Honda CB Hornet 160R ১৫০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - জিসান রহমান

This page was last updated on 11-Jul-2024 08:52am , By Ashik Mahmud Bangla

আমি জিসান রহমান। আজ আমি আমার Honda CB Hornet 160R বাইকটি নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করবো । বর্তমানে আমার বাইকটি ১৫ হাজার কিলোমিটার রাইড করছি।

Honda CB Hornet 160R ১৫০০০ কি.মি.রাইড অভিজ্ঞতা

আমি বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট এ কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। বর্তমান এ থাকা হয় কুড়িল, ঢাকা। বাইক রাইড করার মধ্যে যে কি ধরনের একটা ভালবাসার, আবেগ কাজ করে এটা আসলে বলে বুঝানো যাবে না। এটা শুধুমাত্র বাইকাররা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারেন। রাস্তা উপভোগ করে আরামের সাথে চলার জন্য বাইকের বিকল্প কোন কিছু আছে বলে মনে হয়না। ১ বছর ৯ মাস আগে যখন CB Hornet 160R বাইকটি দেখতে গিয়েছিলাম তখন এটা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে পার্ফেক্ট কম্বিনেশনের একটি বাইক ছিল। বাইকটির লঞ্চিং প্রোগ্রামে গিয়ে প্রথম দেখাতেই খুব ভালো লেগে যায়। বলা যায় অনেকটা প্রথম দেখায় প্রেমের মত। আর এরই মধ্যে যখন বাইকটির দাম সাধ্যের মধ্যে (ওই সময়ে এই ধরনের বাইকের মধ্যে কম ) থাকে তখন আর দ্বিতীয়বার না ভেবেই বাইকটি কেনার সিদ্ধান্ত নেই। 

বাইকটা একবার টেস্ট রাইড করার পরও বেশ ভালো লাগে। তারপরে যখন বাইকটি নিতে যাই, ঢাকার অনেক শো রুমে যোগাযোগ করেও বাইকটি পাচ্ছিলাম না কারণ আমি প্রি-বুকিং করিনি। অবশেষে আল্লাহর রহমতে এক জন পরিচিত থাকায় প্রি-বুকিং ছাড়াই Masminu Motors থেকে নিতে পারি পছন্দের বাইকটি । তখন Honda CB Hornet 160R এর দাম ছিল ১,৯৯,৮০০ টাকা (যদিও এখন অনেক কমে গেছে)। বেশকিছু বাইক রাইড করলেও নিজের বাইক এটাই প্রথম। তাই কিনতে যাওয়ার অনুভূতিটা ছিলো অসাধারণ। যেটা জীবনের অন্যতম সেরা একটা মুহূর্ত বলা যায় । যখন আমি প্রথম বাইকটি চালানোর জন্য বাইকে বসি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না এটা সত্যিই আমার। অনেকটা স্বপ্নের মত লাগতেছিল। পাশে থাকা আব্বু এবং বন্ধুরা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ও ছবি তুলতেছিল। এতটা অবাক লাগতেছিল যে আমি বাইকটি স্টাট করতে পারতেছিলাম না আনন্দে হাত কাপছিল। 

আগে আমার বাসা থেকে ভার্সিটিতে বাসে যেতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগাত। কিন্তু এখন বাইক দিয়ে রাইড করে খুব সহজে কম সময়ে যতে পারি। বাইক রাইড করে জ্যাম এর ভিতর, যে কোন কিছু থেকে খুব সহজে কিভাবে যাওয়া যায় তা সবারই জানা আছে। বর্তমানে ঢাকা সিটির সময় স্বল্পতা দুর করার একমাত্র বাহন হচ্ছে বাইক। বাইকটির কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর লুক এককথায় আমার কাছে অসাধারণ লাগে। এরপর চলে আসে পিছনের লাইট আমার দেখা বাংলাদেশের অন্য যেকোনো বাইকের থেকে অনেক সুন্দর এবং অদ্বিতীয়। প্রশস্থ চাকা এর সাথে ব্রেক দারুণ সমন্বয় আছে বাইকটিতে। ভাঙা রাস্তা খুব ভালোভাবে রাইড করতে পেরেছি তেমন কোন সমস্যা হয়নি।

