বিগার ক্লাস মোটরসাইকেল ব্যবহারের সমস্যা
This page was last updated on 01-Aug-2024 11:51am , By Saleh Bangla
বিগার ক্লাস বা বড় সাইজের বা বেশি ইঞ্জিন ক্যাপাসিটির হাই-প্রফাইল মোটরসাইকেলগুলো মূলত: সবার পক্ষে কেনা বা ব্যবহার করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। নি:সন্দেহে এসব মোটরসাইকেল চালানো বেশ মজার ও যথেষ্ট উত্তেজনার। আর সবচেয়ে উপভোগ্য বিষয় হলো, এসব মোটরসাইকেলর থ্রটলের প্রতিটি মোচড়ে তাৎক্ষনিক পাওয়ার ডেলিভারি ও সিটের নিচে শক্তিশালী ইঞ্জিনের গর্জন।
এসবই একজন রাইডারকে অত্যন্ত বিমোহিত করে দিতে পারে। তবে যাই হোক, এসব বড় সাইজের মোটরসাইকেল চালানো অনেক মজার, আর তাতে অনেক সুবিধা থাকলেও এসব ব্যবহারে ঝামেলাও মোটেও কম নয়। আর তাই আজ আমরা আলোচনা করবো বিগার ক্লাস মোটরসাইকেল ব্যবহারের সমস্যা গুলো নিয়ে। চলুন দেখে নেয়া যাক সে সমস্যাগুলো এক নজরে।
বিগার ক্লাস মোটরসাইকেল ব্যবহারের সমস্যা
>> বিগার ক্লাস বা বড় সাইজের মোটরসাইকেল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এগুলি যথেষ্ট দামী হয়ে থাকে এবং সবদিক দিয়েই তা ব্যয়বহুল। এগুলির প্রাইজ-রেঞ্জ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি হবার কারনে সচরাচর কেউই এগুলির সস্তা বিকল্প কখনো কিনতে যান না; কেননা তাতে কেবল অর্থেরই অপচয় হয়। এসব মোটরসাইকেল সাধারনত হাইলি-ফিচারড ও ভালো বিল্ড-কোয়ালিটির হবার কারনে এগুলির দাম বেশিরভাগক্ষেত্রেই যথেষ্ট বেশি। তাই এসব মোটরসাইকেল কিনতে অবশ্যই যথেষ্ট টাকার জোর থাকতে হবে।
>> বিগার ক্লাস মোটরসাইকেলগুলি সাধারণভাবেই বেশি ডিসপ্লেসমেন্টের ইঞ্জিন নিয়ে বাজারে আসে, যার বেশিরভাগই সাধারনত টুইন বা ফোর-সিলিন্ডারের ইঞ্জিন হয়ে থাকে। ফলে এসব মোটরসাইকেলের ফুয়েল কনজাম্পশন অনেকটাই বেশি। ফলে এসব মোটরসাইকেল চালাতে প্রতি কিলোমিটারে খরচও অনেক বেশি পড়ে যায়। তাই এসব মোটরসাইকেল সাধারন চলাফেরায় ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও বাস্তবসম্মত নয়।
>> বিগার ক্লাস মোটরসাইকেলগুলি আক্ষরিক অর্থেই আকারে যথেষ্ট বড় হয়ে থাকে, যা একটি সাধারন সেডান কারের প্রায় অর্ধেক আকারের। ফলে শহরের ব্যস্ত ট্রাফিকে হোক বা বড় পাবলিক রোডে হোক, অথবা গ্রামের ফাঁকা রাস্তাই হোক, এই বড় আকৃতির মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করা যথেষ্ট আয়াসের একটি কাজ। ফলে সাধারন প্রতিকুল রোড কন্ডিশনেও এসব মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করা যথেষ্ট পীড়াদায়ক।
