Honda CBR 150R Thailand Version মালিকানা রিভিউ - তুষার
This page was last updated on 01-Aug-2024 06:36pm , By Shuvo Bangla
আমি আহমেদ তুষার , আমার বাসা ঢাকার খিলগাঁও । আমি বর্তমানে একটি Honda CBR 150R Thailand Version ২০১৬ মডেল এর বাইক ব্যবহার করছি ।
Honda CBR 150R Thailand Version মালিকানা রিভিউ - তুষার
বাইকটি আমি ২ বছর ৪ মাসে ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি । অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম বাইকটি নিয়ে একটা রিভিউ লিখবো । বাংলাদেশের অনেক সুনাম সম্পন্ন এবং টপ স্পিড নিয়ে বিতর্কিত একটি বাইক এটি । যদিও বাংলাদেশ এর বাজারে আর এই বাইক আসবে না । কারন হোন্ডা থেকে এর প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে গেছে ।
ছোট থেকে বাইক ভক্ত ছিলাম । বড় মামার সাথে বাইকে প্রচুর ঘুরতাম আর বাইকের প্রতি আগ্রহ তখন থেকেই শুরু হয় । এস.এস.সি পরীক্ষার পরে বাইক নেওয়ার কথা থাকলেও আমার পড়ালেখার কারনে চট্টগ্রাম শিফট হয়ে যাওয়ায় আর বাইক কেনা হয়নি । পড়ালেখা যখন প্রায় শেষের দিকে তখন ঢাকাতেই থাকা হতো বন্ধুদের সাথে বাইক দিয়ে আবার ঘুরতে ঘুরতে এবং বড় মামার সাথে তার বাইকে চড়ে ঢাকার বাইরে ঘুরাঘুরি এতদিনের হারিয়ে যাওয়া ইচ্ছে আবার মাথায় চেপে উঠে । অনেক কষ্টে তখন আম্মাজান কে আমার মনের কথা বুঝিয়ে আমার বাইক কেনার জন্য আব্বুকে রাজি করানো হয়। যেহেতু বাইক তেমন একটা চালাতে পারিনা তাই প্রথম বাইকে হিসেবে 2018 তে বাংলাদেশ এর নতুন বাইক গুলোর মধ্যে Bajaj Pulsar NS 160 বাইকটি কিনে দেয়া হয়।
বাইকটি কেনার পর থেকেই টুকিটাকি ট্যুর দিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। বাইক চালানো শেখার কয়েক মাসের মধ্যে এক বড় ভাই এর সাথে আমার সাজেক যাওয়ার প্লান হয়ে যায় সম্পূর্ন ট্যুরে Bajaj Pulsar NS 160 বাইকটি আমাকে খুব ভালো সাপোর্ট দিলেও এর চিকন চাকার কারনে বাইকটার ব্যালেন্সিং এ তেমন ভরসা পাচ্ছিলাম না ।
সাথে থাকা বড় ভাইয়ের Yamaha R15 V2.0 এর সাথে টিকে থাকা যাচ্ছিলোনা, ফেরার পথে রাত এবং আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকার কারনে উনি আমার অনেক আগেই ঢাকা পৌছে যায় । টানা ৯ ঘন্টা বৃষ্টির সাথে মোকাবেলা করে আমার ঢাকা পৌছাতে সকাল ৮টা বেজে যায় । তখন বুঝলাম আজকে একটা ভালো বাইক থাকলে এরকম ভয়াবহ রাত পার করতে হতোনা । বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে ছিলাম বাইক নিয়া ট্রাভেল করতে হলে এমন একটা বাইক লাগবে যার পার্ফরমেন্স অনেক ভালো হতে হবে এবং ত্রুটি মুক্ত হতে হবে ।
Click To See Honda CBR 150R Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
পাশাপাশি কম্ফোর্ট ,কন্ট্রোলিং ও মেইন্টেন্স খরচ এসব ও মাথায় ছিলো । এর মধ্যে হুটকরে আব্বাও আমাকে স্পোর্টস বাইক কিনে দিতে রাজি হলেন । ২০১৮ সালে তখন সবে মাত্র Honda CBR 150R (Indonesian ) এবং Yamaha R15 V3.0 এর খুব জনপ্রিয়তা শুরু হলো। কিন্তু কোনটাতেই মন বসতেসিলোনা । ফেসবুক এর মাধ্যমে পরিচয় হওয়া CBR Rider Murad ভাই এর সাথে সংযুক্ত থাকায় তার ইন্ডিয়ান সিবিয়ার চালানো এবং তারপরে নেওয়া থাই সিবিয়ার এর পোস্ট দেখতে দেখতে উৎসাহিত হয়েছিলাম অনেক আগে থেকেই । তখন এই বাইক এর স্পেসিফিকেশন নিয়ে গুগোল রিচার্স শুরু করি , এবং একটা টাইমে মনে হলো বাংলাদেশ এর সবধরনের রোড কন্ডিশন এর জন্য Honda CBR 150R Thai মডেল এর বাইকটি বেস্ট একটি বাইক হবে । আমি এমন একটি বাইকই খুজতেছিলাম আমার যা যা দরকার ছিল সব কিছুই এই বাইকটির মধ্যে আছে। বাইকটিতে একটি ১৪৯.০ সিসির ইঞ্জিন দেওয়া আছে , ১৪৯ সিসির ইন্নজিন হয়েও থ্রটল রেস্পন্সে বাংলাদেশের টপ সেগমেন্ট এর কারো থেকে কম না । বাইকটির মাইলেজ বেশ ভালো । বাইকটি থেকে ৪০+- মাইলেজ পাওয়া সম্ভব । এই বাইকটি ১৮.২৮ বিএচপি টর্ক উৎপন্ন করে ১০,৫০০ আরপিএম এ , এবং ১২.৬৬ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে ৮৫০০ আরপিএম এ ।
বাইকটির টপ স্পিড কারো কারো থেকে ১৬৬ পর্যন্ত শুনেছি । চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে এটাই নিবো , অনেকেই তখন বলেছিল বাজারে থাকা ইন্দোনেশিয়ান সিবিয়ার এবং R15 V3.0 এর যুগে কি বুঝে এই পুরান মডেলের হেডলাইট ওয়ালা সিবিয়ার কিনতেসি । বাইকটা সবার কাছে পুরানো মনে হলেও আমার কাছে অনেক সুন্দর লাগতো । আব্বা যেদিন টাকা দিলো পুরো ইস্কাটন ও আশেপাশের গ্রে মার্কেট এর সকল বাইকের দোকান খুজেও এই বাইক টি পাওয়া যাচ্ছিলোনা । ওইখানের এক পরিচিত দোকানদার থেকে জানতে পারি “Bike Zone“ নামে একটি শোরুমে একটি মাত্রই কালো সিবিয়ার আছে এবং এর দামাদামি হচ্ছে।
শুনা মাত্রই আমি পৌছে যাই ওই দোকানে ।যে ক্রেতা ছিলো তিনি পুরান ঢাকার পরিচিত হওয়ায় কথা বার্তা হয় ওনার বাইক যুগের সাথে তালমেলানো হতে হবে তাও উনাকে কোনরকমভাবে বুঝিয়ে R15 V3.0 কিনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম এবং পরে আমি 4লাখ53হাজার টাকায় আমার সবচেয়ে পছন্দের বাইকটা কিনে ফেলি । বাইক টা ক্রয় করে বাসায় যাবার পথে আমি অনেক হাসি খুশি ছিলাম মনে হচ্ছিলো ট্যুর দেয়ার জন্য পার্ফেক্ট সংগী পেয়ে গেলাম । বাইকটি আমার কাছে পার্ফেক্ট মনে হওয়ার কারন গুলো হচ্ছে এর ইঞ্জিন স্মুথনেস, লুক , মাস্কুলার বডি কিট , স্টাবিলিটি ও ব্রেকিং। এরপর থেকে শুরু হয় আমার বাইক দিয়ে পুরো দমে ট্রাভেলিং । প্রথম দিকে মাইলেজ একটু কম ছিলো যদিও সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায় , যেহেতু Honda CBR 150R আমার একমাত্র সফরসংগী যত্ন এবং সার্ভিস নিয়ে কার্পন্য করিনি সার্ভিস সবসময় করিয়েছি GearUp , বংশালের প্রিয়াংকা মটরস এর জসিম ভাই এর থেকে।
ধীরে ধীরে বাংলাদেশ চষে বেড়ানো শুরু হলো এবং বাইক চালিয়ে তখম খুব শান্তিতেই ছিলাম ,কিন্তু সেই সুখ আর বেশিদিন টিকেনি 6 এপ্রিল 2019 রাতে টুরে যাওয়ার সময় আমার বাইকটি অস্ত্রমুখে ছিনতাই করে নিয়ে যায় টি.এস.সি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কয়েকজন কুলাংগার শিক্ষার্থী । এতো ভালো একটি প্রতিষ্ঠান এ থেকেও ছিলোনা তাদের নুন্যতম শিক্ষা । তখন BikeBD গ্রুপে আমি পোস্ট দেই প্রায় এক মাস দুই দিন পরে বাইক বিডি এর পোস্ট থেকে আমার ফোন নাম্বার এ যোগাযোগ করে আমার বাইকের তথ্য দেয় যার ফলে আমি পুনরায় আমার বাইক উদ্ধার করতে পারি । আমার বাইক ফিরে পাওয়ার জন্য BikeBD এবং যারা যারা এই পোস্টটি শেয়ার করেছিলেন তাদের জানাই আমার মনের গভীর থেকে সম্মান ও ভালবাসা । আমি আমার বাইকে শুরু থেকেই ব্যবহার করেছি Motul 300v 10w40 যার বাজার মূল্য 1450 থেকে 1550 টাকা । এটি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল হওয়াতে আমি নিসন্দেহে 2000-2500 কিলোমিটার চালাই । এই 30000 কি.মি. এ পরিবর্তন করা পার্টস গুলো নিম্নরুপ এবং কারন সমূহ :
- হ্যান্ডেল - এক ছাগল বাচাইতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে হ্যান্ডেল বাকা হয়ে যায় ।
- বলরেসার - বাংলাদেশের রোড এর অবস্থার দরুন এখন পর্যন্ত 3 বার পরিবর্তন করেছি ।
- মনোশক - আমার বাইক 23000 কি.মি. চলাকালীন পিলিওন সহ অনেক গতিতে একটি অনেক উচু স্পিডব্রেকার মেরে দেই তার ফলাফল মনোশক টা নষ্ট হয়ে যায়।
- প্লাগ ও কয়েল - এক্সিলারেশন স্মুথ হওয়ার জন্য দুটোই পরিবর্তন করেছিলাম ।
- এয়ারফিলটার - যেহেতু থাইল্যান্ডে এই বাইকটির প্রোডাকশন অফ হয়ে যায় বাংলাদেশে এই বাইকের পার্টস এভেইলেভিলিটি একটু কমে যায় যার ফলে এতো ধকল না নিয়ে “Ferrox” নামের High Air-Flow সম্পন্ন এয়ার ফিল্টার লাগাই । যেহেতু এটা স্টিল মেশ যুক্ত এয়ারফিল্টার বাংলাদেশ এ যেই পরিমান বালু এবং ময়লা রাস্তা ঘাটে তাই পরে K&N এর High Air-Flow এয়ারফিল্টার ব্যবহার করা শুরু করি এইসব এয়ার ফিল্টার সাধারণত ওয়াশেবল এবং রিইউসেবল প্রায় 50000 কিমি পর্যন্ত .
