ইয়ামাহা ফেজার মালিকানা রিভিউ - লিখেছেন সোহাগ
This page was last updated on 15-Jan-2025 03:10pm , By Shuvo Bangla
আমি মো: এনায়েম হোসেন সোহাগ। আমার জীবনে এখন পর্যন্ত ২টি বাইক ব্যবহার করেছি, ১ম ওয়ালটন ফিউশন ১১০ সিসি এবং ২য় টি আমার বর্তমান কলিজার টুকরা ইয়ামাহা ফেজার ২০১৪ মডেল। ছোট বেলা থেকে বাইক খুব পছন্দ করতাম, কিন্তু পারিবারিক নিষেধাজ্ঞার কারনে ১ম বাইকটি পরিবারকে না জানিয়ে কিনেছিলাম।

Also Read: ঢাকাসহ সারা দেশে ইয়ামাহা আয়োজন করতে যাচ্ছে Feel The Premiumness !
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেই ইয়ামাহা ফেজার কিনবো এবং সাদা-লাল রং এর। ওই সময় এই রং এর বাইক ছিলো না। তাই মোটামুটি ঢাকার সব শো-রুমে সিরিয়াল দিয়ে রাখি। ১মাস অপেক্ষার পর কাকরাইল এর এমেরিকান মটরসে ১১/১২/২০১৪ তারিখে প্রতিদিনের মতো শো-রুমে ঘুরাঘুরির সময় দেখতে পাই এই রং এর ইয়ামাহা ফেজার। আর সহ্য করতে না পেরে, ৫০০ টাকা জমা রাখি অন্য কারোও কাছে বিক্রি করতে পারবে না এই শর্তে ১ ঘন্টা সময় নিয়ে বাসা থেকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে শো-রুমে যাই এবং আমার পঙ্খিরাজকে নিয়ে আসি।

ক্রয়মূল্য- বাইকের মূল্য ২,৬০,০০০/- + রেজিষ্ট্রেশন ফি খরচ সহ ২৫,০০০/-+ অন্যান্য (তেল, হেলমেট, আরোও কিছু খরচ) ৬,০০০/- মোট = ২,৯১,০০০/- টাকা।
ক্রয়ের কারন- আমি অনেক বাইক টেস্ট রাইড দিয়েছি, কিন্তু আমার কাজিনের ইয়ামাহা ফেজার ছিলো যা রাইড করার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যখনই বাইক নিবো তা হবে ইয়ামাহা ফেজার। কারন এই বাইক আরামদায়ক, ইঞ্জিনের শব্দ খুবই সুন্দর এবং নিয়ন্ত্রন চমৎকার। আমার অফিসিয়াল কাজে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন এবং বাইক রাইড পছন্দ বিধায় বাইক ক্রয় করি।

