Aprilia RS4 125 ফার্স্ট ইমপ্রেশন - লিখেছেন ওমর
This page was last updated on 13-Jan-2025 10:20pm , By Shuvo Bangla
বাংলাদেশে নতুন কোন এক্সোটিক/প্রিমিয়াম বাইক আসলেই সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলে অনলাইন এবং চা এর আড্ডায়। সদ্য বাংলাদেশে আসা Aprilia RS4 125 ও সেইরকম এ একটা হাইপ তৈরি করেছে। ফেসবুক পোস্ট এবং বাইকার ফোরামে হটকেক টপিক এখন এই মোটরবাইকটি। যাইহোক আলোচনা এবং সমালোচনার স্রোত ধরেই এই ফার্স্ট ইমপ্রেশন অন Aprilia RS4 125 ।
Aprilia RS4 125 এর ফার্স্ট ইমপ্রেশন ভিডিও

Aprilia RS4 125 বাইকটি লঞ্চ হয়ে গেল সদ্য সমাপ্ত ঢাকা বাইক শো ২০১৭ তে । দাম রাখা হয়েছে যা সহজেই চোখে পানি এনে দেয়, ৫.৭৫ হাজার টাকা যা ছয় লাখের কাছাকাছি। যাইহোক বাংলাদেশের ট্যাক্স পলিসি বা ইম্পোর্টারের পকেটে কত টাকা ঢুকবে এইসব আলোচনা পাশ কাটিয়ে আমি বলতে চাই একজন বাইকার হিসেবে আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনব নাকি কিনব না সেটা।

প্রথমেই আসি কেন আমি Aprilia RS4 125 কিনবো না! প্রথমত, দামটা একটা বড় কোয়েশ্চেন মার্ক। এবং এর চেয়ে কম দামের প্রিমিয়াম জাপানি ব্র্যান্ডগুলো এর সমান বা এর চেয়ে বেশী পারফরমেন্স আমাকে দেবে রোড কন্ডিশনে। এবং সেগুলোর দাম সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা রেঞ্জের ভিতরে। এগুলোর সার্ভিস সেন্টার, স্পেয়ার পার্টস সহজলভ্য এবং এগুলোর উপরে বাইকারদের আস্থা অনেক বছরের। কাজেই পকেটে ছয় লাখ টাকা থাকলেও বিশ্বস্ততার মাপকাঠিতে এপ্রিলিয়া পাশ করবে না। সিবিয়ার ১৫০ আর, সদ্য আসা জিএস এক্স ১৫০ আর বা আর ওয়ান ফাইভ ভি থ্রি এইগুলোই সবসময়ে প্রায়োরিটি পাবে।
Also Read: Aprilia Bike Showroom in Tangail: Aprilia Tangail COCO (Old Bus Stand)
দ্বিতীয়ত, এই বাইকের পারফরমেন্স লিমিট করা। ইউরোপীয়ান এমিশন রুলস এবং আইনগত ঝামেলার কারণে এপ্রিলিয়া এই বাইকের পাওয়ার আউটপুট লিমিট করে ১৫ বিএইচ পি এবং ১১ এন এম টর্ক এ সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। যারা প্রিমিয়াম বাইক চালান তারা জানেন যে গতি উঠানো আর নামানোর খেলাতে যদি টপ স্পীড কম হয়ে যায় বা এক্সিলারেশন মনমত না ওঠে তাহলে প্রিমিয়াম ফিল আসে না।
Also Read: Top 7 150cc Dual Purpose Bikes In Bangladesh At A Glance
তৃতীয়ত, এই বাইকের কমপ্লেক্স ইলেক্ট্রনিক্স এবং সাসপেনশন সেটাপ নিয়ে কোন সাধারণ মেকানিক টিউন বা সার্ভিস করতে গেলে ক্ষতির চান্স অনেক বেশী। আর বাইকের পারফরমেন্স ধরে রাখা মূল শর্ত হল নিয়মিত মানসম্মত সার্ভিসিং করানো। চতুর্থত্ স্পেয়ার পার্টস পাওয়া গেলেও ভারত থেকে আনতে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে মিনিমাম। কাজেই হঠাত কিছু হয়ে গেলে এপ্রিলিয়া গলায় কাঁটা হয়ে ঝুলতেই পারে। শুধু তাই নয়, এই বাইক নিলে আমাকে শেল প্রিমিয়াম/বিপি প্রিমিয়াম লেভেল অক্টেন ইউস করা লাগবে যা ঢাকার একটা বা দুইটা ফুয়েল স্টেশনে পাওয়া যায়। কাজেই ঢাকার বাইরে গেলে নিম্ন মানের তেল নিয়ে বাইকের ক্ষতি করার কোন মানেই হয় না। মাইলেজ নিয়ে তেমন বলব না কারণ আমাদের ধারণা হয়ে গেছে বাইক ১২৫ সিসি তারমানে হইলো লিটারে ৬০+ দিতে হবে যে যতই রেস বাইক হোক না কেন। এই বাইক লিটারে ৩০ দিলে সেটা সবে অষ্টম আশ্চর্য!
এবার বলি কেন এপ্রিলিয়ার উপরে আমার ৫.৭৫ লাখ প্লাস সেইফটি গিয়ারসহ ৬ লাখ খরচ করবো আমি! প্রথমত, স্পেশাল ফিল নেওয়া। যারা কালেক্টর তারা জানেন যে একটা প্রিমিয়াম বাইক কতগুলো ঘাড় ঘুরাইতে পারে। যদিও আমি পারসোনালি এইটা এঞ্জয় করি না। তবে অনেকের কাছে এইটা শো অফ হলেও আমার কাছে এইটা এক্সক্লুসিভনেস। তাই এপ্রিলিয়া আমার গ্যারেজে আসলে সেটা হবে অ্যাচিভমেন্ট।Also Read: Aprilia Maxi Scooter Price In Bangladesh
দ্বিতীয়ত, এপ্রিলিয়ার একটা রেসিং কিট আছে যা এপ্রিলিয়া ৭০০ ব্রিটিশ পাউন্ড দিয়ে সেল করে যা বাইকের ফুল পারফরমেন্স আনলক করে দেয়। এই কিট ইন্সটল করলে (এপ্রিলিয়া অফিশিয়াল ) পাওয়ার আউটপুট ২৫ হর্সপাওয়ার এবং টর্ক ১৬ এনএম এর আশেপাশে হয় যা সিবি আর ২৫০ লেভেল এর এবং সেটা দিয়ে Aprlia RS4 125 এর টপ্ স্পিড 160+ . কাজেই ইন্ডিয়া বা ইউরোপ থেকে রেসিং কিট দিয়ে পাওয়ার আনলক করে নিলেই টপস্পিড নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নাই। আর বাইকটার ওজন মাত্র ১২০ কেজি তাই স্টক সেটাপে যেইভাবে ০-১০০ কিমি উঠায় সেটার তুলনা বর্তমান বাংলাদেশের মার্কেটে শুধু দুইটা বাইক ই পারে (নাম না হয় উহ্যই রাখলাম)
Also Read: Aprilia Bike Showroom in Hathazari: Hathazari COCO (Chittagong)
তৃতীয়ত, বাইকে কুইক শিফটার এবং এরোডাইনামিক কিট যেটা সরাসরি বাইকের বড়ভাই RSV4 থেকে কপি করে আনা হয়েছে রি স্কেল করে, সেটার স্টেবিলিটি এবং কর্নারিং ক্যাপাসিটি নিয়ে বলতে গেলে নতুন একটা রিভিউ লেখা লাগবে। যারা সুপারবাইক সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা ভালো করেই জানেন যে BMW HP4 এবং Aprilia RSV4 পৃথিবীর অন্যতম সেরা সুপারবাইক সেটা জেনারেল রোড ই হোক আর রেস ট্র্যাক ই হোক। এই দুই বাইকের পারফরমেন্স এবং ল্যাপ টাইম নিয়ে হাজার হাজার ভিডিও আর বড় বড় সুপারবাইক ম্যাগাজিনের শুটাউট আছে ইউটিউবে এবং অন্যান্য সাইটে। চাইলে দেখে আসতে পারেন। কাজেই যেহেতু RSV4 কোন্ওদিন বাংলাদেশে আসবে না কিন্তু বাইকার হিসেবে ১২০+ গতিতে কর্নার করতে কেমন লাগে হাঁটু রাস্তায় ঘষে সেটা সেইফলি করতে গেলে আমার দরকার RSV4 Factory এর কনফিডেন্স যেটা আমাকে Aprilia RS4 125 দেবে সেটার জন্য আমার কাছে ছয় লাখ টাকা মামুলি ব্যাপার।
