UM Xtreet R 150 টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ
This page was last updated on 28-Jul-2024 12:32pm , By Raihan Opu Bangla
আমেরিকান ব্র্যান্ড UM বাংলাদেশে আছে প্রায় ৬ বছর হলো। ২০১৬ সালে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড বাংলাদেশে ইউএম মোটরসাইকেলের ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব লাভ করে, এবং এখন পর্যন্ত তারা মার্কেটে ৫টি নতুন মডেল লঞ্চ করেছে। আজ আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশে ইউএম এর একমাত্র ১৫০ সিসি নেকেড স্পোর্টস বাইক, UM Xtreet R 150 নিয়ে।
UM Xtreet R 150 টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ
UM Xtreet R 150 এই সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকের থেকে স্টাইলিং এর দিক দিয়ে কিছুটা আলাদা। যদিও বাইকটি একটি নেকেড স্পোর্টস বাইক, তবে আমার মনে হয় বাইকটিতে কিছুটা অফ রোড মোটরসাইকেল এর কনসেপ্ট ডিজাইন এর অংশ বিশেষ রাখা হয়েছে। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দামের এই বাইকটিতে অনেক ফিচারস দেয়া হয়েছে।
UM Xtreet R 150 এর ভিডিএ রিভিউ - টীম বাইকবিডি
বাইকটিতে সামনের ফেন্ডারে এলইডি পার্কিং লাইটের সাথে সামনে হ্যালোজেন হেডলাইট দেয়া হয়েছে, এবং এই হেডলাইট এর নিচে এলইডি প্রজেকশন পার্কিং লাইট দেয়া হয়েছে। বাইকটিতে ৩৭টি এলইডি বাল্বসহ ৩৬০ ডিগ্রি এলইডি ইলুমিনেশন দেয়া হয়েছে। যদি আপনি বাইকের পার্কিং লাইট চালু রাখতে চান তবে ফুয়েল ট্যাংকের পাশে থাকা পার্কিং লাইটগুলো সহ সকল লাইট একসাথে জ্বলে থাকবে।
Also Read: UM Renegade DUTY ১২৫ সিসি রিভিউ-টীম বাইকবিডি
বাইকটিতে একটি ছড়ানো রড হ্যান্ডেলবার এর সাথে সাধারন সুইচ গিয়ারস দেয়া হয়েছে, যেগুলো আহামরি ভালোমানের নয়। এই বাইকটিতে এমন একটি ফিচার রয়েছে যা এই সেগমেন্টের অন্য কোন বাইকে নেই, এবং সেটা হচ্ছে ব্লাইন্ড স্পট মিরর। আমি অনেক বাইকারদের চিনি যারা এই ব্লাইন্ড স্পট মিরর এর ভক্ত, তবে ব্যাক্তিগতভাবে আমি এটার প্রয়োজন খুজে পাই না, আমার কাছে এটা অপ্রয়োজনীয় মনে হয়।
বাইকটির স্পীডোমিটারে একটি ছোট রেভ কাউন্টার রয়েছে, যার সাথে রয়েছে ডিজিটাল স্পীডোমিটার যা স্পীড, গিয়ার চেঞ্জ ইন্ডিকেটর, ফুয়েল গজ (যেটা অনেক সময়েই সঠিক রিডিং দেখায় না) রয়েছে। এছাড়াও আপনি বাইকের স্পীডোমিটার এর ব্যাকগ্রাউন্ড লাইটে দুটি কালার থেকে সিলেক্ট করতে পারবেন। এছাড়াও এখানে একটি শিফট ইন্ডিকেটর রয়েছে যা আপনাকে গিয়ার চেঞ্জ এর ব্যাপারে জানান দেয়।
স্পীডোমিটারে আমি অনেকগুলো বাটন পেয়েছি, যেগুলো মোড চেঞ্জ করা অথবা এভারেজ স্পীড দেখানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। বাইকটির এলইডি টেইললাইট সুন্দরভাবে ডিজাইন করা এবং আপনি যখন বাক নেবার আগে ইন্ডিকেটর দেবেন তখন ইন্ডিকেটর লাইটের পাশাপাশি টেললাইটও জলুনিভু করবে পেছনের বাহনকে সতর্ক করার জন্য।
বাইকের রিয়ার টায়ার ফেন্ডারটি পেছনের বাইকারকে কাদা বা পানি ছেটার হাত থেকে রক্ষা করে। সব মিলিয়ে বাইকটির ডিজাইন বেশ স্লিক, এবং তারা বাইকটিকে বড় দেখানোর জন্য অতিরিক্ত কোন অংশ যোগ করেনি।
বাইকটির রাইডার এবং পিলিয়ন সিটটি একটু কম প্রশস্ত এবং এটা ডেইলি কমিউটিং বাইকের চাইতে বরং অফরোড বাইকের সাথে কিছুটা মিলে যায়। বাইকের সিটটি লম্বা সময় রাইড করার জন্য আরামদায়ক নয়। এছাড়াও বাইকের হ্যান্ডেলবার শহরে রাইড করার সময়ও যথেষ্ট কমফোর্ট দেয় না।
বাইকটির হ্যান্ডেলবার সেটাপ এর কারণে এটি খুবই এগ্রেসিভ একটি বাইক। বাইক চালানোর সময় রাইডারের দুহাত সর্বদা ছড়িয়ে থাকার ফলে সহজেই ট্রাফিকের গ্যাপে বাইক চালানো সম্ভব হয়। ইউএম এর বাইকের সামনের সাসপেনশনে আরো কাজ করার দরকার রয়েছে।
বাইকের পেছনের সাসপেনশনগুলো গ্যাস ফিলড শক এবজর্ভার যা বাংলাদেশের রাস্তার জন্য খুবই উপযোগী। বাইকের সামনের সাসপেনশনটি বেশ শক্ত, যা বাংলাদেশের ভাঙ্গাচোরা রাস্তার জন্য মোটেও সুবিধাজনক নয়, এবং এর সাথে বল রেসার এর সমস্যা মিলে বাংলাদেশের খারাপ রাস্তায় একটি আনকমফোর্টেবল রাইড দেয়। বাইকের সামনের এবং পেছনের – উভয় ডিস্ক ব্রেকই ভালো ব্রেকিং পারফর্মেন্স দেয়, তবে পেছনের ব্রেকটি খুব জোরে চেপে ধরে এটা লক-আপ হয়ে যায়।
এবং, এই বাইকটি নিয়ে হাই স্পীড ব্রেকিং করার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাইকের পেছনের অংশ স্লাইড করার একটি প্রবণতা থাকে।
বাইকের সামনের ডিস্কটি চাকার বাম দিকে দেয়া হয়েছে, যেটা সচরাচর দেখা যায় না তবে এর ফলে ব্রেকিং এ কোন প্রভাব পড়ে না। বাইকের পিলিয়ন সিট শহরের মাঝে ২০-৩০ কিলোমিটার রাইডের জন্য কমফোর্টেবল, তবে হাইওয়ে রাইডে সিটের কম প্রশস্ততার কারণে পিলিয়ন কোন কমফোর্ট পাবেন না। বাইকের মধ্যে ১৫০ সিসি এয়ার কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিনটি ১১ বিএইচপি শক্তি এবং ১০ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে।
পারফর্মেন্স এর দিক দিয়ে ইঞ্জিনটি খুব একটা আকর্ষনীয় নয়, এবং এটা বাংলাদেশ অন্যতম কম শক্তিশালি ১৫০ সিসি বাইক! বাইকটিতে ৫ স্পীড গিয়ারবক্স এবং ডায়মন্ড চ্যাসিস রয়েছে।
