Bajaj Pulsar 150 ৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সীমান্ত রায়
This page was last updated on 31-Jul-2024 02:21pm , By Raihan Opu Bangla
আমি সীমান্ত রায়। খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার কপিলমুনিতে আমার বাড়ি। আজ আমি আমার ব্যাবহৃত Bajaj Pulsar 150 বাইকটি নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন আমার বাবার একটা সিডিআই মোটরসাইকেল ছিল। ছোটবেলা থেকেই মোটরসাইকেলের প্রতি একটি বিশেষ আগ্রহ ছিল। বাবা হঠাৎ করে মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দেয় এবং তার মোটরসাইকেলের প্রতি আগ্রহ অনেক কমে যায়।
Bajaj Pulsar 150 ৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ
যখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন একটা সুযোগ পাই মোটরসাইকেল চালানো শেখার। বাড়ির পাশে এটি গ্যারেজ মিস্ত্রি থেকে Dayang 125 নিয়ে প্রথম স্টার্ট দেই। হাতে ধরে বা পিছনে বসে কেউ আমাকে বাইক চালানো শেখায়নি । বাবা একসময় বলতো ক্লাচ চেপে গিয়ার দিতে হয়। তো সেইসময় বাবার সেই কথা মতোই ক্লাচ চেপে গিয়ার দিয়ে বাইকটি রানিং করি কারো সাহায্য ছাড়াই। এরপর বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবের বাইক নিয়ে চালানোর কৌশল আয়ত্ত করেছি। 2014 সাল থেকে বাইক কেনার স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু বাড়ির কেউ বাইক কেনা্র কোন আগ্রহ দেখাতো না। অবশেষে ২০২০ সালের পহেলা নভেম্বর নিজের প্রথম মোটরসাইকেটি ক্রয় করতে সক্ষম হয়েছি। যেদিন প্রথম নিজের মোটরসাইকেল ক্রয় করি - নিজে মোটরসাইকেল কিনছি বলে কোন উৎসাহ বা অতিরিক্ত আনন্দ কিছুই ছিল না কারণ বার বার স্বপ্ন দেখতে দেখতে আনন্দ সব শেষ হয়ে গিয়েছিল।
অনেক বন্ধুরা মোটরসাইকেল নিয়ে অনেক অহংকার মুলক কথা বলতো, সামনে দিয়ে পাশ কেটে চলে যেত। আমি মোটরসাইকেল কিনার পর এক মুহূর্তের জন্য ভাবিনি যে এটা কোন অহংকার এর বস্তু বরং ভেবেছি আমার প্রয়োজনে ব্যবহার্য নিত্য দিনের একটা বস্তু।
আমার মোটরসাইকেল ছিলোনা বলে অনেক সময় বন্ধুরা আমাকে রেখে চলে যেত আমি বাইক কেনার পরে যে সব বন্ধুর বাইক নেই তাকে সবার আগে নিয়েছি। যে বাইক আমার প্রিয় ছিল- আমার সবচেয়ে প্রিয় বাইক ছিল ইয়ামাহা কোম্পানির Yamaha Fzs V2 । কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে যা হয়। Yamaha Fzs V2 কেনার টাকা ছিল কিন্তু একটি বাইকও শোরুমে ছিল না। এমনকি টানা তিন মাস অতিরিক্ত অপেক্ষা করেছিলাম তবে বাইক কবে আসবে এ কথা শোরুম বলতে পারেনি।
প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে বাজাজ কোম্পানির Bajaj Pulsar 150 DD বাইকটি ক্রয় করি। বাইকটি আমি শেখ মটরস চুকনগর থেকে ক্রয় করি । আমি যখন বাইকটি ক্রয় করি তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিল ১,৭৫,০০০ টাকা । কেন আমি Bajaj Pulsar 150 DD কিনলাম - আমি যে সময় বাইক ক্রয় করবো বলে মন স্থির করি ওই সময় কোন শোরুমে খুব বেশি একটা বাইক ছিলনা। আমার দাদার একটা পালচার ডাবল ডিস্ক বাইক আছে। আমি তার বাইকটি ব্যবহার করে যথেষ্ট স্যাটিস্ফাইড ছিলাম।
আমি খুব বেশি একটা গতি পছন্দ করিনা। কন্ট্রোলিং ও ব্রেকিং এর দিকে একটু বেশি সচেতন ছিলাম এজন্য আমার প্রথম পছন্দ ছিল Yamaha Fzs V2, যখন পছন্দের বাইকটি পেলাম না তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু পালসার ডাবল ডিস্ক চালিয়ে আমি স্যাটিস্ফাইড এবং বাজেট ফ্রেন্ডলি ও বাইকটি মার্কেটে এভেলেবেল এবং বাইকটির রিসেল ভ্যালু যথেষ্ট তাই মনে করলাম আমার যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হবে পালসার নেওয়া।
বাইকটি কেনার পর যা যা করেছি -
বাইকটি কেনার পর বাইকে অতিরিক্ত কোন লাইটিং আমি ইনস্টল করিনি। যেহেতু এটা কিক লেস বাইক সেই জন্য ব্যাটারি উপর কোন অতিরিক্ত প্রেসার না দেওয়ায় চেষ্টা করেছি। ব্রেকিং পিরিয়ড খুবই ভালভাবে মেনে চলেছি। প্রথম ইঞ্জিন অয়েল ডাউন দিয়েছি 350 কিলোমিটারে।
2018 Bajaj Pulsar 150 Twin Disc In Bangladesh - Bajaj Pulsar UG5 First Impression Review!
প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে (সুপার ৪টি )২০w ৫০ ব্যবহার করেছি। এরপর প্রতি 500 কিলোমিটার ইঞ্জিন অয়েল ডাউন দিয়েছি। এভাবে 2000 কিলোমিটার অব্দি চালিয়েছে। এছাড়া কোম্পানীর নির্ধারিত প্রত্যেকটি সার্ভিসিং করিয়েছি। বাইকটি চালানোর অভিজ্ঞতা - যেহেতু একই মডেলের বাইকটি বাড়িতে আছে তাই নতুন কোন ফিল বা আলাদা কোন এক্সাইটমেন্ট হয়নি।
তবুও নিজের বাইক বলে কথা , এখন পর্যন্ত বাইকটি আমি প্রায় 4000 কিলোমিটারের বেশি চালিয়েছি। হাইওয়েতে পিলিওন সহ টপ স্পিড পেয়েছি ১১০কিমি/ঘন্টা। পেছনের টায়ার 120 সেকশন হওয়াতে করনারিং সময় বেশ কনফিডেন্স থাকা যায়। সামনের ডিক্স ২৬০ mm ও রেয়ার ২৩০ mm হওয়াতে ব্রেকিং অনেক ভালো। দুইটা ব্রেক সমন্বয় করে ধরতে পারলে গাড়ি স্কিড করেনা বললেই চলে।
লং রাইডে ব্যাক পেইন ইস্যু নেই। ইজ্ঞিন ভাইব্রেশন লো এন্ড টর্ক নাই বললেই চলে । তবে আরপিএম 9000 এর কাছাকাছি গেলে একটু ভাইব্রেশন পাওয়া যায় যেটা খুবই স্বাভাবিক। ইঞ্জিন আগের থেকে অনেক ইস্মুথ , রিফাইন ও ইউজার ফ্রেন্ডলি। গিয়ার শিফটিং প্রথম দিকে একটু হার্ড থাকলেও পড়ে খুবই স্মুথ হয়ে গেছে।
রিয়ার ব্যাক এবজরভার খুব বেশি আরামদায়ক নয়। ভাঙ্গা রাস্তায় চালাতে গেলে একটু কষ্ট হয় । পিলিয়ন সিট খুব বেশি কম্ফোর্ট নয়। আগের পালসার গুলোর তুলনায় এটার রেডি পিকআপ বা এক্সিলারেশন কম তবে খুব বেশি না। সবাই কিকার নিয়ে কথা বলে এই বাইকে কিকার নেই, এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা দেখা দেয়নি, সকালবেলা চোখ না ধরেই এক সেলফ এই স্টার্ট নেয়।
আমার বাইকে ২ বার ট্যাপেড এডজাস্ট করা লাগছে যেটা ফ্রি সার্ভিসিং করিয়ে নিয়েছি। বাজাজের সার্ভিস মোটামুটি ভালোই বলা যায় যে ভাবে কাজ করতে বলা হয় সেভাবে সঠিক ভাবে কাজ করে দেয়।
Bajaj Pulsar 150 DD বাইকের কিছু ভালো দিক –
- ব্রেকিং কন্ট্রোলিং খুবই ভালো।
- মাইলেজ 45+ পেয়েছি।
- পার্টস কম বেশি সব কিছুই হাতের নাগালে পাওয়া যায়।
- মেইনটেনেন্স খরচ খুবই কম।
- লং ড্রাইভে ব্যাক পেইন হয়না।
- ডাবল ডিক্স। • চওড়া টায়ার ।
- ক্লিপ অন হ্যান্ডেল বার।
- ডিটিএসআই ইঞ্জিন দুই স্পার্ক প্লাগ বিশিষ্ট ইঞ্জিন যার জন্য পারফরম্যান্স ভালো হয়।
- স্প্লিট সিট যেটা স্পোর্টস লুক দিয়েছে।
Bajaj Pulsar 150 DD বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- টপ স্পিড কম ।
- টার্নিং রেডিয়াস কম ।
- সিট হাইট বেশি ।
- বাইকটির ওজন বেশি ।
- পিছনের ডিস্ক ব্রেক একটু কম কাজ করে।
- পিলিয়ন সিট কম্ফোর্ট নয় ।
- পিলিওন গ্রাবরেইল খুব বেশি সুবিধাজনক না।
- রাতে হেড লাইটের আলো কম।
মোটামুটি আমার চালানোর অভিজ্ঞতা আলোকে এই ভালো দিক ও খারাপ দিক গুলো বিবেচনা করেছি। এগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। এতক্ষন ধরে আমার রিভিউটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ সীমান্ত রায়
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।