়ানক সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণতা দিতে শত শত বাদুড় তো আছেই।

যখন আমরা গুহার ভিতর, বাইরে আমাদের বাইকগুলো অবস্থান করছে প্রবল বৃষ্টির ধারায়। প্রবল বৃষ্টি আর গুহার সেই ভয়ানক অথচ সুন্দর সেই অ্যাডভেঞ্চার কোন রেইন ফরেস্টের চেয়ে কম নয় বৈকি। গুহা থেকে আসার পর অন্য কোন জায়গায় যাবার ইচ্ছা থাকলেও আর যাওয়া হলো না মূলত ৩টি কারণে; তখন বৃষ্টি অনেক বেড়ে গেছে, বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, উপরন্তু মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মত ইউসুফের বাইকের টায়ার অপ্রত্যাশিতভাবে লিক হয়ে যাওয়ায়। অতএব আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হল খাগড়াছড়ি শহরের মোটরসাইকেল মেকানিক এর দোকানে ।

গ্যারেজে আমাদের সবার বাইকগুলো কিছু চেকআপ করার পর আর ইউসুফের বাইকের টায়ার পাংচার ঠিক করানোর পর রাতে চলল আমাদের গান আর আড্ডা। স্বর্গীয় স্মৃতি নিয়ে বিছানায় যাবার সাথে সাথে আমরা তলিয়ে গেলাম আরেক স্বপ্নের জগতে।

দিন ৪: খাগড়াছড়ি- চট্টগ্রাম শহর

চতুর্থ দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমরা মোটামুটি ফ্রেশ হয়ে খাগড়াছড়ির ‘রিসাইন ঝর্ণা’ দেখার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। ভাগ্যটা সেদিন ভালোই ছিল বলতে হয়। সকালের মিষ্টি সূর্যের আলোয় অসাধারণ পাহাড়ি রাস্তা পার হয়ে আমরা চলে গেলাম ঝর্ণাতে। নির্ধরিত জায়গায় বাইকগুলো পার্ক করে রেখে যতই সামনে আগাতে থাকলাম পাহাড়ি ঝর্ণার রিমঝিম শব্দ কানে আসতে লাগল। ঝর্ণার সাক্ষাৎ যখন পেলাম তখন প্রায় সকাল ৯টা। অসাধারণ সেই প্রবল ধারার ঝর্ণার সাথে প্রাকৃতিক ঢাল। সেই ঢালে ঝর্ণার বেয়ে পড়া পানির সাথে স্লাইড করার মজা বলে বুঝানো যাবে না।

তবে ঢালটা বড় হওয়ায় সেটা কিছুটা বিপজ্জনকও বটে। সুতরাং আমরা স্লাইড করলেও সবার জন্য স্লাইড করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কেননা স্লাইড বেয়ে পড়ার সময় প্রচন্ড গতির কারণে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রনটা খুব জরুরী।

যাহোক ঝর্ণার পানিতে স্লাইড খেলে আর মন ভরে স্নান করে আমরা ১০টার দিকে বাইকে সওয়ার হয়ে দূরন্ত গতিতে চট্টগ্রামের পথে পাড়ি দিয়ে চলে এলাম চট্টগ্রাম শহরের বিখ্যাত ঘুর্নায়মান (রিভলভিং) রেস্টুরেন্টে। দুপুর তখন প্রায় ২.০০ টা। বাংলাদেশের একমাত্র ঘুর্ণায়মান রেস্টুরেন্ট এটি। খাবার মেনুও বেশ অসাধারণ। মিউজিক শুনতে শুনতে আর সুউচ্চ টাওয়ারে ঘুর্ণায়মান অবস্থায় হায়দ্রবাদী বিরানী দিয়ে শেষ হলো আমাদের পেট পূজো। এই ভ্রমণের শেষ বিকেলটি উপভোগ করতে চলে গেলাম আবারো পতেঙ্গাতে। পতেঙ্গার রাস্তার কিছুটা বর্ণনা এবার না করলেই নয়। চট্টগ্রাম শহরের যানজট পেরিয়ে যখন পড়ন্ত বিকেলে আমরা মসৃন পিচের ওপর অলস গতিতে পতেঙ্গার দিকে যাচ্ছি আশেপাশের হরেক রকমের ছোটবড় জাহাজ আর কন্টেইনার আর রেল লাইনের বহর দেখে আমরা কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম যে বাংলাদেশে আছি। পতেঙ্গাতে যখন পৌছলাম তখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা নামে নামে।

পতেঙ্গাতে ছোট ছোট দোকানে খুব মজাদার কাঁকড়া ভাজি পাওয়া যায়। বেশ কিছু কাঁকড়া ভাজি প্যাকেট করে নিয়ে চলে গেলাম সূর্যাস্ত দেখতে। কাঁকড়া ভাজি, চা আর সিগারেট শেষ করতে করতে সূর্য মামা সেদিনের মত বিদায় জানিয়ে চলে গেল। মাসুম ভাইও বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন তার হোস্টেলে। হোটেলে উঠে গোছগাছ করে আর হট বাথ নিয়ে সেদিন খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম আমরা।

দিন ৫: চট্টগ্রাম- ঢাকা

ঢাকা আসার তাড়া থাকায় ভোর ৬টা নাগাদ আমরা সবাই ওঠে পড়লাম। বাইকে ফুয়েল ভর্তি করে সকাল ৮টার মধ্যেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম। ৬ঘন্টা পর যখন ঢাকা এসে পৌছালাম তখন দুপুর ২টার ও বেশী বাজে। পেটে রাক্ষুসে ক্ষুধা নিয়ে সবাই ঢুকে পড়লাম পুরান ঢাকার হাজী ন্নানা মিয়ার দোকানে। আমাদের দেখার জন্য তখন বেশ কিছু উৎসাহী মানুষের ভিড়। আর হবেই না কেন, পাঁচ দিন একটানা বাইক ভ্রমণ করে আমাদের অবস্থা তখন ক্লান্ত আর বিধ্বস্ত আরব বেদুইনদের মত।

প্রিয় পাঠক, আশা করি ৫দিনের এই ১২০০ কি.মি. বাইক ভ্রমণ আপনারা উপভোগ করেছেন। ছোট্ট একটি অনুরোধ বাইক ভ্রমণ অসাধারণ আনন্দের হলেও এতে অনেক বেশি ধৈর্য্য, বিপদের আশংকা আর প্রচুর পরিকল্পনা করতে হয়। তবে একা ভ্রমণে যাবার চেয়ে গ্রুপে যাওয়া ভালো। বিস্তারিত জানতে হতে পারেন বিডি রাইডার্জ ক্লাবের (www.bdriderzclub.com)  সদস্য।