Honda X-Blade 160 ABS ১৮০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ-জাহানুর
This page was last updated on 31-Jul-2024 11:06am , By Shuvo Bangla
আমি জাহানুর ইসলাম । আমি বর্তমানে Honda X-Blade 160 ABS বাইকটি ব্যবহার করি । বাইকটি নিয়ে আমি আমার ১৮,০০০ কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
বর্তমানে অনার্সে অধ্যায়নরত থাকলেও, বাইকের প্রতি ভালোবাসা সেই স্কুল জীবন থেকে, তখন থেকেই বিভিন্ন বাইকের উপর বিশ্লেষণ ছিলো নিত্য দিনের অভ্যেস। আসলে বাইকের প্রতি ছোটবেলা থেকেই একটা ভালোবাসা অনুভব হতো। ইচ্ছা হতো এই ২ চাকা নিয়ে বের হয়ে যাই বাংলাদেশের সব আলিগলি ঘুরতে। অবশ্য এমন সব আগ্রহ থেকেই BikeBD তে আছি।
আমার স্থায়ী আবাস মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানায়। বাইকটি আমার জীবনের প্রথম বাইক, তাই স্বভাবতই এটার সাথে আমার অনেক আবেগ,ভালোবাসা জরিয়ে আছে। আমি পরিবারের এক মাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় বাইক কেনা / বাইকে ঘোরা নিষিদ্ধ ছিলো।
কিন্তু বাসা থেকে ক্যাম্পাস আপ/ডাউন প্রায় ৪০ কিলোমিটার হওয়ায় অনেকটা বাধ্যহয়েই বাইক কিনে দিয়েছে। আর এই দিনটাই আমার সবচাইতে সারপ্রাইজ একটা মুহূর্ত। হঠাৎ করে আপু হাতে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বল্লো যা বাইক কিনে নিয়ে আয়। আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, আসলে মূহুর্তটা বলে বুঝাতে পারবো না কেমন ছিলো।
হঠাৎ করে এতগুলো টাকা তাও আবার আমার ৬/৭ বছরের একটা আক্ষেপ পূরনের জন্য, তো X-Blade বাইক কেনার ডিশিসন টা নিয়েছিলাম মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে। এর আগে এটি কেনার ইচ্ছা ছিলো না, আমার ইচ্ছা ছিলো কখোনো বাইক কিনলে Lifan KPR বাইকটা কিনবো।
যাই হোক টাকাগুলো নিয়ে চলে গেলাম সিংগাইর এ অবস্থিত হোন্ডার শোরুম এ। বাইকটি রাতের বেলা কিনে বাসায় ফিরেছিলাম তাই ওইদিন মাত্র ১.৫ কিলোমিটার চালানো হয়েছিলো । এর মধ্যেই এর ব্রেকিং, কন্ট্রোল এবং কম্ফোর্ট ফিল হয়েছিলো। নিজের প্রথম বাইক হওয়াতে অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করতেছিলো। বাইকটির দাম ছিলো তখন ১,৯২,০০০ টাকা ।
বাইকটি নেওয়ার মূল কারন ছিলো এর মাইলেজ এবং লো মেইনটেইন্স , যেহেতু আমি ছাত্র তাই মাইলেজ একটা বিশাল ব্যাপার আমার জন্য সাথে লো মেইন্টেইনস ও। কিন্তু এর লুকের প্রতি যে আমার দূর্বলতা কাজ করতো এটাও ঠিক, এর রোবোটিকস হেডলাইট জাস্ট অসাধারণ।
বাইকের ব্যাপারে বিস্তারিত -
বাইকটির ফিচারের মধ্যে অন্যতম হলো মাত্র ২ লক্ষ টাকায় Honda ব্রান্ড এর সিংগেল চ্যানেল ABS এবং ডাবল ডিক্স। সেই সাথে রেয়ার এ মনোশক সাসপেন্স যা যথেষ্ট সাপর্টিভ, গিয়ার ইন্ডিকেটর যুক্ত মিটার, LED হেড লাইট, ফ্যামিলি সিট, আপ রাইট হ্যান্ডেল বার পজিশন।
বাইকটি এই পর্যন্ত আমি ১৫,৫০০ কিলোমিটার এর অধিক ব্যাবহার করেছি। তারমধ্যে চার বার অফিসিয়াল ফ্রি সার্ভিস এবং একবার পেইড সার্ভিস করেছি। এই সবগুলো সার্ভিসই আমি করেছি হোন্ডার অথরাইজ সার্ভিস পয়েন্ট থেকে। সত্যি বলতে সিংগাইর এর সার্ভিস সেন্টারের হেড টেকনিশিয়ান এক কথায় অসাধারণ দক্ষ।
যদিও এই ১৫,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আমার আহামরি কোনো সমস্যা হয় নি এমনকি ইঞ্জিন হেড পর্যন্ত খোলা লাগে নি ট্যাপিড এডজাস্ট এর জন্য। এক কথায় হোন্ডার অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টারের সেবা ছিলো অসাধারণ। যেহেতু আমার জীবনের প্রথম বাইক এটি তাই, সহজাত ভাবে এর যন্তও এক্টু বেশিই নেই।
এর কোনোকিছু চেঞ্জ/এডজাস্ট করতে হলে বিন্দু মাত্র দেরি করি না, নিয়মিত সার্ভিসের মাধ্যমে সব কিছু চেক করা হয়, ১ মাস পরপর চাকার এয়ার প্রেশার ও অন্যান্য সাধারণ বিষয়ও চেক করি। মূলত বাইকটি যত্মের বিষয়ে আমি নো কপ্রোমাইজড।
প্রথম ৬,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি হোন্ডা মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলেও এর পর থেকে লিকুমলি সেমি সিন্থেটিক 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি এর ফলে বাইক আরো স্মুথ হয়ে গেছে। এর প্রাইজ সম্ভবত এখন ৮০০ টাকা।
এবার আসি এর মূল আকর্ষন এর মাইলেজ এ , প্রথম ২৫০০ কিলোমিটারে মাইলেজ হিসাব করা হয় নি কিন্তু ৬,০০০ কিলোমিটার পর মাইলেজ পেয়েছিলাম ৫৫+ । লাস্ট ১৪,০০০ কিলোমিটারে এর মাইলেজ পেয়েছিলাম ৫২+ যা এক কথায় অসাধারণ ছিলো।
এবার আসি এর মেইনটেইন ও ভালো এবং খারাপ দিকে -
গত ২৮ তারিখ আমি আমার ১ম পেইড সার্ভিস করিয়েছি। এই পর্যন্ত মাত্র ১ বার সামনের ব্রেক প্যাড পরিবর্তন করেছি ৮,০০০ কিলোমিটারে।
এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি ২ বার ৬,০০০ এবং ১৫,০০০ কিলোমিটারে । স্পার্ক প্লাগ পরিবর্তন করেছি ৩ বার নিজের ভুলের জন্য ২ বার পরিবর্তন করা লাগছে , ইঞ্জিন ড্রেইন নাট এক বার পরিবর্তন করেছি । এছাড়া বাইকের কিছুই পরিবর্তন করার দরকার পড়েনি। আশা করি ২০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আর কিছু পরিবর্তন করতে হবে না।
বাইকটি নিয়ে এখোনো আমার লং ট্যুর দেওয়া হয় নি, শুধু মাত্র একবার টাংগাইল মহেড়া জমিদার বাড়ি গিয়েছিলাম প্রায় ২৫০ কিলোমিটার এর রাইড ছিলো, সেখানে যথেষ্ট সাপর্ট দিয়েছিলো বাইকটি।
আমি হাই স্পীড পছন্দ করি না, তাই মাত্র ২ বার ১০০+ স্পিড তুলেছিলাম যার মধ্যে ১০৩ একবার ও ১১৮ একবার।
Honda X-Blade 160 ABS বাইকের খারাপ দিক -
- সামনে মাত্র ৮০ সেকশন চাকা যা সত্তিই অবাক করে মিনিমাম ৯০ সেকশন হওয়া উচিৎ ছিলো
টায়ার প্রেশার বেশি থাকলেই পিছের চাকা স্লিপ কর - প্রথম ৩,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়ার অনেক হার্ড থাকে
- হেড লাইটের আলো হাইওয়েতে একদমই যথেষ্ট না
- কালার কোয়ালিটি তেমন ভালো না, অল্পতেই স্ক্রাচ পড়ে
- নিন্ম মানের তেলে এর পাওয়ার লস করে
Honda X-Blade 160 ABS বাইকের ভালো দিক -
- প্রথেমেই যে দিকটি সবার নজড় কারবে তা হলো এর মাইলেজ।
- কন্ট্রোল এক কথায় অসাধারণ
- কম্ফোর্ট অতুলনীয়, প্রথমত ফ্যামিলি বাইক ফলে ৩ জন বসলেও সমস্যা হয় না, কোনো ব্যাক পেইন ইস্যু নেই
- ব্রেকিং যথেষ্ট ভালো, এর জন্য এয়ার প্রেশার সবসময় যথাযথ রাখতে হয়
- ইঞ্জিন সাউন্ড এক কথায় অসাধারণ স্মুথ, এখোনো এর ইঞ্জিন সাউন্ড এক্টুও নষ্ট হয় নি
- গিয়ার শিফট ও এখন যথেষ্ট স্মুথ পার্ফম করে
- ABS ও ডাবল ডিক্স যথেষ্ট সাপোর্টিভ।
মূলত যারা ফ্যামিলি নিয়ে রাইড করেন, ভালো মাইলেজ,কন্ট্রোল,কম্ফোর্ট, স্মুথ সাউন্ড চান তাদের জন্য এই বাইক সেরা বলে আমি মনে করি।
এই ছিলো আমার ব্যবহার করা বাইকের মালিকানা রিভিউ। ধন্যবাদ ।