Yamaha Fzs V2 বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ - জেনিথ
This page was last updated on 18-Jul-2024 06:38pm , By Shuvo Bangla
আমি এম জেড এইচ জেনিথ । আমার বাসা শেরপুর জেলায় , পেশায় একজন ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি বাইক চালানোর শখ অনেক বেশি । আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করবো Yamaha Fzs V2 বাইকের রাইডিং অভিজ্ঞতা ।
বর্তমানে বাইকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি বাইক পাগল বর্তমানে স্টুডেন্ট। পাশাপাশি বেপরোয়া ভাবে চালানোর কারনে বাড়ছে ভয়াবহ এক্সিডেন্ট কিন্তু , এর পাশাপাশি এর প্রয়োজনীয়তাও অনেক। দৈনন্দিন কাজে এবং যাতায়াতের জন্য বাইকের বিকল্প নেই।
আমার ছোটবেলা থেকেই বাইক পছন্দ। এর ভিত্তিতেই আমার বয়স যখন ৬/৭ বছর তখন আমার বাবা ওনার Dayang 80 সিসি বাইক দিয়ে আমাকে বাইক চালানো শিখিয়ে ফেলেন। যেটা আমার জন্য ছিল এক দারুন অনুভূতির প্রকাশ। বড় হওয়ার সাথে সাথে বাইকের প্রতি ভালোবাসাটা যেন ক্রমেই বাড়তে থাকে। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন জীবনের প্রথম বাইক হিসেবে শখের বশে পরিবার থেকে পালসার এনএস১৬০ ডাবল ডিস্ক রিফ্রেশ ভার্সনের লাল সাদা রংয়ের বাইকটি পাই। যার তখন মূল্য ছিল ২,১৫,০০০ টাকা।
এটাই ছিল আমার জীবনের সর্বপ্রথম বাইক। সর্বপ্রথম বাইক হওয়াই অনুভূতি ছিল না বলার মত। সকল পুরুষই বাইক কমবেশি পছন্দ করেন। পালসার এনএস ১৬০ বাইকটি পছন্দ করার অন্যতম কারন হলো এর গুড লুকিং। বাইকটির হাইটের সাথে আমার হাইটটি একদম পারফেক্ট হওয়ায় চমৎকার ভাবে সেট হয়েছিল। যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির কম। তাদের জন্য একটু অসুবিধাজনক হতে পারে।
বাইকটি গুড লুকিংয়ের পাশাপাশি এতে আছে দারুন ব্রেকিং সিস্টেম সাথে এবিএস। কোনো একটা কারনে পরবর্তীতে এই বাইকটি বিক্রি করে দেই। তারপর নতুন বাইকের পালা। বর্তমানে বাংলাদেশে বাইকের জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাইক কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইয়ামাহা মটরস। বর্তমানে আমি Yamaha fzs v2 কালো কালার বাইকটি ব্যবহার করছি।
বাইকটি যখন ক্রয় করি তখন বাইকটির ক্রয়কৃত মূল্য ছিল ২,৩৯,০০০ টাকা যেটা আমি আমার নিজ জেলা শহর শেরপুর এর এসিআই মটরস কতৃক অফিসিয়াল ডিলার পয়েন্ট "রাইডার্স হ্যাভেন" থেকেই ক্রয় করেছি। বাইকটির লুকিং খুবই আকর্ষণীয়। বাইকটি দুইটি কালারে পাবেন কালো এবং নীল। বাইকের আকর্ষণীয় বিষয় হল এর ডিজাইন। আর এর বডির প্লাস্টিক বা পার্টস গুলো আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে।
আমার কখনোই এমনটা মনে হয়নি যে সহজে ফেটে বা ভেঙ্গে যাবে কিন্তু আরো ভালো হতে পারতো। আমাকে মাঝে মধ্যে অনেক জায়গায় যাতায়াত করতে হয় তাই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা লাগতো। এর রাইডিং সিটটা আমার কাছে অনেক কমফোর্টেবল মনে হয়েছে। এর টায়ারের গ্রিপ অনেক ভালো ব্রেক করলে চাকা স্লিপ কাটে না । আমাকে মাঝে মধ্যে ইচ্ছা না থাকার সত্তেও খারাপ রাস্তা দিয়ে বাইক রাইড করতে হয়। আর খারাপ রাস্তা মানেই ঝাঁকুনি। কিন্তু ইয়ামাহা Fzs V2 এর সাসপেনশন আমাকে অনেক ব্যাকআপ দিয়েছে ।
তেমন কোন ঝাঁকুনি বুঝতে দেয়নি। এই বাইকটির প্রথম রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স ছিল দারুন। যেমন তার ইঞ্জিন পারফর্মেন্স তেমন তার ব্রেকিং সিস্টেম। এক কথায় পারফেক্ট একটি প্যাকেজ। আমার নিত্য দিনের সঙ্গী আমার বাইক। দিনের প্রতিটা কাজে প্রয়োজনে সে আমার সঙ্গী।বাজারঘাট থেকে শুরু করে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া , পরিবারের বিভিন্ন কাজ, কলেজে যাওয়া, একটু ঘুরাঘুরি ইত্যাদি কাজে যেকোন পরিস্থিতিতে সে আমার পাশে সবসময়।
বাইকটি দিয়ে ট্যুর করে স্মুথনেসের কোন ঘাটতি পাইনি। দিনের শুরুতে বাইক চালানোর প্রথম অনুভূতিটা আসে সেটা হলো এর স্মুথনেসের ব্যাপারটা। বাইক যেহেতু একটি যান্ত্রিক জিনিস। সুতরাং এর দেখভাল করাটা একজন বাইকারেরই দায়িত্ব। আমি ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেকিং পিরিয়ড মেনে চালিয়েছি । বাইকটি কিনার এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর ইয়ামাহা শো-রুমে প্রথম ফ্রি সার্ভিস টি শেষ করি , তাদের সার্ভিস সবমসময়ই সেরা ছিল আছে।
এবার আসি বাইকের মাইলেজ নিয়ে। মাইলেজের দিক দিয়ে অন্যতম সেরা একটি বাইক। আমি সবসময় অকটেন ব্যবহার করি। শহরের ভেতরে মাইলেজ পেয়েছি ৪৫-৪৮ কিলোমিটার পার লিটার এবং হাইওয়েতে পেয়েছি ৪৮-৫৩ কিলোমিটার পার লিটার। যা কিনা আমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
যদিও বাইকটিতে এবিএস সিস্টেমটি নেই । কিন্তু আমার বিশ্বাস বাইকের টায়ার সাইজ ভালো থাকায় পাশাপাশি কন্ট্রোলিং ভালো হওয়ায় এবিএসের অভাবটা বুঝতে পারবেন না । যারা স্মুথ রাইডিং চান আর রাফলি চালান না তাদের জন্য সেরা এই বাইকটি। আমি সবসময়ই বাইকের যত্নে কখনো কম্প্রোমাইজ করি না। সবমসময়ই বাইকের পার্টস চেকআপে রাখি।
আমি কখনোই রাফ রাইডিং করি না। পিলিয়ন হিসেবে বরাবরই একজন। এই বাইকটি কখনোই আপনাকে হতাশ করবে না। সকল দিক থেকেই পাবেন সেরাটা। আমি বাইকের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি কোম্পানি কতৃক সাজেস্ট করা ইয়ামাহা ইয়ামালুভ অপটিমা প্রাইম। যেটার গ্রেড হচ্ছে 10w40। এটা ব্যবহার করে ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স পেয়েছি দুর্দান্ত।
সার্ভিসিং সেন্টারে যারা কাজ করে তাদের কাজের মান, ব্যবহার, পরিবেশ, আমার কাছে অনেক ভালো মনে হয়েছে। বাইকের মেজর কোন পার্টস পরিবর্তন করিনি এখনো। আমার বাইক ৮০০ কিলোমিটার + রানিং। এবার আসা যাক বাইকের ভালো মন্দ দিকগুলো।
Yamaha FZS V2 বাইকের কিছু ভালো দিক -
- মাইলেজ অসাধারণ।
- বিল্ড কোয়ালিটি টপ নচ।
- ইঞ্জিন পারফর্মেন্স টপ নচ।
- পিলিয়ন সিট আরামদায়ক।
- স্পেয়ার পার্টসগুলো খুবই কম মূল্য এবং সহজলভ্য।
Yamaha FZS V2 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- টর্ক তুলনামূলক ভাবে কম। যা আপনাকে বিভিন্ন ক্রিটিকেল সিচুয়েশনে সমস্যায় ফেলতে পারে।
- গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম যার জন্য প্রায় কিছু জায়গায় নিচে বেধে যায়।
- হ্যালোজেন লাইটি যা আপনার হাইওয়েতে চালানোর সময় পর্যাপ্ত মনে হবে না।
- বাইকটিতে কোন এবিএস সিস্টেম নেই।
- বাইকটির পিলিয়ন ছিটের জায়গাটা কিছুটা কম লেগেছে।
আমার সর্বশেষ পরামর্শ থাকবে বাইটি চালিয়ে আপনি যথেষ্ট কমফোর্ট ফিল করবেন পাশাপাশি যথেষ্ট স্মুথনেস । যে মন্দ দিকগুলো বললাম এগুলো যদি সেক্রিফাইজ করতে পারেন তবে এই বাইকটি হবে আপনার জন্য।
সর্বশেষে আমি শুভ্র দাদাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারন আপনার কারনেই আমাদের বাংলাদেশের বাইক রাইডারদের কমিউনিটি এতটা স্ট্রং হচ্ছে দিন দিন। আশা করি সকলেই ভালো থাকবেন। হেলমেট পড়ে সাবধানে সকলে বাইক চালাবো। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ এম জেড এইচ জেনিথ