Honda XBlade 160 ২৫০০ কিলমিটার রাইড রিভিউ - সাকিব আবদুল্লাহ

This page was last updated on 29-Jul-2024 06:07am , By Ashik Mahmud Bangla

আমি সাকিব আবদুল্লাহ । আজ আমি ২৫০০ কিলোমিটার রাইড করার পর Honda XBlade 160 নিয়ে আমার কিছু অনুভূতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো । তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

আমি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পড়াশুনা করতেছি। আমি ঢাকায় থাকি । পড়াশুনার পাশাপাশি একটা অনলাইন নিউজপোর্টালে সাংবাদিকতা করি। চাকরির সূত্রেই একপর্যায়ে বাইক আমার কাছে একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে দাঁড়ায় এবং পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে বাইকের শখ তো ছিলই। আমি বাইক চালানো শিখি ২০১০ সালে, তখন আমি স্কুলে পড়ি। আমার দুই মামার বাইক ছিল । তাদের একজন রাইড করতেন Bajaj CT 100 এবং অন্যজন রাইড করতেন Hero Splendor । এই দুইটি বাইক দিয়েই আমার বাইক রাইডের হাতেখড়ি হয়। হাতেখড়ি হওয়ার পর থেকে বাইকে ঘোরাঘুরির শখটা প্রবল হয়ে ওঠে । ছোট মামার Hero Splendor দিয়ে জীবনের প্রথম লং ট্যুর দেই। তখন আমি থাকতাম নেত্রকোনা। পাশের দুই জেলার ওপারে শেরপুর। সেখানের গজনী ইকো পার্কের কথা অনেক শুনেছিলাম। ২০১৩ সালে Hero Splendor নিয়ে গজনী ট্যুর দেই। আসা-যাওয়ায় ২৮০ কিলোমিটারের কিছু বেশি ছিল ট্যুরটা। এছাড়া আশেপাশের দুর্গাপুর, মুক্তাগাছা, লেঙ্গুড়া এসব জায়গায় বহুবার গিয়েছি ছোটখাটো ১০০/১২০ কিলোমিটারের ট্যুর।

xblade-160-speedometer

আমার কাছে বাইক মানে স্বাধীনতা, বাইক মানে অনিশ্চয়তা। হাইওয়েতে ১২০ কিলোমিটার স্পিডে ক্রুজিং করার সময় আপনি অনুভব করবেন স্বাধীনতা কী! আবার আমাদের দেশের রাস্তার অবস্থা সাপেক্ষে নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমাদের হাইওয়ে গুলো সেভাবে সেফ নয়। তবে হাইওয়ের এই স্বাধীনতা ভীষণ ভালোবাসি। হাইওয়েতে যখন স্পিড তুলে তখন যে এড্রেনালিন রাশ হয় তা আমার ভীষণ প্রিয়। তবে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। চলুন এবার তাহলে Honda Xblade 160 বাইকটি নিয়ে কথা বলি । প্রথম দর্শনেই প্রেম বলে একটা প্রবাদ আছে। XBlade 160 ও আমার গল্পটাও তেমন। হোন্ডা এক্সব্লেড অফিশিয়াল্লি বাংলাদেশে লঞ্চ হয় ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর। কোনো কারণে তা আমার নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ আমি শোরুমে যাই Honda CB Hornet কেনার প্রিপারেশন নিয়ে, গিয়ে দেখি এক্সব্লেড চলে এসেছে। ছবি ও ইন্ডিয়ান ভিডিও গুলোতে এক্সব্লেড দেখতে যেমন লেগেছিল তারচেয়ে অনেক বেশি ভালো লাগে সরাসরি দেখে। ব্যস! হয়ে গেল প্রেম, নিয়ে নিলাম এক্সব্লেড এবং ভালোবেসে নাম রাখলাম আলতাসুন্দরী ।

X-BLADE-160-SUSPENSION

আমি বাইকটি কিনি নেত্রকোনা শহরের "আয়মান হোন্ডা" থেকে। তখনও আমি ঢাকায়ই থাকি, ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম । ছুটিতে থাকা অবস্থায়ই আমার একাউন্টে টাকা চলে আসে। টাকাটা হাতে পেয়ে দুই দিন ধৈর্য ধরে ঢাকা থেকে বাইক কেনার মতো স্থিরতা আমার ছিল না। দুপুরে একাউন্টে বাইক কেনার টাকা চলে আসে, বিকেলেই টাকা তুলে বাইক কিনে ফেলি । রেজিস্ট্রেশন বাদে হোন্ডা এক্সব্লেডের দাম পড়েছে ১,৭২,৯০০/- টাকা। বলে রাখা ভালো, এক্সব্লেড আমার প্রথম ব্যক্তিগত বাইক । এর আগে আমি দীর্ঘদিন বাইক চালিয়েছি। আরেকজনের বাইকও আমার কাছে লম্বা সময় ছিল তবুও নিজের প্রথম পার্সোনাল বাইকের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমবার স্টার্ট দেয়ার সময় আমি কিছুক্ষণের জন্য ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছিলাম। বারবার ভাবছিলাম, অবশেষে আমার সম্পূর্ণ নিজের একটা বাইক হল। এইটা আসলেই শুধু আমার বাইক। এই অনুভুতি আসলে লিখে প্রকাশ করা খুব বেশি সহজ হবেনা । 

X-Blade-Engine

Honda Xblade 160 ফিচার্সঃ

  • সম্পূর্ণ এলইডি হেডলাইট
  • নোঙর আকৃতির টেইল লাইট ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হ্যাজার্ড লাইট
  • সামনে ৮০ সেকশনের টায়ার, পেছনে ১৩০ সেকশনের টায়ার
  • সামনের চাকায় ২৪০ এমএম পেটাল ডিস্ক ব্রেক, পেছনের চাকায় ড্রাম ব্রেক ।
  • সামনে কনভেনশনাল সাসপেনশন, পেছনে থ্রি-স্টেপ এডজাস্টেবল মনোশক সাসপেনশন ।
  • বাইকের ড্যাশবোর্ডে তাকালে আপনি পাবেন আরো একটি জরুরি জিনিস ঘড়ি ।

এছাড়া ড্যাশবোর্ডটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল। এতে আছে একটি আরপিএম মিটার, স্পিড মিটার, গিয়ার ইন্ডিকেটর, নিউট্রাল সাইন, দুইটি ট্রিপ মিটারসহ ওডোমিটার এবং সাধারণত যা যা থাকে তার মোটামুটি সবই আছে। বাইকের এলইডি হেডলাইটটা নিয়ে আমি খুব খুশি । এ৭ ফগ লাইটের মতো ক্রিস্টাল ক্লিয়ার আলো না হলেও স্বচ্ছন্দে রাতের বেলা হাইওয়েতে রাইড করা যায়। হেডলাইটের নিচের অংশে আছে বীম এডজাস্টার । এটা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ঘুরিয়ে আপনার সুবিধামতো উচ্চতায় আপনি নিজেই লাইটের বীম সেট করতে পারবেন ।

honda-x-blade-160-tail-light

নির্ধারিত ডিলার থেকে কেনায় আমি চারটা ফ্রি সার্ভিস পাচ্ছি হোন্ডার পক্ষ থেকে । আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত চলেছে ২৫০০+ কিলোমিটার । এর মধ্যে আমি দুইটি ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি । প্রথম সার্ভিসে তেমন কোনো কাজ করতে হয়নি। বাইকে কোনো সমস্যাও ছিল না । দ্বিতীয় সার্ভিসে আমি নিজের মতো করে কিছু কাজ করিয়েছি। যেমন, মনো শক এডজাস্ট, বীম এডজাস্ট, বলরেসার টাইট, গিয়ার লিভার গ্রিজিং ইত্যাদি। হোন্ডা এক্সব্লেড ১৬০ এর একটা জেনেরিক প্রবলেম আছে যেটা ৯৫ ভাগ এক্সব্লেডেই দেখা গেছে কিন্তু কোনো সমাধান এখনো হয়নি। সমস্যাটা হচ্ছে বাইকে দুইজন বসলে চেসিস থেকে একটা কটকট আওয়াজ আসে। শেষবার সার্ভিসিং এর সময় আমাকে বলা হয়েছে হোন্ডা বাংলাদেশ বিষয়টা এখনো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি দ্রুত একটা সমাধান তারা পাবেন । প্রথম এক হাজার কিলোমিটার আমি ৫ বা সাড়ে ৫ হাজার আরপিএম এর বেশিতে বাইক চালাইনি । এসময় মাইলেজ পেয়েছি ৪৭ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এরপর থেকে আমার স্বভাবসুলভ ৭/৮ হাজার আরপিএম এ বাইকটা রাইড করি। আর তখন মাইলেজও ড্রপ করেছে । এখন পাই ৩৮ থেকে ৪২ কিলোমিটারের এর মধ্যে।

আমি মাসে অন্তত দুইবার বাইকের চেন নিজে পরিষ্কার করে লুব দিই । মাসে অন্তত একবার ওয়াশ করাই । চাকার হাওয়ার প্রেশার চেক, এয়ার ফিল্টার ক্লিন, ক্লাচ এডজাস্ট এবং রেগুলার মেইন্টিনেন্স গুলো করার চেষ্টা করি । প্রথম এক হাজার কিলোমিটার আমি হোন্ডার মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েলই ব্যবহার করেছি । প্রথম ড্রেইন দেই ৩০০ কিলোমিটারে , দ্বিতীয় ড্রেইন দিই ৯৫০ কিলোমিটার। দ্বিতীয় ড্রেইন থেকে মটুল ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করছি । হোন্ডা রেকমেন্ডেড 10w30 গ্রেডের, বাজারে মটুলের অথরাইজড ডিলারের কাছ থেকে নিলে দাম পড়বে ১২০০ টাকা । আমি চেইনে মতুলের ডেডিকেটেড চেইন লুব ব্যবহার করি। বাইকের কোনো পার্টস এখনো পরিবর্তন করিনি। তবে কিছু পারফরম্যান্স মডিফিকেশনের পরিকল্পনা করছি , দেখা যাক সামনে কি হয় । Xblade 160 নিয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা-নেত্রকোনা- ঢাকা আপডাউন করেছি দুইবার। একবার ঢাকা-সিরাজগঞ্জ ফুডভিলেজ- ঢাকা ও একবার ঢাকা-মাওয়া-ঢাকা লং রাইড করেছি । হাইওয়েতে অনেকসময়েই দেখা গেছে একটানা ৩০/৪০ কিলোমিটার রাস্তা টপ স্পিড ১২২ এর কাছাকাছি ধরে রেখে চালিয়েছি । বাইকের পাওয়ার লস এ ধরনের কোনো ইস্যু হয়নি। নেত্রকোনা ও ফুডভিলেজের পথে একটানা না থেমে ১৪০ কিলোমিটারও চালিয়েছি। বেশিরভাগ সময় বাইক টপস্পিডেই ছিল। এতো প্রেশার দেয়ার পরও ইঞ্জিনে কোনো সমস্যা অনুভব করিনি ।honda-xblade-160-user-reviewহোন্ডা এক্সব্লেডের কিছু ভালো দিকঃ


  • লুকস
  • ইউনিক রোবো ফেস
  • মাইলেজ অনেক ভালো। এই সেগমেন্টের বাইকে এতো মাইলেজ আসলেই একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার । তবে এই অবিশ্বাস্য ঘটনাকেই বাস্তবে পরিণত করেছে হোন্ডা ।
  • খুবই কমফোর্টেবল বাইক। সামান্য উচুঁ হ্যান্ডেলবার, নরম ও চওড়া সিট এবং অসাধারণ একটা মনো শক সাসপেনশন।
  • স্টক হেডলাইট জাস্ট অসাধারণ

হোন্ডা এক্সব্লেডের কিছু খারাপ দিকঃ

  • চেসিসের থেকে কটকট আওয়াজ আসা
  • ব্রেকিং। পিছনে একটা ডিস্কব্রেক খুবই দরকার ছিল
  • সামনের টায়ারটা চিকন , দেখতে খুবই বাজে লাগে

সবদিক মিলিয়ে আমি আমার বাইকটির পার্ফরমেন্স এ খুব খুশি । এমন একটি বাইক আমি পেয়েছি ঠিক যেমন আমার দরকার । আপনার চাহিদা যদি হয় কমফোর্ট, মাইলেজ ও ঝামেলাবিহীন লং ট্যুর তাহলে আমি বলবো বর্তমানে নেকেড স্ট্রিট বাইকের মধ্যে Honda Xblade 160 হবে আপনার জন্য সেরা একটি বাইক। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।   লিখেছেনঃ সাকিব আবদুল্লাহ   আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।