২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৫০সিসি অনুমোদন হবে না!
This page was last updated on 29-Jul-2024 01:40pm , By Shuvo Bangla
সরকার ও এর নীতির কারণে ২০২৪ সালের আগে ১৬৫সিসি এর বেশি সিসি লিমিটেশন ৩৫০সিসি বা এর চেয়ে বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত আপাতত নেই, তাই বাইক প্রেমীদের আরও তিন থেকে চার বছর অপেক্ষা করতে হবে উচ্চ সিসির বাইক রাইডের জন্য।
২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৫০সিসি অনুমোদন হবে না!
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ইন্ডাস্ট্রি মিনিস্ট্র, ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলমেন্ট অথোরিটি এর সম্মিলিত এক আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠক হয়, এতে সিদ্ধান্ত হয় যে মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি ডেভলমেন্ট নীতি ২০১৮ আরও পাঁচ বছর পর্যন্ত স্থায়ী করা হবে, এতে করে বাংলাদেশে নীতির যে কোন ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে তা বলার সুযোগ আর থাকছে না।
তারা সবাই নভেম্বর ২০২৩ এর পর সিসি লিমিটেশ বাড়ানোর ব্যাপারে মত দিয়েছেন। মিটিং এর সিদ্ধান্ত থেকে এটাই জানা গিয়েছে। Bangladesh Assemblers and Manufacturers Association (BMAMA) সরকারের এই হঠাৎ ৩৫০সিসি বাড়ানোর বিপক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলছেন যে, বর্তমানে যে সিসি লিমিটেশন রয়েছে সেই জায়গা থেকে লোকাল মার্কেটে প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে, এতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
তাই এখনই পরিবর্তন না করে এই ইনভেস্টমেন্টের একটি ব্রেক ইভেন পয়েন্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত বলে, তারা জানান। এছাড়া তারা আরও বলেছেন যে, সিসি লিমিটেশন যেন আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত রাখা হয়।
BMAMA প্রেসিডেন্ট এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর উত্তরা মোটরস মতিউর রহমান জানিয়েছেন যে, আমরা যখন কয়েক বছর আগে ফ্যাক্টরি স্থাপন করি, তখন সরকার থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে সিসি লিমিটেশন ১৬৫ পর্যন্ত থাকবে, আর এই সিসি লিমিটেশন পাচ বছর পর্যন্ত থাকবে।
র্যাঙ্কন মোটর বাইকস লিমিটেড, যারা বাংলাদেশে সুজুকির অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর এবং BMAMA সদস্য। তারা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও জানিয়েছেন যে, সরকারের উচিত এই সিসি লিমিটেশন বাড়িয়ে ৩৫০সিসি পর্যন্ত করে দেয়া।
কাওয়াসাকি হেডি ইন্ডাস্ট্রিজ জাপান এর লোকাল পার্টনার হচ্ছে এশিয়ান মোটর বাইকস লিমিটেড, যারা ইফাদ গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান, তারা প্ল্যান করেছিল যে আইকনিক মোটরসাইকেল রয়েল এনফিল্ড প্রথমে এসেম্বল ও পরে তারা ম্যানুফ্যাকচার করবে। এছাড়া বাংলাদেশের একমাত্র বাইক রপ্তানিকারক কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস ও চেয়ে ছিল সিসি লিমিটেশন বাড়ানো হোক।
টিভিএস অটো বাংলাদেশ এর বিপ্লব কুমার রয় যিনি BMAMA এর জেনারেল সেক্রেটারি তিনি জানিয়েছেন যে, সিসি লিমিটেশন বাড়ানো না হলে বাইকের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও ইন্ডাস্ট্রি বাড়ানো সম্ভব নয়। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, আমার কোম্পানি এবং এসোসিয়েশন দুটো আলাদা স্বত্ত্বা।
