Bajaj Discover 125 ৪০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সোহাগ
This page was last updated on 01-Aug-2024 03:10pm , By Shuvo Bangla
আমি সোহাগ রায় সজুল । চাকরি শুত্রে এখন ঢাকাতেই গ্রামরে বাড়ি যশোর-নড়াইল সীমান্ত এলাকায়। শতকরা ৭০-৮০ শতাংশ ছেলেদের শখ থাকে মোটরসাইকেলের আমিও তার চেয়ে আলাদা নাই। সেই শখ থেকে নিজের সাধ্যের মাঝে ১৬ই নভেম্বর ২০২২ সালে Bajaj Discover 125 মডেল এর বাইকটি ক্রয় করি।
Bajaj Discover 125 ৪০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ
বাইক কেনার প্রথম চয়েজ ছিলো হিরো আই স্মার্ট 110 সিসির কিন্তু পরিবারি বড় ভাইয়ের যেহেতু একটি একই বাইক আছে তাই তার থেকে চোখ ফিরিয়ে একটু বাজেট বেশি করে চোখ দিলাম ডিস্কভার ১২৫ এর দিকে।
যেহেতু কর্পরেট জব চাইলেই ছুটি ম্যানেজ করা কষ্টকর তাই ১৫ ই নভেম্বর নাইট শেষ করে ১৬ই নভেম্বর নাইট অফ আর ১৭ নভেম্বর ডে অফের ছুটি নিয়ে রওনা দেই বাড়ির উদ্দেশ্যে। আমি আগে থেকে নড়াইলে উত্তরা মটরস এর শোরুম কাজ ট্রেডিং এ কথা বলে রেখেছিলাম আর আমি নড়াইল পৌছানেরার আগেই আমার বাবা (শশুর মশাই) দোকানে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলেন।
এর পর তিনি কয়েকটি বাইক দেখে শুনে কালো ও নীল কম্বিনেশনের এই ডিস্কভারটি পছন্দ করেন। বাজাজ এর শোরুমে সকল প্রকার পেমেন্ট সহ গাড়ির দাম পড়েছিলো ১৪৪,৫০০ টাকা। সব শেষ করে একটি সার্টিফাইড হেলমেট ক্রয় করে বাবাকে নিয়ে প্রথম বাইড দিয়ে বাড়ি ফেরার অনুভুতিটা অনেক ভালো ছিলো। প্রথম নিজের বাইক বলে কথা নাইট ডিউটি করে সারারাত না ঘুমিয়েও ঘুম আর চেখে ছিলো না তখন।
গত ৬ মাসে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা -
বাইকটি নিয়ে আমি শহর এবং হাইওয়ে সব যায়গায় রাইড করেছি , গ্রামের রাস্তায় ৪২-৪৫+ মাইলেজ পেয়েছি , আর হাইওয়েতে একটু বেশি মাইলেজ পেয়েছি। বিগত ৬ মাসে বাইকটি প্রায় ৩৭০০+ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করেছে যার মাঝে আমি ৩ বার ইন্জিন অয়েল পরিবর্তন করিয়েছি ৩-৪ বারের মত শোরূম থেকে সার্ভিসিং করিয়েছি।
বাইকের মাইলেজ বা রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স যাই বলেন সব কিছুতেই সন্তুস্ট আমি। বাইরে থেকে এখন পর্যন্ত সার্ভিসিং করানোর প্রয়োজন হয়নি আমার। বাইকের জন্য আমি Motul 20W50 ব্যাবহার করছি। ইন্জিন ওয়েলের পারফর্সেন্স আমার কাছে ভালো লেগেছে, আমি প্রথম বার অয়েল পরিবর্তন করিয়েছিলাম ৫০০ তে এর পর ১০০০ তারপর ১৫০০ কিলোমিটার পর চেঞ্জ করেছি ।
আমি বাইকটি একদিনে আনুমানিক ১৫০ কিলোমিটার এর মত রাইড করেছি । যা আমার গ্রামের বাড়ি থেকে শালিখা, মাগুরার একটা রাউন্ড ট্রিপ ছিলো স্কুল বন্ধুদের সাথে। গাড়ি নিজের হোক বা অন্যের যত্নের সাথে ব্যাবহারের চেষ্টা করি , আমি নিজে পরিষ্কার করি না হয় আমার ছোট ভাই , সে নিজে যন্ত সহকারে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে। গাড়ি ৩০-৪০ দিনে একরার ফোম ওয়াশ করিয়ে নেই।
বাইকটির কিছু মুল ফিচার -
বাজাজ ডিস্কভারে রয়েছে ১২৫ সিসির ৪ স্ট্রোক টুইন ভাল্ব সিংগেল সিলিন্ডার টুইন স্পার্ক ডিটিএস-আই ইন্জিন। এটি একটি এয়ার কুল ইন্জিন। এটি ৭৫০০ আরপিএম-এ ১১ পিএন ম্যাক্স পাওয়ার এবং ৫৫০০ আরপিএম-এ ১১ নিউটনমিটার ম্যক্স টর্ক উৎপাদন করতে পারে। বাইকটি লম্বায় ১৯৮০ মিমি, চওড়া ৭৬০ মিমি, উচ্চতা ৮০৫ মিমি বাইকের গ্রাইন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৫ মিমি। ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি ৮ লিটার। সব কিছু মিলে বাইকের ওজন ১২০ কেজি।
বাইকের সামনের দিকে ২০০ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক ও পিছরে ১৩০ মিলিমিটার ড্রাম ব্রেক ব্যাবহার করা হয়েছে। সাসপেনশনের দিক থেকে সামনে ব্যাবহার করা হয়েছে ১৪০ মিলিমিটার টেলিস্কোপিক ফর্ক আর পিছনে ব্যাবহার করা হয়েছে ১২০ মিলিমিটার নাইট্রক্স টুইনশক সাসপেনশন।
Bajaj Discover 125 বাইকটি পছন্দ করার কারন -
- মাইলেজ অনেক ভালো পাওয়া যায়।
- গ্রামে বা মফোস্বল শহরে চালানোর জন্য পারফেক্ট।
- ১২৫ সিসি সেগমেন্টে সামনে ডিস্ক ব্রেক রয়েছে।
- বাইকের সিট ও হ্যান্ডে পজিশন একজন পূর্নাঙ্গ মানুষের জন্য অনেক আরামদায়ক।
- লং রাইডে অনেক কম্ফর্টেবল ফিল দেয়।
- যদিও বাইকে ৩ জন ওঠা উচিৎ না তার পরও সিট লম্বা হওয়ার কারনে গ্রামের রাস্তায় অনায়াসে ৩ জন বসে চালানো যায়।
- টিউবলেস টায়ার হওয়ার কারনে লিকেজের ভয় কম।
Bajaj Discover 125 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- বাইকে চেইন বক্স ব্যাবহার করা হয়েছে আর এই বাইকের চেইন অকে বেশি লুজ হয় ও শব্দ করে ।
- বাইকের পিছনের টায়ারটা একটু মোটা করলে ভালো হতো , চিকন হওয়ার কারনে হাইওয়ে রাইডিং এ ভয় হয়।
- হেডলাইটের আলো অনেক কম বাল্ব চেন্জ না করে হাইওয়ে রাইড দেওয়া মুষকিল।
- যদিও আমি রাইড়িং এর সময় ৬০+ স্পিড খুব কম উঠাই তার পরও ৬৫-৭০ উঠালে অনেক বেশি ভাইব্রেশন ফিল হয়।
বাইকটি ব্যাবহার করে আমি নিজে আনেক সন্তুষ্ট। মধ্যবিত্যের পরিবারে এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়া মুশকিল। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ সোহাগ রায় সজুল