Yamaha Fazer V2 ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - অংকন পাল
This page was last updated on 18-Jul-2024 12:31pm , By Raihan Opu Bangla
আমি অংকন পাল । আমি একটি Yamaha Fazer V2 বাইক ব্যবহার করি । আমার বাইকটি নিয়ে আমি একটি ছোটখাটো মালিকানা রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করবো । এটা আমার প্রথম বাইক নিয়ে লেখা রিভিউ। পথ চলাচলের সঙ্গী হিসাবে ২০১৮ সালে বেছে নিলাম পছন্দের Yamaha Fazer V2 বাইকটি । বর্তমানে আমার বাইকটি ৩০হাজার+ কি.মি. চলেছে।
Yamaha Fazer V2 ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - অংকন পাল
আমার বাড়ি মাগুরা । জীবনের প্রথম বাইক ছিল Discover 125। এই বাইক চালানো থেকেই ধীরে ধীরে বাইকিং এর প্রতি আগ্রহ আসে । অতঃপর কোনো একদিন "Bike BD" গ্রুপে এড হলাম, তখন থেকে দেখতাম অনেকই অনেক বাইক টুর নিয়ে পোস্ট করে সেখান থেকে বাইক ট্যুরের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হলো।
Click To See Yamaha Fazer V2 Bike Price In Bangladesh
ট্যুরে যাওয়া আর নিজের বাইক চালিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার অনুভূতি আলাদা, সেই অনুভূতি কাজ করলো প্রথম যখন বাইক নিয়ে নিজ জেলা থেকে পাশের জেলায় গেছিলাম। তখন থেকেই ভাবনা বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই নিজ বাইকে ঘুরবো, এই নিয়েই ভাবতে ভাবতে টুর দেওয়ার জন্য বেছে নিলাম Yamaha Fazer V2 বাইকটি।
ছোটো বেলা থেকে বাইক খুব একটা ভালো লাগতো না কিন্তু Yamaha Fazer V1 যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেই দিন থেকেই বাইক বলতে ফেজার ভালো লাগতো, ফেজার ভালো লাগার কারণ ছিলো ডাবল হেড লাইট, লুকিং গ্লাস বডি এর সাথে আর বাইকটি বড় সড় দেখতে ছিলো। তখন থেকেই ভেবে রেখেছিলাম বাইক কিনলে ফেজার কিনবো।
ততদিনে ফেজারের আপডেট মডেল V2 বের হলো সেই সাথে ফেজারের প্রতি ঝোক আরো বেড়ে গেলো। নিজ জেলাতে ইয়ামাহা এর কোনো শো-রুম না থাকায় যশোর ইয়ামাহা শো-রুম (M/S Khan Auto) থেকে বাইকটি কিনেছিলাম, তখন বাইকটির মূল্য ছিল ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা । বাইকটি কেনার দিন আমার চার জন বন্ধু আমার সাথে ছিল ।
Click To See All Yamaha Bike Price In Bangladesh
সব প্রসেসিং শেষ হবার পর ফেজারে প্রথম উঠলাম আর মনে পরলো সেই ছোটো বেলার শখের কথা। মূলত Yamaha Fazer V2 বেছে নেওয়ার কারণ হলো ছোট থাকতে বাইকের মধ্যে ফেজারটাই ভালো লাগতো, সেই সাথে v2 এর আপডেট ফিচার্স, আর ফেজার বাইকের আকর্ষনীয় বডি কিট দেখতে স্পোর্টস বাইকের মতো, বাইক চালাতে সোজা ভাবে বসা হয় অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের মতো ঝুকে অথবা নিচু হয়ে চালানো লাগেনা।
বাইকের কিছু ফিচার্স বলি, বাইকের ইঞ্জিনটি ১৪৯ সিসি, সিংগেল সিলিন্ডার ৪ স্টোর্ক , ৮,০০০ আরপিএম, ফুয়েল সাপ্লাই- এফআই, ফুয়েল ক্যাপাসিটি- ১২ লিটার, ব্রেকিং- ফ্রন্ট ডিস্ক, রেয়ার ড্রাম, ডিজিটাল মিটার, ইঞ্জিন ট্রাবল ইন্ডিকেটর, ইকোমোড ইন্ডিকেটর, গিয়ার বক্স- ৫ স্পিড, টায়ার- ফ্রন্ট ১০০/৮০ -১৭ রেয়ার ১৪০/৬০ -১৭ উভয় টিউবলেস, এসটার্ট মেথড- স্লেফ, ব্যাটারি ১২ ভোল্ট, ডাবল পার্ট সিট,মোনোশক সাসপেন্সশন।
বাইকটি কেনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সার্ভিসিং এর প্রয়োজন হয়নি। বাইক চলাচলের জন্য নিয়মিত যে সার্ভিস গুলা দরকার হয় সেসব লোকাল একটা পরিচিত ওয়ার্কশপ থেকে করিয়ে নেই। নিয়মিত সার্ভিস বলতে চেইন এডজাস্টমেন্ট, ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন, ব্রেক এডজাস্ট, এয়ার ফিল্টার পরিস্কার, ফুয়েল ইঞ্জেকটর ক্লিন ইত্যাদি।
Click To See All Bike Price In Bangladesh
ছোটখাটো যেকোনো সমস্যা হোক বাইক একদম ওকে না থাকলে মানসিক শান্তি পাইনা। সবসময় মেইনটেইনের মধ্যে রাখি বাইকটি। ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ১৫০০ কি.মি. পর পর । ৩০০০ কি.মি. পর অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি । ১০০০ কি.মি. পর এয়ার ফিল্টার পরিস্কার করি, ১০হাজার কি.মি. পর ফুয়েল ইঞ্জেকটর ক্লিন করি ।
২-৩হাজার কি.মি. পর চেইন ও ২চাকা সার্ভিসিং করি। এছাড়া কোনো সমস্যা দেখা দিলে বা কোনো কিছু নষ্ট হলে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে সাথে সাথে পরিবর্তন করে ফেলি । কারণ অল্প সমস্যা থাকতে সার্ভিস করিয়ে নিলে বড় কোনো সমস্যা হয়না। আমি বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে কাজ করাই না, সবসময় একটা ওয়ার্কশপ থেকে কাজ করাই।
কারণ একজন মেকানিককে দিয়ে কাজ করাতে থাকলে সে ওই বাইকের খুটিনাটি সব জেনে থাকবে তার মাধ্যমে বাইকে কোনো ইলেকট্রিক কাজ বা মডিফাই করা থাকলে সে বিষয়ে তার ধারণা থাকবে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে খুব সহজে সে ধরতে পারবে যা অন্যকোনো মেকানিকের বুঝে উঠতে সময় লাগবে। তবে অবশ্যই দক্ষ মেকানিক বেছে নিতে হবে।
Click To See All User Review Article
বাইকের মোট ২৫০০ কি.মি. পূর্বে ও পরে সবসময় ৪৫+ মাইলেজ পেয়েছি। আমি ইয়ামাহা কোম্পানির তৈরি "Yamaha Lube" ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি। ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড- 10W40 ব্যবহার করি। শো-রুম ব্যতীত লোকাল মার্কেটে এর দাম-৪৫০ টাকা, শো-রুমে দাম একটু বেশি, তবে লোকাল মার্কেটে একরকম দেখতে নকল প্রোডাক্ট আছে তাই বুঝে কিনতে হবে।
৩০ হাজার+ কিলোমিটার রানিং এখন পর্যন্ত বাইকের মেজর কোনো পার্টস পরিবর্তন করতে হয়নি । যেই জিনিস গুলো পরিবর্তন করেছি যেমন- ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, এয়ার ফিল্টার, টায়ার। এবার বাইকের মডিফাই অংশ নিয়ে বলি, RTR বাইকের ইঞ্জিন গার্ডটি আমার বাইকে সেট করেছি এজন্য বাইকটি দেখতে বেশ ভালোই লাগে।
এমারজেন্সি ইন্ডিকেটর সিস্টেম করেছি, কিছু পার্কিং লাইট লাগিয়েছি, হ্যান্ডেলে একটি ঘড়ি লাগিয়েছি আর হেড লাইটের বাল্ব হ্যালোজেন বদলে "7S Led" বাল্ব লাগিয়েছি। হেড লাইটের আলো নিয়ে কথা বল্লে এক কথায় বলবো আমি মুগ্ধ। ডাবল পার্ট হেড লাইট সেই সাথে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স 7S Led রাতের বেলার রাইডে ফুল্লি স্যাটিসফাইড আমি, ব্রাইটনেস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই পুরো রাস্তায় আলো ছড়িয়ে পরে, একটি বড় গাড়ির মত আলো দিতে সক্ষম (এটি কোনো গল্প না বাস্তব)।
বাইকের সর্বোচ্চ গতি কখনো টেস্ট করিনি, লং রাইডে ৭০-৮০ গতিতে রাইড করি।
Yamaha Fazer V2 বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- কন্ট্রোলিং
- ব্রেকিং এক কথায় অসাধারণ
- লং রাইডে প্রচুর কম্ফোর্ট ফিল হয় ও অনেক স্মুথ
- ফুয়েল সাপ্লাই এফ আই টেকনোলজি হওয়ায় ভালো মাইলেজ পাওয়া যায়
- পেছনের টায়ার সাইজ ১৪০/৬০ দেওয়ায় রাইডের জন্য নিরাপদ
- ডুয়েল হেডলাইটের জন্য কোনো প্রকার আলোর ঘাটতি থাকে না রাতের বেলায় রাইডের জন্য পারফেক্ট
- এর আকর্ষণীয় লুকিং, বডি কিট
Yamaha Fazer V2 বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন
- শুধু সেল্ফ ব্যবহার রয়েছে কিক সিস্টেমের অনুপস্থিত
- ডাবল ডিস্ক ও ABS সিস্টেম থাকা উচিত ছিল
- ডিজিটাল মিটারে কিছু ফাংশন ঘাটতি রয়েছে যেমন - গিয়ার ইন্ডিকেটর, ঘড়ি, সাইড স্টান্ড এলার্ট সংকেত এসব নাই।
- ব্যাক লাইটটি পুরাতন মডেল হয়ে গেছে LED করা উচিত ছিল
- নাম্বার প্লেটের উপর আলাদা লাইট সিস্টেম করেনি, এক লাইটে দুই কাজ যা দেখতে এই বাইকের সাথে মানায় না
এপর্যন্ত বাইকটি নিয়ে আমি যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা এই কয়টি জেলা ভ্রমণ করেছি। উপর "আল্লাহ" সহায় থাকলে ইচ্ছা আছে বাকি সব কয়টি জেলা নিজের বাইক নিয়ে ভ্রমণ করব।
Click To See User Review Article English
Yamaha Fazer V2 বাইকটি নিয়ে আমার চুড়ান্ত মতামত ও পরামর্শ বলতে গেলে আমি অবশ্যই সবদিক বিবেচনা করে পারফেক্ট বলবো। তবে প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার্স এর ঘাটতির জন্য অসম্পূর্ণতা থেকে গেছে। বর্তমান সময়ের ওপর বিবেচনা করে আপডেট ফিচার্স গুলা যদি Yamaha Fazer V2 তে ব্যবহার করা হতো তাহলে সকল বাইকের মধ্যে এই বাইকটি সেরা হতো বলে মনে করি। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ অংকন পাল
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।