টিভিএস সব সময় আধুনিক প্রযুক্তি কে সাপোর্ট করে গিয়েছে। মিটিং এ আরও প্রস্তাব দেয়া হয় যে, ইঞ্জিন সিসি বাড়ানো হোক আমদানির ক্ষেত্রে এবং তারা এতে সম্মত হয় যে লোকাল রোড টেস্ট ছাড়া, এতে করে পটেনশিয়াল মার্কেট হারাবার সুযোগ আর থাকছে না। ইন্ডাস্ট্রি আরও সাজেস্ট করেছে যে, পুলিশ এবং সরকারের অন্যান্য ডিপার্মেন্ট এই কাজে এগিয়ে আসতে পারে। যাতে করে উচ্চ সিসির বাইক রাস্তায় টেস্ট করা যায়।
এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি তাদের বাইক ৫০০সিসি পর্যন্ত তৈরি ও রপ্তানি করতে পারবে। তবে কেউ লোকাল মার্কেটে ১৬৫সিসি এর বেশি তৈরি বা আমদামী করতে পারবে না।
এই মিটিং এর আয়োজন করেছিল কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, তারা জানিয়েছে যে এবং আগামী ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিসি রেস্ট্রিকশন রেখে দেয়ার মত দিয়েছে। তবে ২০২৩ এর পর এই লিমিটেশন উঠিয়ে উচ্চ সিসির বাইক বাংলাদেশে আনার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে লোকাল মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে কোন অবজেকশন দেয়া হয়নি বাইক তৈরি তে।
কাওয়াসিক বাংলাদেশ এর অপারেশন হেড সাফাত ইশতিয়াক জানান যে, যদিও এটি অনেকটাই অবাস্তব, কারণ লোকাল মার্কেটে ইনভেস্ট না করে বাইক তৈরি করা হলে সেটা বাংলাদেশের বাইকিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য ফলপ্রসূ হবে না।
এশিয়ান মোটরবাইকস চট্টগ্রাম ইকোনমিক জোন এ তাদের ফ্যাক্টরির জন্য ৩০ কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেছে এবং তারা আরও ১৫০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে যাচ্ছে কাওয়াসাকির বাইক তৈরিতে। মিস্টার সাফাত আরও বলেন যে, এই সিদ্ধান্ত একই সাথে দুঃখজনক ও এর কারণে অনেক বড় লস হবে।
কারণ কোম্পানি ও কাস্টোমার সবাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
তিনি আরও বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্তের কোন সঙ্গত যুক্তি নেই। ২-৩ বছরের জন্য ইনভেস্টমেন্ট আটকে রাখার কোন মানেই হয় না। এই সিদ্ধান্ত এই ইন্ডাস্ট্রিকে আরও ১০ বছর পিছিয়ে দিচ্ছে। কারণ উন্নত বিশ্বে সবাই ম্যানুফ্যাকচারিং হাব এর দিকে নজর দিচ্ছে, সবাই গ্রোথ নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী।
তাসকিন আহমেদ ইফাদ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের এখন অনেক বড় একটি সুযোগ রয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলার। অনেক কোম্পানি চায়না থেকে তাদের ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি বাংলাদেশে শিফট করা চিন্তা করছে।
তবে এই সিদ্ধান্ত তাদের বাধাগ্রস্থ করবে এবং অন্য কোন দেশ এই সুযোগটি নিয়ে নিবে ও তারা সেখান ইনভেস্ট করবে।
তাদের কোম্পানি ১২০ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান করেছিল, রয়েল এনফিল্ড বাইকের ফ্যাক্টরি ও এসেম্বলির জন্য। হেড অফ কর্পোরেট এফ্যায়ার্স র্যাঙ্কন মোটরবাইকস এর ফাহিম আদনান খান জানান যে, সুজুকি ২০১৭ সালে তাদের ফ্যাক্টরি স্থাপন করে এবং তখন থেকেই তারা বাংলাদেশে মোটরসাইকেল তৈরি করে আসছে।
আর সুজুকি বাংলাদেশের প্রথম জাপানীজ ব্র্যান্ড যারা বাংলাদেশেই তাদের বাইক তৈরি করছে। এছাড়া তিনি আরও বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক হবে। এতে করে মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি সেভাবে গ্রো করবে না, অনেক আধুনিক প্রযুক্তি বাংলাদেশে আসবে না। আর বাংলাদেশের বাইকাররা তাদের আধুনিক ফিচার্স ও সেফটি থাকার পরও অনেক উচ্চ সিসির বাইক রাইড করতে পারবে না। ২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশে কোন ধরনের কোন সিসি লিমিটেশন ছিল না।
তখন রাস্তা এত উন্নত না হলেও বাইকাররা রাস্তায় তাদের এই অল্প উন্নত রাস্তাতেও বাইক রাইড করেছেন। Bengals Club এর প্রেসিডেন্ট সালেক শাহরিয়ার এর বাবা তাদের অন্যতম যারা ২০০০ সালের দিকে বাইক রাইড করেছেন। সালেক শাহরিয়ার এখন তার বাবার সেই বাইকটি রাইড করে থাকেন। সালেক বলেছেন যে, বাইরের কান্ট্রিতে বাইকাররা আমাদের দেশের বাইকারদের উপর উপহাস করে থাকে, সমালোচনা করে থাকে এই অযৌক্তিক সিসি লিমিটেশনের। কোন দেশেই এমন কোন রেস্ট্রিকশন নেই।
তিনি অনেক দেশে শুধু মাত্র মোটরসাইকেল রাইডিং করার জন্য ঘুরে এসেছেন। সালেক শাহরিয়ার তিনি আগে একটি জাপানীজ বাইক ব্র্যান্ডের মার্কেটিং চিফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তিনি বলেছেন যে, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক যে আরও তিন চার বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে উচ্চ সিসির বাইক রাইডের জন্য। তিনি আরও বলেছেন যে, মোটরসাইকেল সিসি রেস্ট্রিকশন হচ্ছে অনেক সাবমেরিন ক্যাবল এর মত।
কারণ ২০০০ সালের দিকে যখন সিসি রেস্ট্রিকশন দেয়া হয় ঠিক ওই সাব মেরিন ক্যাবলে জয়েন করার জন্য কিন্তু তখন সরকার করেনি, কারণ তারা যুক্তি দিয়েছিল যে তথ্য পাচার হবে। বাংলাদেশের প্রসাশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মনে করে যে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল আসলে ক্রাইম রেট অনেক বেড়ে যাবে ও তারা অপরাধীদের ধরতে সমর্থ হবে না। সালেক শাহরিয়ার আরও বলেছেন যে, অনেক বাইকার যারা দায়িত্বজ্ঞানহীন তারা বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য দিয়েছেন, তারা বলছেন যে বাংলাদেশের রাস্তা উচ্চ সিসির বাইকের জন্য নয়।
উচ্চ সিসি মানে অনেক বেশি দুর্ঘটনা। কিন্তু আমরা যারা বাইক রাইড করে থাকি তারা জানি পরিস্থিতি কেমন। অপরদিকে মিটিং এ মন্ত্রনালয়ের সেক্রেটারি বলেছেন যে উচ্চ সিসির বাইক গুলোতে দুর্ঘটনা অনেক কম ঘটে থাকে। রোড় ট্রান্সপোর্ট এবং হাইওয়ে অফিশিয়ালরাও বলেছেন যে, রোড সেফটির কথা মাথায় রেখে সিসি লিমিটেশন বাড়ানো উচিত। কিন্তু পুলিশ ডিপার্ট্মেন্ট ও হোম মিনিস্ট্রি অফিশিয়াল যারা ছিলেন তারা এক জায়গাতেই আটকে ছিলেন।
আর তা হলো যে অপরাধীদের ধরা তখন অনেক মুশকিল হয়ে যাবে। তবে তারা ভুলে যাচ্ছে যে বাইরের দেশের পুলিশ এই অপরাধী ধরা বা চেস করার সমস্যা রেস্ট্রিকশন দিয়ে সলভ করেনি।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার্স ও এক্সপোর্ট এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট হাফিজুর রহমান বলেন, সিসি লিমিটেশন উঠিয়ে না দিলে বর্তমানে মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি যতটুকু এগিয়েছে তারা আবার পিছিয়ে পরবে।
তার এসোসিয়েশনও আবেদন করেছিল সিসি লিমিটেশন উঠিয়ে দেয়ার জন্য। গত বছরের ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশন আবেদন করেছিল যাতে কোন ধরেন সিসি লিমিট না থাকে অথবা সিসি লিমিটেশন বাড়িয়ে ৩৫০সিসি পর্যন্ত করা যায়।
হাফিজুর রহমান আরও বলেন যে, বাংলাদেশের মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার হিসেবে আমরা মনে করি উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল আমাদের দেশের জন্য তেমন কোন ক্ষতিকর নয়।
আর সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমাদের পিছিয়ে দেবে বলে আমাদের মনে হয়। ৩৫০সিসি এর পারমিশন খুব দ্রুত পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। আর এই মিটিং এর পর সেটা আরও জোরদার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় সরকার এই পটেনশিয়াল মার্কেট নিয়ে কি চিন্তা করছে। কারণ ৩-৪ বছরে আমরা আরও অনেকখানি পিছিয়ে যাবো বলে ধারনা করছি।