Shares 2

Haojue TR 150 টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি

Last updated on 30-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

বাংলাদেশে মাঝে কিছু দিন হাওজু বেশ চুপচাপ ছিল, তবে এর মধ্যে আপনি হয়ত বুঝতে পেরেছেন কারণ এটি বাংলাদেশের অন্যতম বেস্ট চাইনিজ বাইক ব্র্যান্ড। অতীতে আমরা হাওজুর নেকেড স্পোর্টস কমিউটার Haojue DR160, ১৩৫ সিসি সেগমেন্টের কমিউটার Haojue KA135 বাইক দুটি টেস্ট রাইড করেছি। এখন চলুন কথা বলা যাক Haojue TR 150 টেস্ট রাইড রিভিউ নিয়ে।

Haojue TR 150 টেস্ট রাইড রিভিউ

haojue tr 150 test ride review team bikebd

বাইকটিকে ক্রুজার ডিজাইন, স্টাইল, ও এরগোনমিক্স দেয়া হয়েছে। অন্যান্য ক্রুজার সেগমেন্টের বাইকের মত এই বাইকটিও নেকেড এবং বোল্ড ডিজাইন দেয়া হয়েছে। সামনের দিকে গোলাকার হ্যালোজেন হেড লাইটের সাথে উপরে দেয়া হয়েছে একটি স্পিডোমিটার।

এর হ্যান্ডেলবারটি একটু উপরে পজিশনে দেয়া হয়েছে, যা আরামদায়ক রাইড প্রদান করে এবং পায়ের অবস্থান সামনের দিকে কিছুটা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যা একটি ক্রুজার বাইকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রিয়ার ভিউ মিরর এ হাওজু যে ক্রোম প্লেটিং দিয়েছে সেটা আমাদের বেশ ভাল লেগেছে।

বাইকটির স্পিডোমিটারটি হচ্ছে এনালগ ও এর সাথে দেয়া হয়েছে একটি ডিজিটাল গিয়ার ইন্ডিকেটর। ফুয়েল ট্যাঙ্কটি বেশ বড় ও বোল্ড ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।haojue tr 150 fuel tank speedometer

ট্যাঙ্কটির ডিজাইন বেশ ইউনিক ও এটি পুরোপুরি মেটাল বডির ফুয়েল ট্যাঙ্ক। ফুয়েল ট্যাঙ্কের উপরে একটি ডিজিটাল ফুয়েল গজ ও ওডোমিটার দেয়া হয়েছে। যদিও এটি কিছুটা অড প্লেস, তবে আপনি বেশির ভাগ ক্রুজারের এমন দেখতে পাবেন যা বেশ ইউনিক বলা যায়।

রাইডার ও পিলিয়নের সিট গুলো বেশ প্রশস্ত ও আরামদায়ক। ফুট রেস্ট কিছুটা নিচু ও পেছনের দিকে একটি প্রশস্ত গ্রেইব রেইল দেয়া হয়েছে। বাইকটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর দু পাশে দুটি স্যাডেল বক্স দেয়া হয়েছে।

এই স্যাডেল বক্স দুটি, কোট, বাইকের ডকুমেন্ট, এবং অন্যান্য জিনিস পত্র নেয়া যায়, যা সাধারণত আমরা অফিসে বা অন্য কোথাও যাওয়ার সময় ব্যাগে করে নিয়ে থাকি।haojue tr150 front disc brake front suspension

এছাড়া বাইকটির সাইডে দেয়া হয়েছে সাইড প্যানেল, আন্ডার বেলি প্যান, ব্লোটেড এক্সহস্ট এবং ভি শেইপ টেইল লাইট, যা বাইকটি পুরোপুরি ডিজাইনের সাথে বেশ ম্যাচ করেছে। অপর দিকে গ্লোসি প্যানেলের সাইডে সিলভার ফিনিশিং ও এলয় রিম গুলো বাইকটিকে একটি মাচো লুকস এনে দিয়েছে।

হাওজু বাইকটির ফ্রেমে দিয়েছে ক্রেডেল ফ্রেম, এবং এটি হুইলের সাথে ডেডিকেটেড ভাবে সেট আপ করা হয়েছে। হুইলে দেয়া হয়েছে ১০টি গ্লেজি এলয় রিমস। এর সাথে রয়েছে, টিউবলেস টায়ার এবং সামনের দিকে ৯০ সেকশন টায়ার, ও রেয়ারে দেয়ায় হয়েছে ১১০ সেকশন টায়ার। সামনের দিকের রিম হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি ও রেয়ারে হচ্ছে ১৬ ইঞ্চির রিম।

Haojue TR 150 বাইকটির সামনের দিকে দেয়া হয়েছে ২৭০মিমি ডিস্ক ব্রেক ও রেয়ারে দেয়া হয়েছে ড্রাম ব্রেক সেট আপ। এটি কনভেনশনাল ক্রুজার তাই সামনের দিকে দেয়া হয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং রেয়ারে দেয়া হয়েছে স্প্রিং লোডেড ডাবল রেয়ার সাসপেশন।haojue tr 150 engine

Haojue TR 150 বাইকটিতে দেয়া হয়েছে ১৫০সিসি এয়ার কুলিং কার্বুরেট ফুয়েল ফিলিং সিস্টেম ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন থেকে 12.5 BHP এবং 11.4 NM টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম, যা ৫ স্পিড গিয়ারবক্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

হাওজু হাই ইফিসিয়েন্সি সমৃদ্ধ TSR ইঞ্জিন ডেভলপ করেছে, যার কারণে বাইকটির পাওয়ার ডেলিভারি অনেক বেশি স্মুথ হয়েছে। অপর দিকে এর ভাইব্রেশনও কমে গিয়েছে।

Haojue TR 150 Test Ride Review


ইঞ্জিনটি অনেক বেশি স্মুথ। আপনি তখনই এর ভাইব্রেশন অনুভব করবেন যখন আপনি বাইকটি হাই রেভ এ রাইড করবেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাইকটিতে কোন রেভ কাউন্টার দেয়া হয়নি, তাই আমরা সঠিক ভাবে এটি বলতে পারছি না।

তবে স্পিডের দিক থেকে যদি বলা যায় তবে সেটা ৭০-৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় রাইড করার সময় আপনি কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভব করতে পারেন।

১৪৫ কেজি ওজন বাইকটির একটু হলেও বেশি, তবে মেটাল ক্রোম প্লেটিং এর জন্য বাইকটি বিশেষ ভাবে না হলেও একদম সাধারণ নয়। বাইকটির রাইডিং সিট, রাইড ও পিলিয়ন এর জন্য বেশ আরামদায়ক।haojue tr 150 price in bangladesh

হাওজু টিআর ১৫০ এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স খুব বেশি ভাল নয়। আপনি যদি একজন পূর্ন বয়স্ক পিলিয়ন নিয়ে রাইড করেন তবে বাইকটি ঢাকার স্পিড ব্রেকারে ঘষা খাবে বলেই আমরা দেখতে পেয়েছি। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের মধ্যেও ছোট ছোট গ্যাপ থেকে সহজ বাইকটি রাইড করা যায় না।

বাইকটির টার্নি রেডিয়াস অনেক বেশি, যদিও এটি ক্রুজারের একটি বৈশিষ্ট্য। বাইকটিকে টার্ন করতে মানে ঘুরাতে আপনার বেশ ভাল পরিমানের জায়গা দরকার হবে। অপর দিকে সাইডে স্যাডেল বক্স থাকার কারণে আপনার মনে হবে আপনি ছোট গ্যাপ থেকে বের হতে পারবেন না।

হাওজু টিআর ১৫০ বাইকটির সাসপেনশন বেশ সফট। হালকা উচু নিচু রাস্তায় তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে বেশি উচু নিচু গর্ত যুক্ত রাস্তায় আপনার কিছুটা সমস্যা হবে, তবে যদি পিলিয়ন থাকে তবে বাইকটি স্ট্যাবল, কিন্তু বাইকটি আন্ডার বেলি স্পিড ব্রেকারের সাথে ঘষা লেগে যায়।haojue tr 150 black colorHaojue TR 150 বাইকটির ব্রেকিং বেস্ট না হলেও একদম খারাপ নয়। যদিও বাইকটিকে স্পোর্টস কমিউটারের কাছাকাছি ভাবে কেউ রাইড করতে চায় তবে সেটা সম্ভব নয়, তবে আপনি যদি একটি সাধারণ স্পিড ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা রাইড করেন, তবে ব্রেকিং এর ফিডব্যাক ভাল পাবেন।

১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বা তার বেশি স্পিডে বাইকটির ব্রেকিং বেস্ট ব্রেকিং নয়। বাইকটি কন্ট্রোল করা বেশ সহজ, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাইকটির ওজন। বাইকটির ওজন ও ডিজাইনের কারণে বেশ সহজেই গ্লাইড করতে পারবেন।

তবে আমাদের মনে হয় যে, সামনের টায়ারের গ্রীপ আরও একটু ভাল হওয়া উচিত ছিল, ভেজা রাস্তায় ভাল ফিডব্যাক প্রদান করে না। আপনি যদি সর্তক না থাকেন তবে টায়ার অনেক স্লাইড করতে পারে।

Haojue TR 150 বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি ও কালার কোয়ালিটি বেশ ভাল। এই বিষয়ে আমাদের সেভাবে কোন অভিযোগ নেই, এমনকি বাইকটির কম্ফোর্ট নিয়েও আমাদের সেভাবে কোন অভিযোগ নেই।haojue tr 150 headlight

কিন্তু আরও ভাল হতো যদি হাওজু একটি পাওয়ারফুল হেডলাইট যুক্ত করত। তাহলে রাতে রাইড করার সময় আরও ভাল ভাবে রাতে রাইড করার কনফিডেন্স পাওয়া যেত।

এই বাইকটি ৬ ফিটের উপরের উচ্চতার বাইকারদের জন্য নয়। অনেকের ধারণা হতে পারে যে স্যাডেল বক্স গুলোর কারণে পিলিয়নের বসে সমস্যা হতে পারে। আসলে তেমন নয়, হাইওয়ে বা শহরের রাস্তায় পিলিয়নের বসতে সমস্যা হয় না। ইঞ্জিনের রেসপন্স বেশ দারূণ, আপনি ০-৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে সহজেই রাইড করতে পারবেন।

এরপর গতি তুলতে বেশ কষ্ট হয়, কারণ হচ্ছে বাইকটি ওজন এবং এটি এরো ডায়নামিক ভাবে ডিজাইন না হওয়া। আপনি মিডিয়াম ও লো স্পিডে কর্ণারিং করতে পারবেন, তবে হাই স্পিড কর্ণারিং করা সম্ভব হবে না।haojue tr 150 reviewHaojue TR 150 – মাইলেজ এবং স্পিড

টপ স্পিড: ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা

মাইলেজ: ৩২-৩৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার শহরে এবং হাইওয়েতে ৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার

Haojue TR 150 ভাল দিক –

  • কন্ট্রোলিং ও হ্যান্ডেলিং
  • বিল্ড কোয়ালিটি
  • কালার কোয়ালিটি
  • মিডিয়াম স্পিডে ব্রেকিং
  • স্যাডেল বক্স
  • কম্ফোর্টেবল সাসপেনশন

Haojue TR 150 খারাপ দিক –

  • হেডলাইটের আলো অনেক কম
  • মাইলেজ অনেক কম
  • টপ স্পিড অনেক কম, যদিও যারা ক্রয় করবেন তারা টপ স্পিড নিয়ে বেশি চিন্তা করবে না
  • টার্ণিং রেডিয়াস অনেক বেশি
  • ওজনের দিক থেকে অনেক বেশি

 

Published by Raihan Opu Bangla