Shares 2

টি.ভি.এস অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ নিয়ে একটি রিভিউ - আরেফিনের লেখা

Last updated on 03-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

আমি রিফাত আরেফিন রাজিব, বয়স ২৭, বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। “বাইকবিডি” তে  শুভ্রের লেখা হিরো হোন্ডা হাঙ্ক এর পর্যালোচনা পড়ার পর আমি আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ সম্পর্কে একটি একটি পর্যালোচনা লিখতে অনুপ্রাণিত হয় । তাই আমি “বাইকবিডি” তে আমার এই লেখাটি দিয়েছি আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ (TVS Apache RTR 150 Review By Arefin) সম্পর্কে আমার অনুভূতি তুলে ধরতে ।

টি.ভি.এস অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ নিয়ে একটি রিভিউ

TVS Apache RTR 150 Review By Arefin

আমার প্রথম বাইক হল অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০,  আমি ২০১১ সালের অগাস্ট মাসে এটি কিনেছিলাম। সে সময় আমি উত্তরায় অবস্থিত একটি বায়িং হাউসে কাজ করতাম । সে কারনেই অফিসে  যাওয়ার জন্য আমার একটি বাইকের প্রয়োজন ছিল ।  কিন্তু আমি আমার কলেজজীবন থেকেই একটি বাইক কিনার স্বপ্ন দেখতাম । যখন আমি স্টামফোর্ডে বিবিএ পড়ছিলাম তখন আমার এক ঘনিষ্ঠ মিতুল পালসার ১৫০ কিনেছিল । কিন্তু পরিবারের একমাত্র সন্তান হিসেবে আমার মা-বাবা কখনো আমি বাইক কিনি তা চাননি । আমি মনে করে সকল বাঙালি পরিবারেই এটি একটি সাধারণ সমস্যা ।

আমার এমবিএ শেষ করার পর আমি যখন চাকরি পেলাম তখন আমি বাইক কেনার জন্য সম্পূর্ণ তৈরী হয়ে গেলাম । সে সময় অন্য বাইকগুলোর (অ্যাপাচি আর.টি.আর,পালসার,হাঙ্ক ও সি.বি.জেড এক্সট্রিম) বৈশিষ্ট্য তুলনা করার মাধ্যমে আমি চিন্তা করছিলাম কোন বাইকটি আমার জন্য সবচেয়ে উপযোগী, কোনটিতে আমি সবচেয়ে আরাম পাব । এসব কারনে জ্বালানী সাস্রয়, ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্য,আকার, অন্য বাইকের তুলনায় নিরাপত্তা ইত্যাদি বিবেচনা করে আমার কাছে অ্যাপাচি আর.টি.আর কেই সেরা মনে হল।

TVS Apache RTR 150 Review By Arefin

২০১১ সালের ৬ অগাস্ট কমলাপুরের এস.এন.এস টিভিএস  বিক্রয়কেন্দ্র হতে আমি আমার বাইকটি কিনি । সে সময় RTR 150 এর দাম ছিল ১৮০০০০+রেজিঃ ফি ১৮৫০০ টাকা । এটা ছিল রমজানের মাস, ইফতারের পর আমরা (আমার বাবা,বন্ধু মিতুল ও আমার বড় ভাই রিপন) আমার বাইক কিনতে গেলাম । আমি এটা আগেই পছন্দ করেছিলাম তাই শুধু দাম দেয়া ও কাগজ প্রস্তুত করার জন্য কিছু সময় লাগল । আমার বাবা আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৬০ এর জন্য  অনুজ্জ্বল ধূসর বা ম্যাট গ্রে রঙটি পছন্দ করলেন । তারপর আমি আমার বাবাকে নিয়ে অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৬০ এ আমার প্রথম ভ্রমন করলাম ।

টিভিএস অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ এর বৈশিষ্ট্যঃ

 ইঞ্জিন টাইপ – ৪ স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার এয়ার কুল

ডিসপ্লেসমেন্ট – ১৫০ সিসি

কম্প্রেসন অনুপাত – ৯.৫ : ২

সর্বাধিক শক্তি – ১৪.৯ @ ৮৫০১ বি.এইচ.পি @ আর.পি.এম

সর্বাধিক ঘূর্ণন – ১৩.১ @ ৬০০১ এন.এম @আর.পি.এম

সিলিন্ডার বোর – ৬২ মিলিমিটার

স্টোক – ৫২.৯ মিলিমিটার

ইগনিসন – আইডিআই ডুয়েল মুড ডিজিটাল ইগনিসন

স্টার্ট  - সেলফ স্টার্ট ও কিক স্টার্ট

হুইল বেইস – ১৩০০

টায়ারের  আকার – সামনে ৯০/৯০ x ১৭, পিছনে ১০০/৮০ x ১৮

হুইলের ধরন – অ্যালয়

Brake

যন্ত্রপাতি ও ব্রেকঃ

অ্যাপাচি সবসময় তীব্র গতির বাইক তৈরী করে এবং তারা প্রশংসা পেতে পারে তাদের অত্যন্ত নিরাপদ ব্রেক সিস্টেমের জন্য । আর.টি.আর ১৫০ হল তারই একটি বর্ধিতরূপ এবং ব্রেকের ক্ষেত্রেও বাইকটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে । অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ এর দুই ধরনের সংকর রয়েছে  একটিকে বলা হয় সাধারণ এবং অন্যটিকে বলা হয় “রিফ্রেশ", সবশেষে আমরা এটা বলতে পারি যে অ্যাপাচি এ বাইকে নিয়ে এসেছে সর্বাধিক নিরাপদ থামানোর ব্যবস্থা এবং তীব্র গতিতে এটা যখন ধেয়ে আসে তখন দারুন অনুভূত হয় । “রিফ্রেশ” মডেলের সামনে রয়েছে বিশাল প্রায় ২৭০ মিলিমিটারের পেটাল ডিস্ক এবং  পিছনেও রয়েছে ২৪০ মিলিমিটারের পেটাল ডিস্ক, সাধারণ মডেলে উভয় পাশেই ড্রাম ব্রেক রয়েছে ।  এমনকি সাধারণ মডেলটিও ব্রেক করার সময় অন্যান্য সাধারণ বাইকের ন্যায় আচরণ করে কিন্তু রিফ্রেশ মডেলে ব্রেক করার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করা হয়েছে ।

TVS Apache RTR 150 Review By Arefin

আরাম, সাসপেনসন ও নিয়ন্ত্রনঃ

অ্যাপাচি নিয়ে এসেছে অপটিমাইজড টেলিস্কোপিক শকস আপ যেটা ইউনিকর্ন এর মত ভেজা অনুভূত হয় না এবং মাঠের মত শক্তও নয় । টিভিএস পিছনে ব্যবহার করেছে স্প্রিং নিয়ন্ত্রিত গ্যাস নির্ভর শক অ্যাবজরবার যেটার ১০৫ মিলিমিটার স্ট্রোক রয়েছে । বাইকটির বসার অবস্থান কিছুতা বাঁকানো এবং উচ্চ গতিতে কিংবা রেসিং এর সময় এটা অনেক সাহায্য করে । 

Also Read: TVS Apache RTR 160 4V DD ১৫৫০০ কিলোমিটার রাইড - তানভীর

কিন্তু এটা পিঠের ব্যথার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্তি সৃষ্টি করে কিন্তু আপনি যদি এটা একবার ব্যবহার করেন তবে আপনি এটার প্রতি নেশাগ্রস্থ হয়ে যাবেন ! হাঁটু রাখার স্থান খুব বাজেভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে কারনে একজন ৫ ফুট ১০  ইঞ্চি উচ্চতার লোক এতে বসে মনে করবে সে যেন একটি মোড়কের লেজের উপর বসেছে যেটা শুধুমাত্র তার জন্য তৈরী করা হয়েছে । সিটগুলো বেশী উচ্চতার লোকদের জন্য খুবই বেমানান এবং তারা এটাকে পরিহারই করতে চাইবে । 

সিটগুলোতে যথেষ্ট ভাল গদি রয়েছে এবং সামনের সিটের আকার দারুন কিন্তু পিছনের  সিট পাছায় ব্যথার সৃষ্টি করে । আমরা অবাক হয় এই ভেবে যে তারা হয়ত সিটগুলো বাচ্চাদের জন্য বা শুধুমাত্র শুকনো লোকদের জন্য তৈরী করেছে । এগুলো খুবই ছোট এবং এগুলোর ছোট আকার শুধুমাত্র খারাপই হতে পারে !

Engine

ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন ও স্টাইলঃ

টিভিএস অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ এর রয়েছে একটি ১৪৯.৭ সিসির দুই ভালভ বিশিষ্ট এয়ার কুল    ইঞ্জিন যেটা ইঞ্জিনের প্রতি ঘূর্ণনে প্রায় ১৪.৯ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে । সর্বোচ্চ ঘূর্ণন হল ১৩.১ এন.এম । বাইকটির রয়েছে কম স্ট্রোকের উচ্চ ঘূর্ণনশীল মোটর যেটা খুব দ্রুত ১২০০০ আর.পি.এম এ পৌঁছাতে পারে । বাইকটি নিশ্বাস নেয় মিকুনি বি.এস২৬ কার্বুরেটর এর মাধ্যমে । সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি একটি ডাবল ফ্রেমের মধ্যে অবস্থিত যেটা অত্যন্ত শক্ত ও অনমনীয় ।

TVS Apache RTR 150 Review By Arefin

আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ এর মাইলেজঃ

২৫০০ কিলোমিটার চালানোর পূর্বে আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ প্রতি লিটারে ৩০-৩২ কিলোমিটার চলত । ২৫০০ কিলোমিটার চালানোর পর আমি এটা প্রতি লিটারে ৩৫-৩৮ কিলোমিটার পেয়েছি । বর্তমানে ৯৩০০+ কিলোমিটার চালানোর পর আমি প্রতি লিটারে  ৪২-৪৫ কিলোমিটার পাচ্ছি। আজ পর্যন্ত আমি আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ কে চারবার সার্ভিসিং করিয়েছি । এখন পর্যন্ত মবিল ফিল্টার ছাড়া আমি আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ এর কোন পার্টস বদলায়নি । আমি প্রতি ২০০০ কিলোমিটার পর পর এটা বদলায় ।

Meter

সর্বোচ্চ গতিবেগঃ

এখন পর্যন্ত  আমার সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১০১ কিলোমিটার এয়ারপোর্ট রোডে, যখন এটা প্রায় ৭০০০ কিলোমিটার চালানো হয়ে গেছে ।

আমার অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ এর কিছু ভাল দিক হল:

বসার স্থান আরামদায়ক, পিছনের সিটও আরামদায়ক,দ্রুত গতি বৃদ্ধি করার ক্ষমতা, যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা, দারুন মাইলেজ, দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য ভাল,ব্রেক দারুন এমনকি ভেজা আবহাওয়াতেও ।

আমি মনে করি  অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ বাংলাদেশের একমাত্র রেসিং বাইক যেটা একই সাথে ভালো মাইলেজ ও স্পোর্ট বাইকের অনুভূতি দেয় । মাত্র ৬ সেকেন্ডেই এটা ০-৬০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে। TVS apache RTR ( Racing Throttle Response)

যখন কেউ অ্যাপাচি আর.টি.আর ১৫০ বাইক চালাবে তখন সে সহজেই বাংলাদেশের অন্যান্য বাইকগুলোর  সাথে পার্থক্য বুঝতে পারে । আশা করি এই পর্যালোচনাটি আপনাদের পছন্দ  হবে এবং নিচে আপনার মূল্যবান মতামত দেবেন ।

  আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Shuvo Bangla