সড়ক দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারী আর্থিক সহায়তা নিতে যে নিয়মগুলো অনুসরণ করবেন

This page was last updated on 26-Oct-2025 01:30pm , By Badhan Roy

আপনি জানেন কি? ২০২২ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ এর ধারা ৫৩ অনুযায়ী দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আহত বা নিহত ব্যাক্তির পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ বহনের জন্য সরকারী তহবিল থেকে ১ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। 

কিন্তু দুঃখের বিষয় যথেষ্ট প্রচার প্রচারনার অভাবে সিংহভাগ মানুষ এই তথ্য সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারনে সরকারী এই সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই লেখায় আমরা আপনাদের এই আর্থিক সহায়তা গ্রহণের জন্য কোথায় ও কিভাবে আবেদন করবেন এবং আবেদনের প্রয়োজনীয় ধাপসমূহ আপনাদের কাছে উপস্থাপন করব। 

সড়ক দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারী আর্থিক সহায়তা

সর্বপ্রথম জানা জরুরি যেসব ক্ষেত্রে আপনি আর্থিক সহায়তা পেতে পারবেন:

১. আহত ব্যাক্তির চিকিৎসার ব্যয়ভার হিসেবে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

২. দূর্ঘটনায় শারিরীক কর্মক্ষমতা হারানো অথবা অঙ্গহানীর ক্ষতিপূরণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

৩. নিহত ব্যক্তির পরিবারের ভরণ-পোষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
 

আরও পড়ুনঃ বাইক বিক্রি করেছেন , মালিকানা পরিবর্তন করছে না , কি করনীয় ? 

দূর্ঘটনার পরে আবশ্যক করণীয় কি কি?

দূর্ঘটনার পরে আবশ্যক ও জরুরি করণীয় হিসেবে কিছু কাজ অবশ্যই করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করা জরুরি। 

১. দুর্ঘটনার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা করতে হবে।

২. চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র, টেস্ট রিপোর্ট, প্রেস্ক্রিপশন, হাসপাতাল ও প্যাথলজি পরিক্ষা বিষয়ক সকল মেডিকেল খরচ ও ওষুধের ক্রয়ের রসিদ ও ছবি সংরক্ষণ করতে হবে।

৩. যানবাহনের মালিক, আহত বা নিহত ব্যাক্তি এবং চালকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

৪. নিহত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কতৃক ইস্যুকৃত মৃত ব্যাক্তির ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। 

উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত সংবলিত প্রমাণাদি বা ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যদি প্রদর্শন না করতে পারেন তবে আর্থিক সহায়তার আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। 

আরও পড়ুনঃ মোটরসাইকেল চালাতে কি কি কাগজ লাগে ? নতুন রাইডারদের জন্য 

কোথায় ও কিভাবে আবেদন করব? 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্ন সেটি হচ্ছে কোথায় এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে? দূর্ঘটনা ঘটার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে বিআরটিএ সদর দপ্তর বা বিআরটিএ জেলা সার্কেল অফিসে। অফিস থেকে নির্ধারিত ফর্ম-৩২ সংগ্রহ করে অথবা অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো নির্ভুলভাবে পূরণ করে সরাসরি অফিসে জমা দিতে হবে। এই আবেদন ফর্ম-৩২ পূরণের জন্য সরকারিভাবে বিশেষ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যা অনুসরণ করতে হবে।

১। আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির আবেদনপত্র এবং নির্ধারিত ফর্ম-৩২ এর উপরে বামে বরাবর চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ড লিখতে হবে।

২। আবেদন ফরমে উল্লিখিত প্রতিটি ক্রমিকে সংশ্লিষ্ট তথ্য লিখতে হবে এবং কোনো তথ্য প্রদানে অপারগ হলে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা অথবা ‘প্রযোজ্য নয়' লিখতে হবে।

৩। চালক ব্যতীত অন্যান্যদের ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে ‘প্রযোজ্য নয়’লিখতে হবে।

৪। দুর্ঘটনার স্থানসহ বিবরণে দুর্ঘটনার স্থান, উপজেলা/থানা এবং জেলার নাম আবশ্যিকভাবে লিখতে হবে। মৃত ব্যাক্তি দুর্ঘটনাস্থলে অথবা অন্য কোথায় মৃত্যুবরণ করেছেন তার বিবরণ উল্লেখ থাকতে হবে।

৫। সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার বিষয়ে মামলা ও জিডি করা হলে সেটি লিখতে হবে ও সংযোজন করতে হবে।

৬। অসুস্থতা ও চিকিৎসার সংক্ষিপ্ত বিবরণে আহত হলে তার বিবরণ লিখতে হবে কিন্তু দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘প্রযোজ্য নয়’লিখতে হবে।

৭। মোট খরচের পরিমাণ (প্রমাণসহ)-এ আহত ব্যক্তির খরচের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে এবং মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘প্রযোজ্য নয়' লিখতে হবে।

৮। আর্থিক সহায়তা তহবিল হতে গত/চলতি অর্থ বৎসরে কোনো অনুদান পেলে তা লিখতে হবে অথবা ইতোপূর্বে কোন অনুদান না পেলে ‘প্রযোজ্য নয়' লিখতে হবে।

৯। আবেদনের সাথে বিআরটিএ প্রদত্ত চেকলিস্ট অনুযায়ী প্রমাণ হিসেবে সকল কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস সংযুক্ত (attached) করতে হবে।

১০। যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর আবশ্যিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।

১১। আবেদন ফরমে উল্লিখিত প্রতিটি ক্রমিকে শূন্যস্থান নির্ভুলভাবে পূরণ এবং চেকলিস্ট অনুযায়ী প্রমাণ হিসেবে সকল কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস সংযুক্ত করা না হলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

(বি: দ্র: এ ফরমে কোনো তথ্য পূরণের সময় পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান না হলে প্রয়োজনে আলাদা কাগজ ব্যবহার করা যাবে।)

মনে রাখতে হবে, দূর্ঘটনা ঘটার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যেই আবেদন করতে হবে অন্যথায় আবেদন গৃহিত হবে না।

আরও পড়ুনঃ BRTA এর অনলাইন সেবাসমূহ - কি কি পাচ্ছেন অনলাইনে ? বিস্তারিত

কারা আবেদন করতে পারবেন এবং কতদিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া যেতে পারে?

সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ব্যাক্তি এবং নিহত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে নিহতের ওয়ারিশ অথবা স্বজনগণ সঠিকভাবে আবেদন এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি দাখিল করা সাপেক্ষে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপত্র গ্রহণের ৭০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে যোগাযোগ করে চেক এর মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা আবেদনকারীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।  

সর্বশেষে আমরা একটি কথাই বলতে চাই, সব ক্ষেত্রে হয়তোবা দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি বা নিহতের পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি পূরণ হওয়া সম্ভব না। কিন্তু দেশের নাগরিক হিসেবে এই আর্থিক সহায়তা পাওয়া আপনার অধিকার এবং সরকার এই অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেমন বদ্ধপরিকর তেমনই অত্যান্ত আন্তরিক। আমরা চাই এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাক এবং সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি এবং নিহতের পরিবার তাদের প্রাপ্য অধিকার অর্জনে এগিয়ে আসুক। 

 

বাইক ও বাইকার বিষয়ক সকল জরুরি তথ্যের জন্য বাইকবিডির সাথেই থাকুন। 

তথ্যসূত্র- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), প্রথম আলো।