কক্সবাজার ট্যুর - রবিন খান

This page was last updated on 10-Jul-2024 01:01pm , By Saleh Bangla

আসসালামু আলাইকুম। আমি ঢাকার ডেমরা থেকে রবিন খান লিখছি। এই কিছু সপ্তাহ আগে চলে যাওয়া ঈদ-উল-ফিতরে আমি এবং আমার কিছু ভাই ব্রাদার চলে যাই প্রাণের সাগর কক্সবাজার ট্যুর দিতে এবং আশেপাশের দর্শনীয় কিছু স্থানে মোটরসাইকেল ট্যুরে, তো আজকে আমি সেই ট্যুরের কিছু জল্পনা-কল্পনা প্রতিকূলতা এইসব বিষয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব আমার লেখার মাধ্যমে তবে এটা সত্য সেই মুহূর্তে মস্তিষ্কে যেভাবে অ্যাড্রিনালিন নিঃসরণ হচ্ছিলো তার কাছে এই লেখা কিংবা ট্যুরের আগের দিনের রাতের জল্পনা-কল্পনাও হার মানবে|

কক্সবাজার ট্যুর - রবিন খান

রোজার শুরুতেই আরফিন ভাই রনি ভাই শাওন ভাই পলাশ ভাই হৃদয় ভাই সহ আরো অনেক রাইডার মিলে planning শুরু করি এই ঈদের ছুটিটা কিভাবে সর্বোত্তমভাবে কাটানো যায় অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে প্রান প্রিয় মোটরসাইকেল|২৫ রোজায় আমি মোটরসাইকেলের সার্ভিসিং শেষ করি নতুন এয়ার ফিল্টার,  অয়েল ফিল্টার,  ইঞ্জিন অয়েল সহ যাবতীয় সকল কাজ সম্পন্ন করলাম| আমাদের যাত্রার দিন নির্ধারিত হয় ঈদের তৃতীয় দিন(18-06-2018) ভোর পাঁচটা|অনেকের ট্যুরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বিভিন্ন কারণবশত আমরা ৬ টা বাইক নিয়ে কক্সবাজার এর দিকে রওনা দেই|

প্রতিটি বাইক এ পিলিয়ন ছিল অর্থাৎ আমরা ১২ জন| আমার পিলিওন বন্ধু শামীম ভোর সাড়ে চারটায় আমার বাড়ির সামনে এসে কল দেয় কিন্তু ভোর চারটায় আমি প্রস্তুত ছিলাম ট্যুরের জন্য সারাদিনের লম্বা রাইড সেই উত্তেজনায় ঠিকমত ঘুম ই আসেনি সর্বোচ্চ হয়তোবা ২  ঘন্টা ঘুমিয়েছিলাম| তারপর সানারপার আমার বাসা থেকে রওনা দিলাম আরেফিন ভাইর বাড়ির সামনে মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি নারায়ণগঞ্জের মেহেদী ভাই অপেক্ষা করছিলেন আমাদের সাথে যাবার জন্য( তার আমাদের গ্রুপের সাথে যাওয়ার কথা ছিল না কিন্তু একই দিনে একই গন্তব্যস্থল হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে একসাথে গেলেই ভালো হয়) কিন্তু লেট লতিফ বাকি ভাইদের জন্য অপেক্ষা করতে আমার দেরি হবে তাই মেহেদী ভাই বলল আমি চালানোর শুরু করে দিই আস্তে আস্তে আপনারা টেনে আসলে আমাকে সামনে পাবেন অতঃপর তিনি একলা রওনা দিলেন কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে|