চতুর্থত, এর ৩২০ মিলিমিটার ব্রেমবো মনোব্লক ফোর পিস্টন ক্যালিপার্স ব্রেক এবং পিছনের ২২০ মিলিমিটার ডিস্ক এর ব্রেকিং সেটাপ এবং স্পেক KTM RC/Duke 390 ছাড়া অন্য বাইকে পাবেন না। কুইকশিফটার তো এর চেয়ে ঢের দামী বাইকেও থাকে না। এর এই বাইকের কুইক শিফটার RSV4 থেকেই নেওয়া। কাজেই স্পেক এর তুলনায় বারগেইন প্রাইস। পঞ্চমত, কস্ট কাটিং ম্যানেজমেন্ট সব কোম্পানী ই ফলো করে। কেউ চিপ প্লাস্টিক প্যানেল দিয়ে খরচ বাঁচায় আর কেউ নিম্ন মানের চেইন দিয়ে খরচ বাঁচায়। Aprilia RS4 125 এর এইরকম কোন কস্ট কাটিং পলিসি নাই। বাইকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই হাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে তৈরি।
অনেক কথাই বললাম। শেষ লাইন টানার আগে যেটা বলব তা হল, বাইকটার দাম কি আসলেই এত নাকি ইম্পোর্টার প্রচুর টাকা পকেটে নিচ্ছে। উওর হ্যাঁ এবং না। যদি ইন্ডিয়ার মার্কেট ধরেন তাহলে ইন্ডিয়ার মার্কেটে এই বাইকের দাম তিন লাখ রুপি এক্স শো রুম দিল্লী এবং ব্রিটিশ মার্কেটে এইটার দাম ৩২০০-৩৯০০ পাউন্ড (মডেলের উপর ডিপেন্ড করে) এইবার আপনি ট্যাক্স এবং আদার খরচ বাদে ইম্পোর্ট করার চেষ্টা করেন এবং দাম হিসেব করে বলেন ছয় লাখ ঠিক আছে নাকি? যদিও ইম্পোর্টারদের নিজস্ব কায়দা আছে লাভ বের করার তারা সেটা ঠিক ই করছে। সেটা একটা আর দশটা প্রিমিয়াম বাইকের লাভের চেয়ে বেশী হলেও আহামরি কিছু বেশী না।
Also Read: Aprilia 150cc Price in Bangladesh
যদি ভেবে থাকেন বাংলাদেশের অলিতে গলিতে এপ্রিলিয়া RS4 125 দিয়ে ভরে যাবে তাহলে সেটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না। এইসব এক্সক্লুসিভ ইম্পোর্টের টার্গেট কাস্টমার পালসার বা অ্যাপাচি বা হাঙ্ক ইউজার না। এই বাইকের টার্গেট কাস্টমার যারা শখের পেছনে আট দশ লাখ টাকা থ্রো করতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না। কালেক্টর দের কাছে Track বাইক বা উইকেন্ড বাইক হিসেবে Aprilia RS4 125 একটা লোভনীয় প্যাকেজ বলেই আমি মনে করি। এখন দেখার বিষয় হল এপ্রিলিটা সোল্ড আউট হতে কতদিন সময় লাগে!!! লিখেছেনঃ Omar Ferdaus
