Yamaha FZ-X বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ - হাসান আলী
This page was last updated on 29-Jun-2025 03:26pm , By Shuvo Bangla
আমি মোঃ হাসান আলী । পেশা : ব্যাংকার , ঠিকানা তারাগঞ্জ রংপুর। আপনাদের সাথে আমি আজ শেয়ার করবো Yamaha FZ-X বাইকের রাইডিং অভিজ্ঞতা । আমার বাসা তারাগঞ্জ উপজেলা হতে আমার অফিস রংপুর সদর এর দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার । আমি সাধারনত বাসা হতে অফিস যাতায়াত করতাম পাবলিক পরিবহনে । ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস এর প্রভাব বাংলাদেশে শুরু হলে ২৫ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ হতে গোটা দেশে লকডাউন শুরু হয় এবং গনপরিবহনের উপর অনেক বিধি নিষেধ আসে।
এর ফলে দৈনান্দিন জীবনে চলাচলের জন্য একটি বাইক এর প্রয়োজন দেখা দেয় এর মাত্র তিন মাস আগে আমি আমার শশুরের কাছ থেকে বাইক চালানো শিখেছি। শৈশবকাল হতে বাইকের প্রতি একটা ভাললাগা কাজ করতো তাই অনেক আগে থেকে বাইক কেনার ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের অসম্মতির কারনে তা সম্ভব হয়ে উঠে নি।

কোভিড-১৯ টা আমার জীবনে আর্শীবাদ হয়ে আসে। কভিড এর জন্য ফ্যামিলির পক্ষ্য হতে বাইক ক্রয়ের বিষয়ে গ্রীন সিগনাল পাই । এপ্রিল ২০২০ এর শুরুতে বাইক কেনার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কিন্তু কি বাইক কিনবো! এত টাকা কোথায় পাবো! আর আমি তো ঠিকভাবে বাইক চালাতেও পারি না , এগুলো ভাবতে ভাবতে লকডাউনের মধ্যে প্রায় এক মাস পার করলাম। এর পর সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি যেহেতু ভালোভাবে বাইক রাইড করতে পারি না আবার টাকা পয়সার ও একটা ব্যপার আছে তাই চিন্তা করলাম যে প্রথমে একটা ১২৫সিসির বাইক নিব পরে হাত ক্লিায়ার হলে আরো টাকা জমায় একটা ১৫০ সিসির একটা বাইক কিনবো। অনলাইনে ১২৫ সিসি সব ব্রান্ডের বাইক দেখার পরে ব্রান্ড ভ্যালু চিন্তা করে ইয়ামাহা ১২৫ সিসি ম্যাট গ্রীন বাইকটা পছন্দ করি। দিনটা ছিল ২৬ এপ্রিল ২০২০ ইং রোজ: রবিবার সকাল বেলা বাইক কেনার টাকা পয়সা রেডি ফ্যামিলির লোকজন সম্মতি রেডি কিন্তু শোরুম থেকে বাইক বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছিল কারন লকডাউনের কারণে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান বাদে সবকিছু বন্ধ ছিল অনেক যোগাযোগের পরে ইয়ামাহা অথোরাইজ ডিলার মাসুম মটরস, সৈয়দপুর থেকে বাইকটি আমার কাছে বিক্রির জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করে এবং সেইদিনেই আমি তাদের কাছ থেকে ১,২৯,০০০/- টাকার বিনিময়ে ইয়ামাহা স্যলুটো ১২৫সিসি ম্যাট গ্রীন বাইকটা মাসুম মটরস, সৈয়দপুর নীলফামারী হতে সংগ্রহ করি।
বাইকটা সংগ্রহের পরে এখন সৈয়দপুর, নীলফামারী হতে তারাগঞ্জ প্রায় ১২ কিলোমিটার হাইওয়ের রাস্তা দিয়ে ক্যামনে বাসায় ফিরবো! মাথায় তো বাজ ভেঙ্গে পরলো, একদিকে হেলমেট নাই, বাইকের নম্বর নাই, ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই, সিএজিতে করে বাইক কিনতে আসার সময় ১২ কিলোমিটার রাস্তায় ২ জায়গায় পুলিশ চেকপোষ্ট দেখেছি, তখন আমার এক বন্ধুর উপড় খুব রাগ হচ্ছিল ওকে এত করে রিকুয়েষ্ট করেছিলাম আমার সাথে আসার জন্য ও খুব ভালো বাইক রাইড করতে পারে কিন্তু করোনার ভয়ে সে বাসা থেকে বের হয় নাই। যাক কি আর করার ১২ কিলোমিটার রাস্তা পুলিশের ভয় সেইসাথে ভালোভাবে রাইড করতে না পারার জন্য প্র্যায় ২৫ কিলোমিটার গ্রামের রাস্তা ঘুরে বাসায় পৌছাই । বলে রাখা ভলো যে বাইক রাইড করে বাসায় পৌছানো পর্যন্ত প্রায় ৮ - ৯ বার বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়েছিল। এর পর ধীরে ধীরে আমার বাইক চালানো ঠিক হয়ে যায় এবং রাইড করার জন্য যাবতীয় কাগজ ওকে করে ফেলি আর মনে মনে চিন্তা করি এর পর কোন বাইকটা নিব ।

হাইওয়েতে চলার সময় সব সময় অন্য বাইক গুলোকে দেখতাম কোনটা বাইক আনকমন, লুক ভালো, পিলিয়নের বসতে সুবিধা হবে ইত্যাদি এই রকম দেখতে দেখতে একদিন Yamaha FZ-X এর প্রেমে পরে যাই। আর এদিকে ইয়ামাহা স্যলুটো ১২৫ সিসি টা ৩ বছরে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার রাইড করে ফেলি এবং দর দামে বনিবনা হওয়ায় ৩১ মার্চ ২৩২৩ ইং তারিখে বাইকটি ৮৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেই।
এর পর শুরু হয় নতুন বাইক সংগ্রহের পালা। কিন্তু আমার পছন্দেকৃত ইয়ামাহা এফজেডএক্স বাইকের ম্যাট কপার কালারটি আমার লোকেশনের আশেপাসে ইয়ামাহা অথোরাইজ ডিলার রংপুর সদর/সৈয়দপুর/নীলফামারী কোথায়ও পাই নাই এবং তারা আমাকে বলে যে বর্তমানে তাদের হেড অফিসে এই কালারটি এভেইলএভেল নেই আগামী কয়েক মাসেও নাকি তারা সংগ্রহ করে দিতে পারবে না মর্মে আমাকে অবহিত করে। অনেক খোজাখুজির পর খোজ পাইলাম ইয়ামাহা অথোরাইজ ডিলার বাইক সেন্টার, শটিবাড়িতে ম্যাট কপার কালারের একটি বাইকেই এভেইলএভেল আছে এটা শেষ হয়ে গেলে শেষ। অবশেষে ১ দির পরেই ০২/০৪/২০২৩ ইং তারিখ রোজ: রবিবার ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ইয়ামাহা এফজেডএক্স ম্যাট কপার কালারের ১৫০ সিসির বাইকটি ”বাইক সেন্টার, শটিবাড়ি” রংপুর হতে সংগ্রহ করি। ১২৫ সিসি হতে ১৫০সিসিতে সিফট হয়ে প্রথম দিন হতে বাইক চালানোর ফিল টাই আলাদা। মনে হচ্ছিল কেন এত দিন ধরে ১২৫সিসি বাইক চালাইলাম। বাইকটি সাধারনত আমি অফিস যাতায়াতের কারনে ব্যবহার করি কিন্তু সময় পাইলেই এটা নিয়ে ঘুরতে বের হই কারনে অকারনে এক যায়গা হতে এক যায়গা ঘুরে বেরাই।বাইকটি কিনে এমন মধুর যন্ত্রনায় পরেছি যে, লোকজনের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে শেষ, কোন কোম্পানীর বাইক, কত সিসি, চালায় মজা ক্যামন, কোথায় কোথায় ট্যুর দিলেন, হেড লাইটের আলো ক্যামন, দাম কত নিছে, নতুন মডেল নাকি ইত্যাদি।

এই বাইকটি সম্পর্কে লোকজনের এমন আগ্রহে কারনে প্রতিদিন রাইড করার সময় আলাদা রকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। আর যারাই এই বাইকে পিলিয়ন হিসেবে উঠছে তাদের কাছ থেকে বাইকের প্রশংসা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। এই বাইকের রেডি পিকাপ টা একটু কম কিন্তু হাইওয়েতে অনায়েসে ৯৮+ গতি তোলা যায় কোন ধরনের ভাইব্রেশন ছাড়া। আর এর সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস সেইসাথে ডাবল ডিস্ক থাকার কারনে এর গতি নিয়ন্ত্রন করাও অনেক সহজ। তাছাড়া এই বাইকের সামনে রয়েছে ১০০/৮০ সাইজ এবং পিছনে রয়েছে ১৪০/৬০ সাইজের অফ রোডিং টায়ার যার কারনে চাকা স্কীড করে না বললো চলে।
বাইটি সিবিইউ (CBU) ইউনিট হিসেবে আসার কারনে এর দাম অনেক বেশি ছিল অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ১০ মাস চালায় আমি কোন ধরনের সমস্যা পাই নাই। ১০ মাসে আমি প্রায় ইয়ামাহা অথোরাইজ ডিলার পয়েন্ট ক্লাসিক মটরস, রংপুর হতে ৫ টা ফ্রি সার্ভিসিং করিয়েছি, সাধারণত তারা স্পার্গ প্লাগ/এয়ার ফিল্টার/সামনের পিছনের ব্রেক সু/মবিল/এফ আই ইত্যাদি পরিবর্তন/ক্লিন করে দেয় ও YDT মাধ্যমে বাইকের যাবতীয় চেকআপ সম্পন্ন করে।
মাইলেজ আসলে সেভাবে কখনো পরিমাপ করা হয়নি, ২৫০০ কিলোমিটারের পূর্বে সিটি + হাইওয়ে মিলে এভারেজে পার লিটারে ৩৪ - ৩৯ মত পাইতাম আর ২৫০০ কিলোমিটারের পরে এটা মনে হয় সিটি + হাইওয়ে মিলে এভারেজে ৪০ - ৪২ এর মতো পার লিটারে। আমি সাধারনত আমার বাইকের যত্ন আমি নিজে নেই এবং বাইক ওয়াস থেকে শুরু করে, ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন, অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন ও চেন পরিস্কারসহ বাইকের যাবতীয় টুকটাক মেইনটেনেন্স আমি নিজেই করি এর জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি আমার সংগ্রহে আছে।
আমি ব্রেক ইন প্রিয়ডের পর থেকে Mobil 1 Racing 4T 10w - 40 Full Synthetic ব্যবহার করি এর মূল্য বাড়তে বাড়তে এখন ১৬৪০/- টাকা কিন্তু এর পারফরমেন্স এক কথায় অসাধারন। এই ব্রান্ডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের পরামর্শটা অবশ্য বাইববিডি গ্রুপ থেকে পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ১০ মাসে আমার ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক স্যু, এয়ার ফিল্টার, স্পার্ক প্লাগ ইত্যাদি পরিবর্তন করেছি তাছারা আর এখন পর্যন্ত কিছুই পরিবর্তন করি নাই।
বাইকে তেমন কোন মডিফাই করা হয় নাই শুধুমাত্র ফুয়েল ট্যাঙ্ক একটু পলি করছি এবং সিট কভারটা একটু ফুয়েল ট্যাঙ্ক এর কালার এর সাথে মিলায় বাধাই করে নিয়েছি ।এখন পর্যন্ত আমি এর সর্বোচ্চ গতি তুলছি ৯৯ কিলোমিটার / ঘন্টা চাইলেই আরও তোলা সম্ভব কিন্তু সাহস পাই না।
Yamaha FZ-X বাইকের কিছু ভালো দিক -
- অসাধারন লুক।
- সিটিং পজিশন ভালো।
- কন্ট্রোলিং ভালো।
- এক্সজোষ্টের সাউন্ড টা সেই।
Yamaha FZ-X বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- রেডি পিকআপ কম।
- হেড লাইটের আলো কম।
- স্পেয়ার পার্টস এর দাম বেশি।
- টার্নিং এ জায়গা বেশি লাগে।
- সিটি রাইডের জন্য ভালো না।
আমার জীবনে আমি কখনো লং ট্যুরে যাওয়ার সুযোগ হয় নাই তবে সামনে লং ট্যুরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তবে অফিসের কাজের জন্য এই বাইক নিয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার রংপুর টু ঠাকুরগাঁও আপ ডাউন করেছি। সর্বশেষে আমি বলতে পারি যারা হাইওয়েতে বেশি চলাচল করেন এবং একটা নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পছন্দ করেন এবং যাদের রেডি পিকাপ বেশি দরকার নেই তারা এই বাইকটি ক্রয় করতে পারেন আশা করা যায় আপনি নিরাশ হবেন না। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ হাসান আলী
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
