টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ ইউজার রিভিউ । রাসেল আহমেদ
This page was last updated on 15-Jul-2024 05:35am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি রাসেল আহমেদ, পেশায় একজন চাকুরীজীবি। ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি আমার অনেক ভালোলাগা ও ভালোবাসা কাজ করে। ছোটবেলার সেই ভালোলাগা থেকে এবং বাইকের প্রতি ভালোবাসা থাকায় আমি ২০১৭ সালে একটি বাইক ক্রয় করি।
চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন সেগমেন্টর বাইক পাওয়া যাচ্ছে । সবার কাছে সকল বাইক পছন্দের নয় তাই বাইক কেনার আগে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বাইকাররা বাইক ক্রয় করে থাকে । তো আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হলো, বাইকটি ক্রয় করার আগে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ (ম্যাট ব্লু) সিঙ্গেল ডিস্ক বাইকটি ক্রয় করি ।
যে কারনে আমার কাছে এই বাইকটি পছন্দ হয়েছে তা হচ্ছে এর আকর্ষনীয় লুকস এবং রেডি পিকাপ । তো আমি এই বাইকটি প্রায় ১৮০০০+ কিলো চালিয়ে আজ আপনাদের কাছে বাইকটার ইউজার রিভিউ নিয়ে এলাম । এই ১৮০০০+ কি.মি এর মধ্যে সিটি এবং হাইওয়ে রাইড দুটাই ছিল ।
আজ আমি আমার রিভিউ তে বাইকটির ভালো এবং খারাপ দিক তুলে ধরবো । আমি যেহেতু এপাচি আরটিআর ১৫০ সিসি সিঙ্গেল ডিস্ক এর ইউজার রিভিউ নিয়ে কিছু বলতে এসেছি তার আগে বাইকটির সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাকঃ এপ্যাচি আরটিআর ১৫০ সিসিতে ১৪৭.৬ সিসির ৪ স্টোক সিংগেল সিলিন্ডার এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটি সর্বোচ্চ ১২.৫নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। ফুয়েল ধারন ক্ষমতা ১৭ লিটার।
ডিজাইনঃ
ম্যাট ব্লু কালারের এই বাইকের ডিজাইন আমার কাছে এক অসাধারন লেগেছে। অন্যান্য যেকোন বাইক থেকে সম্পুর্ন ভিন্নধর্মী এই বাইকের ডিজাইন । এর ফুয়েল ট্যাংক বাইকটিকে নতুন একটি লুকস প্রদান করেছে ।
বাইকটির ডিজাইনগত কারনে বাইকটি খুব সহজে যে কারো মনে জায়গা করে নিবে । বাইকটিতে থ্রি-পার্ট হ্যান্ডেলবার হওয়ায় স্পোর্টি ফিল পাওয়া যায় । এছাড়াও সিটির ভিতরে অল্প জায়গায় টার্ন/মুভিং সহজ হয় ।
কালারঃ
টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ বাইটি লাল, নীল, কালো, হলুদ এবং সবগুলার ই ম্যাট (হলুদ ব্যাতিত) কালারে পাওয়া যায়। অনেকের কাছে গ্লোসি লাল এবং ম্যাট ব্লু ভালো লাগে । তবে আমার পছন্দ ম্যাট ব্লু ।
ডিস্ক ব্রেক vs ড্রাম ব্রেক – কোনটি বেশি ভাল?
ওজনঃ
টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ বাইকের ব্রেকিং এর মত এর ওজনটাও আমাকে হতাশ করেছে । এমন পাওয়ারফুল একটি বাইকের ওজন মাত্র ১৩৭ কেজি ।
ব্রেকিংঃ
আরটি আর বাইকের ব্রেকিং নিয়ে আছে নানা রকম বিতর্ক। সবাই এই বাইকটিকে এনা পরিবহন নামে সম্বোধন করে থাকে। বাইকটি নেয়ার আগে কয়েকজন বাইকার ভাই ব্রাদার আমাকে সাবধান করেছিলেন শুধু মাত্র এর ব্রেকিং এর জন্য । তারপরও ভালো লাগার কাছে ব্রেকিংটা পিছিয়ে গেল আমার কাছে। তবে আমি মনে করি ব্রেকিং এর পাশাপাশি নিজের রাইডিং স্কিলটাও অনেক বড় একটা বিষয়।
তবে এটা মেনে নিতে হবে যে, বাইকটির সমনের ডিস্ক ব্রেক টি অন্য বাইকের থেকে বেশি হার্ড যেটা আমাকে হতাশ করেছে। ওভার স্পীডে ইমারজেন্সিতে ব্রেক করতে গেলে ব্রেকটি হুট করে লক হয়ে যেতে পারে বলে আমার ধারনা । তবে দুটি ব্রেক সমানভাবে প্রেস করলে ভালো ফল পাওয়া যায় । ১৫০ সিসি সেগমেন্টের অন্য বাইকের তুলনায় এর টপ স্পীড একটু বেশি সে তুলনায় এর ব্রেক অতি সামান্য। বাইকের স্পীডের সাথে মিল রেখে সামনের ব্রেক টি আরো ভালো করার দরকার ছিল।
ফিচারঃ
বাইকটিতে রয়েছে সেমি ডিজিটাল স্পীড মিটার যেখানে রয়েছে ইন্ডিকেটর মার্কার, টপ স্পিড রেকর্ডার, সময় দেখার জন্য ডিজিটাল ঘড়িসহ আরো কিছু ফিচার। তবে গিয়ার ইন্ডিকেটর না থাকায় আপনার কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
মাইলেজঃ
এর মাইলেজ টা বেশ ভালই পেয়েছি হাইওয়েতে ৫০+ এবং সিটিতে ৪৫+। তবে বাইকটির মাইলেজ আপনার রাইডিং এর উপরে অনেকটা নির্ভর করে ।
স্পীডঃ
বাংলাদেশে ১৫০ সিসির সেগমেন্টে যতগুলা বাইক রয়েছে তার মধ্যে এই বাইকটার গতিটা আমার কাছে একটু যথেষ্ট মনে হয়েছে। বাইকটির রেডি পিকাপ অসাধারণ, যা সিটি এবং হাইওয়ে রাইডে আমাকে অন্যরকম আত্নবিশ্বাসী করে তোলে। আমি আমার এই বাইকটিতে ১২৯কিঃমিঃ টপ স্পীড তুলতে সক্ষম হয়েছি । তবে টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ বাইকটি ৮০ + টপ হলেই কম্পন অনুভব হয় যেটা নিশ্চিতভাবে হতাশাজনক একটা বিষয় ।
সিটিং পজিশনঃ
বাইকটির সিট বেশ লম্বা যার ফলে পিলিয়ন নিয়ে রাইডিং এর সময়ে অন্য রকম কম্ফোর্ট পাওয়া যায় । পিলিয়ন সিটটি বেশ ভাল । হাইওয়ে রাইডে কোন প্রকার ব্যাক পেইন ফিল করিনি যেটা আমার কাছে ভাল মনে হয়েছে । তাছাড়াও যারা একটু শর্ট তাদের জন্য এই বাইকটির রাইডিং সিটটা অনেক সাহায্যকারী আমার কাছে মনে হয়েছ । এক্ষেত্রে বাজেট, স্পীড এবং অন্য সব দিক বিবেচনা করা হয় তাহলে এই সেগমেন্টে টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ অবশ্যই সেরা একটি বাইক।
এই বাজেটের ভিতর টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ এর লুকস ডিজাইন, স্টাইল এবং পারফর্মেন্স আমাকে মুগ্ধ করেছে। আপনি যদি এই বাজেটে লুকস, ডিজাইন ও স্টাইলিশ বাইক কিনতে চান তবে টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ সিসির বইকটি নিতে পারেন । হেলমেট ব্যবহার করুন নিরাপদে বাড়ি ফিরুন । ধন্যবাদ সবাইকে ।
লিখেছেনঃ রাসেল আহমেদ আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন।
মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।