Shares 2

TVS Apache RTR 160 4V ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড - মশিউর

Last updated on 31-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের শখের TVS Apache RTR 160 4V একটা কমপ্লিট প্যাকেজ বাইক । আমি মশিউর রহমান, থাকি কলাবাগান, ধানমণ্ডি, ঢাকাতে। আমার বাইকিং লাইফ মোট প্রায় ৪ বছর।

tvs-apache-rtr-160-4v-bike-picture 

তবে আজ থেকে ৫ বছর আগেও বাইকের তেমন নেশা ছিলোনা। একদিন কোনো এক পারসোনাল কারনে জিদ করেছি যে বাইক চালানো শিখবো আমিও। অধিকাংশ বাইকপ্রেমিরাই যেনো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়, যারা বাইক কেনার জন্য অনেক সময় ধরে অধীর অপেক্ষায় থাকে কবে নিজের বাইকের চাবিটা কোমরে ঝুলাবে বলে। আমিও কোনো ব্যতিক্রম নই। এক বন্ধু তখন ওয়াল্টনের একটি বাইকটি কিনেছিলো, পুরাটা তখন মডিফাই করে পালসার বানিয়েছিলো ইঞ্জিন বাদে। সেটা দিয়ে আমি বাইক চালানো শিখি, এরপর আমার কাছে কিছুদিন রেখে চালাই । এরও কিছুদিন পর আরেক ফ্রেণ্ডের পালসার নিয়ে ব্যবহার করতে থাকি, সে দেশের বাহিরে থাকতো বলে। নিজের খরচেই বাইকটা ঠিকঠাক করে চালাতে থাকি। 

ইন্ডিয়ান মার্কেটে নতুন TVS Apache RTR 160 4V বের হয় তখন। প্রথম দেখাতেই কেন যেন বাইকটাকে ভালো লেগে যায়। তবুও RTR নিয়ে অনেক সমস্যা থাকার কারণে নিজেই বাইকটির ব্যপারে ভালো ভাবে জানতে শুরু করি। বিভিন্ন রিভিউ দেখতে থাকি। পরে বুঝতে পারলাম এটা যেন কমপ্লিট প্যাকেজ একটা বাইক। সবার চয়েস এক না৷ বিভিন্ন মানুষ একটা বাইক থেকে বিভিন্ন ধরনের আশা রাখে, বিভিন্ন জিনিস চায়। আমি সাধারণত একটা বাইক থেকে ভালো কর্নারিং এবিলিটি, আর বেটার এক্সেলেরেশন প্রেফার করি, যেন যখন যেভাবে দরকার হবে তখন সেভাবেই থ্রটল মোচড় দিব এবং বাইকটিও ফিডব্যাক দিবে।

tvs apache rtr 160 4v bike

এইসব দিক বিবেচনায় ন্যাকেড কমিউটার স্পোর্টস ক্যাটাগরিতে এই TVS Apache RTR 160 4V বাইকটাই যেনো বেস্ট মনে হয়েছে আমার কাছে। এরপর অপেক্ষায় থাকলাম বাইকটি কবে বাংলাদেশে লঞ্চ হবে। অবশেষে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি লঞ্চ হলে, খুব আশা নিয়ে দেখতে যাই। তখন এমন একটা অবস্থা হয়ে দাড়ায় যে রাস্তায় TVS Apache RTR 160 4V দেখলেই বাইকটির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়াতে চাইলেও তখন এই বাইক কেনার শখটা পূরণ করতে পারতাম না। আর ফ্যামিলিকে প্রেসার দিয়ে কিছু কেনার অভ্যাস ছোট বেলা থেকেই নেই আমার। আমার মা সব সময় আমার সবধরণের ইচ্ছা, শখ পূরণ করেছে। হয়ত কিছুটা সময় দেরি হয়েছে।

Click To See TVS Apache RTR 160 4V Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD

 

আমিও ধৈর্য ধরলাম। যদিও বাইকের ক্ষেত্রে মা কোনোভাবেই রাজি হতে চাচ্ছিলো না, বাইক চালানো ব্যাপারটা খুবই ভয় পেতেন বলে। কেননা বাবা ২০১৪ সালে কোরবানির ঈদের সময় গুরুতর বাইক এক্সিডেন্ট করেছিলেন। ঐ এক্সিডেন্টে বাবার পাজরে হাড় ভেংগে গিয়েছিল। বাবা টিভিএস ভিক্টর বাইক চালাতেন। আচ্ছা আবার পূর্বের কথায় ফিরে আসি। এরই মধ্যে এক কাছের বড় ভাই কিনে ফেললো TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি। নতুন অবস্থাতেই তার থেকে একদিন নেই বাইকটি। প্রথম চালানোর এক্সপেরিয়েন্স সেদিনই হয়। বাইকটিতে বসলেই শরীরে যেনো একটা অন্যরকম অনুভূতি চলে আসে। এতো সুন্দর রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স ছিলো যে নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে এটা টিভিএস কম্পানির বাইক। বেশিক্ষণ চালানোর সুযোগ হয়নি যদিও, তবুও ৩-৪ মিনিট চালিয়ে যেন মনে হলো এই বাইকটিই আমি এতোদিন খুজছিলাম, এটারই অপেক্ষায় ছিলাম আমি। এরপর মনের মধ্যে আক্ষেপ জন্মাতে থাকে যে ঠিক কবে আবার ঐ ভাইয়ের দেখা পাবো, বাইকের চাবিটা নিয়ে একটু ঘুরবো। যদিও উনার বাইক নিয়ে আমি তেমন কোন থ্রটলিং করিনি, ৩০-৫০ স্পিডেই চালাতাম।

tvs apache rtr 160 4v black colour bike 

এরপর এক বছর সময় লেগে গেল বাইক কেনার জন্য ফ্যামিলিকে রাজি করাতে। অবশেষে ২০১৯ এর ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ টিভিএস সেলস পয়েন্ট, ৬০ ফিট যাই বাইকটি দেখতে। TVS Apache RTR 160 4V এর ব্ল্যাক কালারটার প্রতি প্রথম থেকেই একটা আগ্রহ ছিলো। ব্ল্যাক আমার কাছে খুবই প্রিমিয়াম একটা কালার মনে হয়। যাই হোক, বাইক দেখে সবারই পছন্দ হয়। তারপর লোনের এপ্লাই করে বাবা। কারণ সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে কেনার মত অবস্থা ছিলো না। পরে শুরু হলো আসল অপেক্ষার পালা। এক একটা দিন যেনো এক একটা বছরের চেয়েও বেশি লাগতো।

শোরুমে বুকিং দেয়া ছিল, প্রায়ই গিয়ে গিয়ে দেখে আসতাম, এক কোণায় পড়ে ছিলো বাইকটা। অবশেষে, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে সব কিছু কমপ্লিট করে, নিজের হাতে বাইকটির চাবি পাই। ২ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে বাইকটি আমার হলো। আমি ১৮৭৩ কিলোমিটার পর্যন্ত আমার বাইকের ব্রেক-ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করেছি। এই ব্রেক-ইন পিরিয়ডের মধ্যে কখনো বাইকের ইঞ্জিনে কোন প্রেশার দেইনি। এখন পর্যন্ত মোট ১০,০০০ কিলোমিটার চালিয়েছি বাইকটি। মোট ৫বার সার্ভিস করিয়েছি। প্রথম থেকেই টার্গেট ছিল বাইকটিকে ইউনিক বাইক বানাবো যেন রাস্তায় আরো অনেক TVS Apache RTR 160 4V বাইক থাকলেও আমার বাইকটি যেন দূর থেকে চেনা যায়। বাইকটাকে নিজের মত সাজিয়েছি। 

এই পর্যন্ত আমার TVS Apache RTR 160 4V নিয়ে নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনি, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, শেরপুর ও মানিকগঞ্জ গিয়েছি। এছাড়াও বন্ধুর TVS Apache RTR 160 4V নিয়ে কক্সবাজার,  মাদারিপুর, সীতাকুণ্ড, চাঁদপুর গিয়েছি। এই পর্যন্ত আমার TVS Apache RTR 160 4V বাইকটিতে ঢাকা চিটাগং হাইওয়েতে ১৩৮ সর্বোচ্চ স্পিড পেয়েছি (সিংগেল) এবং বন্ধুর TVS Apache RTR 160 4V তে পিলিয়ন নিয়ে ১৩৩ সর্বোচ্চ স্পিড পেয়েছি। মাইলেজ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই আমার। যেহুতু পাওয়ারফুল একটা বাইক, মাইলেজ তুলনামূলক কম থাকাটাই স্বাভাবিক। সঠিক ভাবে মেইনটেইন করলে এবং স্মুথলি এ্যাক্সেলারেট করে চালালে সিটিতে ৩৪-৩৬ এবং হাইওয়েতে ৩৮-৪৩ পর্যন্ত মাইলেজ পাওয়া সম্ভব। আল্লাহর রহমতে এবং বাবা মায়ের দোয়া থাকাতে এই বাইকটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন এক্সিডেন্ট করিনি আমি। তবে ওভারস্পিডিং অথবা অন্যমনস্ক হওয়ার জন্যে কয়েকবার এক্সিডেন্ট করার মত পর্যায়ে গেলেও বেচে গিয়েছি।

tvs-apache-rtr-160-4v-cornaring 

এটার ব্রেক নিয়ে অনেকে অভিযোগ করে, আমার তেমন কোনো অভিযোগ নাই, তবে হ্যাঁ, ইঞ্জিন ব্রেকে অভ্যস্ত না হলে, এটার ব্রেকিং নিয়ে একটু সমস্যা হতে পারে। অনেকেই বুঝে না, আসলে এপাচির ব্রেকটা একটু হার্ড ক্যাটাগরির, ইউজার ফ্রেন্ডলি কম এফজেড বা জিক্সারের তুলনায়। এরপর আসি বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে। এক কথায় আপনাকে প্রিমিয়াম বাইকের ফিল দিবে এর বিল্ড কোয়ালিটি। এর কালার ফিনিশিং, ম্যাটেরিয়াল, প্লাস্টিক কোয়ালিটি সব কিছুতেই যেনো আপনি রয়েলনেসের একটা ছোঁয়া পাবেন।

এর এক্সহস্ট সাউন্ড নিয়ে তোহ না বললেই নয়। আগের TVS Apache RTR এর এক্সহস্ট নোট আমার আগে থেকেই পছন্দ ছিলো, TVS Apache RTR 160 4V এর সাউন্ড ও কোনো অংশে কম না। দেখতেও অনেক ভালো লাগে । বাইকের আউটলুক পুরোটাই এরোডাইনামিক ডিজাইন। যার জন্য আপনাকে স্পিড গেইন করতে হেল্প করবে এবং হাই স্পিডে ভালো স্ট্যাবিলিটি দিবে। এই বাইকের থ্রটল রেসপন্স অসাধারণ। ওভারল হিসাব করলে হাইওয়ের জন্য পারফেক্ট মেশিন এটা। হাইস্পিডে স্ট্যাবিলিটি আমার কাছে এই প্রাইস রেঞ্জে মনে হয়েছে সবচেয়ে ভালো এটার। এর সিট বেশ কম্ফোর্টেবল এবং বড়। 

পিছের গ্র‍্যাব্রেইলটা দেখলে ব্যাটম্যানের ব্যাট উইং-এর কথা মনে পড়ে যাবে আপনার।হেভি থ্রটলের বাইক হওয়াতে চেইন বারবার লুজ হয়ে যায়, এবং যদি বেশি ট্যুর করা হয় তাহলে হয়ত ১০-১২ হাজার কিলোমিটারেই চেইন সেট চেঞ্জ করতে হবে। আর এর বল রেসারও খুবই নিম্নমানের। এরপর আসি ব্রেকিং নিয়ে। ব্রেকিং যথেষ্ট ভালো পাবেন যদি আপনি সচেতন হয়ে চালান। ইমারজেন্সি ব্রেকিং আয়ত্ত করতে হবে যেহুতু বাইকটিতে এবিএস নেই৷ এতো পাওয়ারফুল একটা বাইকে এ বি এস দেয়া উচিত ছিলো বলে আমি মনে করি।

tvs apache rtr 160 4v 

TVS Apache RTR 160 4V বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • এই বাজেটে TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি আমার কাছে কম্পিলিট একটা প্যাকেজ বাইক মনে হয়েছে ।
  • সবচেয়ে মজার বিষয়টা হচ্ছে এর কর্নারিং এবিলিটি।
  • বাইকটিতে বসলে লং রাইড অথবা শর্ট রাইড, আপনাকে ফুল কনফিডেন্টলি রাইড করার সুযোগ করে দিবে।
  • হাইওয়েতে একবারও পাওয়ার লস ফিল করাবে না আপনাকে, ওভারটেকের জন্য এনাফ কনফিডেন্স দিবে।
  • আপনাকে প্রিমিয়াম বাইকের ফিল দিবে এর বিল্ড কোয়ালিটি।
  • বাইকের আউটলুক পুরোটাই এরোডাইনামিক ডিজাইন।
  • এই বাইকের থ্রটল রেসপন্স অসাধারণ।
  • এর সিট বেশ কম্ফোর্টেবল এবং বড়।

TVS Apache RTR 160 4V বাইকের কিছু খারাপ দিক- 

  • টারনিং রেডিয়াস নিয়ে যথেষ্ট সমস্যা হয়।
  • ১২০০ মিলি ইঞ্জিন অয়েলটা খুব ঝামেলাতে ফেলবে । সচরাচর সব ইঞ্জিন অয়েলই ১লিটার বা ১০০০ এম.এল বোতলের হয়।
  • স্পেয়ার পার্টস এভেইলেবল হলেও শোরুমে পার্টস গুলো যথেষ্ট বেশি দাম নিবে।
  • এর চেইন এবং বল রেসার টেকসই না।
  • এতো পাওয়ারফুল একটা বাইকে এ বিএস দেয়া উচিত ছিলো ।
  • সিটি রাইডে ইঞ্জিন একটু বেশিই গরম হয়।
  • সাইড স্ট্যান্ডটা অনেক নিচু এই বাইকের। ফলে একটু নিচু জায়গায় বাইকটি পার্ক করলেই বাকা হয়ে থাকে।
  • বাইকটির সাস্পেন্সন প্রথম দিকে কিছুটা শক্ত থাকে, ৩-৪হাজার কিমি পর অনেক স্মুথ হয়ে যায়।
  • একটা জিনিস না বললেই নয়, এই বাইকের মেইন্টেনেন্স ঠিকভাবে না হলেই পারফর্মেন্স অনেকটা কমে যাবে।
  • এটার এক্সহস্টের পারটিশন অনেক বাইকের ফেটে যায়, যদিও কম্পানি থেকে এটার ওয়ারেন্টি ক্লেইম করলে পরিবর্তন করে দেয়।
  • TVS Apache RTR 160 4V বাইকটির যেরকম পারফরম্যান্স তাতে এটাতে আরেকটু ভাল টায়ার থাকা উচিৎ ছিল, যা এই বাইকে মিসিং।
  • মিটারে গিয়ার ইন্ডিকেটর দিলে বিষয়টা খুবই ভালো হতো।
  • এই বাইকের শেষ খারাপ দিকটি হলো এর স্টক যে বাম্পার দেয়া, সেটা মনে হয়েছে একটা শো মাত্র আমার কাছে।

২লাখ টাকা বাজেট রেইঞ্জে এই বাইকটিকে আমার সেরা মনে হয়েছে। কোনো বাইকই সব দিক থেকে পারফেক্ট হবে না। কিন্তু এক হিসাবে TVS Apache RTR 160 4V এই প্রাইস রেঞ্জে যা দিয়েছে তা নিয়ে অনেক খুশি আছি । যারা আমার মত স্পিড লাভার আছেন, বাজেটের মধ্যে স্পিড, কন্ট্রোল, কর্নারিং সব চান, তারা নির্দ্বিধায় TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি নিতে পারেন। ধন্যবাদ ।   

লিখেছেনঃ মশিউর রহমান   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Shuvo Bangla