Shares 2

Runner Skooty 110 এর ২০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - আপন

Last updated on 16-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি আপন। উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করতেছি । বর্তমানে আমি একটি Runner Skooty 110 বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার এই বাইকটি নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

Runner Skooty 110 এর ২০০০ কিমি রাইড রিভিউ

runner scooty 110

ছোটবেলা থেকে ঢাকায় থাকি । ছোটবেলা থেকেই বাইক আমার কাছে অনেক ভালো লাগে, তবে বাবা মায়ের কড়া শাসনে এতবড় হয়েও বাইক কেনার বা চড়ে বসার সুযোগ হয়নি। তবে এ বছর একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপট আসলো, এক অদেখা ভাইরাসের কারণে যখন সব কিছু থমকে গেছে, চলাচল হয়ে গেছে কষ্টসাধ্য। 


যখন দরকার সামাজিক দূরত্ব ও নিরাপদ বাহন, তখন ধীরে ধীরে বাবা মাকে বাইক কেনার ব্যপারে রাজি করাতে সক্ষম হই। তবে তারা কোনো ভাবেই বাইক কিনে দিবে না। শেষে আমার বাবা মা এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, কিনে দিবে তবে বাইক না স্কুটার।

বাইক এর মডেল দেখা বন্ধ করে শুরু করলাম স্কুটার এর মডেল নিয়ে ঘাটাঘাটি। তবে মধ্যবিত্ত হিসেবে সব স্কুটার এর দাম হাতের নাগালের বাইরে ছিল। অবশেষে আসার আলো নিয়ে আসলো রানার অটোমোবাইলস। রানার অটোমোবাইলস অনেকটা কমে একটা স্কুটার লঞ্চ করলো Runner Skooty 110 । তবে চাইনিজ Dayang কোম্পানির ইঞ্জিন হওয়ায় অনেকেই নিরুৎসাহ করে এটা কেনার জন্য। 


কিন্তু এক লাখ টাকা বাজেটে আর কোনো কোম্পানি স্কুটার অফার করেনি। রানার এর অনেক সার্ভিস সেন্টার ও দেশীয় হিসেবে পার্টস এভেইলিটির কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম এটাই নিব।


এরপর চলে গেলাম তাদের তেজগাঁও শো-রুমে দেখার জন্য। কাছ থেকে দেখে আরও ভালো লাগলো বাইকটি। এরপর বাসার কাছাকাছি মালিবাগ শো-রুমে গেলাম বাইকটি কেনার জন্য। বাইকটি লঞ্চ হওয়ার ২-৩ মাস এর মধ্যে তাদের সব শো-রুম এর স্কুটার সেল আউট। স্কুটারটি এতবেশি সেল হয়েছে যে আমাকে বুকিং দিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এইভাবে ২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয় তাদের পরবর্তী স্টক আসতে। 


এরপর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত সময়। শো-রুম থেকে ফোন আসে স্কুটার ডেলেভারী নেওয়ার জন্য। সারারাত ঘুম হয়নি প্রথম কোনো স্কুটার আমার নিজের হতে যাচ্ছে । 5.2 kw @ 7500 rpm পাওয়ার এবং 7 Nm @ 6500 rpm টর্ক  110cc এর ৪ স্টোর্ক সিংগেল সিলিন্ডার এর এয়ারকুল্ড ইঞ্জিন । আম্মুকে সাথে নিয়ে যাই স্কুটারটি ডেলিভারি নিতে। গত ১৮ ই জুলাই, দীর্ঘ ২ সপ্তাহের অপেক্ষার পর তাকে হাতে পাই। শো-রুমে না গেলে বুঝা যায় না এত চাহিদা এই স্কুটারের।


Runner Skooty 110 First Impression Review In Bangla – Team BikeBD


মালিবাগ এ ২ সপ্তাহ পর ৫টি স্কুটার আসে। এবং সবগুলো বুকিং দেওয়া ছিল । এর মধ্যে একটি ছিল আমার Runner Skooty 110 । আসলে কখনো সাইকেল ছাড়া অন্য কোন মোটারযান চালাইনি। তাই ভেবেই নিয়েছিলাম শো-রুমের লোক দিয়ে চালিয়ে বাসায় নিয়ে আসব। কিন্তুু বাসায় রওনা দেওয়ার আগে নিজেই শো-রুম এর পাশের রাস্তায় প্রথম বসে সাহস করে স্টার্ট দেই এবং দেখলাম নিজে নিজেই চালাতে পারছি। 


শো-রুম ম্যানেজার যখন বাসায় পৌছে দেওয়ার লোক ঠিক করছে তখনি হঠাৎ আমি, আম্মু ও ম্যানেজারকে চমকে দিয়ে নিজেই চালিয়ে পাশের গলি থেকে শো-রুম এর সামনে আসি। আম্মু সহ নিজেই ৪ কিলোমিটার চালিয়ে বাসায় চলে এসেছি ।


বাসায় এসে দেখি ছোট ভাইয়ের আনন্দের শেষ নেই। তাকে সাথে নিয়ে আব্বু সহ ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। এবার আসি Runner Skooty 110 এর দাম এর ব্যাপারে। আমার বাইকটি যখন ক্রয় করি তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিল  ৯৫,০০০ টাকা। প্রথম চালিয়ে বেশ স্মুথ লেগেছে স্কুটারটি। এছাড়া এর ওজন বেশ কম মাত্র ১০০ কেজি। এর সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে এর সামনে ডিস্ক ব্রেক যার পারফরমেন্স যথেষ্ট ভাল। 


এই দামে ডিস্ক ব্রেক সত্যিই প্রশংসনীয়। অন্যদিকে ১,৪০,০০০+ বাজেটের স্কুটারেও আমি এই অপশন পাচ্ছিলাম না, যা আমার Runner Skooty 110 এ পেলাম। স্কুটারটির রয়েছে অনেক বড় ফুট স্পেস। এছাড়া রয়েছে ফোন চার্জের জন্য USB পোর্ট। এর সবচেয়ে ইউনিক দিক হচ্ছে এর সিটের ঠিক নিচেই সিকিউরিটি কী সিস্টেম, যেটা অফ করে রাখলে কোনো চাবি দ্বারাই এটা স্টার্ট নিবে না।

runner scooty 110 red colour এটা বাংলাদেশে কোনো বাইক বা স্কুটারে নেই। পরীক্ষা করে দেখেছি, সুইচ অফ অবস্থায় চাবি অন করলেও স্কুটারটি কোনো কাজ করে না। যেটার কারণে নিশ্চিন্তে পার্ক করে চলে যেতে পারি। এর সিট এর নিচে একটি হেলমেট এর সম পরিমাণ জায়গা আছে যেখানে অনেক এক্সেসরিজ ক্যারি করা যায়। স্কুটারটির সামনে টেলিস্কোপিক সাসপেনসন ও পিছনে মনোসক রাস্তায় বেশ কার্যকরি।


এর সিটটি ২জন বসার জন্য উপযুক্ত। এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৫০  মিমি যা কোনো স্পিড ব্রেকারে আটকায় না। এছাড়া এর ৩.৫০-১০ এর টিউবলেস টায়ার, যার গ্রিপ যথেষ্ট ভালো। ফুয়েল ট্যাঙ্ক ক্যাপাসিটি ৫.৬ লিটার। এর থ্রোটল রেসপন্স বেশ ভালো। ক্লাচ বা গিয়ার না থাকায় গিয়ার চেইন্জ এর ঝামেলা নেই এবং খুব সহজেই ৬০-৭০ স্পিড উঠে যায়। এবার আসি সার্ভিসিং এর ব্যাপারে। 


রানার দেশি ব্র্যান্ড হওয়ায় সার্ভিসিং এবং পার্টস নিয়ে আমি নিশ্চিন্ত। কারণ ঢাকায় তাদের অনেক সার্ভিস সেন্টার আছে ও পার্টস তো সব দেশেই তৈরী হয়। প্রথম ৩০০ কিলোমিটার পর কোম্পানির লোক বাসায় এসেই ফ্রীতে ইন্জিন অয়েল পরিবর্তন করে দেয় এবং স্কুটার চেক করে যায়। এরপর ৬০০ কিলোমিটারে প্রথম সার্ভিস করাই রানার এর তেজগাঁও এর সার্ভিস সেন্টার থেকে। সার্ভিস সেন্টারে বেশ ভালো ভালো মেকানিক রয়েছে ও যত্ন সহকারে কাজ করে এবং প্রতিবার গেলেই ভালো করে ওয়াস করে দেয়। সার্ভিসিং এর পরে স্কুটারটি আরো স্মুথ হয়ে যায়। 


কিক স্টার্ট এর সমস্যা থাকায় ১৪০০ কিলোতে আবার সার্ভিসিং করাই এরপর স্কুটার এর কোনো সমস্যা পাইনি। এই পর্যন্ত শেল্ফ স্টার্ট এ কোনো প্রবলেম করেনি, বৃষ্টি তে হাটু পানিতে চালালে কিংবা গর্তে পড়লে কখনো বন্ধ হয়নি।


এমনকি শীতের সকালে একবার শেল্ফ বা কিক স্টার্ট দিলেই ইঞ্জিন চালু হয়েছে। এই পর্যন্ত ২০০০ কিলোমিটার চালিয়েছি স্কুটারটি। সুতরাং ব্রেক ইন পিরিয়ড শেষ হয়েছে মাত্র । Runner Skooty 110 এ ২০০০ কিলোমিটার এর আগে এর মাইলেজ পেয়েছি ২৫-২৭ কিলোমিটার পার লিটার (যেহেতু শহরে প্রচুর জ্যাম এর ভিতর চালানো হয়)। ২০০০ কিলোমিটার এর পর বর্তমানে মাইলেজ পাচ্ছি ৩০-৩৫ কিলোমিটার পার লিটার। 


