Haojue DR 160 ৮০০০ কিলোমিটার রাইড - সাইদুর রহমান
This page was last updated on 28-Jul-2024 09:36am , By Raihan Opu Bangla
আমার নাম সাইদুর রহমান। আমি সিলেট শহরে থাকি। প্রথম বাইক চালানো শেখা আমার বন্ধুর কাছ থেকে । বাইকটি ছিল Haojue KA135। তারপর দু-বছর সে বাইক চালানোর পর আমি Haojue DR 160 বাইকটা কিনি। আজ ৮০০০+ কিলোমিটার চালানোর পর আমি Haojue DR 160 বাইকটির ভালো মন্দ সহ একটা রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করব।
Haojue DR 160 ৮০০০ কিমি রাইড
ছোটবেলা থেকেই আমার ঘুরাঘুরি করার ভীষণ শখ। বাইকের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা সবসমই কাজ করতো। সেই ভালোবাসা এসে নিজে একটি বাইকের মালিক হই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। আম্মু কিনে দিলেন আমার পছন্দের বাইক Haojue DR 160। যখন বাইক কিনবো বলে ঠিক করলাম, তখনও Haojue KA 135 রাইড করছিলাম।
বাইকের ক্ষেত্রে আমার পছন্দ ছিলো লুকস, পারফর্মেন্স, মাইলেজ আর ব্রেকিং। এর-ওর কাছ থেকে, বন্ধুদের থেকে Suzuki Gixxer বা Yamaha FZ V2,বড় ভাইয়ের TVS Apache RTR 160 4V চালালাম। Haojue এর প্রতি তখনও একটা আকর্ষন ছিলো। এর অনেক আগে ঢাকা বাইক শো -তে বাইকবিডির ফার্স্ট ইম্প্রেশান রিভিউ তে আমি প্রথমবারের মতো Haojue DR160 দেখি। তারপর সিলেট শো-রুমে যখন নিয়ে আসে তখন চোখের সামনে দেখি। নিবো নিবো করে হঠাৎ একদিন নিয়ে নেই।
চায়না বাইক সম্পর্কে আমাদের ভেতরে একটা ভয় এখনো কাজ করে, হয়তো ভালো হবেনা , অনেক কনফিউশন থাকে । চায়না বাইক কেনার আগে দু-চার বার ভাবতে হয়। কিন্তু এই রেঞ্জের অন্য বাইকের সাথে এই বাইকের তুলনায় বেশির ভাগেই DR 160 জিতে যাচ্ছিলো। অনেকেই জানেনা যে Haojue চীনের নাম্বার ওয়ান বাইক কোম্পানি এবং সুজুকির জয়েন্ট ভেঞ্চার হিসেবে কাজ করে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে Haojue বাইকের চাহিদাও ব্যাপক।
তাই সাহস করে নিয়ে নেওয়া। আমি বাইকটি কিনেছি সিলেট গোল্ডেন মটরস থেকে। গোল্ডেন মটরস থেকে যারা বাইক কিনেছে তারা জানেন গোল্ডেন মটরসের আদনান ভাই এবং অন্যান্যদের ব্যবহার কত অমায়িক। বাইকটির দাম ১,৯৯,৫০০ টাকা। আমাদের দেশে এই বাইকটি নিয়ে আসে কর্ণফুলি। চায়না বাইক হিসেবে এই দামটা ততক্ষনই আপনার কাছে খুব বেশি মনে হবে যতক্ষন না আপনি বাইকটি চালাবেন।
বাইক কিনবো বলে গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে আসি । ভাইয়া, আমি আর আমার বন্ধু রাফি মিলে শো-রুমে যেয়ে আদনান ভাইকে জানাই বাইক আমরা নেবো। কালো আর লালের মধ্যে লালটা খুব বেশি সুন্দর মনে হওয়ায় আমরা লালটা নিয়ে নেই।
প্রথমদিনেই বাইক নিয়ে ৫০+ কিলোমিটার চালিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। আমাদের পরিবারে এটাই প্রথম বাইক। শো-রুম থেকে বাইক রেডি করে দেওয়ার পর যখন বাইকে উঠে বসলাম, স্টার্ট দিলাম, প্রথমবারের মতো রেভ করলাম। বাইক চলতে লাগলো। সে মুহুর্তের কথা বলে বুঝানো যাবেনা। আমার ইচ্ছে এই বাইক নিয়ে অনেকবেশি ট্যুর দেয়ার।
Haojue DR 160 ফিচার্স -
Haojue DR 160 একটি ১৬২ সিসির এয়ার কোল্ড FI ইঞ্জিনের বাইক। ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ১৫ বিএইচপি এবং ১৪Nm টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। বাইকটির ওজন ১৪৮ কেজি। যা আপাত দৃষ্টিতে অনেক বেশি মনে হলেও বাইকের ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন খুব ভালো হওয়ায় তা মোটেও বুঝা যায়না। বাইকটির পেছনে রয়েছে ১৩০/৭০ সেকশানের এবং পেছনে ১০০/৮০ সেকশানের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া বাইকটির সামনে রয়েছে টেলিস্কোপিক আপসাইড ডাউন সাসপেনশান এবং পিছনে মনোশক সাস্পেনশান। একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিটার যা অবশ্যই আর পাচটা বাইকের চেয়ে আলাদা এবং সুন্দর। আর আছে সিবিএস ব্রেকিং সিস্টেম।