>> দুইচাকার যান হিসেবে একটি মোটরসাইকেল ওজনে বেশি ভারী হলে তা একটি বড় সমস্যা, যা বিভিন্ন রাইডিং কন্ডিশনে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। আর বিগার ক্লাস বা বড় সাইজের মোটরসাইকেলগুলো অনিবার্যভাবেই ওজনে বেশ ভারী হয়ে থাকে। কেননা এসবে বড় ইঞ্জিন, বড় চ্যাসিস, বড় ফুয়েল ট্যাঙ্ক এবং ভারী হুইল, ব্রেক, ও সাসপেনশন সিস্টেম থাকে। ফলে সামগ্রিকভাবেই, বিগার-ক্লাস মোটরসাইকেলগুলো ছোট বা মাঝারি সাইজের মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় সচরাচর ব্যবহারে তাদের ওভারওয়েটের কারনে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হয়।
>> বড় সাইজের বা বিগার ক্লাস মোটরসাইকেলগুলো আকারে বড় এবং ওজনে ভারী হবার কারনে সাধারন রাইডিং কন্ডিশনেও একজন গড়পড়তা রাইডারের কছে সেসবের রাইডিং, কন্ট্রোলিং, ও হ্যান্ডেলিং বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। আর তাতে রাইডারকে যথেষ্ট পরিশ্রমও করতে হয়। ফলে এসব মোটরসাইকেল গড়পড়তা রাইডারের কছে দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াত, ব্যস্ত ট্রাফিকে সিটি রাইড, এবং প্রাত্যহিক ছোট ছোট স্বল্প দূরত্বের রাইডেও ব্যবহার করা একটি বড় সমস্যা।
>> বাহন হিসেবে একটি মোটরসাইকেলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি প্রায় যেকোনো ধরনের টেরেইনে বা মোটামুটি সবখানে সহজে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু বড় সাইজের মোটরসাইকেল নিয়ে এরকম সুবিধা পাওয়া অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। উপরোন্ত, টেকনিক্যাল টেরেইনে এসব মোটরসাইকেল নিয়ে একজন রাইডারকে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হয় ও অনেকক্ষেত্রেই বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
>> বিগার ক্লাস মোটরসাইকেলগুলো টেকনলোজি, মেকানিজম, ও ফিচারের দিক দিয়ে যথেষ্ট জটিল প্রকৃতির। তাই এসব মোটরসাইকেলের রিপেয়ার ও মেইনটেন্যান্সও যথেষ্ট জটিল। আর এসব মোটরসাইকেলের রিপেয়ার ও মেইনটেন্যান্সের খরচও সাধারন মোটরসাইকেলর তুলনায় অনেক বেশি। উপরোন্ত, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত ডেডিকেটেড সার্ভিস সেন্টার ব্যতীত এসব মোটরসাইকেল সাধারণ ছোট বা মাঝারি আকারের মোটরসাইকেলের মতো সাধারন ওয়ার্কশপে তা মেরামত করা যায় না। এটি বাস্তবেই একটি গুরুতর সমস্য্য।
তো বন্ধুরা, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলা যায় বিগার ক্লাস বা বড় সাইজের মোটরসাইকেল ব্যাবহারের সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বিস্তর অসুবিধা। আর একথা সত্যি যে, যে মোটরসাইকেলের আকার যত বড়, দামও তত বড়; আর সেটির ফিচার যতো বেশি, সেটির ঝামেলাও ততো বেশি।
তাই বিগার ক্লাস মোটরসাইকেলগুলির রাইডিং, মেইনটেন্যান্স ও তা সবসময় টপ-পারফর্মিং লেভেলে রাখতে একজন রাইডারকে যথেষ্ট সময় ও প্রচেষ্টা ব্যায় করতে হয়। সুতরাং একটি চমৎকার ফিচারের বিগার ক্লাস মোটরসাইকেল ব্যবহারের বিড়ম্বনা কতটুকু তা একজন মোটরসাইকেল মালিকই সবচাইতে ভালো জানেন; এটিই মূল বিষয, ধন্যবাদ।