Bajaj Pulsar 150 ৩০,০০০ কিলমিটার মালিকানা রিভিউ - মেহেদি
This page was last updated on 29-Jul-2024 05:26am , By Shuvo Bangla
আমার নাম মোঃ মেহেদি হাসান । ঠিকানা খুলনা বিভাগ, মাগুরা জেলা সদর। আমি একটি Bajaj Pulsar 150 বাইক ব্যবহার করি। আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
যখন বাইক চালানো শিখলাম তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি যার কারণে বাইক চালাতে পারলেও বাইক কিনে দেওয়ার কথা কখনো বাসায় বলতে পারিনি ।
আমি এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পরে যখন কলেজে ভর্তি হই তখন বাসায় বলি আমাকে বাইক কিনে দেওয়ার জন্য কিন্তু মা-বাবার ওই একটাই ভয় যে ছেলে হয়তো অ্যাক্সিডেন্ট করবে । যার কারণে তারা কখনোই আমাকে বাইক কিনে দিতে চাইনি বা রাজি হয়নি আর মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মোটরসাইকেল কেনার টাকার সমস্যা সবারই আছে ।
তো আমি মাঝেমধ্যে বন্ধু-বান্ধবের বাইক আর আমার দুলাভাইয়ের বাইক নিয়ে নিজের সখ পূরন করতাম । বাইক ভালোবাসি কারণ আমি ঘুরতে পছন্দ করি এবং আমার দেশটা খুব ভালোভাবে দেখার এবং চেনার জন্য বাইকিং এর বিকল্প নাই।
২০১৮ এর ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ আম্মু বলল এবার তোর একটা বাইক দরকার , আমি তোকে কিছু টাকা দিচ্ছি আর তুই নিজে কিছু টাকা দিয়ে এবার একটা বাইক কেনার ব্যবস্থা কর। জীবনে প্রথমবার মনে হল যে হ্যাঁ এবার আমার কিছু একটা হবে যেটা শুধু আমার নিজেরই অন্য কারো না ।
কিন্তু সমস্যা একটাই সেটা হচ্ছে টাকা, আমার মা যে টাকা দিয়েছে আর আমি যে টাকা নিজে দিয়েছি সব মিলিয়ে আমার কাছে ১,৮০,০০০ টাকা এবার এই টাকার ভিতরে আমি কি বাইক কিনবো তখন আমার বন্ধুরা আমাকে বলল যে তুই এই টাকার ভিতরে একটি পালসার বাইক কিনে ফেল ।
ফেব্রুয়ারি ১২ তারিখ আমি আমার বাইকটি হাতে পেলাম । বাইকটি নিয়েছিলাম মাগুরা থেকে আর দিনটি ছিল সোমবার। আমি বাইকটি চালিয়ে মাগুরা থেকে ঢাকায় মিরপুর ১ আমার বাসায় আসছিলাম মনের ভিতরে একটা অন্য ধরনের অনুভূতি কাজ করছিল ।
যখন আমি অন্যের বাইক চালাতাম তখন মনে একটা ভয় কাজ করত যে যদি আমি বাইক নিয়ে পড়ে যাই বা যদি বাইকের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে তার সাথে আমার সম্পর্কের অবনতী হবে অথবা আমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ।
যখন আমি নিজে বাইক কিনলাম তখন ভাবলাম এটা আমার নিজের বাইক এটা নিয়ে আমি যা খুশি তাই করতে পারি যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি । প্রতিটা ছেলের একটি বাইকের স্বপ্ন থাকে সেই স্বপ্নটা যদি সত্যি হয় সে তার নিজ বাইকটি হাতে পায় আর যদি হয় সেটা নিজের টাকায় কেনা তখন সবার প্রথমবার চালানোর যে অনুভূতি এটা লিখে বা কাউকে মুখে বলে বোঝানো সম্ভব না ।
বাইকটি আমি ১,৭৫,০০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি । বাইকটি আমার জন্য পারফেক্ট ছিল কারন আমার ছোট পরিবার আর আমার খুব বেশী দুরে কোথাও যাওয়া হয়না । যার কারণে বাইকটি আমার জন্য একদম পার্ফেক্ট ছিল ।
আমি একটি নেটওয়ার্ক কোম্পানিতে জব করি কাজের ক্ষেত্রে আমাকে দিনে অথবা রাতে যখনই ফোন আসে তখনই বাইরে যেতে হয়। বাইকটি থাকার কারণে আমি যেকোনো সময় অতি দ্রুত আমি আমার কাজটি সম্পন্ন করতে পারি 150 cc হওয়ার কারণে বাইকের মাইলেজ পাচ্ছি প্রতি লিটারে 40-45+
বাইকটিতে সামনের টায়ার 90/100 সাইজের পেছনের টায়ার 80/110 সাইজের। সামনে রয়েছে ডিস্ক ব্রেক , পেছনে রয়েছে ড্রাম ব্রেক । বাইকের ওজন ১৪৪ কেজি । ফুয়েল ট্যাংকে ১৭.৫ লিটার ফুয়েল ধরে ।
প্রতিদিন বাইকটি চালিয়ে এক অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করে যদিও আমার প্রতিদিন বাইকটি খুব বেশি চালানো হয় না । তবে যতটুকু চালাই প্রতিদিন এক অন্যরকম অনুভূতি পাই । বাইকটি এখন পর্যন্ত ২৮,০০০ কিলোমিটার চালানো হয়েছে।
যেহেতু বাইকটি নতুন কিনেছিলাম সেজন্য বাইকটির অল্প কিছু কাজ করা বাকি ছিল তো প্রথম ৫০০ কিলোমিটার চালানোর পরে বাইকটির আমি ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি আর বাইকের এছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোন কিছু পরিবর্তন করিনি ।
বাইকটি আমি ৭০-৯০ স্পিডে রাইড করি । ফুয়েল হিসেবে ভাল মানের অকটেন ব্যাবহার করেছি যার কারনে মাইলেজ পেয়েছি ৪৫ কিলোমিটার + যা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
এখন পর্যন্ত বাইকটির তেমন কোনো মডিফাইড করিনাই দুই তিনটা স্টিকার লাগিয়েছি শুধুমাত্র । আমি যদিও টপ স্পিড তুলতে পারদর্শী নয় আর তুলতে ইচ্ছে করেনা। তারপর একবার চেক করছিলাম এবং ১১৫ টপ স্পিড তুলেছিলাম।
Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু ভালো দিক –
- মাইলেজ
- স্মুথ ইঞ্জিন
- কন্ট্রোল
- কম্ফোর্ট
- পেছনে ১১০ টায়ার
Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু খারাপ দিক–
- পেছনের ব্রেক তেমন কনফিডেন্স পাইনা ।
- লুকিং গ্লাস পর্যাপ্ত প্রশস্ত না ।
জানিনা এগুলো সমস্যা কি না যেহেতু আমি এই বাইকের সাথে এখন নতুন। বাইকের যত্ন আমার কাছে সবার আগে, প্রতিদিন আমি বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় বাইকটাকে পরিষ্কার করি এবং রাতে বাসায় ফিরেও আবার পরিষ্কার করি।
সপ্তাহে একদিন অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী বাইকটা আমি নিজেই ওয়াশ করি এবং ওয়াশ করার পরে চেইন লুব করে থাকি। তবে খেয়াল রাখি যেনো ধূলিকণায় কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করার সময় যেনো বাইকের রঙ নষ্ট না করে।
আমি প্রথম ইঞ্জিন অয়েল দেই DTSI যা বাইকের ১০০০ কিলোমিটারে পরিবর্তন করেছিলাম যার মুল্য ছিল ৫৫০/-টাক। এখন পর্যন্ত শুধু বাইক নিয়ে অনেকবার ঢাকা মিরপুর ১ থেকে মাগুরা গিয়েছি কিছু কাজের জন্য আর ঢাকায় যতগুলো জায়গা আছে সবগুলা জায়গায় ঘুরেছি এখনো বড় ধরনের কোনো ট্যুর দেওয়া হয়নি ।
আমার ওয়াইফ ঘুরতে এবং ট্রেকিং করতে খুব ভালবাসে সেইজন্য আমি চিন্তা করেছি আমার আমি আমার এই Bajaj Pulsar 150 বাইকটা নিয়ে বাংলাদেশের যতগুলো জেলায় যাওয়া যায় সবগুলো জেলায় যাব এবং সব জায়গাগুলো ঘুরে দেখব ইনশাআল্লাহ ।
বাইক আমার চলার সাথি, ইনশাআল্লাহ একে নিয়ে বহুদূর পারি দেওয়ার ইচ্ছে আমার আছে। আমি আমার বাইকের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট। বাইকের সঠিক যত্ন এবং সঠিক টাইমে সঠিক জিনিস গুলো পরিবর্তন করেন তাহলে আশা করি ভালো পারফরমেন্স পাবেন।
ভাল মাইলেজ পেতে হলে অবশ্যই স্মার্ট রাইডিং করুন, চাকার এয়ার প্রেশার রিকমেন্ড অনুযায়ী মেন্টেইন রাখুন, সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন,ভাল মানের ফুয়েল অবশ্যই অকটেন ব্যবহার করুন । এবং সঠিক সময়ে সার্ভিসগুলা করিয়ে নিন তাহলে আশাকরি Bajaj Pulsar 150 আপনাকে হতাশ করবেনা। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ মেহেদি হাসান
আশা করি মেহেদি ভাই এর ইউজার রিভিউটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। বাজাজের এমন ইউজার রিভিউ এবং pulsar 150 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক ফ্যান পেজ ঘুরে দেখুন। তাছাড়া বাইক সম্পর্কিত যেকোন তথ্য পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে। আপনাদের মূল্যবান বক্তব্য এবং pulsar 150 ভালো বা খারাপ দিক আপনার কাছে কোনটা মনে হয় সেগুলো আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন ।
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।