আমি প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ কিলোমিটার রাইড করি। কখনোই পারফর্মেন্স আমার কাছে কম মনে হয়নি। এ পর্যন্ত আমি বাইকটি ৬ বার সার্ভিসিং করিয়েছি। তাদের অথোরাইজড সেন্টার থেকেই। কিন্তু কর্ণফুলির তাদের সার্ভিস সেন্টারের ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হওয়া উচিৎ বলে আমার মনে হয়। তাদের সিলেটের সার্ভিস সেন্টার, ঢাকার সার্ভিস সেন্টারের মতো অতোটা ভালো নয়। সাধারণ একটা গ্যারেজের মতো মনে হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতিরও অভাব ভীষণ।
আমি বাইকটি প্রতি সপ্তাহে একবার ওয়াশ করি । প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পরপর আমি ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি । প্রথম থেকেই Haojue রিকমেন্ড করা 10w40 গ্রেডের লিকুই মলি ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি। DOT 4 ব্রেকিং ওয়েল ব্যবহার করেছি একবার।
ব্রেকওয়েল দেখতে গিয়ে পড়ে গেছিলো তাই রিফিল করতে হয়েছিলো। আমি ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনটেন করেছি ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত । তখন মাইলেজ পেয়েছিলাম ৪২-৪৬ কিলোমিটার প্রতি লিটার। যা এই ধরনের বাইকে আশা'ই করা যায়না।
ব্রেক ইন পিরিয়ডের পর এখন পর্যন্ত আমি ৪০-৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি। কখনোই এর কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। শহরে ৪০-৪১ কিলোমিটার আর হাইওয়েতে ৪৩-৪৬ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি । এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বাইকের Rear ব্রেকপ্যাড এবং এয়ার ফিল্টার একবার পরিবর্তন করতে হয়েছে । এছাড়া আর কিছুই পরিবর্তন করতে হয়নি। বাইকে আমার কোন কিছু মডিফিকেশান করতে ইচ্ছে হয়নি আর করিওনি। কারণ বাইকের যে লুক আছে তা যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম।
TVS Apache RTR 160 4V এর মতো ভালো রেডি পিকাপ না থাকলেও এর রেডি পিকাপ অত্যন্ত ভালো। কখনোই আপনাকে হতাশ করবেনা। এর ডিজিটাল মিটারে আপনি যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। ইঞ্জিন অতিরিক্ত হিট হলেও মিটার আপনাকে তা দেখাবে। কোম্পানি বাইকের সর্বোচ্চ স্পিড ১২০ কি.মি./ঘন্টা দাবী করলেও আমি ব্যাক্তিগতভাবে ১২৪ কি.মি./ঘন্টায় স্পিড তুলতে সক্ষম হয়েছি। কখনোই নিয়ন্ত্রন করতে কষ্ট হয়েছে বলে মনে হয়নি।
বাইকের ভাইব্রেশানও অন্যান্য বাইকের তুলনায় খুবই কম ছিলো। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত এটি আমাকে কোনভাবেই হতাশ করেনাই। ব্রেকিং পার্ফমেন্সে কখমোই হেরফের হয়নি একদম মুগ্ধ করার মতো। বাইকের হেডলাইট পার্ফমেন্স এক কথায় অনবদ্য। প্রজেক্টর লাইটে যথেষ্ট আলো যা সম্পুর্ণ রাস্তা কাভার করে এবং হাইওয়েতে সহজেই রাতের বেলায় ড্রাইভ করা যায়। কোন সমস্যা হয়না ।
এত্ত এত্ত পজিটিভ দিক আছে পাশাপাশি আমার কাছে কিছু নেগেটিভ দিকও লেগেছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাইকের উচ্চতা। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির নিচের যে কারো জন্য এই বাইকটি চালানো কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। বাইকটি পিলিওন সিট অনেকটা উপরে হওয়ায় পিলিওন নারী হলে কিছুটা কষ্ট হয়। আর বাইকের সিটটাও তুলনামূলক শক্ত। যেকোন দোকানে পার্টস এভেইলেভল না। সার্ভিস সেন্টারের সার্ভিস সন্তোষজনক নয় ।
এই দুটো নেগেটিভ দিকের মধ্যে পজিটিভিটি হচ্ছে স্ব-রুমে সর্বদা পার্টসের মজুদ থাকে। তাই চায়না বাইকের পার্টস পাওয়া যায়না এই কথাটা এখানে আর মিলেনা । এখন পার্টস এভেইলেভল। সার্ভিস সেন্টারের মান ভালো না হলেও তাদের ইঞ্জিনিয়াররা খুবই সুন্দরভাবে কাজ করে দেয়ার চেষ্টা করে এবং করেও দেয়। আমি আমার Haojue DR 160 বাইকটি নিয়ে সন্তুষ্ট । এই বাজেটে বাইকটি সত্যিই অসাধারন একটি বাইক । ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ সাইদুর রহমান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।