Click To See Honda CB Hornet 160R Test Ride Review

মাইলেজ বেশ সন্তজনক যা আমার মত ছাত্রদের জন্য বেশ সুবিধার। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে কয়েক ঘণ্টা রাইড করলেও খুব বেশি সমস্যা হয় না। সিটিতেই বেশি চালানো হয় মাইলেজ এভারেজ ৩২-৩৪ কিলোমিটার প্রতি লিটারের এর মধ্যেই থাকে। খুব বেশি বাইক মেইনটেন্যান্স করতে পারি কিনা জানিনা, তবে সাধ্যমত চেষ্টা করি মেইন্টেনেন্স করতে। নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করা, ওয়াশ করা, এয়ার ফিল্টার চেঞ্জ করা, চাকার প্রেশার চেক করা, চাইন এডজাস্ট করা। এগুলো করেই নিশ্চিন্তে পথ চলতেছি । 

আমি বাইকটিতে সার্ভিস সেন্টারের হোন্ডা ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি। 10w30 গ্রেড এর ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি । সার্ভিস সেন্টার থেকে দাম রাখে ৪৫৫টাকা । Honda CB Hornet 160R ১৫,০০০ কিলোমিটার রাইড করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র দুই চাকার ব্রেক প্যাড আর এয়ার ফিল্টার চেঞ্জ করছি। আমি কোন এক্সট্রা লাইট, এলার্ম সেট করিনি। যার ফলে এখন পর্যন্ত কোন প্রবলেম হয়নি। কোন প্রকার মডিফাই ও করিনি। সর্বোচ্চ গতি তোলা নিয়ে আমার কখনো খুব একটা বেশি আগ্রহ না থাকার কারণে ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা রাইড করেছি পরে আর চেষ্টা করিনি। তবে ১০০+ এ বাইকটিতে কিছুটা ভাইব্রেশন, শব্দ এবং আনকম্ফোর্ট ফিল করি। তখন ব্রেকিং টার রেস্পন্স একটু কম মনে হয়েছে।

বাইকটির যে পাঁচটার দিকে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগছেঃ

  • বাইকটির লুক
  • কম্ফর্ট এন্ড ব্রেক
  • পিছনের লাইট
  • মাইলেজ
  • টার্নিং রেডিয়াস

বাইকটির যে পাঁচটার দিকে আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগছেঃ

  • হেড লাইটের আলো খুবই কম
  • স্পিড উঠতে অনেক বেশি টাইম লাগে
  • হোন্ডার থেকে এ ধরনের বিল্ড কোয়ালিটি আশা করিনি
  • লুকিং গ্লাসের ভিউ কম
  • চেইনে শব্দ

বাইকটি নিয়ে এখন পর্যন্ত লম্বা দূরত্বের কোনো ভ্রমণে যাওয়া হয়নি। তবে ১৩০ কিলোমিটারের একটি ভ্রমনে যাওয়া হয়েছিল। রাস্তা খারাপ থাকলেও বাইকটি থেকে আমি খুব ভালোই ফিডব্যাক পাই। রাইডার সিট পিলিয়ন সিট অনেক আরামদায়ক। 

সবশেষে এটাই বলতে পারি যে বাইকটি বাজেট হিসেবে তখনকার সময়ের অন্যতম একটি সেরা বাইক ছিল এবং বর্তমানে অন্যতম সেরা না হলেও সেরাদের মধ্যেই আছে। তবে বর্তমান সময়ে বাইকটার দাম যেভাবে কমতে শুরু করেছে তাতে যারা আগে বাইকটি কিনেছিলাম আমরা হতাশ এবং অবাক। তবে বর্তমান সময়ের কথা হিসেব করলে আপনি এই বাজেটে চিন্তা করলে Honda CB Hornet 160R বাইকটি হবে আপনার জন্য বেষ্ট একটি বাইক। সবদিক বিবেচনা করেই আমি বাইকটি কিনেছিলাম। এই ১৫ হাজার কিলোমিটারে একবারের জন্য ও মনে হয়নি আমি কোন ভুল সিধান্ত নিয়েছি। ধন্যবাদ সবাইকে।  

 লিখেছেনঃ জিসান রহমান   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।