Yamaha FZS FI V3 বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ - মুন্না
This page was last updated on 30-Jul-2024 04:29pm , By Shuvo Bangla
আমি মুন্না, শরীয়তপুর বসবাস করি । আপনাদের সাথে আমি আমার Yamaha FZS FI V3 বাইকটি নিয়ে আমার রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
এটি আমার শখের বাইক, যেটি পারফেক্ট সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আমার জীবনের প্রথম এবং একমাত্র বাইক এটি।
ছোটবেলা থেকে বাইকের প্রতি অন্য রকম একটি ভালোবাসা অনুভব করতাম। বড় মামার বাইক দেখে মনে হতো কবে যে আমারও একটা বাইক হবে।
ক্লাস ৮ এ পড়া অবস্থায় সবচাইতে কাছের বন্ধুটির আমার বাইক কেনার ক্ষেত্রে অবদান ছিল সবচাইতে বেশি । তার বাবার বাইক নিয়ে আসলো একদিন। কৌতুহল বসত বললাম একটু চালানো শিখাতে আর ওই দিনের অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়। মনে হচ্ছিল যেন পাখির মতো উড়ছি আমি।
সেদিন অন্য এক বন্ধু আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছিল শেখানোর জন্য। আমি প্রচন্ডভাবে বাইকিং ভালোবাসি কারণ দূর দূরান্তে গিয়ে প্রকৃতিকে জানা এবং দেখার জন্য বাইকের মত সহজ বাহন আর নেই। তাছাড়া দৈনন্দিন চলার ক্ষেত্রে আর্থিক অপচয় এড়ানো সম্ভব বাইকের মাধ্যমে তাই আমার বাইকিং ভালো লাগে।
যখন বাইকটি অফিসিয়ালি বাংলাদেশে আসে তখন এক বড় ভাই প্রি-বুকিং দিয়ে দেয় এবং ডেলিভারির সময় আমাকে নিয়ে যায় সাথে। সত্যি বলতে ঐদিন এই বাইকটির প্রচন্ড রকম ফ্যান হয়ে যাই আমি। কন্ট্রোল, কমফোর্ট, লুকিং এবং মাইলেজ সবমিলিয়ে অসাধারণ লাগে এটি আমার কাছে।
এসব কারণেই অন্য কোন চিন্তা না করেই আমি আমার পছন্দের বাইকটি কিনার জন্য প্রস্তুতি নেই। আমি আমার পছন্দের বাইকটি কিনেছি শরীয়তপুরের ইয়ামাহার অফিসিয়াল শোরুম মেসার্স গৌরা মটরস থেকে। সেই সময়ে বাইকটির অফিসিয়াল দাম ছিল ২,৫৬,৫০০।
বাইক কেনার দিনটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। আমি আমার বাইকটি কিনেছিলাম ০৩-০৪-২০২১ তারিখে। সকালে ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখি ফোন বাজছে, শোরুম থেকে ফোন দিয়েছে। রিসিভ করার পর আমার পছন্দের ম্যাট ব্ল্যাক কালার মাত্র ১পিস এসেছে।
তখন বেশ কিছুদিন ম্যাট ব্লাক কালারটি মার্কেটে ছিল না তাই অপেক্ষা করতে হয়েছিল আমাকে। আনফরচুনেটলি সেদিন ছিল আমার ফুপুর বউভাত এর দিন। ভাবলাম শোরুমে গিয়ে অ্যাডভান্স করে আসি পরেরদিন বাইক ডেলিভারি নিব। কিন্তু শোরুমে গিয়ে শুনতে পাই পরদিন থেকে শোরুম বন্ধ থাকবে লকডাউনের জন্য।
উপায় না পেয়ে তাড়াহুড়ো করে ফুপুর বৌভাতে অ্যাটেন্ড করে চলে গেলাম শোরুমে এবং অবশেষে কাংখিত বাইকটি নিয়ে বাসায় আসতে সক্ষম হলাম। বাসায় আসতে আসতে রাত ১০টা বেজে গিয়েছিল। বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভূতি ছিল অসাধারণ।
যেমন চমৎকার সাউন্ড তেমন স্মুথনেস। শোরুম থেকে বলার কারনে ৪০ এর উপর স্পিড উঠাইনি তবু্ও পুরো শহর ঘুরেছিলাম রাতেই। আমার বাইকটি চালানোর পিছনে মূল কারণ এর সাসপেনশন। যত ভাঙ্গা রাস্তায় যাই না কেন তেমন একটা সমস্যা হয় না স্মুথ সাসপেনশনের কারণে।
বাইকের যে কয়টি ফিচার রয়েছে তার মধ্যে এবিএস অন্যতম। আমার জানামতে রেসিং বাইক ব্যতীত বাংলাদেশের কমিউটার সেগমেন্ট এর ইয়ামাহা বাইকের প্রথম এবিএস সিস্টেম বাইক এটি। প্রতিদিন বাইক চালানোর সময় আমার মনের সাধারণ অনুভূতি একটাই তা হচ্ছে প্রচন্ড কমফোটলি বাইকটি ড্রাইভ করতে পারি।
আমি আমার বাইকটি মোট ৬ বার সার্ভিস করেছি যার মধ্যে ৫ টি ফ্রী সার্ভিস ও ১টি পেইড সার্ভিস। সবগুলো সার্ভিসই আমি করিয়েছি ইয়ামাহার অফিসিয়াল শোরুম থেকে। তাদের সার্ভিসিং খুবই ভালো। আমি ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গড়ে ৪২ এবং পরবর্তীতে ৪৫+ মাইলেজ পেয়েছি যা আমার কাছে পর্যাপ্ত মনে হয়েছে এবং আমি সন্তুষ্ট।
আমি নিয়মিত সঠিক সময়ে বাইকের ওয়াস, চাকার প্রেসার চেকআপ, ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন, ব্রেক সু পরিবর্তন এবং পিকাপ ও ক্লাস কেবল পরিবর্তন করার মাধ্যমে বাইকের যত্ন মেইনট্যানেন্স করে থাকি এবং কোনো রকম সমস্যা দেখা দিলে শোরুমে গিয়ে টেকনিশিয়ানদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে থাকি।
আমি আমার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল ইয়ামালুব ফুল সিন্থেটিক ব্যবহার করি যার দাম ১৩৫০ টাকা। আমি এখনো পর্যন্ত আমার বাইকের যে সকল পার্টস পরিবর্তন করেছি তা হচ্ছে ব্রেক সু , ক্লাস কেবল , পিকাপ কেবল , এয়ার ফিল্টার , মবিল ফিল্টার। এছাড়া তেমন কোনো পার্টসের পরিবর্তন করিনি আমি।
আমার মডিফাই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বেশি না থাকায় আমি তেমন বিশেষ মডিফাই করিনি তবে আমি মফস্বলে থাকার কারণে ফগ লাইট ইন্সটল করেছি কারণ আমাদের এদিকে প্রচন্ড কুয়াশা পড়ে শীতের সময়। স্পিড এর ক্ষেত্রে আমি প্রচন্ড দুর্বল যা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
আমি মোটামুটি ধীরে বাইক চালাই তবে কিছুদিন আগে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম ভাঙ্গা - ফরিদপুর সেদিন আসার সময় ১১০ পর্যন্ত স্পিড পেয়েছিলাম যা আমার তোলা সর্বোচ্চ স্পিড।
Yamaha FZS FI V3 বাইকের কিছু ভালো দিক -
- বাইকটির লুকিং অনেক চমৎকার।
- এফ আই ইঞ্জিন হবার কারণে মাইলেজ ভালো পাওয়া যায়।
- এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম থাকার কারণে নিরাপদে ড্রাইভ করা যায়।
- এলইডি হেডলাইট থাকায় স্বচ্ছ আলোয় রাতে চলাচলে সুবিধা হয়।
- সাসপেনশন ভালো থাকায় স্মুথলি ভাঙা রাস্তায় চলাফেরা করা যায়।
Yamaha FZS FI V3 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- সামনের দিকের তুলনার পেছনের দিকটি দেখতে বেমানান।
- চেইনের কভার না থাকার কারণে দ্রুত চেইনে ধুলা-ময়লা লাগে যার দরুন বারবার চেইন পরিষ্কার করে লুব লাগাতে হয়।
- ফুয়েল ট্যাংকের কভার প্লাস্টিকের হওয়ার কারণে ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।
- পিছনের নাম্বার প্লেট স্টান্ড অনেকটা নড়বড়ে, অনেকেরটা ভেঙে যেতে দেখেছি।
- বাইকের হর্ন এর সাউন্ড জোড়ালো নয় যা এইরকম প্রিমিয়াম বাইকের সাথে যায় না।
গত ১০-০২-২০২৩ তারিখে একদিনের ট্যুরে শরীয়তপুর হতে বাগেরহাট এবং খুলনা গিয়েছিলাম। ভোর ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছি এবং রাত ১১:২২ এ বাসায় আসছি। সারাদিন খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করছি। আমি অনেকটা হেলদি মানুষ হবার পরেও সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। যথেষ্ট ফিট ছিলাম সারাদিনের ঘোরাফেরা শেষে বাসায় আসার পরেও।
পরিশেষে আমি একটি কথা বলতে চাই, যে ব্যক্তি বাইকিং এর সাথে যুক্ত নয় সে কিছুতেই বুঝবে না এর সার্থকতা। প্রকৃতিকে জানার জন্য এবং ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য বাইকের থেকে উত্তম বাহন আর হতে পারে না। তাছাড়া যাতায়াতকে সহজ করার পাশাপাশি সময়ের অপচয় রোধ করার ক্ষেত্রে বাইকের বিকল্প নেই।
আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার বাইক নিয়ে অনেক সন্তুষ্ট। প্রায় দুই বছর হতে চললো আমার বাইকের বয়স এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি আমি। নিরবিচ্ছিন্নভাবে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে আমাকে। যারা ফ্যামিলি নিয়ে নিরাপদে বাইক চালাতে চান তাদের জন্য পারফেক্ট একটি বাইক।
এখনো এই বাইকটি যারা ড্রাইভ করেননি তারা একটিবার হলেও ড্রাইভ করে দেখুন অবশ্যই প্রেমে পড়ে যাবেন গ্যারান্টি। মনের দুইটি চাওয়ার কথা ব্যক্ত করে আমার কথাগুলো শেষ করছি প্রথমটি হচ্ছে পদ্মা সেতুতে অতি দ্রুত বাইক চলাচল শুরু হোক। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাইক বিডি সব সময় আমাদের বাইকারদের পাশে থাকুক। সবাই ভালো থাকবেন ধন্যবাদ ।