Hero Thriller 160R টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 29-Jul-2024 11:40pm , By Raihan Opu Bangla
যখন একটি মোটরসাইকেল কোম্পানি কমিউটার মোটরসাইকেল তৈরি করার জন্য বিখ্যাত, তখন তারা ভাবল যে তারা একটি স্পোর্টস কমিউটার মোটরসাইকেল তৈরি করবে। আর সেই চেষ্টায় বাইকটিকে যতটুকু সম্ভব ততটুকু পারফেক্ট করার।
Hero Thriller 160R টেস্ট রাইড রিভিউ
প্রথমত যেটা লাগবে সেটা হচ্ছে ১৬০সিসি এর একটি ইঞ্জিন। তাই Hero Bike কোম্পানি ব্যবহার করেছে হিরো হাঙ্ক এর ইঞ্জিন, যার বোর এবং স্ট্রোক উপর কাজ করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন থেকে 15 BHP @ 8500 RPM & 14 NM @ 6500 RPM এর টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম এবং এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে ৫স্পিডের একটি গিয়ারবক্স।
এরপর তারা আরও যুক্ত করছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম ও সাথে ১৪টি সেন্সর। এই ১৪টি সেন্সর এর মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিন এর তাপমাত্রার সেন্সর, লিন এঙ্গেল সেন্সর, এয়ার ফুয়েল মিক্সার সেন্সর সহ অনেক ধরনের সেন্সর।
এখন আসা যাক স্টাইলের ব্যাপারে, যেখানে হিরো অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে তাদের প্রতিযোগীদের চেয়ে। তবে এবার তারা আর কোন ভুল করেনি। তারা এবার এড করেছে এলইডি হেডলাইট, ইন্ডিকেটর এবং এলইটি টেইল লাইটস। হ্যান্ডেলবার আপ রাইট এবং পাইপ ইউনিট। হেডলাইটটি দুই লেয়ার ইউনিট এ ভাগ করা, এতে বাইকটি দেখতে বেশ এগ্রেসিভ হয়েছে।
Hero Thriller 160R বাইকটিতে যুক্ত করেছে ১২ লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক এবং ট্যাঙ্কটি প্লাস্টিকের এক্সটেশন দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে, যা সামনের দিক থেকে রেয়ার প্যানেল এর এলইডি টেইল লাইটস পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। রেয়ারে দিকে আপনি দেখতে পাবেন রেয়ার এক্সটেনশন গার্ড এবং অতিরিক্ত টায়ার হ্যাগার দেয়া হয়েছে যাতে করে বৃষ্টির সময় নোরাং পানিতে বাইক কম নোরাং হয়।
রেয়ারের দিকে কোন ধরনের গ্রেইব রেইল দেয়া হয়নি, তবে পিলিয়ন সিটের নিচের দিকে কিছুটা ইন্টিগ্রেটেড করে দেয়া হয়েছে। পিলিয়ন সিট কিছুটা এগ্রেসিভ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং কিছুটা রাইডারের দিকে নামানো, তবে সিট স্প্লিট সিট নয় ও কিছুটা উচু করে দেয়া হয়েছে। অপর দিকে পিলিয়ন সিটের জায়গা বসার জন্য কিছুটা ছোট, যদি আপনি কোন ভারী পিলিয়ন না বসান তবে পিলিয়ন সিট ঠিক আছে।
বাইকটিতে একটি এক্সহস্ট দেয়া হয়েছে, পুরো ডিজাইন অনুযায়ী একদম বাইকের সাথে মিলে গিয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বাইকটির এলয় হুইল অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে।
Hero Thriller 160R এর স্পিডোমিটারটি পুরোপুরি ডিজিটাল। এই সেগমেন্টের বাইকের মধ্যে অন্যান্য বাইকের স্পিডোমিটারের চেয়ে এতে অনেক বেশি তথ্য শো করে থাকে। তবে এখানে গিয়ার ইন্ডিকেটর দেয়া হয়নি, যা সাধারণত এই সময়ে হিরোর কাছ থেকে আশা করা যায় না।
সুইচ গিয়ারের কোয়ালিটিও একদম বেস্ট সেটা বলা যায় না। হিরোর এই বিষয়ে আরও কাজ করা উচিত। যদিও আনন্দের বিষয় হচ্ছে সুইচ গিয়ারের সব কিছুই যুক্ত করা হয়েছে তবে আমি খুশি যা হিরো এই বাইকে তাদের i3s সিস্টেম যুক্ত করেনি, সিটি রাইডিং এর ক্ষেত্রে যা বেশ বিরক্তিকর।
এখন হুইলের দিকে একটু নজর দেয়া যাক, হিরো ১৭ ইঞ্চির হুইল যুক্ত করেছে সেই সাথে সামনের দিকে দেয়া হয়েছে ১০০ সেকশন টায়ার ও ২৭৬মিমি ডিস্ক ব্রেক এর সাথে রয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস।
অপর দিকে রেয়ার টায়ার হচ্ছে ১৪০ সেকশন এবং ২২০মিমি ডিস্ক ব্রেক। যদি আপনি চান তবে ১০ হাজার টাকা কমে ১৩০মিমি ড্রাম ব্রেক ভার্সনটি ক্রয় করতে পারেন। দুটি ভার্সনের মধ্যে এতটুকুই পার্থক্য রয়েছে।
হিরোর সাসপেনশন এর দিকে একটু তাকানো যাক। আপনি যেকোন বাইকের দিকে তাকান, আর আমরা যত গুলো হিরোর বাইক টেস্ট করেছি সেগুলোর সাসপেনশন ভাল পেয়েছি, বলা যায় খুবই ভাল পেয়েছি। আমি প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম যে নতুন এই বাইকটির ক্ষেত্রে হিরো কিছুটা নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে সাসপেনশনের ক্ষেত্রে, তবে তারা সেটা হতে দেয়নি।
সামনের দিকে আপনি পাবেন ৩৭মিমি DIA টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এর সাথে এন্ট্রি ফ্রিকশন ব্রাশ। আর বাইকটির মাস্টার পিস হচ্ছে এর রেয়ার সাসপেনশন, যা ৭ স্টেপ এডজাস্টেবল মনোশক, আমার দারূন লেগেছে।
Click To See Hero Thriller 160R Full Test Ride Review
সাসপেনশন গুলোর কথা বললে তারা সত্যি দারূণ ফিডব্যাক দিয়েছে, বিশেষ ভাবে রেয়ার সাসপেনশন সত্যি খুব ভাল ফিডব্যাক দিয়েছে শুরু থেকে। আপনি সিঙেল বা ডাবল হয়ে রাইড করুন বা রাস্তা ভাঙ্গা অথবা স্মুথ থাকুক, এটা আপনাকে সব সময় ভাল ফিডব্যাক দিয়ে যাবে। তবে পার্থক্য করতে চাইলে বলতে হয় যে আপনি Hero Hunk এর মত সাসপেনশন ফিডব্যাক পাবেন না, তবে মনোশক সাসপেনশন এর ক্ষেত্রে আমি যদিও বলি এই সেগমেন্টের অন্যতম বেস্ট সাসপেনশন।
বাইকটিকে পুরোপুরি কম্প্যাক্ট এবং ওজনে তুলনা মূলক হালকা। বাইকটি ওজনে মাত্র ১৪০ কেজি। এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হচ্ছে ১৬৫মিমি, যা আমরা টেস্ট রাইড করার সময় ১৫০ কেজি কম্বাইড ওজনে (রাইড ও পিলিয়ন) মাঝারি মানের স্পিড ব্রেকারে ভাল ফিডব্যাক পেয়েছি।
টপ স্পিডঃ ১১৬ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা
মাইলেজঃ শহর – ৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার, হাইওয়ে – ৪২ কিলোমিটার প্রতি লিটার
রাইডিং অভিজ্ঞতাঃ
আমরা আগেই বলেছি যে এই বাইকটিতে হিরো হাঙ্কের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, তবে হিরো এই ইঞ্জিনকে আরও বেশি স্মুথ করেছে তাদের লাইন আপে থাকা অন্যান্য বাইকের ইঞ্জিন থেকে। এছাড়া হিরো এই বাইকটির গিয়ারবক্স কিছুটা অন্য ভাবে দিয়েছে, অপর দিকে হিরো তাদের লাইন আপে থাকা অন্য বাইকের চেয়ে এই বাইকটিতে যা দিয়েছে তা হচ্ছে ১৫০০ কিলোমিটারের পর গিয়ার কিছুটা স্মুথ হতে শুরু করে।
ইঞ্জিনের কথাই যদি বলি তবে বলতে হয়, ইঞ্জিনের পাওয়ার শুরু থেকেই বেশ ভাল। যদি গিয়ার শিফট ঠিক ভাবে হয়, তবে ০-৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা রাইড করা যায় মাত্র ৫ সেকেন্ডে। আর ৯০০০ আরপিএম পর্যন্ত ইঞ্জিন দারুণ রেসপন্স করে থাকে। ইঞ্জিনটিকে লো এবং মিড রেঞ্জে পারফর্ম করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। হাইওয়েতে ওভারটেকিং নিয়ে সেভাবে চিন্তা করতে হবে না যদি আপনি সঠিক আরপিএম এ রাইড করে থাকেন।
৭০০০ আরপিএম এর পর থেকে আপনি হালকা ভাইব্রেশন অনুভব করবেন, সেটা ওই ফুট পেগ, হ্যান্ডেলবার এবং সিটেও কিছুটা অনুভব করবেন। আমাদের ৩০০০ কিলোমিটার রাইডে আমরা প্লাস্টিক কোয়ালিটি নিয়ে সেভাবে কোন ইস্যু খুজে পাইনি।
হ্যান্ডেলবার আপ রাইট পজিশন এবং সিট গুলো নরম ও আরামদায়ক হবার কারনে বাইকটি রাইডার ও পিলিয়নের জন্য একটি আরামদায়ক রাইডের অনুভূতি প্রদান করবে। হ্যান্ডেলিং কিছুটা সহজ এবং সাসপেনশন এর ফিডব্যাক ভাল হবার কারণে যারা পিলিয়ন নিয়ে হাইওয়ে রাইড করতে চান তাদের জন্য দারুণ হবে। কিন্তু গ্রেইব রেইল ইন্টিগ্রেটেড হবার কারণে পিলিয়ন কিছুটা বিরক্তবোধ করতে পারেন। এছাড়া রাইডার একা রাইড করার সময় ব্যাগ বাধার সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
হ্যা, আপনি পিলিয়ন সিট নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। তবে এটা সেভাবে কোন সমস্যা নয়। এই বাইকটির সবচেয়ে যে বিষয়টি আমার ভাল লেগেছে সেটা হচ্ছে এর সাসপেনশন। সামনের দিকে রয়েছে ৩৭মিমি টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং রেয়ারে দেয়া হয়েছে ৭ স্টেপ এডজাস্টেবল প্রি-লোড রেয়ার মনোশক সাসপেনশন। পিলিয়ন সহ বা পিলিয়ন ছাড়া আপনি বাইকটি বাংলাদেশের যেকোন রাস্তায় ১৬৭মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সের কারণে দারূণ ভাবে রাইড করতে পারবেন।
এখন, কর্ণারিং এর বিষয়ে বলা যায়। এমআরএফ ব্র্যান্ডের টায়ার এবং সেই সাথে সাসপেনশন সব মিলিয়ে বাইকটি এখানে আপনাকে হতাশ করবে না। বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যে ১৪০ কেজি বাইকের ওজন আপনাকে সহায়তা করবে কর্ণারিং এর ক্ষেত্রে। এমনকি ভেজা রাস্তাতেও আপনি দারূণ কনফিডেন্স পাবেন বাইকটি নিয়ে কর্ণারিং করতে।
প্রথম বারের মত হিরো তাদের মোটরসাইকেলে এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ইনস্টল করেছে। সেই দিক থেকে সামনের দিকের ব্রেক দারূণ; যদিও এত বেশি এগ্রেসিভ নয় তবে বাইকটি ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা রাইডিং এর সময় ব্রেকিং এ তেমন কোন ইস্যু পাইনি। রেয়ার ব্রেকের ক্ষেত্রেও এর ফিডব্যাক বেশ দারূণ। আমার মনে হয় সব কিছু মিলিয়ে এটা মাঝামাঝি একটা জায়গাতে রয়েছে। আমি আশা করেছিলাম হিরো হয়ত আরও কিছু যুক্ত করবে তবে, টায়ারের কারণে সেটা আর তেমন ভাবে মনে হয়নি।
সুইচ গিয়ার গুলো বেস্ট বলা যাবে না, তবে একটি শক্ত বা বলা যায় কন্ট্রোল করা কিছুটা কষ্ট। ইন্ডিকেটর সুইচ, হেডলাইট ইলুমিনেশন পাওয়ার একটু উচু করা দরকার, আমি বলছি না যে এটা ভাল নয়। আসলে সিটি রাইডিং এর জন্য বাইকটি ঠিক আছে, তবে ১০০ কিলোমিটার গতিতে হাইওয়ে রাইডিং এর জন্য এই আলো পর্যাপ্ত নয়। আর হাই বিমেও কিছুটা দেরিতে রেসপন্স করে থাকে।
টার্নি রেডিয়াস শহরের ক্ষেত্রে বেশ ভাল। তবে বাইকটি সব মিলিয়ে দারূণ একটি মেশিন। শহর এবং হাইওয়ে দু জায়গাতেই বেশ ভাল ভাবে রাজ্যত্ব করতে সক্ষম। ধন্যবাদ।
Hero Thriller 160R ভাল দিকঃ
- দামের দিক থেকে হাতের নাগালে
- সাসপেনশনের ফিডব্যাক বেশ ভাল
- বাইকটি নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ
- হাই স্পিড কর্নারিং এর ক্ষেত্রে বেশ ভাল ফিডব্যাক দেয়
- পিলিয়ন সিট অনেক আরামদায়ক
- গিয়ার শিফটিং আগের চেয়ে ভাল হয়েছে
Hero Thriller 160R খারাপ দিকঃ
- হেডলাইটের আলো কম
- সুইচ গিয়ার্স এর কোয়ালিটি ভাল নয়
- গ্রেইব রেইল সিটের নিচে
- এফআই ইঞ্জিন হবার কারণে ভাল মানের ফুয়েল দরকার এবং নিয়মিত সার্ভিস করতে হয়
- টপ স্পিড নেই
আমাদের বিশ্বাস যে এই সেগমেন্টে জিক্সার অন্যতম বেস্ট বাইক এবং আরটিআর হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত গতির বাইক। তবে স্পোর্টস কমিউটার সেগমেন্টে হিরো বেশ ভাল একটি জায়গা বেছে নিয়েছে। যদিও বাইকটিতে অনেক কিছুই কম আছে, তবে এটা প্রথমবার নয় এবং আশা করি হিরো তাদের আপকামিং ভার্সনে ভুল গুলো শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাইকটি প্যাকেজিং, কম্পেক্ট, ফুয়েল ইঞ্জেকশন, সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস এবং রেয়ার সাসপেনশন আমাদের কাছে ভাল লেগেছে।