১২০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা রয়েল এনফিল্ড এর গল্প । ইতিহাস
This page was last updated on 16-Jul-2024 05:11pm , By Raihan Opu Bangla
রয়েল এনফিল্ড মানেই অধিকাংশ বাইকারদের কাছে ভালো লাগার অপর এক নাম, কিন্তু আমরা অনেকেই জনপ্রিয় এই ব্রান্ড নিয়ে অনেক তথ্য জানি না। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় রয়েল এনফিল্ড কোন দেশের ব্রান্ড ? আপনিও হয়তো উত্তর দিবেন ইন্ডিয়ান ব্রান্ড, কিন্তু আসলেই কি তাই ? জেনে নিন রয়েল এনফিল্ডের ইতিহাস এবং ১২০ বছরের পুরনো কিছু গল্প।
রয়েল এনফিল্ড এর ইতিহাসঃ
রয়েল এনফিল্ডের মূল শিকড় হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। জনপ্রিয় এই মোটরসাইকেল ব্রান্ডের বয়স ১২০ বছরেরও বেশি। ১৮৯৬ সালে এডি মিডলসেক্সের এনফিল্ড শহরে রয়েল স্মল আর্মস ফ্যাক্টরির জন্য যন্ত্রপাতি তৈরির কন্ট্রাক্ট পায় এবং এখান থেকেই রয়েল এনফিল্ড নামের জন্ম। এ বছরই তারা নিউ এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি কিনে নেয় এবং এখান থেকে ১৮৯৭ সালে সাইকেলের সব ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু করে।
এনফিল্ড ১৯০১ সালে তাদের প্রথম ২৩৯ সিসি মোটরবাইক বাজারে আনে। কোন কাজ শুরু করেই প্রথমে সফলতা পাওয়া যায় না, এনফিল্ড ১৯০৯ সালে তৈরি তাদের ভি টুইন ২৯৭ সিসি ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল দিয়ে সফলতা অর্জন করে। ১৯০২ সালে তারা একটি মোটরগাড়ি বানায় এবং ১৯০৬ সালে অটোকার কোম্পানি স্থাপন করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল চার চাকার যানবাহনের মার্কেট দখল করা। তবে মাত্র ১৯ মাস পরেই লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় তাদের মোটরগাড়ি তৈরির কারখানা।
আরও পড়ুন >> রয়েল এনফিল্ড বুলেট এর যে মডেলগুলো বাংলাদেশে আসতে পারে
রয়েল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল সেই সময়ের ব্রিটেনের বাইক লাইসেন্স আইন। এই আইন অনুযায়ী ১৬ বছর বা তার উর্ধ্বের যে কেউ ২৫০ সিসি বা তার নিচের বাইক চালাতে পারত শুধুমাত্র একটা লার্নার লাইসেন্স করে। এর জন্য কোনো পরীক্ষাও দেওয়া লাগত না। রয়্যাল এনফিল্ড এই কারণে কয়েকটি মডেলের ২৫০ সিসি বাইক তৈরি করে। এই বাইকগুলো ছিল ছোট এবং দামেও খুব বেশি না। কমবয়সী ব্রিটিশরা এসব বাইক কিনতে শুরু করে। সেই থেকে শুরু হয় ‘ক্যাফে রেসার’ যুগের।
রয়েল এনফিল্ড এর ভারতে আগমনঃ
বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬-৫৪ সালে রয়েল এনফিল্ড তাদের নতুন নতুন বাইকের ডিজাইন বাজারে আনতে শুরু করে। এই সময় তারা বিখ্যাত মডেল ‘বুলেট’ বাজারে আনে। বুলেট ৩৫০ সিসি এবং বুলেট ৫০০ সিসি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এরপর আসে রয়েল এনফিল্ড সুপার মিটিয়র এবং সুপার মিটিয়র কন্সটেলেশন, বাইকগুলো ছিল ৭০০ সিসির বাইক।
আরও পড়ুন >> Royal Enfield আসছে বাংলাদেশে ইফাদ গ্রুপের মাধ্যমে!
১৯৪৯ সালে ৩৫০ সিসির বুলেট প্রথম ভারতের বাজারে আসে। সেই সময়টাতে ভারতের সরকার এমন এক মোটরসাইকেলের সন্ধানে ছিল, যেটি সীমান্তে টহল দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে পারে। রয়েল এনফিল্ডের বুলেট ৩৫০ বাইকটি সরকারের চিন্তার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এটি ৮০০ ইউনিটের অর্ডার দেয়। ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি রয়েল এনফিল্ড মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চেন্নাইতে একটি সংযোজন কারখানা করে। প্রথম দিকে শুধু মোটরবাইক অ্যাসেম্বলিং করা হতো ভারতে। তবে ১৯৬২ সালের পর থেকে ভারতেই তৈরি হয় রয়েল এনফিল্ড। আর এভাবেই বিকাশ লাভ করে রয়েল এনফিল্ড।
রয়েল এনফিল্ড বাইকের সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। ২০১৫ সালে তারা গ্লোবাল সেলে হার্লে ডেভিডসনকে হারিয়ে শীর্ষে ওঠে। হার্লে ডেভিডসন সারা বিশ্বে যত বাইক বিক্রি করেছে তার থেকে বেশি বাইক শুধু ভারতেই বিক্রি করেছে রয়েল এনফিল্ড। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে ৫০টির বেশি দেশে বাইক বিক্রি করছে এনফিল্ড।
বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী রয়েল এনফিন্ডঃ
আপনি জানেন কি , এনফিল্ড যখন তাদের ২ স্ট্রোক মোটরসাইকেলের উৎপাদনও শুরু করলো, ঠিক তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। এই সময়টাতে বাজারে বেশ বড় ধরনের মোটরসাইকেলের চাহিদা তৈরী হয় , আর এনফিল্ড বেশ বড় আকারের মোটরসাইকেল বাজারে আনে। যুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যসহ বেলজিয়াম, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে মোটরসাইকেল সরবরাহ করে রয়েল এনফিল্ড। বাইকগুলো অনেক মজবুত হওয়ার জন্য বাইকগুলো সেনাবাহিনীর কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার রয়েল এনফিল্ডের সঙ্গে চুক্তি করে। এই সময় কোম্পানি মিলিটারি গ্রেড মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে। এ সময় তারা ২৫০ সিসি, ৩৫০ সিসি এবং ৫৭০ সিসি ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল তৈরি করে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল রয়েল এনফিল্ড ডব্লিউডি/আরই। এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল প্লেন থেকে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে নিচে ফেলার জন্য। যুদ্ধের সময় বোমারু বিমানের হাত থেকে বাঁচার জন্য ওয়েস্টউডে একটি ভূগর্ভস্থ কারখানা নির্মাণ করা হয়েছিল।
রয়েল এনফিল্ড নিয়ে আমাদের সবার মনে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, এবার সেগুলোর উত্তর জেনে নেয়া যাক।
১- রয়েল এনফিল্ড বাংলাদেশে দাম ?
উত্তরঃ আমাদের দেশে এখনো রয়েল এনফিল্ড এর বাইক আসে নি , আসলে সঠিক দাম আমরা সবাই জানতে পারবো। যে কোন বাইকের আপডেট দাম জানতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
আরও পড়ুন >> বাংলাদেশের সকল বাইকের বর্তমান মূল্য
২- রয়েল এনফিল্ড বুলেট এর কয়টি মডেল আছে ?
উত্তরঃ বুলেটের বর্তমানে দুটি মডেল ইন্ডিয়াতে আছে।
আরও পড়ুন >> রয়েল এনফিল্ড বুলেট এর যে মডেলগুলো বাংলাদেশে আসতে পারে
৩- রয়েল এনফিল্ড বাংলাদেশে কারা আনবে ?
উত্তরঃ ইফাদ গ্রুপের এর হাত ধরে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বিখ্যাত রয়েল এনফিল্ড।
৩৫০ সিসির অনুমতি দিলে রয়েল এনফিল্ড এর বাইকগুলো বাংলাদেশে বাইকারদের কাছেও দেখা যাবে। এখন শুধু আমাদের অপেক্ষার প্রহর, দেখা যাক স্বপ্নের বাইকগুলোর দেখা বাংলার রাস্তায় কবে থেকে দেখা যাবে।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো