সিনথেটিক নাকি মিনারেল কোন ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের জন্য সেরা
This page was last updated on 30-Jul-2024 02:10pm , By Ashik Mahmud Bangla
সিনথেটিক নাকি মিনারেল কোন ইঞ্জিন অয়েল বাইকে ব্যবহার করবো ? কোন ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে বাইক থেকে ভালো পারফরম্যান্স পাবো ? এই নিয়ে আমাদের অনেকের মাঝেই অনেক দ্বিধা দন্দ আছে। আজ আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমাদের দেশে ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে এতো সমস্যা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ভেজাল এবং নকল ইঞ্জিন অয়েল। যার ফলে আন্তজার্তিক ব্রান্ডের অয়েল ব্যবহার করেও অনেকে ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছেন না। তবে আপনি যদি কিছু জিনিস জানেন এবং সেগুলো বোঝার চেষ্টা করেন তাহলে সিনথেটিক নাকি মিনারেল কোন ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের জন্য সেরা সেটা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
সিনথেটিক নাকি মিনারেল কোন ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের জন্য সেরা
সবার প্রথমে আমাদের যে জিনিসগুলো জানতে হবে সেটা হচ্ছে মিনারেল, সেমি সিনথেটিক এবং সিনথেটিক অয়েলের মধ্যে পার্থক্য কি ?
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল কি ?
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল হচ্ছে সেই অয়েল যেটা প্রকৃতিতে থেকে নির্গত হওয়ার পর অপরিশোধিত তেলকে পরিশোধনের পর গাড়ির ইঞ্জিন চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। যদি নিয়ম মেনে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল বানানো হয় সেক্ষেত্রে মিনারেল অয়েলে কোন ধরনের কেমিক্যাল যোগ করা হয় না। অর্থাৎ প্রকৃতিতে থেকে পাওয়া তেলকে ভালো ভাবে পরিশোধের পরে সেটাকে গাড়ির ইঞ্জিনে ব্যবহার এর যোগ্য করে তোলা হয়।
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের সুবিধা :
১. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের দাম অন্যন্য অয়েলের চাইতে কম। এর প্রধান কারণ এই ইঞ্জিন অয়েল প্রাকৃতিক উপায়ে উত্তোলিত হয়। আর আমরা সবাই জানি, যে কোন জিনিসেই টাকা অনেক বড় একটা ব্যাপার ।
২. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল আপনি সব জায়গায় পাবেন। এটা বড় একটা সুবিধা,আপনার ইমারজেন্সি অয়েল প্রয়োজন কিন্তু আপনার হাতে টাকা অল্প আছে সেক্ষেত্রে আপনি মিনারেল অয়েল আপনার এলাকা থেকেই কিনতে পারবেন।
Also Read: Shell Advance Fuel Save 10W-30 Fully Synthetic Price In BD- BikeBD
৩. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না, তাই ক্যামিকাল সংক্রান্ত কোন ইস্যু নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হলো না।
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের যেমন সুবিধা আছে ঠিক তেমনি এর অসুবিধা আছে, এখন যেগুলো জানা যাক ।
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের অসুবিধা :
১. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় না, কিছুদিন পর পর চেঞ্জ করতে হয়। আর এটা অনেকের কাছে ঝামেলা মনে হতে পারে।
২. ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ইঞ্জিন অয়েলে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকে। কিন্তু মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলে কোন ধরনের কেমিক্যাল থাকে না, তাই আপনি এই ইঞ্জিন অয়েল থেকে এক্সট্রা কোন সুবিধা পাবেন না।
৩. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল থেকে ইঞ্জিনের সম্পূর্ণ পারফরমেন্স সব সময় পাওয়া যায় না।
৪. মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল দ্রুত তার ঘনত্ব হারিয়ে ফেলে এর ফলে পাতলা হয়ে যায়।
৫. উচ্চতাপ আর ঠান্ডায় মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল সঠিকভাবে কাজ করে না।
সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল কি ?
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল আর সিনথেটিক অয়েলের ছাড়াও, আমাদের দেশের বাজারে আরো একটি ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়, যেটাকে আমরা সেমি সিনথেটিক অয়েল হিসেবে চিনি। সহজভাবে বললে যেসব ইঞ্জিন অয়েলে একই সাথে প্রাকৃতিক আর সিনথেটিক অয়েল দুটোই পাওয়া সম্ভব তাকে সেমি সিনথেটিক অয়েল বলা হয়। মূলত মিনারেল অয়েলের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য তার সাথে সিনথেটিক অয়েল যুক্ত করে সেমি সিনথেটিক অয়েল তৈরি করা হয়। সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের মধ্যে শতকরা ৭০% থাকে মিনারেল বাকিটা সিনথেটিক।
সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের সুবিধাঃ
যেহেতু মিনারেল এবং সিনথেটিক ইঞ্জিন ইঞ্জিন অয়েল একত্রিত করে এটা বানানো হয় সেক্ষেত্রে এই ইঞ্জিন অয়েল থেকে আপনি মিনারেলের চাইতে কিছুটা ভালো পারফরম্যান্স পাবেন। আবার দামের দিক বিবেচনা করলে এটা মিনারেলের চাইতে কিছুটা বেশি হয়। তাই মিনারেল অয়েলের থেকে বাজেট কিছুটা বাড়ালে আপনি এটা কিনতে পারবেন।
সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের অসুবিধাঃ
আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যে জিনিসটি দেখেছি সেটা হচ্ছে সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল সব বাইকে ভালো ভাবে কাজ করে না, অনেক বাইকে দেখা যায় সেমি সিনথেটিক অয়েল দিলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।
সিনথেটিক অয়েল কি ?
গাড়ির ইঞ্জিনের সেরা এবং সর্বোচ্চ পারফরমেন্স নিশ্চিত করতে বা করার লক্ষ্যে যেসব তেল উচ্চ মাত্রার পরিশোধিত ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক কেমিক্যাল যুক্ত করে তৈরি করা হয়ে থাকে সে গুলোকেই সিনথেটিক অয়েল বলা হয়। সিনথেটিক অয়েলে কেমিক্যাল যুক্ত করার মূল কারণ হলো ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
সিনথেটিক অয়েলের সুবিধাঃ
১. সিনথেটিক অয়েলের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে , এটি অধিক ও উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করে কোন রকম সমস্যা ছাড়া।
২. শীতকালে এই অয়েল অনেক বেশি কার্যকর।
৩. সহজে পাতলা হয় না যার জন্য বাষ্প হয়ে কমে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
৪. এই অয়েল ইঞ্জিনে ময়লা জমতে দেয় না, ফলে ইঞ্জিন ভালো থাকে।
৫. সিনথেটিক অয়েল ইঞ্জিনে একটানা অনেকক্ষণ তার কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম।
৬. সিনথেটিক অয়েল সর্বোচ্চ পরিমাণে পরিশোধিত হওয়ার কারণে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যার ফলে আপনি আপনি ইঞ্জিন থেকে এক্সট্রা বুস্ট পাবেন।
সিনথেটিক অয়েলের অসুবিধাঃ
১. সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা হচ্ছে সেটা, মিনারেল অয়েলের চেয়ে সিনথেটিক অয়েলের মূল্য অনেক বেশি। যার ফলে সবার পক্ষে এই ইঞ্জিন অয়েল কেনা সব সময় সম্ভব হয় না।
২. কম সিসির বাইকে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা অনেক ব্যয়বহুল।
৩. সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল সব জায়গায় এখনো পাওয়া যায় না, যার ফলে এটা অনেক সময় বড় সমস্যা কারণ হয়ে দাড়ায় ।
পরিশেষে আসল কোথায় আসি, সিনথেটিক নাকি মিনারেল কোন ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের জন্য সেরা ? ইঞ্জিন অয়েল যদি আসল হয়ে থাকে তাহলে প্রতিটা ইঞ্জিন অয়েল তার নিজ নিজ সেগমেন্টে সেরা। ব্যাপার হচ্ছে আপনি বাইক কি কারণে ব্যবহার করেন? আপনার বাইক দিনে কতটুকু চলে এই সব বিষয়ের উপর খেয়াল রেখে নিজের বাইকের জন্য ইঞ্জিন অয়েল চয়েজ করুন। আপনি যদি লং ট্যুর বেশি দিয়ে থাকেন তাহলে আমি বলবো আপনি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন।
তবে আপনার বাইকে কোন ইঞ্জিন অয়েল ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছি সেটা আপনার বুঝে নিতে হবে। আমি আমার বাইকে Mobil Super Moto 20W 40 4T ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি, কারণ এটা মিনারেল হলেও আমার মনে হয় এটা আমার বাইকের ইঞ্জিনের সাথে ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে।