Shares 2
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – বাইকবিডি টেষ্টরাইড রিভিউ
Last updated on 18-Aug-2024 , By Shuvo Bangla
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬
হ্যাঁ, এবার সময় হলো বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে দামী আর বর্ণোজ্জল ১৫০সিসি প্রিমিয়াম বাইক নিয়ে নিরবতা ভাঙ্গার। হ্যাঁ বন্ধুরা, আমরা নতুন হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ মডেলের কথাই বলছি। হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ এর সেই সিক্স-এলইডি ডাবল-পিট হেড লাইট এবার ১৭.১বিএইচপি হুঙ্কারে জেগে উঠেছে। এই দানবটা সদ্য বাইকবিডি টেষ্টরাইডারদের হাতে ৬০০০কিমি টেষ্টট্র্যাক পার করেছে। তাই আজ আমরা হাজির হয়েছি হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – বাইকবিডি টেষ্টরাইড রিভিউ নিয়ে। চলুন আমরা সেই টেষ্টরাইডে ঢুকে পড়ি।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – প্রথম দর্শন
আমরা এই বাইকটির ওডোমিটারের কাউন্টার জিরো থেকে আমাদের টেষ্টরাইড শুরু করেছিলাম। আপনারা জানেন যে এই বাইকটি নিয়ে মানুষজনের অতীব উৎসাহ আর অনেক জিজ্ঞাসা রয়েছে। কেননা বাইকটি ইন্দোনেশিয়ার বাজারে ছাড়ার মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই আমাদের দেশে আমদানী হয়েছিল। আর বিদেশের মাটিতে জন্ম নেয়ার মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই একটা ব্র্যান্ড-নিউ মডেল টেষ্টরাইডের জন্যে হাতে পাওয়া আসলেই এক চমৎকার আর বর্ননাতীত অনুভুতি।
তবে অত্যন্ত দামী বাইক হবার কারনেই আমরা আসলে একটা দ্বাযিত্ব অনুভব করেছি। আর তাই বাইকটা আগে আমাদের টেষ্টট্র্যাকে কিছুটা যাচাই করে দেখতে চেয়েছি। আর যেহেতু এই বাইকের পুরোটাই ভিন্নভাবে নির্মিত ও ডিজাইন করা, আর কারিগরী বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন তাই বাহ্যিক মুল্যায়নের চেয়ে আমরা আগে এর টেষ্টরাইডেই বেশি মনোযোগ দিয়েছি। আর অবশেষে আমাদের ৬০০০কিমি টেষ্টরাইডের পর আমরা এখন বাইকটি নিয়ে কিছু বলার জন্যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।
আমরা আসলেই এখন এর গর্জিয়াস লুক আর ধারালো ও তীক্ষ্ণ অবয়বের উপর যথেষ্ট কনফিডেন্ট। আপনারা অনেকেই হয়তো এই বাইকটি ইতিমধ্যে ভালোভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। অনেকেই হয়তো ফাঁকা পথে ছুটে যেতে দেখেছেন বা ট্যাফিক জ্যামে আটকে থেকে গর্জাতে দেখেছেন। আর সৌভাগ্যবান অনেকে হয়তো কিনেও ফেলেছেন। আমাদের ধারনা নিশ্চয়ই এর লুক আপনাদের বেশ ভালো লেগেছে। আর এরপরও আপনাদের হয়তো আরো অনেক জিজ্ঞাসা রয়েছে। তাই চলুন এর এক্সটেরিয়র নিয়ে আরো কিছুটা জেনে নেয়া যাক।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – লুক ও ডিজাইন
কেবল হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ মডেলের লুক ও ডিজাইন নিয়ে বর্ননা দেয়াটাই যথেষ্ট নয়; বরং এটা নিজে দেখার অভিজ্ঞতাটাই আসল। তাই বর্ননা নিয়ে বাড়তি বিরক্তি সৃষ্টি না করে আসলে বলা উচিত এটা সবদিক দিয়ে ইয়ামাহা আর১৫ এর সাথে লড়ার মতো সম্পূর্ণ সক্ষম একটা বাইক। আর এর আপাদমস্তক সবদিক থেকেই এটা রাগী ও পুরুষালী এ্যাটিচ্যুডের একটি বাইক।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ একটি সম্পূর্ণ এ্যারোডাইনামিক ফুল-ফেয়ারড্ বাইক যাতে যথেষ্ট পরিমানে ভেন্ট ও এয়ার-টানেল রয়েছে। ফলে তা উচ্চগতিতে চালানোর সময়, বাতাসের ঘূর্ণি ও আড়াআড়ি বাতাসের চাপের মধ্যেও অত্যন্ত ভালোভাবে এর স্থিতি রক্ষা করে। আর এতে রয়েছে এলইডি আই-ব্রো ডিআরএল সহ ডাবল-পিট সিক্স এলইডি হেডলাইট যেটা দেখতে আসলেই অনেক আর্কষনীয়।
বাইকটির পেছনের দিকটাও বেশ শার্প, স্লিক, স্লিম আর সেগমেন্টেড। এর রাইডার আর পিলিওন সিটটা বিভক্ত করা। আর পিলিওন সিটটা রাইডারের সিটের উপরতল থেকে অনেকটা উপরে।
এতে কোন গ্র্যাব-রেইল নেই, বরং পিলিওন সিটের নীচে হালকা দুটো খাঁজ রয়েছে। আর এর রেজর-শার্প এলইডি টেইল-ল্যাম্পটি ঠিক পিলিয়ন সিটের নীচেই বসানো। আর এর সবগুলো টার্নিং ইন্ডিকেটরও এলইডি ও আকারে বেশ পাতলা ও ছোট।
আর এই সিবিআর১৫০আর এর ওডো মিটারটাও এই বাইকটার অন্যতম এক আর্কষন। এটা এই বাইকের খুব চমৎকার আর সমৃদ্ধ একটি গ্যাজেট। এখানে আপনি ঘড়ি, গিয়ার ইন্ডিকেটর, ফুয়েল এফিসিয়েন্সি কাউন্টার সহ প্রয়োজনীয় মোটামুটি সবকিছুরই নির্দেশনা পাবেন। তবে এতে কোন টপ স্পিড রেকর্ডার নেই।
এই ইন্দোনেশিয়ান সিবিআর১৫০আর টির চালনা ভঙ্গি পুরোটাই ট্র্যাক রেসিং টাইপের। আর এর সিটিং পজিশন আর সর্বিক ডিজাইনও রেসিং ভঙ্গিমার। আর এর হ্যান্ডেলবারটাও বিভক্ত ও ক্লিপ-অন টাইপের।
এই সিবিআর১৫০আর এর ফুয়েল ট্যাংকটি এখানেও সিবিআর আইকনিক সিরিজের। তাবে একটা বড় পার্থক্য যে এর ট্যাংকটার ধারগুলো মসৃন না হয়ে কিছুটা কোনাকৃতি ও ধারালো। তবে এর সার্বিক বডি প্যানেল গ্লোসি ও ম্যাট দুধরনেরই প্যানেল দ্বারা আবৃত যা এর ডিজাইনটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – চাকা, ব্রেক ও সাসপেনশন
নতুন হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ বাইকটি হোন্ডার সিবিআর ডিএনএ এর ছায়ায় তৈরি হলেও এতে হোন্ডার সিবি সিরিজের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। আর হোন্ডার আরএন্ডডি এই শার্প ডিজাইনটি ইন্দোনেশিয়াতেই ডিজাইন করেছে। এটার সাসপেনশন সিস্টেম থাইল্যান্ড মডেলটি থেকে সামান্য কিছুটা ভিন্নতর।
এটার ফ্রন্ট সাসপেনশন একই রকম টেলিস্কোপিক সাসপেনশন তবে এর ফ্লুইড হাউজিংটির বাহ্যিক গড়ন থাইল্যান্ড ও ভারতীয় মডেল হতে ভিন্নতর। আর পেছনের সাসপেনশনটি মনো-সাসপেনশন হলেও তা লিংকড টাইপের। যা অনেকটাই ইয়ামাহা আর১৫ এর সাথে মিলে যায়।
আর এই ইন্দোনেশিয়ান সিবিআর১৫০আর এর দুই ব্রেকই হাইড্রলিক ডিস্ক টাইপ ব্রেক। তবে এর সামনের ডিস্কের গঠন অন্যান্য মডেল হতে একদমই আলাদা। এছাড়া এর চাকা নিয়ে আলাদা করে বলার তেমন কিছু নেই। এর দুচাকার টায়ারই আইআরসি ব্র্যান্ডের টিউবলেস টায়ার।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – ইঞ্জিনের নতুন গঠন
বন্ধুরা আপনারা হয়তো আমাদের আগে প্রকাশিত হোন্ডা সিবিআর১৫০আর থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া মডেলের তুলনামুলক পর্যালোচনাটি পড়ে থাকবেন। আমরা সেখানে আলোচনা করেছিলাম যে ইন্দোনেশিয়ান মডেলটি কোন কোন দিক দিয়ে থাইল্যান্ড মডেলটি হতে আলাদা।
আর এখানে আমরা আবারো উল্লেখ করতে চাই যে এই ইন্দোনেশিয়ান সিবিআর১৫০ আর এর ইঞ্জিনটি স্কয়ার ইঞ্জিন। এটার সিলিন্ডার বোর আর স্ট্রোক প্রায় সমান সমান। আর অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও ইন্ডিয়ান মডেলটির ইঞ্জিন ওভারস্কয়ার। অর্থাৎ সিলিন্ডারের বোর স্ট্রোকের চাইতে বড়। আর এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য আপনারা আমাদের সেই আলোচনাটি থেকে পড়ে জেনে নিতে পারেন।
আর প্রায় একইসাথে দুই মডেলের সিবিআর১৫০আর এর টেষ্টরাইডে নিয়োজিত থাকায় আমরা দুটো বাইক থেকে তুলনামূলক আলাদা ফিডব্যাক পাচ্ছিলাম। তবে সেসব তথ্য এখনই নয় বরং আলাদা কোন আলোচনায় আমরা তা প্রকাশ করবো। তবে এখনকার মতো এই টেষ্টরাইড রিভিউএ বলতে হয় হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া আসলেই হোন্ডা ইন্দেনেশিয়ার তৈরি একটি মাস্টার পিস। আপনি এর যেকোন গিয়ারে নিম্ন আরপিএম হতেই এর র-এ্যাক্সিলারেশনে অভিভূত হয়ে যাবেন।
এটা সহজেই নিম্ন আরপিএম হতেই এর এ্যাক্সিলারেশন আর গতি তোলে, এগিয়ে থাকে, আর খুব দ্রুত টপস্পিড তুলতে পারে। আর আরো আকর্ষনীয় বিষয় হলো এই মডেলটির ফুয়েল এফিশিয়েন্সিও লক্ষ্য করার মতো ভালো।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – বাইকবিডির টেষ্টরাইড অভিজ্ঞতা
আমরা বাইকবিডি টিম এই বাইকটির মিটারের শুন্য কিলোমিটার বয়স থেকেই টেষ্টরাইড শুরু করেছি। আর এর ৬০০০কিমির টেষ্টরাইডের সময়ে অন্যান্য সাধারন ও প্রিমিয়াম বাইকও টেষ্টরাইড করেছি। সুতরাং তুলনামুলক পরিস্কার সেই অভিজ্ঞতায় বলতে হয় হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া টেষ্টরাইড অভিজ্ঞতাটা পুরোটাই অনবদ্য ছিল।
বাইকটির রাইডিং পজিশন, গঠন, কন্ট্রেলিং বিহেভিয়ার, ব্রেকিং, সাসপেনশন সবকিছুই চমৎকার আর যথেষ্ট উপভোগ্য বটে। আপনি যেমন খোলা হাইওয়েতে উচ্চগতিতে চালাতে পছন্দ করবেন, তেমনি শহরের জ্যামে ও ভিড়ে অসাধারন কন্ট্রোলিং আর পারফেক্ট গিয়ার সমন্বয়ের এর কারনে রাইডিং উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
আর কোন আয়াস ছাড়াই প্রায় নি:শব্দ এ্যাক্সিলারেশনের কারনে আপনি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে এর গতি ধরে রাখতে চাইবেন। আর চিন্তার কিছু নেই, কেননা এর উচ্চগতি ও এ্যাক্সিলারেশন সামলানের জন্যে এর ব্রেক, টায়ার আর সাসপেনশন যথেষ্টই সক্ষম। আর গতি সহকারে কর্নারিং, ওভারটেকিং আর স্পিডিং এও আপনি আত্মবিশ্বাস অনুভব করবেন। সে কারনে আক্ষরিক অর্থেই আমাদের মনে হয়েছে যে, এটা তৈরী হয়েছেই চালকের আত্মবিশ্বাস শক্ত করার জন্যে।
সিবিআর১৫০আর এর এই ইঞ্জিনটি যথেষ্ট স্মুথলি অপারেট করে। আর কোনো গিয়ার বা কোনো আরপিএমএ ই এতে কোন ভাইব্রেশন পাবেননা, এমনকি খুব এ্যাগ্রেসিভলি টপ স্পিড তোলার সময়েও। তবে থাই ও ভারতীয় মডেলটির চেয়ে এর ইঞ্জিনের গুঞ্জন একটু বেশি। অনেকেই হয়তো এতে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। তবে আমরা নিশ্চিত বলতে পারি তা কেবল এর ব্রেক-ইন পিরিয়ডেই; এর পরে মোটেও নয়।
অপরদিকে এর একজষ্ট এর শব্দটাও খুবই চমৎকার, পুরোপুরি রেসিং বাইকের মতো। আর সেকারনেই ভিড়ের মধ্যে অথবা ফাঁকা স্থানে বাইকটিকে রেভ করতে খুবই ভালো লাগে, আর আসলেই এটা এক মজার অনুভুতি।
আমরা আমাদের এই চমৎকার টেষ্টবাইকটিকে বিভিন্ন ধরনের রাস্তায়, শুকনো দিনে ও বৃষ্টিতে সবদিনেই চালিয়ে দেখেছি। আমরা লম্বা রাস্তায় ট্যুর করেছি, আর শহরের প্রচন্ড জ্যামেও চালিয়েছি। আমাদের মনে হয়না আর মনে করতেও পারিনা যে বাইকটি কখনো চালিয়ে বিরক্ত বোধ করেছি। তবে একটি বিষয় বেশ গলা বাড়িয়েই জানান দেয়া উচিৎ যে এই বাইকটি কেবলমাত্র একাকী চালানোর জন্যেই ভালো; পিলিওন সহ চালানোর বাইক এটা নয়।
আর এই বাইকে পিলিওন সহ রাইডিং, বিশেষ করে পিলিওন যদি মহিলা হন অথবা যদি কেউ নিজেই পিলিযন হন তবে সেই অভিজ্ঞতাটা অনেকটা নাগরদোলায় লটকে থাকার মতোই জঘন্য। আর অবস্থাটা অনেকসময়েই বিপদজনক পর্যায়ে চলে যায় যদি পেছনের জন ওজনে ভারী হয়। এর কারন অনেকটা চালকের সামনে ঝুঁকে থেকে রেসিং মোডে চালানো আর কিছুটা তফাতে বসা উঁচু ও আলাদা পিলিয়ন সিট পজিশন, দুটোই।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – বাইকবিডি টেষ্টরাইড রেজাল্ট
তো বন্ধুরা আমরা আমাদের হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া টেষ্টরাইডের প্রাপ্ত ফলাফল ইতিমধ্যে অনেকটাই আপনাদের সাথে আলোচনা করে ফেলেছি। তবে আরো বেশ কিছু বিষয় আছে যা এখন আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি। আর সংখ্যাতাত্বিক ফলাফলের এই অংশে আপনাদের আবারো বলতে হয় যে এটা হোন্ডা ইন্দেনেশিয়ার তৈরি সত্যিকারের একটি ১৫০সিসি স্পোর্টস বাইক।
এই অনবদ্য মেশিনটি হোন্ডা ইন্দেনেশিয়ার আরএন্ডডি এর আওতায় ডেভেলপ করা হয়েছিল আমরা আগেই বলেছি। এটার চেসিস, ফ্রেম, সার্বিক অবয়ব, বডি প্যানেল সবকিছুই অন্য সিবিআর১৫০আর হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। আর সবচেয়ে বড় ও লক্ষনীয় ভিন্নতা হলো এর ইঞ্জিনে। হোন্ডার এই ওয়াটার কুলড্ ইএফআই ইঞ্জিন সিলিন্ডারটি হোন্ডার ঐতিহ্যবাহী সিবিআর ও সিবি সিরিজের সমন্বয়ে আসলেই এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
আর সেইসাথে এর পারফর্মেন্সেও ভিন্নতা এসেছে আর এর কলেবর ও বেড়ে গেছে ভিন্ন মাত্রায়। আমারা আপাতদৃষ্টিতে প্রথমদিকে বেশ খানিকটা সংশয় ও অস্বস্তিতে ছিলাম যে কেমন পারফর্মেন্স পাওয়া যেতে পারে বাইকটি থেকে। আর থাই ও ভারতীয় মডেলের সাপেক্ষে পার্থক্যই বা কেমন হবে সে বিষয়েও বেশ সংশয় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে তুলনামুলক আলোচনা আমরা নিশ্চয়ই পরবর্তীতে করবো। তবে এখন আমরা হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া টেষ্টরাইডে প্রাপ্ত কিছু পারফর্মেন্স ফিগার আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি।
- হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া এর ফুয়েল এফিশিয়েন্সি খুবই ভালো। আমাদের টেষ্টিং এ মাইলেজ ফিগার সবসময়ই ৪৫কিমি/লিটারের উপরে ছিল। এমনকি রাইডিং প্যাটার্ন ও রোড কন্ডিশন বিচারে অনেকবারই তা ৫২কিমি/লিটার ছিল।
- আর এই বাইকটি থেকে আমরা বিভিন্ন রাস্তা ও অন্যান্য অবস্থা বিচারে টপস্পিড পেয়েছি ১৩৫-১৪৫কিমি/ঘন্টা। তবে টপস্পিডের ভিডিও ধারনের সময় রেকর্ডকৃত ভিডিও ক্লিপে আমরা ১৩৮কিমি/ঘন্টা তুলতে পেরেছি।
- আমরা রেকর্ডকৃত ভিডিও ক্লিপে ০-১৩০কিমি/ঘন্টা তুলেছি ২৮ সেকেন্ড সময়ে আর ০-১৩৮কিমি/ঘন্টা তুলেছি ৪৮ সেকেন্ডে।
- আর ১-২-৩-৪-৫-৬ গিয়ার সাপেক্ষে টপস্পিড ছিল যথাক্রমে ৪৪, ৭২, ৯২, ১১৪, ১৩৮+।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – কিছু ভালো ও দুর্বল দিক
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া বাইকটি আমাদের টেষ্টিং এর সময়ে আমারা বাইকটির বেশকিছু ভালো দিক লক্ষ্য করেছি, আর সেই সাথে এর দুর্বল দিকগুলোও আমরা টুকে রেখেছি। আর কিছু তুলনামুলক তথ্যও রয়েছে আমাদের হাতে। তাই পাঠক আপনি যদি এর সম্ভাব্য ক্রেতা হয়ে থাকেন তবে এসব তথ্য অবশ্যই আপনার জানা থাকা দরকার। সুতরাং নিচের বুলেট পয়েন্টগুলো লক্ষ্য করুন।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – ভালো দিকগুলো
- এই বাইকটি তুলনামুলক খুব দ্রুত এক্সিলারেট করতে পারে। এর রাইডিং এককথায় বলা যায় সুপার স্মুথ; আর স্পিডিং আসলেই উপভোগ করার মতো।
- বাইকটির সবগুলি গিয়ারই খুবই সুসমন্বিত; তবে ৬ নম্বর গিয়ারটি কেবল স্পিড ক্রুইজিং এর জন্যে।
- বাইকটির প্রথম থেকে ছয় নম্বর গিয়ার পর্যন্ত সবগুলির চমৎকারভাবে রেশিও সন্নিবেশ করা যেটা থাইল্যান্ড মডেল থেকে বেশ আলাদা।
- তবে এই বাইকের ইঞ্জিন রেভ নিরাপত্তাজনিত কারনে ইসিইউ দ্বারা নির্দিষ্ট করা। ফলে আপনি এর লিমিটের বাইরে ওভার রেভ বা রেড আরপিএম জোনে চালাতে পারবেন না।
- এর একজষ্ট সাউন্ড এক কথায় অসধারন আর স্পের্টি। এটা আপনাকে আসলেই একটা প্রিমিয়াম ভাব এনে দেবে।
- আর এলইডি হেডলাইট আর ডিআরএল এর কারনে এটা রাস্তায় ও লোকালয়ে সহজে মানুষের নজর কাড়ে। ফলে তা আপনাকে অন্যান্য যানবাহনের চালকের সামনে সহজ দৃশ্যমান রাখে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – দুর্বল দিকগুলো
- হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ২০১৬ ইন্দোনেশিয়া বাইকটির ব্রেক-ইন পিরিয়ড তেমন উপভোগ্য নয়, আর বেশ জড়তা অনুভুত হয়। আর সেকারনেই এর ১০০০-১৫০০কিমি পর্যন্ত এর ব্রেক-ইন বেশ যত্ন ও ধৈর্য্য নিয়ে করতে হয়।
- এর ইঞ্জিন যথেষ্ট পরিশিলিত তবে থাইল্যান্ড মডেলটি হতে শব্দ একটু বেশি।
- হতাশাজনকভাবে এতেও কোন ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই আর খুব বিরক্তিকরভাবে এর হর্নের সুইচটাও উল্টো দিকে উল্টো করে বসানো। ফলে প্রায় সময়েই আপনাকে এই সুইচটি কাজের দিক খুঁজতে আর হাতড়াতে হবে।
- এই বাইকের সিটের নিচের দুটো খাঁজ ছাড়া আর কোন গ্র্যাব রেইল নেই। আর একারনেই খুব ভিড়ের মধ্যে দিয়ে অথবা বাউলি কেটে বের হবার সময়ে পিলিয়ন রাইডার নিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয়।
- হতাশাজনকভাবে অন্যান্য মডেলের সিবিআর১৫০আর এর মতোই এর চেইন এই বাইকের সবচেয়ে বাজে একটা অংশ। এটা মাত্র ৩০০-৪০০কিমিতেই বার বার ঢিলে হয়ে যায়, আর মাত্র ১০০কিমি এর মধ্যে এর লুব্রিকেন্ট শুকিয়ে যায়।
- বাইকটির মাইলেজ কাউন্টারটি একটি ভালো সংযোজন, তবে তা সবসময় একদম সঠিক নয়। এটা কেবল আপনাকে কাছাকাছি একটা ধারনা দেয় মাত্র।
- এই বাইকের হর্ন খুবই নাজুক। আর এর টার্নিং ইন্ডিকেটরে কোন পালস্ বাজার নেই তাই এটাতে কোনই শব্দ হয়না। আর একারনে এতে আপনি অন্যান্য বাইকের মতো ইন্ডিকেটর বাজার হর্ণও লাগাতে পারবেন না।
- অন্যান্য হোন্ডা সিবিআর১৫০আর এর মতোই এর বডি ফেয়ারিংগুলোর জন্যে আলাদা কোন মেটাল ফ্রেম নেই। এর প্লাষ্টিকের ফ্রেমটাই একটা মেটাল হ্যাঙ্গারের সাহায্যে ট্রিপল-ট্রি ইয়েকের সাথে লাগানো থাকে।
- এর প্লাষ্টিক প্যানেলগুলো খুব ভালোমানের তা বলা যায়না। বিশেষকরে পেছনের প্যানেলটা বেশ ভঙ্গুর মানের প্লাষ্টিক দিয়ে তৈরী।
- বর্ষা বা ভেজা সারফেসে এই বাইক চালানো একটা বিরক্তিকর বিষয়। কেননা স্পোর্টস বাইক হওয়াতে এর পেছনের চাকা পুরোটাই নেকেড। আর সামান্য কোন কাদা প্রতিরোধক না থাকার ফলে চালকের পেছনপাশ মাথা পর্যন্ত চাকা থেকে উঠে আসা ময়লা কাদায় প্রিন্ট হয়ে যায়।
- আরেকটা বিরক্তিকর বিষয় হলো এর পেছনের সিটের নিচের ছোট কম্পার্টমেন্টটিতে বৃষ্টির পানি সহজেই ঢুকে যায়। ফলে এতে রাখা কাগজপত্র ও টুলকিট সবই ভিজে যেতে পারে।
- আর এই বাইকের সামনের উইন্ডশীল্ডটা খুবই খাটো। ফলে উচ্চগতিতে চলার সময় চালকের বুকে বেশখানিকটা বাতাসের চাপ লাগে।
- আর এর এলএইডি হেডল্যাম্প রাতে চালানোর জন্যে কোন কাজেরই নয়।
পরিশেষ
তো বন্ধুরা এই ছিল হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ ভারশেনের এর উপর আমাদের প্রাপ্ত সবিস্তার তথ্য। তবে এই শেষ কলামে আমাদের একটা লাখ টাকার প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় যেটা হলো, ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ আর হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ এর মধ্যে কোনটা ভালো। এর উত্তরে আমাদের বলতে হয় হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ মডেলই ইয়ামাহা আর১৫ ভি২ এর আসল ও একমাত্র প্রতিদ্বন্দী যদি এর লুক আর পারফর্মেন্স বিচার করেন।
হ্যাঁ পরিশেষে এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, আমরা আমাদের হোন্ডা সিবিআর১৫০আর ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ – বাইকবিডি টেষ্টরাইড রিভিউ এর মাধ্যমে এই বাইকটি সম্পর্কিত প্রায় সবকিছুই আপনাদের জানাতে পেরেছি। তবুও আমরা যদি কোন অংশ বাদ দিয়ে থাকি অথবা আপনার মনে আলাদা কোন জিজ্ঞাসা থাকে তবে অবশ্যই আমাদের জানাতে ভুলবেননা। আর আমাদের সাথেই থাকুন, কেননা আরো অনেক বাইকের নানা তথ্য নিয়ে আমরা আবারো হাজির হবো। আজ তবে ধন্যবাদ সবাইকে।
T
Published by Shuvo Bangla