সকাল সাড়ে ৬ টা নাগাদ আরেফিন ভাই আসলেন জিক্সার এস এফ নিয়ে,  চিটাগাং রোড থেকে জসিম ভাই আসলেন পালসার এএস নিয়ে এবং আরেকটি ফেজার ভার্সন ২ যুক্ত হলো আমরা রওনা দিলাম কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে|  মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে বেলাল ভাইয়ের সাথে দেখা করে সবাই মোনাজাত ধরে আল্লাহর কাছে দোয়া করে বাইক স্টার্ট দিলাম সকাল সাতটায়| রাজিব ভাই জিক্সার এস এফ এবং রাজন ভাইয়ের সিবিজেড পরে রওনা দিয়েছেন|তো মদনপুর থেকেই আমাদের আসল যাত্রা শুরু হয় ধীরে ধীরে আমাদের গতি বাড়তে থাকে সকাল বেলা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করতে থাকে| সেই সাথে রয়েছে ফাঁকা রাস্তা এবং সুন্দর পিচ ঢালাই এরকম রাস্তায় আর কি লাগে যদি সাথে থাকে আত্ম-বিশ্বাস এবং দুই হাতের দক্ষতা|

আরফিন ভাই আমাদের লিড দিয়ে নিয়ে যেতে থাকে আমাদের গতি ১১৫-১২০,  রাস্তার দু ধারের সৌন্দর্য যেন অপরূপ রাস্তার দু'পাশে বড় বড় গাছ মাঝখান দিয়ে ছুটে চলেছি আমরা কেমন যেন এক মন্ত্রমুগ্ধর মতো ছুটে চলছি নেই কোন দুশ্চিন্তা নেই কোন না পাওয়ার অতৃপ্তি|দাউদকান্দি ব্রিজ পার হবার পর আমার বাইকের হর্নের ক্লিপ লুজ হয়ে যায় সেটা ঠিক করার জন্য ২ মিনিটের বিরতি নেই ঠিক সে সময় আমাদের সামনে দিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এর  উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া খুব সম্ভবত চারটা বাইক ছুটে যায় ।

তার মধ্যে একটি Honda CBR 150R Repsol এবং একটি নীল কালার Yamaha R15 v3  থাকে আমরা তাদের থামস আপ দেখাই তারাও আমাদের দেখায় তারপর আবার আমরা বাইক স্টার্ট করি চলতে থাকি ১০  মিনিট চলার পরে দেখি সামনে একটি বাইক এক্সিডেন্ট আমরা থামি, কাছে গিয়ে দেখতে পাই একটু আগে যাদের থামস আপ দেখেছিলাম তাদের মধ্যে Yamaha R15 v3 নীল মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশে পড়ে আছে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে তখন মোটরসাইকেলটির গতি ১৪০ ছিল প্রায় যাইহোক তাদের বিষয়টি দেখে খারাপ লাগলেও আমরা সেখান থেকে রওনা দিই আবারও ছুটতে থাকি|

কখনো বা শাওন ভাই পালসার এএস নিয়ে আমাদের লীড দেন কখনোবা আমি জিক্সার ২০১৭ নিয়ে কখনো আরেফিন ভাই এভাবেই হাওয়ার গতিতে ছুটে চলি| সকাল তখন ৯.৩০ আমরা পৌঁছাই ফেনী সেখানে সকালের নাস্তা সেরে আবার ১০ টায় রওনা দিই| দুপুর বারোটা বাজে আমরা পৌঁছাই চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ব্রিজের উপর সেখানে কিছু সেলফি নিয়ে আবারো ছুটে চলি কক্সবাজার এর  এর উদ্দেশ্যে। যেখানেই বিরতি নেবার জন্য থেমেছি সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া আমাকে করেছে মুগ্ধ। সবাই আমাদের গোল করে ঘিরে ধরত আগ্রহের সাথে জানতে চাইত শরীরে কি পরেছি(সেফটি গিয়ার)।

সবাই জানতে চাইত আসলেই কি সম্ভবত এতদুর পারি দেওয়া দুই চাকা নিয়ে?শেষের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার রাস্তা অসংখ্য গর্তে ভরা যার জন্য আমাদের খুবই দেরি হয় যতটা সম্ভব জিকজ্যাক করে সেই গর্তগুলো এড়ানোর চেষ্টা করেছি তারপরেও অনেক দূরে যাওয়া লাগবে সেই বিষয়ে চিন্তা করে গতি কিছুটা বেশি রেখেছি তবে সবকয়টি গর্ত কাটানো সম্ভব হয়নি খুবই বিরক্তিকর এবং ক্লান্ত সময় ছিল সেই ৬০ কিলোমিটার|দুপুরের খাবারটা একটু দেরি করে খাওয়া হয় কক্সবাজার এর হোটেল ইনানি রিসোর্ট দুপুর সাড়ে তিনটায়| বিকাল ৫.১৫ মিনিটে আমরা কলাতলি বীচ এ পৌঁছাই|

ঈদের মৌসুম হওয়ায় হোটেল রুম পেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছিল যাই হোক রাত আটটার দিকে একটি হোটেলে তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট নেই এবং পাশের আরেকটি হোটেলে আরেকটি ফ্লাট নেওয়া হয় কিছুটা বেশি মূল্যে| সারাদিনের এত বাইক চালানোর পরেও আমাদের এনার্জি বিন্দুমাত্র কমেনি রাত ৮ টায় আরেফিন ভাই এবং আমি চলে যাই বিচে গোসল করতে|তারপর খাবার দাবার খেয়ে হোটেল রুমে এসে সবাই একসাথে নাচানাচি হৈ-হুল্লোড় করে ঘুমিয়ে পড়লাম রাত ১ টায়|

পরের দিন সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠেই সবাই মিলে রওনা দিলাম রামু দেখার উদ্দেশ্যে| রামুতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় কাটানো হলো সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত এবং মন্ত্রমুগ্ধর মতো উপভোগ করা হচ্ছিল রামুর রাস্তা বৌদ্ধ মন্দির আশেপাশে সৌন্দর্য| নাস্তা করার জন্য সে পথে ভালো কোন রেস্তোরা না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিলাম নাইখংছড়ি গিয়ে সেখানে নাস্তা করা হবে|নাইখংছড়ি যাওয়ার রাস্তাটা আসলেই চোখজুড়ানো ছিল পাহাড়ের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ যেটা কর্নারিং করার ক্ষেত্রে আদর্শ, আপনার দুই হাতে কতটুকু দক্ষতা আছে তা পরীক্ষা করার জন্য ভালোই একটি রাস্তা|

খুব দূরে দূরে বাড়িঘর সাথে পাহাড় গাছ পালা গ্রাম্য মানুষদের কৌতুহল দৃষ্টি আমাদের সম্পর্কে জানতে চাওয়ার আগ্রহ সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালই লাগছিল| নাইখংছড়ি যাওয়ার শেষ পর্যায় রাস্তার কিছু অংশ এতটাই উঁচু ছিল পিলিওন নিয়ে প্রথম গিয়ারে ওঠাটাই ইঞ্জিনের পরীক্ষা ছিল| নাইখংছড়ি রাস্তার সর্ব শেষ সীমানায় গিয়ে দাঁড়ালাম সেখানে ছোট একটি টং দোকান দেখলাম সেখান থেকে জসিম ভাই একটি কাঁঠাল কিনলো ৩০ টাকা দিয়ে যা সত্যিই খুবই সুস্বাদু ছিল সবাই ঝাপিয়ে পড়ে খেলাম সাথে আরেকটি ফল ছিল যেটার নাম আমার খেয়াল নেই তবে সত্যিই অতুলনীয়| সঙ্গে বুট মুড়ি আর পেয়াজু|

তারপর আবার রওনা দিলাম বীচের উদ্দেশ্যে হোটেল রুমে গিয়ে বাইক রেখে চলে এলাম আবার বিচে গোসল করতে সবাই মিলে গোসল করলাম সাগরে মাতামাতি ডুবাডুবি শেষ করে দুপুরের খাবার তারপর মেরিন ড্রাইভ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম হিমছড়ি ইনানী পার করার পরে শুরু হল হালকা বৃষ্টি কিন্তু এই বৃষ্টি টা যেন আশীর্বাদ ছিল পরিবেশের পক্ষ থেকে। এতটা সৌন্দর্য এতটা অপরূপ এই আমার বাংলাদেশ সেটা ভাবতেও ভালো লাগছিল।

সেখানেও ছবি তোলার পর্ব শেষ করে আরও এগোতে থাকি সন্ধ্যা হওয়া অব্দি ।সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় টেকনাফ সীমানা পর্যন্ত যাওয়া হয়নি তবে ভালই ছিল সেদিনের সময়গুলো তারপর সেখান থেকে হোটেল রুমের উদ্দেশ্যে আবার রওনা দিই পথেই দেখা হয় অনেকগুলো বাইক গ্রুপের সাথে| সবাই এসেছিল ঢাকা থেকে অন্তত চল্লিশটা মোটরসাইকেল একসাথে চলছিল মেরিন ড্রাইভে|হোটেলে এসে রাতের খাবার খেয়ে চলে যাই বীচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে আশেপাশের মার্কেটগুলো ভালোভাবে ঘুরলাম সবাই কিছু না কিছু শপিং করলো কিন্তু আমি কিছুই কিনি নাই কারণ গার্লফ্রেন্ড নাই। সেদিন একটু দেরি করেই হোটেল রুমে যাই রাত ২ টা।

ওই রাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যেহেতু একজন গ্রুপ মেম্বার এর কিছু সমস্যার কারণে ঢাকায় ব্যাক করা লাগবে তাই আর দেরি না করে পরবর্তী সকালে আমরা রওনা দিব|বিভিন্ন কারণে আমাদের রওনা দিতে একটু দেরি হয়ে যায় দুপুর বারোটা নাগাদ আমাদের বাইকে স্টার্ট হয়| সবাই যেন এবার পরীক্ষা নিচ্ছিল ইঞ্জিনের ধৈর্য্য ক্ষমতার| ইঞ্জিনের আর পি এম  এর কোন শান্তি ছিল না স্পিড মিটার এ সব সময় ৩ ডিজিট উঠেই থাকতো| রাস্তার মাঝে বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্ন কারণে দেরি হওয়ায় রাত দশটা বাজে সানারপাড় পৌঁছাই| সবাই কোলাকুলি করে বিদায় নিয়ে যার যার বাসার উদ্দেশ্যে|

যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন এইটা ভেবে মন খারাপ হচ্ছিল যে ট্যুর তো এখন শেষ। মনে পড়ছিল ঘন্টাখানেক আগে কাটানো মুহূর্তগুলো। এভাবেই তিনটি দিন কাটে অসম্ভব ভালোলাগা ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। আবারো হবে এরকম ট্যুর আবার হবে এরকম হৈ-হুল্লোড়। বাইকে চড়ে দেখব আমার দেশ| ধন্যবাদ সবাইকে ভাল থাকবেন, হাইওয়েতে সাবধানে বাইক চালাবেন, সবসময় হেলমেট, সেফটি গার্ড এবং সেফটি সু ব্যাবহার করবেন।

লিখেছেনঃ রবিন খান

Latest Bikes

EVE E-Motorcycle

EVE E-Motorcycle

Price: 95000

EVE E-Scooter

EVE E-Scooter

Price: 85000

Revoo C32

Revoo C32

Price: 139900

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

TVS Ntorq 125 Fi

TVS Ntorq 125 Fi

Price: 229900

TVS Raider 125 Fi

TVS Raider 125 Fi

Price: 189900

Maxivo DK 350S

Maxivo DK 350S

Price: 0

View all Upcoming Bikes