এপ বন্ধ করে চুক্তিতেও চলছেন চালকেরা - বঞ্চিত হচ্ছে কোম্পানি

This page was last updated on 09-Jul-2024 01:15pm , By Saleh Bangla

সায়রা হোসেন ধানমন্ডি থেকে খিলগাঁও যেতে রাইড শেয়ারিং সেবা নেওয়ার জন্য মুঠোফোন হাতে নেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মোটরসাইকেলচালক নিজেই উৎসাহী হয়ে বলেন, ‘পাঠাওয়ে গেলে চলেন। ভাড়া যা আসে, ওটাই দিয়েন। কিন্তু এপ এ রিকোয়েস্ট দিয়েন না। এপ বন্ধ রাইখেন।’ গণপরিবহনে ঝক্কি এড়াতে রাইড শেয়ারিং এপ বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও ভাড়া বেশি, চালকদের দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগ আসতে থাকে। ইদানীং চালকদের অনেকে সুযোগ পেলে অ্যাপে না গিয়ে চুক্তিতে চলাচল করছেন। সায়রার মতো অনেককেই অনুরোধ করা হয় অ্যাপ বন্ধ রেখে চুক্তিতে যাওয়ার জন্য। এতে ওই চালকের রাইড শেয়ারিং কোম্পানিকে ভাড়ার কোনো অংশ দিতে হয় না। এভাবে অ্যাপভিত্তিক গাড়িচালকের অনুরোধের ‘শিকার’ হচ্ছেন অনেকে।   

এপ বন্ধ করে চুক্তিতেও চলছেন চালকেরা - বঞ্চিত হচ্ছে কোম্পানি

প্রথম আলোকে সায়রা বলেন, ‘ওই দিন আমার তাড়া ছিল আর আমিও প্রথমে বুঝিনি, উনি কেন এমন অনুরোধ করছেন। যেহেতু সামনেই ছিল, তাই আমি ভাড়াটা দেখে উঠে যাই।’ তবে সায়রা মনে করেন, এটা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অ্যাপ বন্ধ থাকলে চালক যেমন তাঁর কোম্পানিকে ঠকাচ্ছেন, তেমনি ট্র্যাক করার সুযোগ থাকে না। দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ও কেউ নেবে না।’

উবার প্রিমিয়াম ব্যবহারকারী একজন জানান, নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর উবারের ওই চালক তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি কখন ফিরবেন। সময় জানানোর পর চালক বলেন, ফিরলে যেন তাঁকেই ফোন দেওয়া হয়, অ্যাপে রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে না। চুক্তিতে কেন যান—জানতে চাইলে দুজন চালক বললেন, অ্যাপের মাধ্যমে গেলে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিকে ভাড়ার একটি অংশ দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু অ্যাপস বন্ধ রেখে ওই ভাড়ায় যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিলে পুরোটাই চালকের থাকে। গত ১৬ আগস্ট রামপুরা থেকে কল্যাণপুর বাসস্টপেজে উবারের গাড়িতে করে গিয়েছিলেন মাহমুদ আল ফরিদ। স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে নামিয়ে তিনি আবার রামপুরায় ফিরবেন—এটা গাড়িতে বসেই কথা হচ্ছিল। এমন সময় উবারের চালক বললেন, ফিরলে যেন তাঁর গাড়িতেই ফেরেন। অ্যাপে রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে না। যাওয়ার যে ভাড়া, আসার সময় সেই ভাড়া দিলেই হবে। মাহমুদ জানালেন, চালকের এমন অনুরোধের ‘শিকার’ তিনি আগেও হয়েছেন।

এ ব্যাপারে উবার বলছে, তাদের নিবন্ধিত চালকদের নিজস্ব নীতিমালা ও স্থানীয় আইন মেনে চলা উচিত। আইন ভঙ্গ করা হলে উবার ওই চালকদের নিবন্ধন বাতিল করবে। এ ছাড়া যাত্রীদের এই ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে বলেছে এই রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান। বেশ কয়েক মাস ধরেই এ ধরনের সুযোগ নিয়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের চালকেরা সেবা দিচ্ছেন। তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ে এটা বেড়ে যায়। যানবাহনের সংকট থাকায় বেশি ভাড়ার পাশাপাশি যাত্রীরা চুক্তিতে চলতে বাধ্য হন। রাইড শেয়ারিংয়ের নিয়মিত গ্রাহক মাসুম রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সবাই অ্যাপস বন্ধ করে দিয়ে যেখানে মানুষ জড়ো হয়, সেখানে এসে জানতে চায় কোথায় যাব। তখন ভাড়াও বেশি ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাপসে গেলে চালক ও গ্রাহক উভয়ের তথ্যই ট্র্যাকে থাকে। কিন্তু চুক্তিতে চালকের চাহিদামতো গেলে নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয় চলে আসে। এখানে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের সঙ্গে তাঁদের কোনো পার্থক্য থাকল না।’ সহজ রাইডসের বিপণন বিভাগের পরিচালক কৌশিক ভট্টাচার্যও নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে বলে জানালেন। তিনি বলেন, ‘অ্যাপ বন্ধ থাকলে যাত্রী বা চালক উভয়েই আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। কোনো সমস্যা হলে তা আমরা জানতে পারব না।

এখানে যাত্রীদের অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিত।’ তিনি জানান, কেউ অভিযোগ করলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। রাইড শেয়ারিং অ্যাপের ধারণাটি শুরুতে ‘শেয়ারিং’ হলেও এটাকে এখন অনেকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কোনো একটি এপ এর অধীনে নিবন্ধিত হয়ে তাঁরা দিন-রাত মোটরসাইকেল বা গাড়ি দিয়ে যাত্রী পরিবহনের কাজ করছেন। রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এখন সহজেই রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া মোটরসাইকেল বা গাড়ি বেশি চোখে পড়ে। সার্ক ফোয়ারা মোড়, ফার্মগেট, শাহবাগ, বনানীসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় এদের উপস্থিতি বেশি। সম্প্রতি ফার্মগেট মোড়ে দেখা যায় বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে বসে আছেন। কাছে যেতেই জানতে চান রাইড শেয়ারিং লাগবে কি না।

তাঁদের মধ্যে মো. মোয়াজ্জেম নামের এক পাঠাও চালক জানান, প্রায় আট মাস ধরে তিনি এ পেশায় আছেন। চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘যাত্রীরা অনেক সময় রিকোয়েস্ট করলে চুক্তিতে যাই।’ চুক্তিতে কীভাবে চলেন জানতে চাইলে বলেন, নিয়মিত চালকেরা বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া সম্পর্কে অবগত। বিশেষ করে বিভিন্ন স্টপেজ থেকে যাঁরা চলাচল করেন, তাঁরা চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় চলেন বেশি। সেখানে কোনো যাত্রীর আসা মাত্রই চালকেরা চুক্তিতে চলে যান।

এপ এ না গিয়ে যাত্রীরাও অনেক সময় নিজেরা চুক্তিতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সার্ক ফোয়ারা মোড়ে সুজন পাটোয়ারি নামের এক যাত্রী বলেন, ‘অফিস শেষে এখানে এসে দাঁড়ালেই মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। ওনারাও জিজ্ঞেস করেন, কই যাব। তখন আর অ্যাপ খুলি না।’ তবে এই যাত্রী জানান, কখনো কখনো যে ভাড়া আসে, তার চেয়ে কিছু কমেও চুক্তিতে যাওয়া যায়। অ্যাপ কোম্পানিকে যেহেতু ভাড়ার অংশ দিতে হয় না, তাই চালকেরা কিছু কম রাখেন। চুক্তিতে চলার সময় মোটরসাইকেলে একসঙ্গে দুজন যাত্রী পরিবহনের চেষ্টাও চালকেরা করেন বলে অভিযোগ আছে। এই ব্যাপারে পাঠাও লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিশওয়ার হাশমি বলেন, অ্যাপ বন্ধ রেখে চুক্তিতে চলাচলের বিষয়টি সব রাইড শেয়ারিং কোম্পানিই কমবেশি টের পাচ্ছে।

সে ক্ষেত্রে পাঠাও নিরাপত্তার জন্য যাত্রীদের সতর্ক করে যাচ্ছে এবং রাইডারদেরও অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। তিনি আরও জানান, অ্যাপ ছাড়া কোনো রাইড শেয়ার করা হলে পাঠাও কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। আরেকটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ওভাই কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো চালক চুক্তিতে যেতে চাইলে ওই গাড়ির নম্বর নিয়ে তাদের কল সেন্টারে অভিযোগ জানানো হলে তারা নিবন্ধন বাতিল করে দেবে।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো


Latest Bikes

SYNTAX NEO

SYNTAX NEO

Price: 0

SYNTAX WILLOW

SYNTAX WILLOW

Price: 0

SYNTAX BLAZE

SYNTAX BLAZE

Price: 0

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

SYNTAX NEO

SYNTAX NEO

Price: 0

SYNTAX WILLOW

SYNTAX WILLOW

Price: 0

SYNTAX BLAZE

SYNTAX BLAZE

Price: 0

View all Upcoming Bikes