Honda Livo 110 ৩৬০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - হাসান
This page was last updated on 21-Jan-2024 07:01pm , By Shuvo Bangla
আমি মাহমুদ হাসান । ছোট বেলা থেকেই আমি একজন বাইক লাভার । আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার Honda Livo 110 বাইকের প্রতি আমার সেই লেভেলের আসক্ত ছিলো । পরিচিত কারো বাইক দেখলেই কাছে গিয়ে বাইক রাইডিং এর প্রতিটা জিনিষ সম্পর্কে ধারণা নিতাম। এক পর্যায়ে ক্লোজ ফ্রেন্ডের TVS Metro বাইক দিয়ে নিজেই বাইক রাইডিং শিখেছি।
![](https://adserver.bikebd.com/storage/app/files/1/2024/7.%20July%202024/300-x-250%20yamaha%20july%202024.webp)
পরবর্তীতে আমার আপন ছোট কাকা CT-100 বাইক কিনলেন । নিজে রাইডিং জানার পরেও বাইকের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে কোথাও গেলে আমাকে দিয়ে বাইক রাইড করাতেন । এটাই হয়ত চাচা-ভাতিজার ভালোবাসা ।
আমার নিজস্ব একটা বাইক থাকবে সেই স্বপ্ন নিয়েই বড় হতে থাকি আমি । সংসারে বাইক কিনে দেওয়ার মত এভেলিটি থাকার পরেও বলার মত দুঃসাহস আমার হয় নি । এভাবেই যত দিন যেতে থাকে স্বপ্ন গুলো যেন আমার থেকে দূরে যেতে থাকে । এক পর্যায়ে ২০২৩ সালে এসে ডিসিশন নিয়ে নিলাম যে, এ বছরই বাইক কিনব ।
![](https://adserver.bikebd.com/storage/app/files/1/2024/7.%20July%202024/suzuki%20300-X-250%20july%202024.webp)
প্রথমে সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কেনার জন্য বাজেট করলাম ৯০ হাজার টাকা । অনলাইন জগতে আমার পরিচিত অনেক ভাই ব্রাদার আছে তাঁরা সবাই সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক নিতে নিষেধ করলেন । তাদের কথা মত সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কেনার চিন্তা বাদ দিয়ে দিলাম । ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাজেট বাড়িয়ে এক লাখ বিশ হাজার টাকা করলাম । আমার পরিচিত মুখ জাকারিয়া মিনহাজ ভাই আমার বাজেট অনুযায়ী কয়েকটি মডেল সাজেস্ট করলেন ।
ইউটিউব ও গুগলে রিভিউ দেখা শুরু করে দিলাম । আমি ও আমার আহলিয়া Honda Livo এর লুক দেখে ফিদা হয়ে গেলাম । সিদ্ধান্ত ও ফাইনাল করলাম যে, Honda Livo নিবো ইনশা আল্লাহ্ । অবশেষে , অনেক ঝুট ঝামেলার পরে ২৭/০৫/২০২৩ তারিখে বাইক কেনার জন্য আমি ও আমার মাদরাসার প্রধান শিক্ষক বেড়িয়ে পড়লাম ।
![](https://adserver.bikebd.com/storage/app/files/1/2023/October%202023/kixx%20in%20article%206th%20para%20october%202023.webp)
নওগাঁ জেলার মহাদেব পুর উপজেলায় এল এম মোটরস শোরুমে এসে নিজের পছন্দের বাইক একলাখ আঠারো হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে কিনলাম,আলহামদুলিল্লাহ । এভাবেই নিজের একটা বাইক কিনে নিজের শখ ও স্বপ্ন কে পূরণ করলাম । বাইক কিনে বাড়িতে আসার পর ওইদিন যেন আমার পরিবারের জন্য অনেক খুশি ও আনন্দের দিন, সবার মনে যেন আনন্দের ঝড় বইছে ।
৪ মাস ব্যবহারের পর আজকে আমার ভালোবাসার বাইকের ছোট্ট একটা রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করব । আমার বাইকের কালার Matte Axis Gray বাইক টা আমার কাছে অনেক স্মুথ মনে হয়েছে । ৪ মাসে ৩৬০০+ কিলোমিটার রাইড করেছি । এই সামান্য পথ চলার মাঝে কখনো বাইক নিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হইনি আলহামদুলিল্লাহ ।
এই ৩৬০০+ কিলোমিটার চলার পথে আমি পুরোটাই ব্রেক-ইন পিরিয়ড মেনে চালিয়েছি । যদিও ব্রেক-ইন পিরিয়ড সম্পর্কে আমি জানতাম ই না । BikeBD তে জয়েন হওয়ার পর শুভ্র সেন দাদার ভিডিও দেখে জানতে পেরেছি ।
আর আমি সবসময় ৪ গিয়ারে ৪-৫ হাজার আরপিএম এ ৫৫-৬৫ গতিতে চালাতে পছন্দ করি । নেহায়েত প্রয়োজন না হলে ৮০+ গতিতে বাইক রাইড করি না । এখন পর্যন্ত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি । আর প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। বাইক কেনার পর থেকেই সব সময় বিশ্বস্ত পাম্প থেকে অকটেন নেই । যদিও সেই পাম্প আমার লোকেশন থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এরপরও বাইকের ভালোবাসায় এটা কিছুই না।
বাইকটাকে আমি নিজের মত করে কাষ্টমাইজ করে নিয়েছি। যেমন হেডলাইট চেঞ্জ করে M8 LED Headlight লাগিয়েছি , ডিফল্ট হর্ন এর সাথে পালসারের একটা এক্সট্রা হর্ন লাগিয়েছি ইত্যাদি । এই ৩৬০০+ কিলোমিটার রাইডিং এর মধ্যে আমি মাসে দুই বার বাড়ি গিয়েছি , যেটা আমার কর্মস্থল থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে এবং একদিনে লং ট্যুর দিয়েছি যা ৩০০+ কিলোমিটার ছিলো ও প্রতি দিন ছেলেকে নিয়ে মাদরাসায় যাওয়া-আসা ও দৈনন্দিন কাজ তো আছেই ।
এভাবে বাইক রাইড করে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৬২+ । আর আমি টপ স্পিড নিয়ে কিছু বলতে পারবো না কারণ এটা চেক করা হয়নি আমার । আমি আগেই বলেছি , ৫৫-৬৫ তে বাইক রাইড করতে পছন্দ করি কারন আমি রাইডিং উপভোগ করি ।
আমি কখনো ৮০+ স্পিডে বাইক রাইড করি নাই । তবে আমার কাছে রেডি পিক-আপ কম মনে হয়েছে তাই যে কোন গাড়িকে ওভারটেক করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিৎ । আমি বাইকের নিরাপত্তার জন্য এখনো কোন সিকিউরিটি লক ইউজ করি নাই তবে ভালো মানের একটা GPS ট্র্যাকার লাগানোর ইচ্ছে আছে ।
Honda Livo বাইকের কিছু ভালো দিক -
- আকর্ষণীয় লুক
- বেটার মাইলেজ ( ৬০-৬২ কিমি / লিটার )
- অসাধারন পারফর্মেন্স
- চমৎকার কন্ট্রোলিং
- অসাধারণ ব্রেকিং সিস্টেম
Honda Livo বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- পিছনের টায়ার চিকন মনে হয়েছে
- হেডলাইটের আলো কম মনে হয়েছে
- মিটারটা ভালো লাগে নি আমার
- রেডি পিকাপ কম মনে হয়েছে
- হর্ণ এর সাউন্ড অনেক কম মনে হয়েছে
যদিও এগুলো মেজর কোন খারাপ লাগার মত না এরপরও কিছু জিনিষ আমি চেঞ্জ করে নিয়েছি । মূলত যারা দৈনন্দিন কাজ ও অফিস যাতায়াত এর জন্য বাইক নিতে চান আমি মনে করি এই বাইকটি হবে তাদের জন্য ওয়ান অফ দ্য বেষ্ট চয়েস ।
বাইক নিয়ে এটাই আমার প্রথম রিভিউ । অনেকের কাছে আমার রিভির এর সাথে অনেক কিছু নাও মিলতে পারে সেগুলো নিয়ে তর্ক না করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আল্লাহর নাম নিয়ে বাইক চালাবেন , ভালো মানের সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করবেন । রেসিং নয় রাইডিং উপভোগ করুন , ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মাহমুদ হাসান