বছরে অতিরিক্ত পৌনে ৪ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে ইউক্যাশ এজেন্ট এবং সুন্দরবন কুরিয়ার!

This page was last updated on 07-Jul-2024 09:19pm , By Shuvo Bangla

রাজধানীতে মোটরযান আইনে মামলা হওয়া যানবাহনের মালিকদের কাছ থেকে বছরে পৌনে ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত নিয়ে নিচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ইউক্যাশের এজেন্ট এবং সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস।

পৌনে ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত নিয়ে নিচ্ছে ইউক্যাশ এবং সুন্দরবন কুরিয়ার

মোটরযান আইনের মামলায় যেকোনো পরিমাণ জরিমানার টাকা জমা দিতে সঙ্গে ১৫ টাকা মাশুল দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু জরিমানার টাকা নেওয়ার দায়িত্ব পাওয়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ইউক্যাশের এজেন্টরা মাশুল হিসেবে সর্বনিম্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। এই হিসাবে প্রতিটি মামলায় তারা গড়ে ১৫ টাকা বেশি নিচ্ছে।

চার কোটি টাকা

রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মাশুলের অতিরিক্ত হিসেবে গড়ে ১৫ টাকা করে নিলে ইউক্যাশ এজেন্টরা প্রতিদিন নিচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা। বছরে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

আবার মামলার সময় যানবাহনের জব্দ করা কাগজ মালিকের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস। এর জন্য তাদের ২০ টাকা করে মাশুল আদায়ের কথা। কিন্তু তারা যানবাহনের মালিকের ঠিকানায় এই কাগজ পাঠায় না। তারা সংশ্লিষ্ট মালিককে ফোন করে তাদের অফিসে গিয়ে কাগজ নিয়ে আসতে বলে। যানবাহনের মালিকদের তা-ই করতে হয়।

ফলে সুন্দরবন কুরিয়ার বস্তুত যথাযথ সেবা না দিয়েই ২০ টাকা করে নিয়ে যাচ্ছে। উল্টো যানবাহনের মালিকদের সুন্দরবন অফিসে যেতে-আসতে যাতায়াত ভাড়ার বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। যথাযথ সেবা না দিয়ে সুন্দরবন বছরে মোটরযান আইনের মামলায় পড়া মালিকদের কাছ থেকে নিচ্ছে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এরফলে উভয় সেবা মিলিয়ে বছরে ভুক্তভোগীদের থেকে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকা।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত রাজধানীতে মোটরযান আইনে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬২৬টি মামলা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ২০৮টি।

মোটরসাইকেল এর মামলার বিভিন্ন ধারা এবং মামলার খরচ

চার কোটি টাকা

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়, সেবাগ্রহীতা এবং অন্তত ১৫টি ইউক্যাশ পয়েন্ট ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সেবাদাতাদের ব্যবসায়িক অসততা আর সেবাগ্রহীতাদের অসচেতনতার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই অনিয়মের মাধ্যমে দুটি প্রতিষ্ঠানই ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে করা তাদের চুক্তির শর্তও ভঙ্গ করেছে।

মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ্ উদ্দিন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে  বলেন, ট্রাফিকের করা মামলার জরিমানা দিতে ইউক্যাশের সঙ্গে ১৫ টাকায় এবং জব্দ করা কাগজ সরবরাহের জন্য সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে ২০ টাকায় চুক্তি করা হয়। যানবাহনের কাগজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া সাপেক্ষে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস পাবে ২০ টাকা। ইউক্যাশ এজেন্ট যদি অতিরিক্ত টাকা নেয় এবং কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ যদি বাসায় কাগজ না পৌঁছে দেয়, তবে তাতে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হবে। চুক্তি ভঙ্গের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজেন্টদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউক্যাশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সুন্দরবন কুরিয়ারকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। চুক্তি নবায়নের সময় বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

রাজধানীতে ইউক্যাশের অন্তত ১৫টি প্রতিনিধির দোকানে গিয়ে ও খোঁজ নিয়ে ২০ টাকার নিচে মাশুল নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। ৬টি দোকানে ২৫ টাকা করে, ৫টিতে ২০ টাকা করে, ৩টিতে ৩০ টাকা করে এবং ১টিতে ৪০ টাকা মাশুল নেওয়ার ঘটনা দেখা গেছে। গড়ে এই প্রতিনিধিরা গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে বেশি নিয়েছেন।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একাধিক কার্যালয়ে অন্তত ৫০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানিয়েছেন, কখনো তাঁদের গাড়ির জব্দ করা কাগজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়নি। এবারও তাঁদের কাগজ নিতে ফোন করে কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কার্যালয়ের প্রবেশমুখের ঠিক বিপরীত দিকের ফুটপাতে তিনটি মুঠোফোন হাতে বসে আছেন তিনজন। তাঁদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন ৪০-৫০ জন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতেই ট্রাফিক পুলিশের মামলার কাগজ। এ সময় সুজা মিয়া নামে এক ব্যক্তির ৯০০ টাকার মামলার জন্য ৯৩০ টাকা, মো. ফিরোজের ৮০০ ও ৬০০ টাকার দুটি মামলার জন্য অতিরিক্ত মাশুল ৬০ টাকা, আবদুল হাকিমের ২৫০ টাকার মামলার জন্য অতিরিক্ত ২৫ টাকা, আবদুস সালামের ৫০০ টাকার মামলার জন্য ২৫ টাকা নেওয়া হয়েছে। যানবাহনের এই মালিকদের কেউই ডিএমপির নির্ধারিত মাশুল কত তা জানেন না।