স্কুটারটি আমাদের কাছে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য। প্রথম দিন থেকেই খুব যত্নে রাখি এটাকে। এখন পর্যন্ত ৫ মাসে প্রায় প্রতিদিন-ই স্কুটারটি পরিস্কার করি যত্ন নেই ।runner scooty 110

২০০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ বার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি। এছাড়া ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে রাইড করেছি যার ফলে ভালো ফিডব্যাক পেতে শুরু করেছি। 20w40 গ্রেড এর Servo ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি যেটার দাম ৩৭৫ টাকা। 


এখন পর্যন্ত এর কোনো পার্টস পরিবর্তন করার দরকার পরেনি। একদিন এই স্কুটার নিয়ে নতুন বাজার ১০০ ফিট যাই ঘুরতে। সেদিন রাস্তা মোটামুটি ফাকা পেয়ে এর টপ স্পিড উঠানোর ইচ্ছা জাগে মনে।


স্পিড ৭০-৮০ খুব সহজে উঠে, তারপর যেতে যেতে ৯৫ পর্যন্ত তুলেছি। তবে আরো থ্রটল টুইস্ট বাকি ছিল। বাকি টুকু দিলে ইনশাল্লাহ ১০০+ টপ স্পিড আশা করা যায়।


Runner Skooty 110 এর কিছু ভালো দিক -

  • নতুন চালক যে কিনা কখনো বাইক বা স্কুটার চালায়নি সেও সহজেই চালাত পারবে ।
  • ওজন কম হওয়ায় ও ছোট হওয়ায় কন্ট্রোলিং খুব ভালো ।
  • সামনে ডিস্ক ব্রেক হওয়ায় স্কুটারটির ব্রেকিং অসাধারণ ।
  • সিটি রাইড এর জন্য পারফেক্ট ।
  • সামনে অনেক যায়গা থাকায় অনেক কিছু ক্যারি করা যায়। সিটের নিচেও
  • অনেক কিছু সেইফ মত রাখা যায় ।
  • মোবাইল চার্জ দেওয়া যায়।
  • পুরো শহর আরামে রাইড দেওয়া যায়।
  • লংট্যুর-ও দেওয়া যেতে পারে স্কুটারটি নিয়ে।
  • ইন্ডিকেটর লাইটগুলা অনেক বড় হওয়ায় রাতে ভালো সুবিধা পাওয়া যায়।
  • তেলের ট্যাঙ্ক সিটের নিচে হওয়ায় পানি থেকে সেইফ থাকে।
  • সিকিউরিটি সুইচ এর কারণে নিশ্চিন্তে থাকা যায়।


Runner Skooty 110 এর কিছু খারাপ দিক -

  • এর সবচেয়ে বড় সমস্যা এর মাইলেজ, যা ব্রেক ইন এ পেয়েছি ২৫-২৮, আর ২০০০ এর পর পাই ৩০-৩৫। তবে ৫০০০ এর পর আশা করি ৪০+ পাবো।
  • এর কোনো লেডিস ফুট পেগ নেই। ফলে পিলিয়ন এর পা রাখতে অসুবিধা হয়।
  • বডি সাইজ ছোট। আরেকটু বড় হলে ভালো হতো।
  • এর হেড লাইটের আলো তেমন বেশি না। তাই হাইওয়েতে চালাতে অসুবিধা হয়।
  • এর বডি ফাইবার প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। তাই বড় আঘাতে ভেঙ্গে যাবে।
  • পিলিয়ন বসলে পিছনে বেশী ভারী হয়ে যায়।


আমার এখন পর্যন্ত স্কুটারটি নিয়ে লং ট্যুর দেওয়া হয়নি। তবে ২ বার মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে রাইড দিয়েছি । এ্যাভারেজ ৭০-৮০ স্পিড এ চালিয়েছি। কোনো সমস্যা পাইনি, ভালোই চলেছে। সর্বোপরি Runner Skooty 110 বাজেট হিসেবে যথেষ্ট ভালো। 


এর মেইনটেন্স খরচ তেমন নেই। ডেইলি অফিশিয়াল কাজের জন্য বেস্ট একটা স্কুটার। খুব আরামে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ানো যায়। যারা বাইক চালাতে ভয় পান মাইলেজ এর চিন্তা না থাকলে নির্দ্বিধায় নিতে পারেন রানার এর এই স্কুটারটি। কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না ইনশাল্লাহ। ধন্যবাদ ।


লিখেছেনঃ  আপন


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla