Yamaha FZS FI V2 Dual Disc টেস্ট রাইড রিভিউ | টীম বাইকবিডি
This page was last updated on 15-Jul-2024 12:43pm , By Ashik Mahmud Bangla
Yamaha FZS FI V2 Dual Disc টেস্ট রাইড রিভিউ
Yamaha FZS Fi V2 এর ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিং নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। বাইকটির কিছু আপডেট এবং পরিবর্তন হবার পরে আজ আমরা টীম বাইকবিডি আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি, Yamaha FZS FI V2 Dual Disc এর টেস্ট রাইড রিভিউ নিয়ে!
শুরু করার আগে প্রথমেই বলা যাক, কেনো আমরা বাইকটি লঞ্চ হবার ১৫ মাস পরে বাইকটির রিভিউ করছি। প্রথমত, বাইকটি যখন বাংলাদেশে লঞ্চ করা হয়, তখন এটি সিবিইউ ( কমপ্লিট বিল্ড ইউনিট ) হিসেবে আমদানী করা হচ্ছিলো। বর্তমানে এসিআই মোটরস এই বাইকটিকে সিকেডি ( কমপ্লিট নক ডাউন ) পদ্ধতিতে বাইকগুলোকে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে ইয়ামাহার এটা ২য় বাইক, যা সিকেডি ফরম্যাটে আনা হচ্ছে।
তাই, এই সিকেডি বাইকটির কোয়ালিটি এবং স্ট্যান্ডার্ড আগের সিবিইউ ভার্শনের মতোই রয়েছে কিনা, এটা জানার জন্যই আমরা বাইকটির টেস্ট রাইড রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেই। ২০১৭ সালে যখন আমি Yamaha FZS FI V2 (সিঙ্গেল ডিস্ক এডিশন) বাইকটি টেস্ট করি, তখন বাইকটিতে বেশকিছু সমস্যা খুজে পাই। যেমন , বাইকটির ড্রাইভ চেইন মোটেও ভালোমানের ছিলো না, এবং প্রচুর শব্দ করতো। বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি সম্পূর্ন পলিশড ছিলো না, এবং সারা বাংলাদেশে এসিআই মোটরস এর যথেষ্ট পরিমান সার্ভিস সেন্টার ছিলো না। যেহেতু কার্বরেটর ইঞ্জিন্ এর তুলনায় ফুয়েল ইনজেক্টেড ইঞ্জিনে বেশি সার্ভিসিং দরকার হয়, কাজেই এটা বেশ বড় একটি ইস্যু ছিলো।
Yamaha FZS Fi V2 Dual Disc - ফিচারস এবং আপগ্রেড
সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্শনের তুলনায় Yamaha FZS Fi V2 Dual Disc এডিশনে বেশকিছু আপগ্রেডেড ফিচারস রয়েছেঃ
- ২৮২ মিলিমিটার এর ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক
- ২২০ মিলিমিটার এর রিয়ার ডিস্ক ব্রেক
- ১০ স্পোক এর এলয় হুইলস
- নতুন রিয়ারভিউ মিরর
- ডুয়েল ডিস্ক ভার্শনের জন্য শুধুমাত্র ম্যাট কালার অপশন রয়েছে।
উপরিউল্লেখিত পরিবর্তনগুলো বাদে তারা বাইকটির ইঞ্জিন, চ্যাসিস, সাসপেনশন, এবং বাইকটির ওভারঅল ডিজাইন একই রেখেছে। বাইকটির ইঞ্জিনটি খুবই রিফাইনড, এবং ফুয়েল ইনজেক্টেড সিস্টেম এর কারনে কেবলমাত্র ৭ হাজার আরপিএম এর উপরে উঠলেই কেবলমাত্র ভাইব্রেশনের দেখা পাওয়া যায়।
বাইকটির ১৪৯ সিসি ইঞ্জিন এখন ১৩ বিএইচপি শক্তি, এবং ১২.৮ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। প্রথম সার্ভিসিং এর পরেই বাইকটির ৫-স্পীড গিয়ারবক্সটি খুবই স্মুথ হয়ে যায়। যদিও বাইকটিতে ইন্সট্যান্ট এক্সেলেরেশন এর কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, কিন্তু ইয়ামাহা মূলত স্পীড নয়, বরং বাইকটির ব্রেকিং, স্ট্যাবিলিটি এবং কমফোর্ট এর দিকে নজর দিয়েছে।
আমরা বাইকটি মোট ৫০০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড করেছি, এবং ২০০০ কিলোমিটার এর পরে আমরা শহরে ৪০-৪২ কিলোমিটার পার লিটার, এবং হাইওয়েতে ৪৫ কিলোমিটার পার লিটার মাইলেজ পেয়েছি! এখানে উল্লেখ্য যে, ভালো মাইলেজ পাবার জন্য বাইকে অবশ্যই RON 92 গ্রেডের ফুয়েল ব্যবহার করতে হবে। আমাদের টেস্টিং এর সময় আমরা বাইকটির টপ স্পীড পেয়েছি ১১৮ কিলোমিটার/ঘন্টা। এবং, একজন পিলিয়নসহ আমরা টপ স্পীড পেয়েছি ১০৫ কিলোমিটার/ঘন্টা। হাইস্পীডে বাইকটি সম্পুর্ন মাটি আকড়ে ধরে রাখে, এবং কোনরকম শেইক করে না রাইডারকে কনফিডেন্স হারাতে দেয় না। বড় একটি ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক বাইকটির ব্রেকিং পারফর্মেন্স আরো বৃদ্ধি করেছে। যদিও আগের সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্শনের ব্রেকিং নিয়েও কখনোই কারো কোন অভিযোগ ছিলো না, কিন্তু এই নতুন ভার্শন ব্যাপারটাকে সম্পূর্ন এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বর্তমানের ব্রেকিং সিস্টেমে আপনি ব্রেক করার সময় আরো বেশি কনফিডেন্স পাবেন, এবং জিগজ্যাগ রাইডিং এর সময় পেছনের ব্রেকটি ব্যবহার করে বাইককে আরো বেশি ব্যালেন্স করতে পারবেন। বাইকটির ব্রেকিং নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। নতুন ফিচারগুলোর মধ্যে রিয়ারভিউ মিররটি আমার খুব একটি পছন্দ নয়। যদিও এটা সম্পূর্ন রাইডার এর উপর নির্ভর করে, তবে আমার মতে, আগের রিয়ারভিউ মিররটি বেটার ছিলো। বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এখনো এভারেজ, এবং যদি ভারী পিলিয়ন নিয়ে রাইড করা হয় তবে গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সটি রাইডারকে সামান্য ভোগাতে পারে। বাইকটির ফিনিশিং এবং কালার কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো, এবং আগের সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্শনের তূলনায় অনেকটাই আপগ্রেডেড। এছাড়াও তারা এখন বাইকে ব্যবহার করছে O-Ring চেইন, যেটা বেশি লং লাস্টিং করবে।
এবার আসা যাক সাসপেনশন এর ব্যাপারে। বাইকটির ফ্রন্ট সাসপেনশন এখনো আগের মতোই রয়েছে, এবং রাইডারকে পূর্ন সাপোর্ট দেয়, তবে পেছনের সাসপেনশনটা সম্পূর্ন ফিডব্যাক দেবার জন্য কিছুটা সময় নেয়। তবে, উভয় সাসপেনশনই অসাধারন পারফর্ম করে। পেছনের সাসপেনশনটি ভালো বা সাধারন রাস্তায় ভালো পারফর্ম করলেও খারাপ রাস্তায় পিলিয়ন সহ রাইড করলে অনরোডের মতো ফিডব্যাক দেয় না। সাসপেনশন থেকে বেস্ট ফিডব্যাক পাবার জন্য ইউজার ম্যানুয়াল অনুযায়ী বাইকের টায়ার প্রেসার রাখুন। বাইকটি টেস্ট করার সময় আমরা বেশিরভাগ সময়েই ভারী পিলিয়ন নিয়ে টেস্ট করেছি, এবং বাইকের উপর সম্মিলিতভাবে ১৩০ কেজিরও বেশি লোড দেয়া হয়েছিলো। বাইকটির হ্যান্ডলিং খুবই ভালো, এবং সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্শনের থেকে তেমন কোন পরিবর্তন নেই। আগের মতোই আপনি বাইকটি দিয়ে অসাধারন কর্নারিং করতে পারেন, এবং কর্নারিং এর সময় ফুল কনফিডেন্স পাবেন। বাইকটির হেডলাইটটি ডিসি ইউনিট, এবং হাইওয়ে রাইডিং এর জন্য যথেষ্ট। তবে আমার মতে, বাইকটিতে কিকস্টার্টার থাকার প্রয়োজন ছিলো। আমরা বিভিন্নরকমের রাস্তায় বাইকটি টেস্ট করেছি, এবং বাইকটিতে কোন কোয়ালিটি বা ফিট বা ফিনিশিং ইস্যু রয়েছে কিনা সেটা বের করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ৫ হাজার কিলোমিটার এর টেস্টিং পিরিয়ডে আমরা এর কিছুই পাইনি।
আমরা বাইকটির টায়ার সেটআপটি অফরোডে ভালো পারফর্মেন্স পাইনি। অফরোডে বাইকটি অনেকটাই স্কিড করি। বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস বেশ বড়, এবং বাইকটি ঘোরাতে অনেকটা জায়গা লাগে। ঢাকার মতো ট্রাফিকবহুল শহরে এটা বেশ বড় একটি সমস্যা। ফুয়েল ইনজেক্টেড ইঞ্জিন হবার কারনে বাইকটির নিয়মিত সার্ভিস মেইনটেন্যান্স খুবই জরুরী। বাইকটিতে আপনার সবসময় সেরা কোয়ালিটির ফুয়েল ব্যবহার করতে হবে, এবং নিয়মিত ফুয়েল ইনজেক্টর পরিষ্কার রাখতে হবে। এই সার্ভিসিংগুলো কেবলমাত্র ইয়ামাহা এর অফিশিয়াল সার্ভিস সেন্টারেই করা সম্ভব, এবং আপনি যদি ঢাকা শহরে থাকেন, তবে ব্যাপারটা বেশ সহজ হলেও ঢাকার বাইরে সবজায়গায় সার্ভিস সেন্টার খুজে পাওয়া খুব একটা সহজ নয়।
ভালো দিকসমূহঃ
- রিফাইন্ড ইঞ্জিন।
- ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম এর কারনে বাইকটি আরো বেশি স্মুথ হয়েছে।
- বাইকটির হ্যান্ডলিং এবং কর্নারিং এবিলিটি ফ্যান্টাস্টিক।
- বড় ডিস্ক ব্রেক এর কারনে বাইকটির ব্রেকিং এফিশিয়েন্সি অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
- বাইকটির ফিনিশিং এবং বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভালো।
- ভালোমানের ফুয়েল ব্যবহার করলে ভালো মাইলেজ দেয়।
- লং-ডিসট্যান্স ট্যুরিং এর জন্য খুবই ভালো।
খারাপ দিকসমূহঃ
- বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস।
- এফআই ইঞ্জিনের নিয়মিত মেইনটেন্যান্স দরকার হয়।
- খারাপ রাস্তায় পিলিয়নসহ পেছনের রাইডে পেছনের সাসপেনশন ভালো ফিডব্যাক দেয় না।
- পিলিয়ন নিইয়ে স্পীডব্রেকার পার হবার সময় বাইকের আন্ডারবেলীতে আঘাত লাগতে পারে।
- ইন্সট্যান্ট এক্সেলেরেশন এর অভাব।
২০১৭ সালে যখন Yamaha FZS FI V2 Dual Disc বাংলাদেশে লঞ্চ করা হয়, তখন এর দাম ছিলো ২,৬৫,০০০ টাকা। এই বছর এর শুরু থেকে বাইকটি সিকেডি কন্ডিশনে আনা হচ্ছে, এবং এখন Yamaha FZS FI V2 Dual Disc এর দাম ২,৪৫,০০০ টাকা।