H Power Max ৩৩,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - তৌহিদ বাপ্পী
This page was last updated on 31-Jul-2024 04:30am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি তৌহিদ বাপ্পী । আমি পেশায় একজন মেডিক্যাল স্টাফ । আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো আমার ব্যবহৃত H Power ২০১৫ মডেল এর H Power Max বাইকটি নিয়ে।
H Power Max ৩৩,০০০ কিমি রাইড রিভিউ
আমি ভ্রমন পিপাসু মানুষ, আর মটো ট্রাভেল করা আমার শখ। বাইকটি আমি ৩৩০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি পাহাড়ি রাস্তা, সমতলে যা দেশের প্রায় বেশির ভাগ জায়গায় এবং সেই রাইডের অভিজ্ঞতায় বাইকটির ভাল এবং খারাপ দিক আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেস্টা করবো । H Power Max বাইকটি আমি ময়মনসিংহ, ত্রিশাল থানার শোরুম থেকে ক্রয় করি।
H Power Max বাইকটি কেনার কারনঃ
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে তুমি এই যুগে এসেও এই বাইকটি কেন কিনলে? জবাবে আমি সাধারনভাবেই বলি এই বাইকটি কেনার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে বাজেট। সমসাময়িক এই সেগমেন্ট এ H power max যেন সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ । যেকোনো বাইকের ক্ষেত্রেই আমরা প্রথমে যে বিষয়টি যাচাই করি তা হচ্ছে বাইকের পারফর্মেন্স তারপর আউটলুক, ব্রেকিং সিস্টেম, বিল্ড কোয়ালিটি ইত্যাদি যা এখন আমি ধাপে ধাপে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।
আউটলুকঃ
আউটলুক এর কথা বলতে গেলে বাইকটির আউটলুক আমার কাছে বেশ ভালোই লেগেছে । কিন্তু সমসাময়িক চিন্তা করতে গেলে সেই স্পোর্টি আর মাসকুলার করে আনাটা আমার কাছে উত্তম মনে হয়েছে। তবে বাইকটি এই সেগমেন্ট এর অন্যান্য যেকোনো ১৫০ সিসি বাইকের তুলনায় অতটাও খারাপ নয়। পারফর্মেন্সঃ পারফর্মেন্স একটি বাইকের মুল এবং প্রধান বিষয়। H Power Max বাইকে রয়েছে ১৪৯.৭ সিসির এয়ারকুল্ড ফোর স্ট্রোক এর ইঞ্জিন যার থেকে সর্বোচ্চ পাওয়ার ১০.৬ কিলোওয়াট @ ৮৫০০ আরপিএম এবং সেই সাথে এটি ১২.৮ নিউটন মিটার @৬৫০০ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।
ব্রেকিং এবং টায়ারঃ
ব্রেকিং এ সামনে রয়েছে সিংগেল ডিস্ক ও পিছনে ড্রাম । আমি ব্রেকিং এ খুব ভালো সাপোর্ট পেয়েছি । মাইলেজঃ H Power Max বাইকটিতে রয়েছে ১৩.৫ লিটার ক্যাপাসিটিভ ফুয়েল ট্যাংক (রিজার্ভ-২.২লিটার) । এই সেগমেন্টের চায়না বাইকে মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট । সিটিতে রাইডিং এর সময় আমি এর মাইলেজ এখন পাই ৩০-৩২ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ৩৮+ কিলোমিটার প্রতি লিটার।
Also Read: H Power হৈ-চৈ অফার - ছাড় এবং পুরষ্কার | বাইকবিডি
বিল্ড কোয়ালিটিঃ
বিল্ড কোয়ালিটির কথা বলতে গেলে আমি বলবো এর বিল্ড কোয়ালিটি আমি ভাল পেয়েছি। বাইকের কালার, ফিনিশিং থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশের কোয়ালিটি আমার কাছে মোটামুটি ভালই মনে হয়েছে । সার্ভিসিং আমি খুব কমই করাই ।
হেডলাইট এবং ব্যাটারিঃ
বাইক টিতে রয়েছে ১২ ভোল্ট-৩৫/৩৫ ওয়াট এর (মাল্টি রিফ্লেকটর) হ্যালোজেন হেডলাইট যা সিটি তে চলাচল এর উপোযোগী হলেও হাইওয়ে তে পুরাই নিরাশ করে । বাইক টির ব্যাটারি ১২ ভোল্ট/৬ এম্পিয়ার এম এইচ ব্যাটারী পারফরমেন্স ভালো , বাইকে এক্সট্রা হর্ন , ফগলাইট লাগানোর পরেও সাপোর্ট ভালো পেয়েছি ।
সাসপেনশন এবং চেসিসঃ
এর সামনে রয়েছে দুটি টেলিস্কোপিক শক এবজরভার এবং পেছনে রয়েছে সুইং আর্ম সাসপেনশন খুবই শক্ত, যা খুব বেশি ভালো সাপোর্ট দেয়নি।
মিটারঃ
মিটার এ রয়েছে হাফ ডিজিটাল কনসোল যেখানে আপনি পাবেন ডিজিটাল স্পিডোমিটার ,গিয়ার সিফ্টিং ,ওয়েল ডিজিটাল ওডোমিটার এবং ট্রিপমিটার । এর আর পি এম মিটার হিসেবে আছে এনালগ সিস্টেম ।
Also Read: Top H Power Bike In Bangladesh At A Glance
পার্টস এভেইবিলিটিঃ
পার্টস এভেইবিলিটি ভাল যা প্রয়োজনের সময় সবসমই পেয়েছি । আমি এ পর্যন্ত পার্টস চেঞ্জ করেছি যা রেগুলার - ব্রেক প্যাড , এয়ার ফিল্টার , এবং ১২০০০ কিলো ও ২৮০০০ কিলোতে চেইন স্পকেট । তবে বাইকের দাম কম হলেও পার্টসের দাম তুলনামূলক বেশি।
মডিফিকেশনঃ
সামনে পিছনের চাকা পাল্টিয়েছি । থ্রি পার্ট হ্যান্ডেলবার লাগিয়েছি। হেড লাইট প্রথমে সামনে Yamaha Fezer V1 এর কিট লাগিয়েছি পরে গোল লাইট, এখন R15 V1 এর হেডলাইট কিট লাগানো আছে। যা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ।
বাইকটির ৫ টি ভালো দিকঃ
- ইঞ্জিন পারফরমেন্স
- কম্ফোর্টনেস
- বিল্ড কোয়ালিটি
- কর্নারিং এ স্কিড করেনা
- দামের বিবেচনা করতে গেলে H power Max দাম হাতের নাগালের মধ্যে
বাইকটির ৫ টি খারাপ দিকঃ
- এর অন্যতম খারাপ দিক হচ্ছে এর চিকন চাকা
- হাই আরপিএম এ প্রচুর ভাইব্রেশন করে
- হেডলাইট এসি, কম আলোর হেডলাইট
- এক্সস্ট সিস্টেমটার সাউন্ড একটু স্পোর্টি হলে ভালো লাগতো
- রেডি পিক আপ খুবই কম
এই বাইকটির ইনিশিয়াল পাওয়ার সাপ্লাই ভাল না, তাই হাইওয়েতে ওভারটেকিং বা স্পিড তুলতে সাহস করি না। তবে একদিনে ৫০০ কিলোমিটার রাইড করেছি কখনও আমাকে এর ইঞ্জিন হতাশ করেনি। টপ স্পিডের কথা বলতে গেলে বাইক টি রাইড করে আমি এ পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি পিলিওন সহ ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্টক অবস্থায়।
Also Read: H Power bike price in BD
বাইকটিতে সামনের চাকায় ব্যাবহৃত হয়েছে ৮০/১০০*১৮ টায়ার এবং পেছনের চাকায় ব্যাবহৃত হয়েছে ১০০/৯০*১৮, যা ১৫০সিসি সেগমেন্ট অনুযায়ী প্রয়োজনের তুলনায় কম। ইঞ্জিন ওয়েল হিসেবে আমি Shell Advance 20w-40 ব্যবহার করি ।
১০০০ কিলোমিটারের মধ্যেই চেঞ্জ করি। বেশ ভালোই পার্ফরমেন্স পাচ্ছি । স্মুথনেস ও বেশ ভালোই । একবার ফ্রি সার্ভিসিং করিয়েছি । যদিও আরও দুইটা সার্ভিস দুরে হওয়াই আর যাইনি । খুব বড় কোন সমস্যা এখনো হয়নি । তাই ছোট ছোট সমস্যা গুলো । এলাকার গ্যারেজ থেকেই করে ফেলি । সবশেষে একটি কথা বলতে পারি আপনি যদি কম বাজেটে ভালো কিছু পেতে চান তাহলে অবশ্যই এই H Power Max কিনতে পারে। ধন্যবাদ সকলকে, লিখায় ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
লিখেছেনঃ তৌহিদ বাপ্পী
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।