Honda CB Hornet 160 CBS ৪৫০০ কিলোমিটার রাইড – কিবরিয়া
This page was last updated on 31-Jul-2024 12:12am , By Shuvo Bangla
আমার নাম কিবরিয়া। আমি বেসরকারী একটা ব্যাংকে কর্মরত আছি এবং ঢাকায় উত্তরা থাকি। আমি একটি Honda CB Hornet 160 CBS বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। চলুন দেখে আসি All Honda bike price in Bangladesh রিভিউটির পাশাপাশি।
ছোটবেলা থেকে বাইকের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ ছিল। বন্ধুদের বাইক দিয়ে বাইক চালানো শুরু । প্রথমে আমি Bajaj Pulsar 150 বাইকটা ব্যবহার করতাম । বাইকটা আমি প্রায় তিন বছর চালানোর পরে বিক্রি করি।
নতুন বাইক হিসাবে কি কিনবো বুঝতে পারছিলাম না। অবশেষে আমি Honda CB Hornet 160 CBS বাইকটা ক্রয় করি । কেন আমি এই বাইকটা কিনলাম এবং কিনে কতটুকু সন্তুষ্ট হয়েছি, কি সুবিধা কি অসুবিধা হয়েছে সেটার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। পালসার বাইকটা বিক্রি করার পর তার সাথে আরো কিছু টাকা এ্যাড করে আমার বাজেট দাঁড়ায় ২ লক্ষ টাকা। প্রথমে আমি দেখি এই বাজেটে বাজারে কি কি বাইক পাওয়া যায়। দেখলাম সুজুকি, পালসার এন এস, টিভিএস ফোর ভি, Honda X-Blade এরোকম বেশ কয়েকটা বাইক পাওয়া যায়। আমার বাইক চালানো বলতে অফিস থেকে বাসা আর মাঝে মাঝে একটু আড্ডা দিতে ১০/১২ কিলো দূরে যাওয়া। সব বাইকের কিছু কিছু সুবিধা অসুবিধা থাকে সব দিক মিলিয়ে আমার দরকার ছিলো ভালো ব্রেকিং, কমফোর্ট, মাইলেজ, লুকিং।
Honda CB Hornet 160R Test Ride Review By Team BikeBD
Suzuki Gixxer 155 আমার পছন্দ থাকলেও পিলিয়ন সিট ভালো না। আমার স্ত্রী ও একটা ৫ বছরের ছেলে আছে । সে ক্ষেত্রে Honda CB Hornet 160 CBS বাইকটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। বাইকটির মাইলেজ ভালো, লুকিং সুন্দর, একটা ১৬০ সিসি বাইক সাথে সিবিএস ব্রেকিং ১,৯০,০০০ টাকা প্রাইজ রেঞ্জ সব কিছু মিলিয়ে এক কথায় পরফেক্ট একটি বাইক। এবার আসি বাইক কেনার পরের অভিজ্ঞতায়। বাইকের ব্যাপারে ছোটবেলা থেকে ইন্টারেস্ট থাকায় নেটে বেশ ঘাটাঘাটি করা হয় বাইক নিয়ে , তাই বাইক ক্রয় করার পরে বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড খুব ভালোভাবে মেইনটেইন করি।
সময়মত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি, আর পি এম মেইনটেইন করে চলেছি। বাইকটির লুকিং এর কথা বলতে গেলে এক কথায় অসাধরণ। এর হেড লাইটের ডিজাইন, মাসকুলার ফুয়েল ট্যাংক আর পিছনের এক্স সেপ টেল লাইট সত্যি অসাধারণ দেখতে।
খেয়াল করে দেখেছি বাইকটি রাস্তার পাশে রাখলে সবাই এক নজর দেখে । বাইকটিকে লুকিং এর দিক থেকে আমি ১০০ তে ৮০ দিবো। সিটিং পজিশন আরামদায়ক । আমার হাইট ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি তারপরো কোন প্রবলেম ফেস করিনি। এবার বলি বাইকটির মাইলেজ সম্পর্কে – বাইকটি আমি ঢাকা সিটিতে রাইড করে এভারেজ ৪৫+ মাইলেজ পাই। একটা ১৬০ সিসির বাইকে ৪৫+ মাইলেজ পাওয়া আমার কাছে যথেষ্ট ভালো বলে মনে হয়। লুকিং এবং মাইলেজ এর থেকেও সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ব্রেকিং। সিবিএস থাকায় এর ব্রেকিং যে কোন দামী বাইককে বিট করবে এটা সিওর। তাছাড়া বাইকটির সামনে ১০০ / ৮০ সেকশন এর টায়ার আর পেছনে ১৪০ / ৭০ সাইজের মোটা চাকা হওয়ায় ব্রেকিং পারফরম্যান্স অনেক ভালো । বাইকটা যখন ৫০-৫৫ তে চলে তখন বাইকটি খুব স্মুথ লাগে। বাইকটি আমি ৪৫০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি। এর মধ্যে একবার এয়ার ফিল্টার ছাড়া আর কোন কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি ।
ইঞ্জিন অয়েল শেষবার ফুল সেন্থেটিক ব্যবহার করেছি যার পারফরম্যান্স খুব ভালো পেয়েছি। তবে বাইকে নতুন করে কিছু মডিফাই এবং কিছু নতুন কিট এ্যাড করেছি। হ্যান্ডেলের গুটকি দুইবার খুলে পড়ে যাওয়াই হ্যান্ডেল পরিবর্তন করেছি। শাড়ি গার্ড, মার্ড গার্ড, সাইলেন্সার গার্ড এগুলো লাগিয়েছি। কোন ধরণের সমস্যা আজ পর্যন্ত ফেস করিনি। ১,৯০,০০০ টাকা হিসাবে বাইকটা সব দিক থেকেই পার্ফেক্ট। তারপরও কিছু কিছু অসুবিধা আমার কাছে মনে হয়েছে।
Honda CB Hornet 160 CBS বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- বাইকের সুইচ কোয়ালিটি ভালো না ।
- ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই।
- অল্প কিছুক্ষণ রাইড করলেই হাতে পেইন করে।
- লং রাইড করলে কিছুটা পাওয়ার ড্রপ করে
- সাসপেনশন অনেক হার্ড। ভাঙ্গা রাস্তায় চালালে কোমর ব্যাথা করে।
বাইক এর সামনের চাকা স্কিড করে। যদিও এটা চালানোর উপর ডিপেন্ড করে তারপরও তিন বছর পালসার চালালাম একদিনের জন্য চাকা স্কিড করলো না আর আট মাস হর্ননেট ইউজ করে তিনবার চাকা স্কিড করছে যেটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। সব বাইকেরই ভালো মন্দ দিক থাকে সেই হিসেবে Honda CB Hornet 160 CBS বাইকটা খুবই ভালো লেগেছে এবং বাইকটি কম্ফোর্টেবল। আমার মত যারা চাকরিজীবী তাদের জন্য বাইকটা পারফেক্ট হবে। আমরা অনেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান , যাদের একটা বাইক কেনার জন্য টাকা ম্যানেজ করতে অনেক কষ্ট হয়। সেই কষ্টার্জিত টাকায় কেনা স্বপ্নের বাইকটা কতটা যত্নে রাখতে হবে সেটা আসলে কাউকে বলে দেওয়া লাগে না। তারপরও বলি প্রতিদিন বাইক বাসা থেকে বের করার আগে ভালো করে মুছে নেই। সপ্তাহে একদিন ওয়াশ করি বা দোকান থেকে করাই। আমি সব সময় মনে করি যে মেশিনকে আমি যত্ন নেব সে মেশিনও আমাকে যত্ন নেবে।
আরেকটা কথা না বললেই না সেটা হলো ভাই কষ্টের টাকায় কেনা বাইক এখানে সিকিউরিটির ব্যাপারে কোন কম্প্রমাইজ হবে না। ভালো মানের লক ইউজ করতে হবে। আমার ট্যাস লক ইন্সটল করা আছে তারপরো আমি তিনটা তালা ইউজ করি। হাস্যকর হলেও কিছু করার নেই আমার৷ বাইকের নিরাপত্তা স্বার্থে ভালো মানের সিকিউরিটি কিট আর নিজের নিরাপত্তা স্বার্থে নূন্যতম একটা সার্টিফাইড হেলমেট ইউজ করা অত্যাবশ্যকীয়। সবাই ভালো থাকবেন আর নিরাপদে রাইড করবেন। আল্লাহ হাফেজ।
লিখেছেনঃ কিবরিয়া
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।