Shares 2

মোটরসাইকেলের চোক ও এর কাজ কী?

Last updated on 11-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

আমাদের অনেকেই সকালবেলা বাইক স্টার্ট দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ি, যেটাকে সাধারণত ইঞ্জিন ঠাণ্ডা সমস্যা বলা হয়। আর এ ধরণের সমস্যায় ঠাণ্ডা ইঞ্জিনে স্টার্ট ধরাতে মোটরসাইকেলের যন্ত্রটি খুবই পরিচিত সেটাকে বলা হয় মোটরসাইকেল চোক। তাই আজ আমরা মোটরসাইকেলের চোক কী এবং এটা কীভাবে কাজ করা হয় তা নিয়ে আলোচনা করবো।

মোটরসাইকেলের চোক কী এবং এটা কীভাবে কাজ করে 

মোটরসাইকেল কার্বুরেটর চোক

মোটরসাইকেল চোক কী? প্রথমেই পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার, কার্বুরেটর যুক্ত বাইকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে চোক। কার্বুরেটর ইঞ্জিনে বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণ তৈরি হওয়া ও তা ইঞ্জিনে প্রবেশ করানো হয় যান্ত্রিকভাবে বা বলা যেতে পারে ম্যানুয়ালি। আর এ ধরনের যান্ত্রিক প্রযুক্তির মোটরসাইকেলে কার্বুরেটর চোক আবশ্যিক একটি অংশ। চোক সেখানে পরিবেশ ও তাপমাত্রা জনিত সমস্যায় ইঞ্জিনে প্রয়োজনীয় বায়ু-জ্বালানি মিশ্রণ তৈরি করতে কাজ করে। আসলে মোটরসাইকেল চোক হচ্ছে কার্বুরেটরের সঙ্গে ‍যু্ক্ত একটি পুলিং লিভার। এটা সরাসরি কার্বুরেটরের সঙ্গে কিংবা সামনের হ্যান্ডেলবারে লাগানো থাকলেও ক্যাবলের মাধ্যমে কার্বুরেটরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মোদ্দা কথা, যেখানেই লাগানো থাকুক না কেনো, চোক মূলত কার্বুরেটরের একটি ভাল্বকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এই গোটা প্রক্রিয়াই চোক।

মোটরসাইকেল কার্বুরেটর চোক যেভাবে কাজ করে

মোটরসাইকেল চোকের কাজ কী? আগের দিনে ঠাণ্ডা ইঞ্জিনে স্টার্ট ধরাতে চোক টানা অবশ্যকীয় একটি ঘটনা ছিলো। প্রতিদিন সকালে বাইক স্টার্ট দেওয়ার সময় চোক টানতেই হতো। যদিও গরমের সময় এটা তেমন জরুরি ছিলো না। কিন্তু শীতকালে প্রতিদিনই চোক টেনে স্টার্ট ধরাতে হতো। অবশ্য এখনকার বাইকগুলোতে অটো চোক থাকায়, তা আলাদাভাবে টানতে হয় না। যেকোনো কাল বা আবহাওয়া যেমনই হোক না কেনো, ঠাণ্ডা ইঞ্জিন স্টার্ট করতে চোকের কাজ কী? আর চোক সেখানে ইঞ্জিনে স্টার্ট ধরাতে কী ভূমিকা পালন করে? হ্যা, চোক লিভার ইঞ্জিনে বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণে জ্বালানির অনুপাত বাড়িয়ে দেয়। কার্বুরেটরে চোক লিভার একটি ভাল্ব বা দ্বারের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণে জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়। আসলে চোক লিভারটি ইঞ্জিনে জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে বা বায়ুর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে মিশ্রণে জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ঠাণ্ডা ইঞ্জিনেও দ্রুত ইগনিশন ঘটে। এটাই চোকের কাজ।

মোটরসাইকেল কার্বুরেটর চোক মেকানিজম

মোটরসাইকেল চোক – এটা কীভাবে কাজ করে? কার্বুরেটরে চোক লিভার বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণে জ্বালানির অুনপাত বাড়িয়ে শীতের সকালের বা দিনের কিংবা অনেকদিন পড়ে থাকা বাইকের প্রথম ঠাণ্ডা ইঞ্জিন স্টার্ট ধরাতে কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই কাজটা চোক করে কীভাবে? আসলে কার্বুরেটরে বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণের জন্য অনুপাত নির্দিষ্ট করা আছে, যদিও সেটা পরিবর্তন করা যায়। এটা যান্ত্রিকভাবে থ্রটল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু আবহাওয়া বা অন্য কোনো পরিস্থিতির কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই মিশ্রণের অনুপাত পরিবর্তন করা যায় না। তাই যখন কোনো পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা ইঞ্জিন স্টার্ট করতে জ্বালানির অনুপাত বেশি দরকার হয় তখন সেটা যান্ত্রিকভাবে চোক দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর মূল কাজই হচ্ছে জ্বালানির পরিমাণ বাড়ানো বা বায়ুর পরিমাণ কমানো।

মোটরসাইকেল কার্বুরেটর চোক মেকানিজম

 আগেরদিনের বাইকে থ্রটল বাটারফ্লাই উইং বা দ্বারের বিপরীতে চোক একটি ছোটো দ্বার বা বাটারফ্লাই উইং নিয়ন্ত্রণ করতো। সেটা ইঞ্জিনে বায়ু প্রবেশ কমিয়ে দিতো কিন্তু জ্বালানির সরবারহ একই থাকতো। ফলে মিশ্রণে বায়ুর তুলনায় জ্বালানির পরিমাণ বেড়ে যেতো। কিন্তু আধুনিক কার্বুরেটরে থ্রটল অনুযায়ী বায়ু-জ্বালানির মূল প্রবাহ একই থাকে। চোক লিভার টানা হলে মেইন এয়ার ইনটেক হোলে একটি ভাল্ব খুলে যায়। সেই ছিদ্রটি সরাসরি কার্বুরেটরের জ্বালানির রিজার্ভ বাকেটের ভিতর দিয়ে যায়।

 

আর চোক টানা হলে সেই ভাল্বটির লিড খুলে যায় এবং সেখান দিয়ে বায়ু প্রবেশ করে। সেসময় পিস্টনের ভ্যাকাম প্রেশার বা ভেঞ্চার ইফেক্টের কারণে জ্বালানির বাকেট থেকে সরাসরি জ্বালানি টেনে নেয়। এই অতিরিক্ত জ্বালানি বায়ু-জ্বালানির নিয়মিত মিশ্রণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এভাবেই উভয় ধরনের কার্বুরেটরে জ্বালানির অনুপাত বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ঠাণ্ডা ইঞ্জিনে দ্রুত স্টার্ট ধরে। মূলত এভাবেই চোক জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। 

সবসময় চোক টানলে কি ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়? চোক টানার ব্যাপারে প্রায়শই যে প্রশ্নটি উঠে তা হলো, যথেচ্ছ চোক টানলে কি ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়? উত্তর হলো, না। ঠাণ্ডা ইঞ্জিনে স্টার্ট ধরাতে চোক টানা ক্ষতিকর নয়। এটা আবশ্যকীয় একটি কাজ। তবে অপ্রয়োজনে চোক টানলে জ্বালানির অপচয় হয় মাত্র। কারণ, চোক টানলে ইঞ্জিনে জ্বালানির পরিমাণ যেহেতু বেড়ে যায়, তাই স্বাভাবিকের চেয়ে জ্বালানিও বেশি ফুরায়। এই সমস্যা ছাড়া, ঠাণ্ডা ইঞ্জিনে চোক টানা বরং উপকারী। কারণ এর ফলে ইঞ্জিন সিলিন্ডারের উপরের দেয়াল তেলে ভিজে পিচ্ছিল হয়। কিন্তু সকালের প্রথম স্টার্টের সময় এটা শুষ্ক থাকে। তাছাড়া এটা ওয়্যারিংকেও সুরক্ষা দেয়।

মোটরসাইকেল চোক ভাল্ব

ইএফআই ইঞ্জিনে কি চোক থাকে?

ইএফআই ইঞ্জিনে ম্যানুয়াল চোক লিভার থাকে না। এখানে বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণ ইসিইউ দ্বারা আবহাওয়া, তাপমাত্রা ও পরিস্থিতিভেদে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বায়ু ও জ্বালানির অনুপাত নিয়ন্ত্রণ করে। পাশপাশি সেটাতে জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধিও হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। ইএফআই ইঞ্জিনে ইসিইউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিশ্রণে জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এটাতে আগে থেকে করা প্রি-প্রোগ্রামিং ও সেন্সরের রিডিং অনুসারে বিভিন্ন প্যারামিটারের ভিত্তিতে মিশ্রণে পরিবর্তন আনা হয়। প্রয়োজন বোধে এই ইঞ্জিনে বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণে সরাসরি ফুয়েল স্প্রে নজল থেকে জ্বালানি স্প্রে করা হয়। অর্থাৎ ইএফআই ইঞ্জিনে ম্যানুয়াল চোক থাকে না, অটো চোকের ব্যবস্থা থাকে। তাহলে পাঠক, মোটরসাইকেল চোক ও তার কাজ নিয়ে এই ছিলো আজকের আয়োজন। আশা করি, আপনারা মোটরসাইকেল চোক ও এর কাজ সম্পর্কে যথাযথ ও পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। তবে আপনার যদি আরো বিস্তারিত কিছু জানার থাকে, তবে আমাদেরকে তা জানান। আমরা যথাশীঘ্র সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ সবাইকে।

Published by Shuvo Bangla

Upcoming Bikes

KTM RC 250

KTM RC 250

Price: 0

ZEEHO AE6

ZEEHO AE6

Price: 0

ZEEHO AE8 SE

ZEEHO AE8 SE

Price: 0

View all Upcoming Bikes