এ সময় ইউক্যাশের এজেন্টদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁরা বলেছেন, ৫০০ টাকা পর্যন্ত হলে মাশুল ২৫ টাকা এবং ৫০০ টাকার ওপরের জরিমানার জন্য মাশুল ৩০ টাকা করে নেওয়া হয়।

একই দিনে কলাবাগানের ১ নম্বর লেক সার্কাসের এক এজেন্ট বললেন, তিনি সর্বনিম্ন মাশুল দেন ৩০ টাকা। জরিমানার অঙ্ক ১ হাজারের বেশি হলে হাজারে ৩০ টাকা হারে নেন তিনি।

নিউ এলিফ্যান্ট রোডে আরেক এজেন্ট ২০ টাকা করে মাশুল নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ২০ টাকা করে মাশুল নিতে দেখা গেছে।

মামুন নামে একজন মোটরসাইকেলচালক অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি একটি মামলায় তাঁকে ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়। যাত্রাবাড়ীর একটি ইউক্যাশ এজেন্টের মাধ্যমে তিনি জরিমানার টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে ৪০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে।

এভাবে অতিরিক্ত মাশুল নেওয়া চুক্তি ভঙ্গ কি না, জানতে চাইলে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাভেদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, এটিকে শর্ত ভঙ্গ বলা যাবে না। কারণ অতিরিক্ত মাশুল থেকে এক টাকাও ব্যাংক পায় না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এটা করছেন। অভিযোগ পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি এজেন্টদের ওপর ভরসা না করে ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে ইউক্যাশ হিসাব খুলে জরিমানার টাকা নিজে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন। এতে মাশুল কমে ১০ টাকা হবে।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অনিয়ম বন্ধে সর্বশেষ চুক্তি নবায়নের সময় ইউক্যাশ এজেন্টদের দোকানে মাশুলের তালিকা টানানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে।

ইউক্যাশে জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় থেকেও হাতে হাতে জব্দ করা কাগজ সংগ্রহ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে যেতে হয়। যাঁরা যান, তাঁদের প্রায়ই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই ভোগান্তি এড়াতে বেশির ভাগ মানুষ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু তাঁরা নিয়ম অনুযায়ী বাসায় কাগজ পৌঁছে দেন না।

সম্প্রতি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের শ্যামলী কার্যালয় থেকে কাভার্ড ভ্যানের কাগজ তুলেছেন আলমগীর হোসেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, গত এক বছরে তাঁর কাভার্ড ভ্যানের বিরুদ্ধে চারবার মামলা হয়েছে। প্রতিবারই সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বিভিন্ন কার্যালয় থেকে ফোন করে তাঁকে কাগজ নিয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং তিনি তা-ই করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন ব্যবসা করেন আফসার আলী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর তিনটি বাস আছে। গত এক বছরে তিন বাসে সাতটি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় জব্দ কাগজ তিনি কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়ের ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে তুলে এনেছেন।

তবে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন দাবি করেন, সব কাগজেরই হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। মামলার কাগজে যাঁদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া যায়, তাঁদের কাগজ আগে পাঠানো হয়। পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না থাকলে ফোন করে গ্রাহকের ঠিকানা চাওয়া হয় এবং সে অনুযায়ী কাগজ পৌঁছানো হয়।

কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের এডিসি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জব্দ কাগজ বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সুন্দরবন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা হয়েছে। এখন তারা ৩০ শতাংশ কাগজ বাসায় পৌঁছে দেয় বলে আমাদের জানিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকও ঠিকানা না দিয়ে কার্যালয় থেকে নিয়ে যেতে চান বলে দাবি করে তারা।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তার পরামর্শ হলো, কুরিয়ার সর্ভিসের এই বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে হলে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে কাউন্টার বাড়িয়ে দ্রুত কাগজ সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অথবা কুরিয়ার সার্ভিস হোম ডেলিভারি ও অফিস ডেলিভারির জন্য আলাদা মাশুল ধার্য করা যেতে পারে। এতে সমস্যা কিছুটা কমবে।

  সংবাদ কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Aima A500

Aima A500

Price: 0.00

Aima A715

Aima A715

Price: 0.00

AIMA Dream Maker

AIMA Dream Maker

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Aima A500

Aima A500

Price: 0.00

Aima A715

Aima A715

Price: 0.00

AIMA Dream Maker

AIMA Dream Maker

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes