নিকলী হাওড় ভ্রমনের গল্প! মোটরসাইকেল ভ্রমন কাহিনী

This page was last updated on 13-Jul-2024 11:14pm , By Ashik Mahmud Bangla

নিকলী হাওড় ভ্রমনের গল্প! মোটরসাইকেল ভ্রমন কাহিনী

আমি আশিক মাহমুদ,আর আজকের গল্পটা আমার একার না, গল্পটা আমাদের পুরো টীমের। ডে লং ট্যুর টা ছিলো সবার মনের রাখার মতো। প্রতিমাসের মতো এই আগস্টেও টীম নাইট রাইডারস বাংলাদেশ আয়োজন করেছিলো ডে লং ট্যুরের, আর এবারের গন্তব্য ছিলো নিকলী বেড়িবাঁধ, কিশোরগঞ্জ


কয়েক মাস ধরেই ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ভাইরাল হচ্ছিল নিকলীর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দয্য,তাই আমি এবং আমার টীম ঠিক করলাম এবার কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধ যাবো। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আগে থেকেই ইভেন্ট করে দিলাম।


অবশেষে চলে আসলো সেই কাঙ্খিত দিন, ২ আগস্ট। প্রতিবারের মতো এবারও আগের রাতে একটুও ঘুম হলো না,কারন খুব এক্সাইটেড  ছিলাম ট্যুরটা নিয়ে। ২ আগস্ট ভোর রাতে রেডি হওয়া শুরু করলাম,যেহেতু সকাল ৭ টার আগেই সবাই কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। ইচ্ছা ছিলো সবার আগে আমাদের মিট পয়েন্টে পৌছানোর,তাই এতো তাড়াহুড়ো। যদিও আগের রাতেই বাইকের কাগজ, এক সেট জামাকাপড় সব গুছিয়ে রেখেছিলাম যেহেতু হাওর সবাই গোসল করবো এটা আগের থেকেই প্লান। 

চলে গেলাম সংসদ ভবনের সামনে আমাদের মিট পয়েন্টে, গিয়ে দেখি আমার আগেই আমাদের গ্রুপের সাবেক এডমিন ইমন রহমান ভাই  হাজির। কিন্তু তখনো অনেকের ঘুম ভাঙেনি। বাইক ট্যুর আর বাইকাররা লেট করবে না এটা প্রায় অসম্ভব। যাই হউক ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ৭ঃ২০ , অবশেষে প্রথম মিট পয়েন্টে যাদের আসার কথা ছিলো সবাই উপস্থিত হলো।

এবার আমি একে একে সবার বাইকের ডকুমেন্টস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিয়ে রওনা দিলাম। আমাদের ২য় মিট পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। আমাদের ২য় মিট পয়েন্টে ছিলো যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এর শেষ প্রান্তে (ফ্লাইওভার থেকে নেমে প্রথম ফুটওভার ব্রিজটার নিচে)।

সংসদ ভবনের সামনে থেকে ধানমন্ডি নিউমার্কেট হয়ে ঢাকা মেডিকেল দিয়ে গিয়ে উঠে গেলাম ফ্লাইওভারে। রওনা দিতে বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেলো,এদিকে  ২য় গন্তব্যে সবাই অপেক্ষা করছে, সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ বাইক হলো। যাই হোক সবার সাথে কথা বলে যাত্রা শুরু করবো ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের আরেক ভাইয়ের ফোন,ভাইয়ের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় তার জন্য আবার অপেক্ষা, এরই মধ্যে আমাদের টিমের কয়েকজন আগে রওনা হলো সামনে যারা অপেক্ষায় আছেন তাদের রিসিভ করতে।

Also read: ফ্লাইওভারে ছিনতাই করে ‘কিশোর গ্যাং’ - আটক ৪৪জন

অবশেষে যাত্রা শুরু হলো, এখান থেকে আমরা সবার প্রথমে যাবো নরসিংদী ড্রীম হলিডে পার্ক। আমরা কেউ সকালের নাস্তা করি নি তাই ওখানে গিয়েই নাস্তা করবো। গ্রুপ লিড করছিলেন আমাদের ট্যুর লিডার রনি ভুইয়া ভাই, পুরো টীমের সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন রাশেল আহমেদ ভাই। 

একটা লাইন মেনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শনির আখরা-রায়েরবাগ-মদিনাবাগ-কাচপুর ব্রিজ-ঢাকা সিলেট মহাসড়ক দিয়ে চলে আসলাম মাধবদি  এগিয়ে যাচ্ছি নরসিংদী ড্রিম হলিডে পার্কের দিকে। চলে আসলাম ড্রিম হলিডে পাকের সামনে,পার্কের সামনের ফাকা জায়গায় এক পাশে সবার বাইকগুলো রাখলাম।

motorcycle travel blogs

এই পার্কের উলটা দিকেই আছে বেশকিছু খাবারের দোকান। চলুন নাস্তা সেরে নেয়া যাক। যে যার যার মতো সকালের নাস্তা সেরে নিলো। বলে রাখা ভালো সকালের নাস্তা করতে আমাদের খুব বেশি টাকা খরচ হয় নি,আর দাম ও ছিলো অন্যান্য জায়গার মতোই। নাস্তা যেহেতু শেষ এবার চা পান করা যাক। ড্রিম হলিডে পার্ক থেকে এবার রওনা দেয়া যাক।

যেহেতু বাইকের সংখ্যা একেবারে কম না তাই একেক জনকে একেক টা দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছিল,আর আমি ছিলাম সবার লাস্টে,আমার কাজ কেউ যাতে পিছে না পরে সেটা লক্ষ্য রাখা।

যেহেতু এই রাস্তায় আমরা নতুন তাই তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য লিডার গুগল ম্যাপকে অনুসরণ করলেন, যদিও গুগল ম্যাপ আমাদের মাঝে মাঝে কারো বাড়ির আঙিনায়, অথবা পুকুরে নিয়ে ছেড়ে দেয়। এবারও আমরা ভাবছিলাম এমন কিছু যাতে না হয়। যাই হোক ড্রিম হলিডে পার্ক থেকে শাহী প্রতাব-বাশাইল হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। শুক্রবার সকাল ছিলো আর ওইদিন অনেক বাইকিং গ্রুপের ট্যুরের স্পট ছিলো নিকলি তাই যেতে যেতে রাস্তায় প্রচুর বাইকারের সাথে দেখা হলো।

সবাই এক লাইন মেইনটেইন করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম এইভাবে শিবপুর পার হচ্ছিলাম,ঠিক তখনি একটা কাচা রাস্তা থেকে বুলেটের গতিতে এক ইঞ্জিন চালিত রিক্সা উঠে এলো মেইন রাস্তায়।  সবার গতি বেশ ভালোই ছিলো, রাইডাররা অভিজ্ঞ হওয়ায়, নিরাপদ দূরত্ব মেইনটেইন করায় এই যাত্রায় বেচে গেলো অনেকে। যদি বাইকগুলো একটি আরেকটির খুব কাছাকাছি থাকতো তাহলে সেদিন কয়েকটা বাইক ওই এক রিক্সায়ালার জন্য দূর্ঘটনার সম্মুখীন হতো।

motorcycle travel blogs

যাই হোক যেহেতু একটা কাহিনী হলো আর প্রচন্ড গরম ছিলো তাই আমরা ঠিক করলাম কতিয়াদি বাজারে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিবো। বাজারে চলে এলাম এবার ১০ মিনিট বিশ্রাম নেয়া যাক। বিশ্রাম শেষ করে মানিকখালি রোড দিয়ে আমরা চলে আসলাম নিকলি বেড়িবাঁধ এর কাছে তাই সবাই দাড়িয়ে ছবি তুলতে লাগলাম।

বেড়িবাঁধ এর প্রবেশপথ এ দেখতে পেলাম একে একে সব বাইকিং গ্রুপ প্রবেশ করছে। তবে ওই শুক্রবার নিকলি বেড়িবাঁধ এলাকায় ঢাকার বাইকারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পরার মতো। পুরো বেড়িবাঁধ টা একটা চক্কর দিলাম,  তারপর ফাকা একটা জায়গায় রাস্তার পাশে বাইকগুলো রাখলাম। এবার আমাদের গ্রুপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলো। একটা গ্রুপ নৌকা নিয়ে চলে গেলো হাওর ভ্রমনে, আর আমরা বেড়িবাঁধ এর পাশেই যেখানে বাইকগুলো রেখেছিলাম সেই জায়গায় গোসলে নেমে পরলাম।

বিশেষ ভাবে বলে রাখা ভালো এখানে ড্রেস চেঞ্জের তেমন কোন ভালো ব্যাবস্থা নেই, তাই বেড়িবাঁধ ই একমাত্র ভরসা। অনেক নারীরা যেতে চান তাদের জন্য এই কথাটা উল্লেখ করা। যাই হোক এবার দুপুরের খাবার খেতে হবে, সবাই মিলে ভাবলাম এইবার আর হোটেলে বসে খাবো না, এই বেড়িবাঁধ এ বসে হাওরের অপরূপ প্রকৃতি দেখতে দেখতে খাবার খাবো। খাবার আনতে চলে গেলেন আমাদের ম্যানেজমেন্ট টীমের সদস্যরা। এ আরেক বিপদ ওখানে বিরিয়ানি জাতীয় কোন খাবার ই ছিলো না। তাই সাদাভাত আর মুরগির মাংস নিয়ে আসা হলো। খাবার + খাবারের পরিবেশ খুব একটা ভালো লাগলো না।

যাই হোক বিকাল হয়ে আসছে এবার ফিরতে হবে যান্ত্রিক নগরীর দিকে। সবার রওনা দিয়ে দিলাম,কিছু দূর এসে যাদের বাইকে তেল নেয়ার প্রয়োজন ছিলো সবাই নিয়ে নিলেন।  এর পর শুরু হলো বৃষ্টি প্রায় দেড় ঘন্টা পর বৃষ্টি থামলো,আমরাও রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। রুট আগেরটায় ছিলো। পিচ্ছিল রাস্তা তাই সবাই কম গতিতেই এগিয়ে যেতে লাগলাম।

রাস্তায় রিরতি নেয়া, চা খাওয়া, এভাবেই আগাতে থাকলাম। অবশেষে রাত ১১ঃ৩০ আমি সুস্থ ভাবে বাসায় পৌছালাম। তারপর একে একে সবার খোজ নিলাম। সবাই বাড়ি পৌছেছে ভালোমতো। এভাবেই শেষ হলো আমাদের নাইট রাইডারস বাংলাদেশ টীমের ডে লং ট্যুর। নেক্সট মাসে আবারও দেখা হবে নতুন কোন জায়গায় নতুন রুপে,তবে ট্যুরটা হবে আরো বেশি দূরত্বের।  ভালো থাকবেন আর নিরাপদে বাইক রাইড করবেন।

- আশিক মাহমুদ