Shares 2
হিরো হোন্ডা হাঙ্ক নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা – শুভ্র
Last updated on 02-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
হাই সবাই আমি শুভ্র, বাইকবিডির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক । আমি এখানে এসেছি আমার হিরো হোন্ডা হাঙ্ক (Hero Honda Hunk) সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে । ২০০৯ সালে আমি একটি হাঙ্ক এর মালিক হই ।এটা কেনার পূর্বে আমি চারদিকে হন্যে হয়ে ঘুরেছি,সেরা মোটরসাইকেলের সন্ধানে ।
আমি ইন্টারনেটে প্রচুর ঘাটাঘাটি করি , আমার সকল বন্ধু ও আত্মীয় যাদের মোটরসাইকেল সম্পর্কে কিছু অভিজ্ঞতা আছে তাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞেস করি ।
আমার বাবার পছন্দ ছিল কম সিসির বাইক । তার চিন্তা ছিল কম সিসি মানে দুর্ঘটনা মুক্ত থাকা । একমাত্র পুত্র হিসেবে তিনি সবসময় আমাকে নিরাপদ রাখতে চাইতেন । কিন্তু আমি ১৫০সিসি বাইক নিতে চাইলাম ।
এটা ছিল তখন বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমা । পরবর্তীতে এটা ১৫৫ সিসি করা হয় যে কারণে ইয়ামাহা এফ জেড এস , ফেজারগুলো এখন রাস্তায়। ১৫০সিসি বিভাগে আমি দুটি মোটরসাইকেল পেয়েছিলাম যেগুলো আমার পছন্দের সাথে যায় ।
১. হিরো হোন্ডা হাঙ্ক
২. বাজাজ পালসার ১৫০ ডিটিএসআই
হিরো হোন্ডা হাঙ্ক এর গতি, মসৃণতা এবং পেশীবহুল গঠনের জন্য জনপ্রিয় । বাজাজ পালসার ১৫০সিসি এর অনন্য স্বয়ংক্রিয় ধরনের জন্য জনপ্রিয় । ঐ সময়ে বাজাজ ছিল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় মোটরসাইকেল । প্রত্যেক তরুণ একটি বাজাজ পালসার এর মালিক হতে চাইত ।
Also Read: হাঙ্ক নিয়ে আমার কুয়াকাটা ট্যুর
আমি মোটরসাইকেল চালনা শিখেছি আমার মামাতো ভাই এর কাছ থেকে । সে বাইকিং এর ক্ষেত্রে আমার পছন্দ সম্পর্কে জানে। কারণ সেই একমাত্র ব্যক্তি যে বাইকিং সম্পর্কে আমার পাগলামি দেখেছিল । আমার সকল প্রয়োজন সম্পর্কে জানার পর সে আমাকে এরকম উপদেশ দিয়েছিল “সবাই বাজাজ পালসার কিনছে এর স্টাইলের জন্য। তোমার এটার প্রয়োজন নেই। তোমার প্রয়োজন গতি।
তুমি ভ্রমণ করতে ভালবাস,তাই তোমার হিরো হোন্ডা হাঙ্কই নেয়া উচিত।” পরে সে আমাকে মজা করে বলেছিল যে সে শুধু তার ভাইয়ের মৃত্যুতে উৎসাহ দিয়েছিল।
জুলাই মাসের একটি উজ্জ্বল দিনে আমি আমার বাবা এবং আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জনকে নিয়ে গেলাম একটি হিরো হোন্ডা হাঙ্ক কিনতে । আমি কাছের একটি শোরুম পছন্দ করেছিলাম ঝামেলাহীন সার্ভিসের জন্য । সেখানে মাত্র দুটি হাঙ্ক ছিল ।
Also Read: হোন্ডা ওয়েভ আলফা বাইকে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন অফার দিচ্ছে হোন্ডা বাংলাদেশ!
কারণ বাজেটের কারণে দাম পরিবর্তনশীল ছিল তাছাড়া হাঙ্কের নতুন আইপিএল ভার্সন শোরুমের সংগ্রহে ছিল না । বাকি দুটো ছিল লাল ও কাল রঙের । তারা মোটরসাইকেল দুটিকে প্রদর্শনের স্থান হতে বের করল এবং আমার সামনে দাঁড়াল ।
আমি কাল রঙের প্রতি কিছুটা দুর্বল ছিলাম । আমি কাল রঙের হিরো হোন্ডা হাঙ্কের দিকে তাকালাম এবং আমার হৃদস্পন্দন হটাৎ বেড়ে গেল । আমার ভেতর থেকে কেউ আমাকে বলছিল , হ্যাঁ এটাই তোমার স্বপ্নের বাইক । কোন চিন্তা না করেই আমি বাইকটি প্রস্তুতের জন্য অনুরোধ করলাম ।
বাইক প্রস্তুতির পর ব্যবস্থাপক আমাকে হাসিমুখে বাইকের চাবি হস্তান্তর করল । আমি অনুভব করলাম আমি এখন একজন হিরো হোন্ডা হাঙ্ক এর গর্বিত মালিক ।
প্রথম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
ব্যাটারির কম চার্জের কারণে আমি কিকস্টার্ট পদ্ধতিতে ইঞ্জিন চালু করলাম । ইঞ্জিনের শব্দ আমার মনের মধ্যে প্রবাহিত হল এবং একটি খোলা রাস্তার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানালো । আমি সিটের উপর বসলাম ব্রেক এবং ক্লাচ পরীক্ষা করলাম তদুপরি আমি আরাম অনুভব করার চেষ্টা করলাম ।
কিছু ভ্রুম ভ্রুম এর পর আমি এটাকে খোলা রাস্তায় নিয়ে গেলাম । আমি আমার মনোযোগ হারিয়েছিলাম এবং বাজেভাবে গতিবৃদ্ধি করেছিলাম ।ইঞ্জিনের শব্দ এত মসৃণ ছিল যে এটা আমাকে গতি বৃদ্ধি করতে উৎসাহী করেছিল কিন্তু আমি ইঞ্জিনের জীবনকাল বাঁচাতে চায় তাই আমি কোম্পানির নিয়ম মেনে চলি ।
এই ভ্রমণে আমি প্রথমবারের মত স্বাধীনতা অনুভব করলাম।
আঙ্গিক ও ধরন (স্টাইল ও লুক)
হাঙ্কের জন্মগতভাবেই একটি পুরুষালীভাব রয়েছে । এর পেশীবহুল জ্বালানী ট্যাঙ্ক প্রকৃতিতে প্রথম । আজকাল অন্য বাইকগুলো এর স্টাইল অনুসরন করছে । এর ক্রিস্টাল ক্লিয়ার রিফ্লেক্টিং হেড লাইট রাতেও সূর্যের ন্যায় আলো দেয় এবং দিনে সূর্যের আলো প্রতিরোধ করে ।এর ক্রোমিয়াম ইস্পাত বৃত্তের লালচে উজ্জ্বল ফ্রেমের মাঝে অ্যানালগ স্পিডোমিটার একে চমৎকার একটি আঙ্গিক দিয়েছে ।
ইঞ্জিন ও কার্যকারিতা
হিরো হোন্ডা হাঙ্কের রয়েছে একটি ১৪৯.২ সিসি ইঞ্জিন যেটা সিবিজেড (CBZ) এবং হোন্ডা ইউনিকর্ন (Honda Unicorn) এর মতো। এটা ৮৫০০ আরপিএমে ১৪.৪ পিএস উৎপন্ন করে । সিভি ধরনের কার্বুরেটর উচ্চ গতিতেও জ্বালানী দক্ষতা নিশ্চিত করে ।
এটি একটি এয়ার কুল ইঞ্জিন কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণে এটি সহনীয় তাপ উৎপন্ন করে । নতুন এয়ার কুল প্রযুক্তির কারণে এটি দীর্ঘ ভ্রমণে এর ক্ষমতা হারায় না । এর ইঞ্জিন তেল ধারণ ক্ষমতা ১.২ লিটার কিন্তু যখন আমি ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ,এটা প্রতিবারই ১ লিটারে পূর্ণ হয়ে যায় ।
Also Read: ৪০০ মিলিয়ন মোটরসাইকেল তৈরি করলো হোন্ডা ! বাইকবিডি
এর বহুস্তর বিশিষ্ট আদ্র ক্লাচ বিভিন্ন গিয়ার পজিশনে মসৃণ গতি নিশ্চিত করে । এর সবচেয়ে উপযোগী ফাংশান হল এর গিয়ার রেসিও । এর রয়েছে পাঁচটি গতি নির্ধারক সংবদ্ধ গিয়ার বক্স । আপনি ৫ম গিয়ারেও মস্রিনভাবে চালাতে পারবেন ২৫-৩০ কিমি বেগে ।
জ্বালানী দাহন প্রক্রিয়ায় এটি ব্যবহার করে অ্যামি অ্যাডভাঞ্চ মাইক্রোপ্রসেসর জ্বালানী দাহন পদ্ধতি যা শীতল আবহাওয়ায় ভাল স্টার্টের উপযোগী । ইঞ্জিনের কম্পন ও শব্দ আমাকে উচ্চ গতিতেও দেয় মসৃণ ভ্রমণের অভজ্ঞতা ।
আরাম ও নিয়ন্ত্রণ
হাঙ্কের রয়েছে নলাকার হীরার ন্যায় চেসিস ,এ কারণে যে এর নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থা রয়েছে এর মাঝখানে। যেটা আপনাকে এবড়ো থেবড়ো রাস্তায়ও বাইক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেবে । এর সামনের সাসপেনসনে রয়েছে টেলিস্কোপিক হাইড্রলিক শক অ্যাবজরবার ।
পেছনে রয়েছে পাঁচ ধাপ বিশিষ্ট ঘূর্ণায়মান বাহু সাথে নাইট্রাস গ্যাস ধারক সাসপেনসন ব্যবস্থা । আপনাকে এমনকি দু জন যাত্রীসহ আরামদায়ক ভ্রমন দেবে । এর হাতল আপনাকে যানজটে অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। হাতলের উচ্চতার জন্য এটি ঘুরানোর সময় কিছুটা জায়গা দখল করে। উচ্চ গতিতে এর চেসিস বেশী বাতাসে নড়ে না ।
ব্রেক ব্যবস্থা
এর সামনের ২৪০মি. ডিস্ক ব্রেক আপনাকে ৮০ কি.মি. গতি হতে ৩৫ মি. এর মধ্যে থামানোর ক্ষমতা দেবে । পিছনে রয়েছে ১৩০ মি. এর ড্রাম ব্রেক ব্যবস্থা । ব্রেক ব্যবস্থাদ্বয় হুইলের গ্রিপের মাধ্যমে একই সাথে কাজ করে ।আমি গ্রামের রাস্তা হতে হাইওয়ে সবজায়গাতেই চালিয়েছি,কিন্তু এটা আমাকে সবজায়গাতেই সন্তুষ্ট করেছে ।
মাইলেজ
হিরো হোন্ডা কোম্পানি দাবি করেছিল ৬০ কে.এম.পি.এল । কিন্তু আমরা সবাই জানি এ মাইলেজ পাওয়ার জন্য কিছু নিয়মনীতি রয়েছে । আমি প্রচুর ভ্রমণ করেছি । হাইওয়েতে আমি এটা পেয়েছি সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ কে.এম.পি.এইচ । কিন্তু শহরে এটা কখনো ৩০ কি.মি অতিক্রম করে নি । আমার মত হল যারা জ্বালানী সাশ্রয়ী বাইক চাই হাঙ্ক তাদের জন্য নয় ।
হাঙ্কের সাথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
আমি বাংলাদেশের চারটিরও বেশী বিভাগ আমার হিরো হোন্ডা হাঙ্কের সাহায্যে ঘুরে বেড়িয়েছি। সবচেয়ে স্মরণীয়টি হল ঢাকা-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি-বান্দরবান-চট্টগ্রাম-ঢাকা । হাঙ্ক অবশ্যই একটি দীর্ঘ ভ্রমণের বাহন,একটি ১৪০০ কি.মি ভ্রমণ আমি হাঙ্কের সাথে করেছি কোন সমস্যা ছাড়াই । এর ইঞ্জিনের শক্তি অন্যান্য উচ্চ সিসির বাইকের সাথে তুলনীয় ।
পরিবর্তনসমূহ
আমি হাতলের বার পরিবর্তন করেছি । আমি এটা পালসার হাতল দ্বারা পরিবর্তন করেছি । নিচু হাতল বাইকের উপর অধিক নিয়ন্ত্রণ দেয় । আমি প্রকৃত এন.জি.কে ইরিডিয়াম প্লাগ ব্যবহার করি। আমি বায়ু শোধন ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছি , এটাকে এন ও কে বায়ু শোধন ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছি ।
উভয়ই আমি ভারত থেকে ২০১০ সালে কিনেছিলাম । এটা পরিবর্তনের পর আমি সর্বাধিক শক্তি পেয়েছিলাম । প্রথম দুই বছর আমি মতুল সিনথেথিক ইঞ্জিন তেল ব্যবহার করেছিলাম । মতুল সিন্থেথিক ইঞ্জিন তেলের মজুদ শেষ হওয়ার পর আমি ব্যবহার করছি গালফ সিন্থেথিক ইঞ্জিন তেল ।
সর্বোচ্চ গতি
আমি প্রতি ঘণ্টায় ১২৫ কি.মি পেয়েছিলাম ঢাকা সিলেট হাইওয়েতে যখন ওডোমিটারে আমার মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব ছিল ৬৫০০ কি.মি. অনেক চালক দাবি করে যে তারা প্রতি ঘণ্টায় ১২৮ বা ১৩০ পেয়েছে। কিন্তু সত্য হল আমি পেয়েছি ১২৫ কি.মি ।
ভাল দিকসমূহঃ
১. ভ্রমণের জন্য ভাল ২.শহুরে রাস্তার জন্য ভাল ৩.বসার ব্যবস্থা আরামদায়ক ৪. ব্যাক সিট সুবিধার ক্ষেত্রে সেরা ৫. তৎক্ষণাৎ গতিবৃদ্ধি ৬. যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা
খারাপদিকসমূহঃ
১. অফিসে যাতায়াতকারী মানুষদের জন্য উপযুক্ত নয়। ২. জ্বালানী সাশ্রয়ী নয়। ৩. টিউবের টায়ার পাংচার হওয়ার ঝামেলা দিতে পারে। ৪. পিছনের ব্রেক আদ্র আবহাওয়ায় খুবই সংবেদী। ৫. বাংলাদেশে খুচরা যন্ত্রাংশের উচ্চমূল্য।
আমি উচ্চতায় ৬ ফুট ,আমার সাথে হাঙ্কই সবচেয়ে চলনসই মোটরসাইকেল । যখন আপনি বাইক কিনবেন আপনাকে বাইকের সাথে কেমন দেখাবে তা অবশ্যই ভাববেন । আমার ভালবাসার হিরো হোন্ডা বাইকের সাথে এটাই আমার অভিজ্ঞতা।
আশা করি হিরো হোন্ডা মালিক পর্যালোচনা নতুনদের সঠিক বাইক পছন্দে সাহায্য করবে । রাস্তায় নিরাপদ থাকুন ও সবসময় হেলমেট ব্যবহার করুন।
শুভ্র সেন
T
Published by Ashik Mahmud Bangla