Keeway RKR 165 মালিকানা রাইড রিভিউ - মাহমুদুল হাসান শাওন
This page was last updated on 31-Jul-2024 04:36am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি মাহমুদুল হাসান শাওন। আমি ময়মনসিংহ শহরে থাকি। বর্তমানে আমি বাংলাদেশের বাজারের নতুন লঞ্চ হওয়া একটি বাইক স্পোর্টস বাইক Keeway RKR 165 রাইড করতেছি। আজ আমি আপনাদের সাথে এই বাইকের ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
Keeway RKR 165 মালিকানা রাইড রিভিউ
আমার বাইকিং ভালোবাসার পিছনে অনেক গুলো কারন আছে এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারন হলো অন্য জেলার বাইকার গুলো সাথে পরিচিত হওয়া। তার জেলার বিভিন্ন জায়গার সাথে পরিচিত হওয়া এবং প্রতিটি বাইকের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। Keeway RKR 165 বাইকটি নেওয়ার পিছনে প্রথম কারণ ছিল বাইকটির দাম ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। এই দামে এত সুন্দর একটা স্পোর্টস বাইক বা কিট বাইক, যেটা যে কারও দৃষ্টি আকষর্ণ করবে। আর এ কারনে আমারও প্রথম দেখায় Keeway bike টি ভালো লেগে যায়।
Keeway RKR 165 বাইকটিতে আছেঃ
- ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট - ১৬৪.৭সিসি
- ইঞ্জিন - সিঙ্গেল সিলিন্ডার, চার স্ট্রোক এবং চারটি ভালব যুক্ত
- পাওয়ার আউটপুট - 17.83 bhp @ 9500 rpm
- টর্ক - 14 Nm @ 7000 rpm
- ফুয়েল সাপ্লাই - ইএফআই (ইলেক্ট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন)
- এক্সহস্ট সিস্টেম - ক্যাটালিস্ট ছাড়া এবং অক্সিজেন সেন্সর
- গিয়ারবক্স - ৬ স্পিড গিয়ারবক্স
- কুলিং সিস্টেম - লিকুইড কুল
- ফ্রন্ট সাসপেনশন সিস্টেম - টেলিস্কোপিক ফর্ক
- রেয়ার সাসপেনশন সিস্টেম - টেলিস্কোপিক কয়েল স্প্রিং ডাম্পড
- ফ্রন্ট ব্রেক - ডিস্ক এবং ২৬০ মিমি
- রেয়ার ব্রেক - ডিস্ক এবং ২২০ মিমি
- ফ্রন্ট টায়ার - ১০০/৮০-১৭
- রেয়ার টায়ার - ১৪০/৭০-১৭
- ওজন - ১৫৩ কেজি
- ফুয়েল ট্যাংক - ১৫ লিটার ফুয়েল নেয়া যায়
বাইকের ফিচারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননাঃ
- বাইকটিতে CBS Braking System দেওয়া হয়েছে
- বাইকটি চালানোর সময় আপনি কতো নাম্বার গিয়ারে চালাচ্ছেন মিটারে সেটি দেখা যায় মানে গিয়ার ইন্ডিকেটর দেয়া হয়েছে
- সাইড স্টান্ড না তুললে গিয়ার দেওয়ার সময় বাইক এর স্টাট বন্ধ হয়ে যাবে
- টেম্পারেচার মিটার দেয়া হয়েছে
- বাইক এর মিটারে ঘড়ি দেয়া হয়েছে
- বাইকটির ইঞ্জিনে ৩টি Spark plug ব্যবহার করা হয়েছে
যেহেতু এটা একটি পাওয়ারফুল এবং স্পোর্টস বাইক তাই তার মেইনটেন্যান্স হাই পারফরম্যান্স হতে হবে এটাই সবাভাবিক। আমরা সবাই জানি স্পোর্টস বাইকের মেইনটেন্যান্স একটু বেশি এই বাইকের ক্ষেত্রেও এমন । বাইকটির ইন্জিন অয়েল গ্রেড 10w40 । ইন্জিন অয়েল Type এমন হতে হবে API SH, SAE10W40, JASO MA এটা না মিলালে ইজিন অবার হিটিং হবে এটা বাইক এর রিকোমেন্ডেট। নতুন বাইকে প্রথম ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করাই ভালো আমিও তাই করতেছি। ২০০০ কিলোমিটার এর পর থেকে হাই পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য ইন্জিন অয়েল পুরো সেন্থেটিক ব্যবহার করি।
ইঞ্জিন অয়েল ক্যাপাসিটি হচ্ছে ১লিটার(+/-) যদি আমি মবিল ফিল্টার সহ মবিল চেন্জ করি তাহলে ১ লিটার ইঞ্জিন অয়েল দেওয়ার পর ১০০মিলিলিটার বেশি দিতে হবে। এটা আমরা অনেকেই করি না, কারণ ১০০মিলিলিটার দেওয়ার জন্য আরেকটা ইঞ্জিন অয়েল কিনতে হবে। তাই আমরা ১ লিটার ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে দেই মবিল ফিলটার সহ এতে করে বাইক এর ইঞ্জিন একটু হিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা বাইক এ হাই পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য বাইকাররা প্লাগ চেঞ্জ করে থাকেন বিভিন্ন রকমের। আপনি যে রকমি করেন না কেন অবশ্যই বাইকের রিকোমেন্ডেশন অনুযায়ী করবেন। Keeway RKR 165 বাইকের Plug Type BOSCH B7RC।
যাদের বাইক এ মনে হবে যে বাইক এর টাইমিং চেইন থেকে অনেক খারাপ শব্দ আসছে তারা নিশ্চয়ই ভালব ক্লিয়ারেন্স করবেন হাই পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য। এই ভালব ক্লিয়ারেন্স অনেক গুরুত্বপূর্ন পার্ট। এটা মেকানিক্স কে কখনো হাত দিয়ে মিলাতে দিবেন না, সে যত বড় মেকানিক্স হোক অবশ্যই তাকে বলবেন ফিলারগ্যাস দিয়ে মিলাতে যেহেতু এটা চারটি ভালব তাই এর পরিমাপ হবে-IN: 0.06 থেকে 0.10mm, EX: 0.06 থেকে 0.10mm রেকোমেন্ডেড অনুযায়ী মিলালে ভালো মাইলেজ স্মুথ সাউন্ড এবং টপ স্পিড পাবেন।
বাইকটির ব্যাপারে কিছু পরামর্শঃ
- EFI ইঞ্জিন হওয়ার কারণে অবশ্যই অকটেন ব্যবহার করতে হবে
- রেডিয়েটর এর কুলেন্ট এর জন্য Motul-Hybrid Tech ব্যবহার করতে পারেন
- প্রথম ২০০০ কিলোমিটার নির্দিষ্ট ৫/৬ হাজার rpm রাখার চেষ্টা করবেন
- যেহেতু EFI বাইক তাই কোন প্রকার সিকিউরিটি এলার্ম ইনস্টল করার পর ম্যাগনেট কয়েল এ লাইন দেওয়া যাবে না
- বাইক এর সাথে যে ইঞ্জিন অয়েল দেওয়া থাকে সেটা ২০০/৩০০ কিলোমিটারে এ চেঞ্জ করে ফেলবেন
- বাইক ওয়াশ করার সময় রেডিয়েটর এ পেসার দিয়ে পানি দেওয়া যাবে না
- যেহেতু বাইকটা EFI ইঞ্জিন সে কারণে হাই পারফরম্যান্স পেতে হলে Fual-Injector Clean করতে হবে ৪/৫ হাজার কিলোমিটার পর পর।
- মবিল ফিল্টার যেটা দেওয়া থাকে সেটা ১০০০ কিলোমিটার চেঞ্জ করে নিবেন। তারপর থেকে ২/৩ হাজার কিলোমিটার পর পর চেঞ্জ করবেন
টপ স্পীড এবং মাইলেজঃ বাইকটা যেহেতু লিকুইড কুল ইন্জিন এবং চার ভালব বিশিষ্ট, তাই রাইডার এর স্কেল যদি হাই লেভেল এর হয়ে থাকে তা হলে এটা দিয়ে ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পিড তোলা যাবে বলে আমি মনে করি। মাইলেজ পেয়েছি সিটিতে ৪০ কিলমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে ৪৮ কিলমিটার প্রতি লিটার পেয়েছি।
বাইকটির ৫টি ভালো দিকঃ
- লং রাইড করলে কোন প্রকার হাতে বা কোমড়ে ব্যাথা করেনি
- রাতে বাইক এর হেডলাইট এর আলো অনেক ভালো
- ৩টি Spark Plug দেয়া হয়েছে
- Stand Safty ফিচার মানে স্টান্ড না তোলা হলে স্টার্ট হবে না বাইক
- ব্রেকিং এ দেয়া হয়েছে CBS Braking System
বাইকটির ৫টি খারাপ দিকঃ
- সিঙ্গেল হর্ন
- রেডিয়েটর গার্ড নেই
- বাইক এর ওজন অনেক বেশি
- বেশি ওজন হওয়ার কারণে কার্নারিং এ সমস্যা হয়
- বাইক এর সামনে উইন্ডশিল্ড এর কোয়ালিটি ভালো না
সর্বোপরি একটা কথাই বলবো এই বাজেটে বেস্ট একটা বাইক হচ্ছে Keeway RKR 165 । মেইন্টেন্যান্স করতে পারলে যেকোন বাইক ভাল থাকে তবে এটি যেহেতু স্পোর্টস বাইক তাই একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। আশা করি বাইকটি রাইড করে আপনিও অনেক আনন্দ পাবেন।
লিখেছেনঃ মাহমুদুল হাসান শাওন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।