নকল অথবা খারাপ ইঞ্জিন অয়েল চেনার ১০ টি সহজ উপায় - বিস্তারিত
This page was last updated on 30-Jul-2024 09:29pm , By Shuvo Bangla
নকল অথবা খারাপ ইঞ্জিন অয়েল কিভাবে চেনা যায় ? এই প্রশ্নটা আমাদের সবার মনেই থাকে। ইঞ্জিন অয়েল খারাপ অথবা নকল হলে আপনি কিভাবে বুঝবেন সেটা নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো। তার আগে একটা কথা আপনার মনে রাখতে হবে সব বাইকে কিন্তু একই ইঞ্জিন অয়েল ভালো কাজ করে না। বাইকের ইঞ্জিন অয়েল যদি ভালো হয় তাহলে আপনি আপনার বাইক থেকে অনেক ভালো পারফরম্যান্স পাবেন।
প্রতিটা বাইকের ইঞ্জিন অয়েলের নিজস্ব গ্রেড থাকে আপনি যদি সেটা মেনে চলার পরও আপনার বাইকে উক্ত সমস্যাগুলো দেখা দেয় তখন আপনার বুঝে নিতে হবে আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েলটি খারাপ অথবা আপনি যে অয়েলটি ব্যবহার করছেন সেটা আপনার বাইকের সাথে যাচ্ছে না।
নকল অথবা খারাপ ইঞ্জিন অয়েল চেনার সহজ উপায়ঃ
আপনি যখন আপনার বাইকের জন্য ইঞ্জিন অয়েল কিনবেন তখন অয়েল কিনে নিয়েই বাইকে ভরে ফেলবেন না। সবার আগে ইঞ্জিন অয়েলটি চেক করে নিবেন তারপর ইঞ্জিন অয়েলটি আপনার বাইকে প্রবেশ করাবেন। চলুন তাহলে নকল অথবা খারাপ ইঞ্জিন অয়েলের লক্ষণগুলো জেনে নেয়া যাক,
১- গন্ধ চেক করে দেখুনঃ
আপনি যখন কোন ইঞ্জিন অয়েল কিনবেন সবার প্রথমে ইঞ্জিন অয়েলের গন্ধ চেক করে দেখুন। যদি বোতল খোলা মাত্রই বোতল থেকে অনেক ঝাঁজালো দুর্গন্ধ আসে সেক্ষেত্রে আপনার বুঝতে হবে আপনি যে ইঞ্জিন অয়েলটি কিনেছেন সেই ইঞ্জিন অয়েলটি ভালো না। যদি দুর্গন্ধ এর মাত্রা খুব বেশি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে ওই ইঞ্জিন অয়েলের সাথে অনেক বেশি পরিমানে ভেজাল মেশানো হয়েছে।
Also Read: SEMI SYNTHETIC MOTOBIKE 4T ESTER SAE 10W-40 Price In BD- BikeBD
২- ইঞ্জিন অয়েলের রঙ পরীক্ষাঃ
ইঞ্জিন অয়েল কেনার পর অয়েলটির কিছু অংশ স্বচ্ছ একটি কাচের পাত্রে ঢালুন । আমাদের দেশে যেসব ইঞ্জিন অয়েল আছে এর মধ্যে অধিকাংশ ইঞ্জিন অয়েলের রঙ স্বচ্ছ সোনালী হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ইঞ্জিন অয়েলের রঙ লাল ও হয়। স্বচ্ছ সোনালী এর ইঞ্জিন অয়েল কাচের পাত্র রাখার পর অয়েলটি চারপাশ থেকে ভালোভাবে দেখুন , যদি ইঞ্জিন অয়েলে হালকা সবুজ , কালচে , লাল , নীল এই ধরনের কোন সেড আসে সেক্ষেত্রে আপনার বুঝতে হবে আপনার ওই ইঞ্জিন অয়েলটি হয়তো রিসাইকেল করা হয়েছে অথবা অয়েলের সাথে ভেজাল মেশানো হয়েছে।
এখন কথা হচ্ছে ইঞ্জিন অয়েলের রঙ লাল হলে সেটা কিভাবে পরীক্ষা করবেন ? ইঞ্জিন অয়েলের রঙ যদি লাল হয় এবং সেটি যদি ভেজাল ইঞ্জিন অয়েল হয় সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন অয়েলটি বাইকে দেয়ার পর কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন ইঞ্জিন অয়েলটি নকল। সেই বিষয়গুলো নিয়েও আমি এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
৩- গাদ পরীক্ষাঃ
ইঞ্জিন অয়েল কিনে বোতল খুলে আলোতে নিয়ে যান, তারপর বোতলের নিচের অংশে ভালোভাবে খেয়াল করুন। যদি আপনি দেখতে পান বোতলের নিচের অংশে গাদ জমাট বেধে আছে সেক্ষত্রে আপনার বুঝে নিতে হবে আপনি যে ইঞ্জিন অয়েল কিনেছেন সেটা ভালো না। একটা ইঞ্জিন অয়েলের সাথে যখন ভেজাল এবং ডিজেল অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন অয়েলের বোতলে গাদ জমে।
৪- ইঞ্জিন অয়েল কেমন পরিবেশে বানানো হয়েছে সেটা পরীক্ষা করুনঃ
আমরা সবাই জানি ইঞ্জিন অয়েল অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটা ইঞ্জিনের জন্য। তাই ভালো ইঞ্জিন অয়েল কোম্পানি সব সময় চেষ্টা করে তার গ্রাহককে ভালো কিছু দেয়ার। আপনি যদি ইঞ্জিন অয়েলের বোতল খোলার পর দেখতে পান বোতলের মধ্যে ময়লা রয়েছে ছোট ছোট সেক্ষেত্রে আপনার বুঝতে হবে আপনার যে অয়েলটি কিনেছেন সেটা কোন ভালো জায়গায় প্রস্তুত করা হয় নি।
আপনি যতোই সতর্ক থাকেন আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে পেরে উঠা অনেকটাই মুশকিল। তাই অনেক সময় বাইকে ভেজাল ইঞ্জিন অয়েল প্রবেশ করতেই পারে। এখন আমরা জানবো ভেজাল ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনে প্রবেশ করলে কি কি লক্ষণ দেখা দিবে সেগুলো সম্পর্কে।
ভেজাল ইঞ্জিন অয়েল দেয়ার পর ইঞ্জিনে যেসব পরিবর্তন আসতে পারেঃ
৫- গিয়ার শিফটিং হার্ড হয়ে যাবেঃ
আপনার বাইকের ক্লাচ এডজাস্টমেন্ট যদি ঠিক থাকে কিন্তু তারপরও আপনার বাইকের গিয়ার শিফটিং যদি হার্ড হয়ে যায় তাহলে আপনার বুঝতে হবে আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েলটি খারাপ অথবা আপনি ভুল গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছেন।
বাইকের ইঞ্জিন অয়েলের কোয়ালিটি যদি ভালো হয় তাহলে আপনার বাইকের গিয়ার শিফটিং অনেক স্মুথ থাকবে। কিন্তু ইঞ্জিন অয়েলে ঝামেলা থাকলে অধিকাংশ সময় গিয়ার শিফটিং হার্ড হয়ে যায়।
৬- ইঞ্জিন পারফরম্যান্স নষ্ট হয়ে যাওয়াঃ
আপনার বাইকে ইঞ্জিন অয়েল দেয়ার পর যদি বাইকের ইঞ্জিনের পারফরমেন্স কমে যায় অথবা ইঞ্জিন কিছুটা জ্যাম ফিল হয় তখন আপনার বুঝে নিতে হবে আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েলে সমস্যা আছে। ইঞ্জিন অয়েলের জন্য বাইকের ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স নষ্ট হয়ে যায়।
ভালো ইঞ্জিন অয়েল সব সময় বাইকের ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করে। আপনি যখন ভালো কোন ব্রান্ডের আসল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করবেন তখন আপনার বাইকের টপ স্পীড, রেডি পিকাপ সব কিছুই আপনি ভালো পাবেন।
৭- সাউন্ড নষ্ট হয়ে যাওয়াঃ
ইঞ্জিন অয়েল নকল অথবা খারাপ হলে বাইকের সাউন্ড নষ্ট হয়ে যায়। তবে শুধুমাত্র কিন্তু ইঞ্জিন অয়েল খারাপ হলেই ইঞ্জিনের সাউন্ড নষ্ট হয় না, বাইকের ইঞ্জিনে অন্য সমস্যা থাকলেও ইঞ্জিনের সাউন্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৮- হিটিং ইস্যু অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াঃ
বাইক চললে বাইকের ইঞ্জিন গরম হবেই এটা নরমাল একটা নিয়ম। কিন্তু আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের পর যদি বাইকের হিটিং ইস্যু অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখন আপনার বুঝতে হবে আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েলে সমস্যা আছে। বাইকের ইঞ্জিন অয়েলের সমস্যার জন্য বাইকের ইঞ্জিনের হিটিং ইস্যু অনেক বেড়ে যেতে পারে।
৯- রেডি পিকাপ কমে যাওয়াঃ
বাইকের রেডি পিকাপ অনেক কারনেই কমে যেতে পারে, এর মধ্যে একটি কারন হচ্ছে বাইকে নকল অথবা খারাপ ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা। সব কিছু ঠিক থাকার পরও যদি আপনার বাইকের রেডি পিকাপ কমে যায় তাহলে আপনার বুঝতে হবে আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েলে সমস্যা আছে।
১০- ইঞ্জিন অয়েলের রং দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবেঃ
ইঞ্জিন অয়েল যদি খারাপ বা নকল হয় সেক্ষেত্রে অল্প কিছুদিন ব্যবহার করার পর ইঞ্জিন অয়েলের আসল রং পরিবর্তন হয়ে যাবে। যদি আপনার বাইকের অয়েলের রং নিয়ে আপনার কোন সন্দেহ আসে তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন। বর্তমান সময়ে এমনটাও দেখা যায় ইঞ্জিন অয়েল খারাপ হওয়ার কারণে ইঞ্জিন অয়েলের রং ক্রিম কালার হয়ে যায়।
বর্তমান সময়ে কিছু অসাধু লোক ইঞ্জিন অয়েল এমন ভাবে নকল করছে যে আপনি বোতল দেখে এটা কখনো বুঝতে পারবেন না অয়েল আসল নাকি নকল , কিন্তু আপনি যদি এই ছোট ছোট বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন তাহলে আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল নাকি ভালো আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। সব সময় সাবধান থাকুন আর নিজের বাইকের যত্ন নিন।