Honda Livo 110 বাইকের ৬০ হাজার কিলোমিটার রাইড - সোহরাব

This page was last updated on 30-Jul-2024 07:41am , By Shuvo Bangla

আমি সোহরাব হোসেন । আজকে আমি আমার Honda Livo 110 বাইকের ৬০ হাজার কিলোমিটার চালানোর রিভিও দিচ্ছি। এই বাইকটা সত্যি কথা বলতে গেলে যারা অল্পতে খুশি তাদের জন্য পারফেক্ট। আমি এই বাইক দিয়ে আমার অফিসিয়াল কাজ এ চট্টগ্রাম এর অনেক প্রত্যন্ত ও পাহাড় অফরোড এ চালিয়েছি। যেমন কাপ্তাই, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে থেকে শুরু করে সিটির ভিতরেও রাইড করেছি।

আমার রাইডিং স্টাইল হচ্ছে আমি সবসময় ইকোনোমিতে চালানোতে অভ্যস্ত। আমি হাইওয়েতে ৫৫+ আর সিটিতে ৫০+ পাই। এই বাইকটা তে কমফোর্ট টা খুবই ভালো লেগেছে সিটিং পজিশন টা খুবই আরামদায়ক বসলেই চেয়ারে বসার মতো অনুভুতি আসে। এই বাইকটার স্টক হেড লাইটের আলো টা তেমন ভালো নাহ তাই আমি M8 light লাগিয়েছি এখন মোটামোটি অনেক ভালো আলো পাওয়া যায় স্টক হর্ন টা পাল্টে DR7 নামের একটা হর্ন লাগিয়েছি মোটামোটি ভালোই সাউন্ড আসে শোনতেও ভালোই লাগে।

এই দুইটা ছাড়া আর কোনো মডিফাই করিনি। বাইকটার অন্য একটা ভালো দিক হলো বাইকটার কন্ট্রোলিং খুব ভালো এবং টার্নিং রেডিয়াস টা ভালো অল্প জায়গায় খুব সহযে টার্ন করা যায় । লাইটের অথবা ইন্ডিকেটর সুইচ ও হর্নের সুইচ সব গুলোই এখনো ভালোই ক্লিকি। এবং স্মুথনেসটাও ভালো বাইক অনেকক্ষন চালালেও সাউন্ড নষ্ট হয় না। এটা অবশ্য আপনি কোন মবিল ব্যাবহার করছেন সেটার উপর নির্ভর করে আমি সবসময় মটুল 10-30 ব্যাবহার করে আসছি।

এখনো ইঞ্জিন সাউন্ড যথেষ্ট স্মুথ। পিকয়াপ রেসপন্স ও যথেষ্ট ভালো এখনো পিলিয়ন সহ ৯০/৯৫ সহজে তুলতে পারি। তবে ৮০/৯০ এর উপরে উঠলে একটু ভাইব্রেশন পাওয়া যায় মনে হয় যেন শক্ত করে ধরে রাখতে হবে না হলে ভাইব্রেট হয়ে ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে। আরেকটা সমালোচনার বিষয় হচ্ছে এর পিছনের টায়ার সবার মতে টায়ার খুবই চিকন।

যদিও চিকন কিন্তু এত চিকন না যে আপনি কাত হয়ে পড়ে যাবেন। আমি এই টায়ার দিয়ে অনেক উচু উচু পাহার, কাদা, বালু ইভেন অফরোডিং ও করেছি এখনো আমার টায়ার স্টক টায় আছে। এখনো দিব্বি চলছে এখন আমার গাড়ি ৬০,০০০ এর ও বেশি চলছে। এই গাড়িটার আরেকটা দারুন ব্যাপার হলো এর লূক।

এটা যদিও একটা কমিউটার বাইক কিন্তু এর লুকসটা অনেকটা হর্নেট এর মতো স্পোর্টি । বসলেও সামনের মিটার এর দিকে তাকালেও একটা স্পোর্টি এবং খুব সুন্দর একটা ভালো লাগার মতো ভিও পাওয়া যায়। এবার বলি এর কিছু অসুবিধা এর কথা। এই বাইকটার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এর পিছনের সাসপেনশনটা খুবই দুর্বল। পিছনের ঝাকুনিটা একটু বোঝা যায়। দ্বিতিয়ত হলো এর ব্রেকিংটা যদিও আমারটা ড্রাম ব্রেক এর বাইক। অবশ্য আমি ইঞ্জিন ব্রেক ব্যাবহার করি সবসময়। তাই চালাতে চালাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এখন দূর থেকে হালকা ব্রেক করে করে আসলে আর অসুবিধা হয় না।

ডিস্ক ভার্সন টা নিলে অবশ্য এই সমস্যা থাকবে না। আর একটা হলো ঐ যে চাকা। এটা আসলে আপনি যদি অভ্যস্ত হয়ে যান তাহলে তো হলোই আর না হলে আপনি এক সাইজের বড় চাকা লাগিয়ে নিলেই হয়ে যাবে তাছাড়া আর তেমন কোনো সমস্যা আমি পাই নি। যেগুলো আছে সেগুলো সমস্যা নাহ যেমন আপনি একটা কমিউটার বাইক থেকে যদি প্রিমিয়াম বাইকের স্বাদ পেতে যান বা ফিচার বা রেসপন্স পেতে চান তাহলে আপনার ভালো না লাগারই কথা। কিন্তু যদি আপনি কমিউটার কে কমিউটার হিসেবে চালান। সে আপনাকে যতটুকু সার্ভিস দিয়ে ভালো থাকবে ততটুকুই তার থেকে নেন। তাহলে এই গাড়ি কেন যেকোনো গাড়িই আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে।

তবে আপনি যদি সময় মতো গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল , এয়ার ফিল্টার , প্লাগ চেক অথবা পরিবর্তন করেন গাড়ির চাকার প্রেশার ঠিক ঠাক মতো রাখেন তবে নিশ্চিত থাকুন আল্লাহর রহমতে এই গাড়ি আপনাকে কখনো নিরাশ করবে নাহ। দিনশেষে এটাই বলবো যে বাইক হচ্ছে যতকিছুই হোক দিনশেষে বাইকটা আপনার তো সেই হিসেবে বাইকটাকে নিজের মনের মতো করে যত্ন করে চালালে স্পিড ব্রেকার এ হটাৎ করে না পার হয়ে হোক গর্ত বা স্পিড ব্রেকার ধীরে সুস্থে চালালে সেও আপনাকে ভালো সার্ভিস দিবে।

এখন বলি আমি এই ৬০ হাজার কিলোমিটার চালানোতে কি কি পরিবর্তন করেছি -

  • চেইন সেট ২ বার
  • পিছনের কিট বা প্যানেল গুলো একবার ভেঙে গিয়েছিল সেটা অবশ্য আমার দোষে
  • ব্যাটারি একবার চেঞ্জ করেছি ১২০০ টাকা নিয়েছে হেমকো নিতে চেয়েছিলাম না পেয়ে ওয়ালটন এর টা নিয়েছি
  • হেড লাইটের লাইট M8 একবার কেটে যাওয়ায় আবার ঐটাই লাগিয়েছি
  • পিছনের চাকার বেয়ারিং ২ টা
  • মিটার ক্যাবল একবার চেঞ্জ করেছি। ক্লাচ কেবল একবার চেঞ্জ করেছি

সামনে ২ বার আর পিছনে ৪ বার করে ব্রেক শু পরিবর্তন করেছি। তাছাড়া আর তেমন কোনো কিছু পরিবর্তন করার দরকার হয়নি আর যথাক্রমে ১০০০ - ১২০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি । ৫ হাজার কিলোমিটর পর পর এয়ার ফিল্টার আর ৭ - ৮ হাজার কিলোমিটার পর পর প্লাগ পরিবর্তন করেছি। সবশেষে এটা বলতে চাই যারা স্পিড পছন্দ করেন নাহ। যাস্ট সিম্পল একটা বাইক খুজছেন কম্ফোর্ট সাশ্রয়ী আর রিলায়েবল তাদের জন্য হোন্ডার বাইক হবে পার্ফেক্ট চয়েজ । আমার লিখায় সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ সোহরাব হোসেন

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।