- স্পকেট ও চেইন - সিবিয়ার সবগুলো মডেলে আমার দেখা সবচেয়ে Common প্রব্লেম হলো চেইন নয়েজ তাই এর থেকে রক্ষার্থে “SSS” ব্র্যান্ড এর স্পকেট সেট এবং “GearX BD “ এর DID চেইন ব্যবহার করা শুরু করি।
- এক্সজস্ট বা হলার - যেহেতু হাই ফ্লো এয়ারফিল্টার ইউজ করি তাই এইটা ব্যবহার বাঞ্চনীয় মনে হলো এবং বাইক থেকে স্টক সাইলেন্সার এর ওজন কমানোর জন্য ও বটে । মিরপুর 10 থেকে কাউসার ভাই থেকে বানানো এস.এস বেন্ড পাইপ দিয়ে ব্যবহার করছি।
- ষ্টিল ব্রেইডেড ব্রেকিং হোস পাইপ এবং পেটাল ডিস্ক - ভালো ব্রেকিং এর সুবিধার্থে এই গুলো পরিবর্তন করা.
- টায়ার - স্টক IRC রোড উইনার টায়ার 17000 কি.মি চালানোর পর বাধ্য হয়েই আমার এক বন্ধুর পরামর্শ তে পিরেলি এঞ্জেল সিটি টায়ার লাগাই আরো স্টেবিলিটি ও গ্রিপ এর জন্য।
- ফগ লাইট - যেহেতু অনেক টুর দিয়েছি রাতে চালানোর সুবিধার্থে লাগিয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হলো শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান এবং থাই সিবিয়ার এই ফগ লাইট হেডলাইটের নিচে এতো সুন্দর ভাবে সেট করা যায় তা আর অন্য বাইকে এভাবে করা যায়না বা করলেও আশানুরূপ ফলাফল থাকেনা।
মাইলেজ : 28-36 ডিপেনডস অন রাইডিং স্টাইল । এই বাইকে আমার তোলা সর্বোচ্চ গতি 155+
Honda CBR 150R Thailand Version বাইকটির কিছু ভাল দিক -
- হোন্ডার প্রায় সকল পার্টস এক হওয়ায় কখনো তেমন সমস্যা হয়নি কারন ইন্ডিয়ান ,ইন্দোনেশিয়ান ,থাইলেন্ড সব দেশ গুলোর বাইকের বেশির ভাগ পার্টস মিলে।
- লং রাইড এ এর চেয়ে কম্ফরটেবল কিট সম্পন্ন স্পোর্টস বাইক আছে কিনা সন্দেহ ।
- হাইস্পিড এ এর স্টেবিলিটি এবং ব্রেকিং অসাধারণ ।
- মেইন্টেনেন্স খরচ তেমন আহামরি না ।
Honda CBR 150R Thailand Version বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- বাইকটির সুইচ গুলো আরো উন্নত মানের দেয়া যেতো ।
- স্টক হর্নের সাউন্ড কম ।
- Stock হেডলাইটের আলো একটু কম ।
- Honda ব্রান্ড এর প্রতি আজীবন কম্পলেইন ইঞ্জিন কিল সুইচ না থাকা।
বাইকটি দিয়ে আমার সর্বোচ্চ টুর হচ্ছে “ ময়মনসিংহ - ঢাকা - খাগড়াছড়ি -রাংগামাটি -বান্দরবন -কক্সবাজার-ঢাকা “ যেই ট্যুরে Honda CBR 150R Thailand Version বাইকটির আমাকে একটি বার ও নিরাশ করেনি । সবদিক থেকে আমার মতে সিটি রাইডিং ও হাইওয়ে রাইডিং এর জন্য এই বাইকটি বেস্ট ,আমি একজন Honda CBR 150R Thailand Version এর বাইক ইউজার হিসেবে সন্তুষ্ট । কখনো রিভিউ বা কিছুই লিখিনি তাই যে কোন ভুল ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন । চলুন দেখে আসি All Honda bike price in Bangladesh রিভিউটির পাশাপাশি। সর্বদা সেফটি মেইন্টেইন করে ফুল ফেস সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করবেন, আল্লাহ হাফেজ ।
লিখেছেনঃ তুষার
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।