Also Read: ইয়ামাহা এক্সক্লুসিভ অফার মার্চ ২০২০ - ক্যাশ ডিস্কাউন্ট অফার!
আমার বাইক ব্যবহার সময়কালীন বিবরন তুলে ধরছি:-
মোট রাইড- এখন পর্যন্ত ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। অধিকাংশ সময় নিজেই রাইড করেছি, প্রয়োজন ছাড়া কাউকে দেই নাই।
মবিল- প্রথম ১.৫ বছর/ ১৬,০০০ কি.মি. ক্যাস্ট্রোল ২০ ডব্লিউ ৪০, পরবর্তীতে ৩ মাস /৫,০০০ কি.মি. হ্যাভলিন ২০ ডব্লিউ ৪০, পরবর্তীতে ২ মাস/৩,০০০ কি.মি. ইয়মাহা লুব ২০ ডব্লিউ ৫০ এবং এখন পর্যন্ত হ্যাভলিন ২০ ডব্লিউ ৪০ গ্রেড এর মবিল ব্যবহার করছি। হ্যাভলিন ব্যবহারে আমি সবচাইতে বেশি ভালো পারফরমেন্স পাচ্ছি। প্রতি ২,৫০০ কি.মি. পর পর মবিল ফিল্টার পরিবর্তন করিয়েছি।
এয়ার ফিল্টারঃ ৭,০০০ কি.মি. পর পর এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করিয়েছি।
পরিবর্তনঃ ১ বার চেইন স্পকেট সেট, ২ বার ক্লাচ কেবল, ২ বার এক্সেলেটর কেবল, ১ বার ব্যাটারি, ১ বার ক্লাচ লিভার পরিবর্তন করেছি।
অপরিবর্তিতঃ এখন পর্যন্ত স্টক স্পার্ক প্লাগ, টায়ার, হেডলাইট, ক্লাচ প্লেট এ বাইক রাইড করছি। এখনও পরিবর্তন করার বা কাজ করানো প্রয়োজন হয়নি।
আর পি এমঃ বাইকের আর পি এম সবসময় ১ সেট করে রাইড করি, স্টার্ট করতে কিংবা চালু অবস্থায় স্টার্ট বন্ধ হওয়ার মত সমস্যায় পরতে হয়নি।
তেল খরচঃ আলহামদুলিল্লাহ্ বাইক ক্রয়ের সময় ঢাকাতে ৩৫ এবং ঢাকার বাহিরে ৪২ কি.মি. প্রতি কি.মি. তে মাইলেজ পেয়েছি। বর্তমানে ঢাকায় ২৯-৩১ এবং ঢাকার বাহিরে ৩৬-৩৮ কি.মি. প্রতি লিটারে মাইলেজ পাচ্ছি। ক্রয় করার পর হতে এখন পর্যন্ত ১টি পাম্প হতে পেট্রোল নিচ্ছি(ট্যুরে থাকা অবস্থায় কখনও কখনও পেট্রোল না পেয়ে অকটেন নিয়েছি)।
Also Read: ACI Motors Ltd – ইয়ামাহা ক্যাশব্যাক অফার ডিসেম্বর ২০১৯
সার্ভসিংঃ ২ বার ফ্রী সার্ভসিং করা হয়েছিলো, যদিও কোন সমস্যা ছিল না। ১ জন বাইক মেকানিকের হাতে ক্রয় পরবর্তী সার্ভসিং সহ টুকটাক কাজ করিয়েছি। প্রতি ৩,০০০ কি.মি. পর পর সার্ভসিং করাচ্ছি।
অতিরিক্ত পার্টসঃ বাইকে অতিরিক্ত ১ টি এপাচি আরটিআর এর ইঞ্জিন কিট, পেছনের চাকার গার্ড এবং ২টি ক্রি লাইট অতিরিক্ত আলোর জন্য ব্যবহার করছি।
সর্বোচ্চ গতিঃ আমার সর্বোচ্চ বাইকের গতি ছিলো ১২০, গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট মহাসড়কে। অতিরিক্ত গতিতে খুব কম সময় বাইক চালিয়েছি।
ভ্রমনঃ আলহামদুলিল্লাহ্, এখন পর্যন্ত আমার পঙ্খিরাজে চড়ে মোট: ২২টি জেলা ঘুড়তে সক্ষম হয়েছি (পারিবারিক প্রচন্ড বাধা থাকা সত্বেও)। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালি, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাক্ষনবাড়ীয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ। ইনশাল্লাহ্ বাকি জেলা গুলোতেও যাবো।
প্রতিটি বাইকের ভাল- খারাপ ২টি দিকই রয়েছে। ঠিক তেমনি আমার বাইক রাইড অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি দিক তুলে ধরছি (সবার কাছে একই রকম নাও হতে পারে)।
ইয়ামাহা ফেজার এর ভাল দিকঃ
১। খুবই আরামদায়ক। লম্বা ভ্রমেনর জন্য চমৎকার।
২। অসাধারন নিয়ন্ত্রন, হাইওয়েতে ট্যুরের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। স্পিড ১০০ তোলার পরও তেমন একটা কম্পন সৃষ্টি করে না।
৩। বাহ্যিক চমৎকার সৌন্দর্য। সহজে এই বাইকের রং ফ্যাকাশে / ঘোলা হয় না। ২.৫ বৎসর পর এখনও নতুনের মত।
ইয়ামাহা ফেজার এর খারাপ দিকঃ
১। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম হওয়ায়, উচুঁ স্পিড ব্রেকারে ঘষা লেগে যায়।
২। গতি উঠতে সময় লেগে যায়।
৩। আর পাচ্ছি নাহ্.... হাহাহা।
দুর্ঘটনাঃ একবার দুর্ভাগ্য বশত ছোট একটি দুর্ঘটনার শিকার হই। ৩০০ ফিট কাজী ফুডের বিপরীতে, বাইকের স্পিড ছিলো ২০/২২। যার কারনে বড় কোন আঘাত আমি এবং আমার পঙ্খিরাজ পাইনি।
পরিকল্পনাঃ খুব শিগ্রই আরোও নিরাপত্তা এবং ভাল পারফরমেন্স এর জন্য টায়ার পরিবর্তন এবং নতুন ইরিডিয়াম প্লাগ স্থাপনের ইচ্ছা রয়েছে।
Also Read: শেষ পর্যন্ত ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের দামও কমলো
এই ছিলো আমার ৩০ হাজার কিলোমিটার চলা ইয়ামাহা ফেজার নিয়ে আমার মতামত। বাইকটি এখনো একবারও আমাকে কোনভাবেই ঠকায়নি, আশা করা যায় ভবিষ্যতেও বাইকটি আমাকে যেকোন পরিস্থিতিতে সমর্থন করবে, ঠিক বর্তমানের মতোই। সবার নিকট একটা অনুরোধ ভালোমানের হেলমেট, বাইকের লুকিং গ্লাস, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করে বাইক রাইড করবেন না। সময় এবং অর্থের চেয়ে আপনার জীবনের মূল্য অনেকদামী।
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।