Also Read: UM Motorcycle Bangladesh
বাইকের ইঞ্জিনের শব্দটা খুবই স্পোর্টি, খুব সম্ভবত বাইকের সবকিছুর মধ্যে এটাই আমার সবচাইতে পছন্দের। আপনি যত বেশি রেভ তুলবেন, এটি তত বেশি গর্জন করবে। বাইকের হেডলাইটটি ঢাকা শহরে রাইডিং এর জন্য যথেষ্ট, তবে হাইওয়েতে বা লং ডিসট্যান্স এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লাইট লাগিয়ে নেয়া ভালো হবে। বাইকটিতে খুবই কম শক্তি দেয়া হয়েছে, কিন্তু একইসাথে বাইকটি খুবই হালকা, মাত্র ১২৭ কেজি।
এই হালকা ওজনের কারণে বাইকটি তূলনামূলক কম শক্তি থাকা সত্ত্বেও ১১২ কিমি/ঘন্টা টপ স্পীড তুলতে পেরেছে। আমরা বাইকটি থেকে মাইলেজ পেয়েছি শহরে ৩৫-৩৮ কিমি/লিটার, এবং হাইওয়েতে ৪২ কিমি/লিটার। বাইকটিতে কিছুটা চিকন টায়ার দেয়া হয়েছে, পেছনে দেয়া হয়েছে ১২০ সেকশন এর টায়ার।
বাইকটির চাকাগুলো এলয়ের, এবং টায়ারগুলো টিউবলেস। যখন বিল্ড কোয়ালিটি এর কথা আসে তখন কোন সংশয় থাকে না, ইউএম এই বাইকটিকে যথেষ্ট ভালো বিল্ডি কোয়ালিটি দিয়ে প্রস্তুত করেছে।
UM Xtreet R 150 - রাইডিং এর অভিজ্ঞতা
বাইকের সামনের সাসপেনশনটা কিছুটা শক্ত হওয়ায় এবং বল রেসার ঝামেলাময় হওয়ায় যখন আপনি সাধারন কোন গর্তের উপর দিয়েও রাইড করবেন, সামনের সাসপেনশন থেকে একটি নকিং সাউড পাওয়া যাবে। পেছনের সাসপেনশনগুলো ১ হাজার কিলো রাইড করার পরেই নরম হয়ে যায়, এবং এদের থেকে ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যায়।
বাইকের ইঞ্জিনটি খুবই স্পোর্টি, এবং এটাকে ১০ হাজার আরপিএম পর্যন্ত রেভ করা যায়। আপনি যত বেশি বাইকটা রেভ করবেন আপনার এর সাইলেন্সার এর সাউন্ড তত বেশি ভালো লাগবে।
৭ হাজার আরপিএম পার হবার পরে ইঞ্জিন কিছুটা ভাইব্রেশন করে, যা ফুটপেগে, হ্যান্ডেলবারে এবং রাইডারের সিটে টের পাওয়া যায়। বাইকটির তেমন একটা রেডি পিকাপ নেই, এবং এর এক্সেলেরেশন সমান্তরাল। শুরু থেকেই গিয়ার চেঞ্জ খুবই স্মুথ থাকে।
বাইকের হ্যান্ডলিংটা খুব একটা আহামরি কিছু নয়। বাইকটি দিয়ে হাই স্পীড কর্ণারিং করা সম্ভব নয়, তবে লো এবং মিডিয়াম স্পীডে কর্ণারিং এর জন্য এটা ভালো একটি বাইক। এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে বাইকটির স্যাডেল হাইট, ছড়ানো হ্যান্ডেলবার এবং ১২০ সেকশন টায়ার।
ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে সামনের এবং পেছনের উভয় ব্রেক থেকেই ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যায়। তবে, যখন আপনি ৮০ কিলোমিটার/ঘন্টা এর চাইতে বেশি গতিতে রাইড করবেন, তখন ইমার্জেন্সি ব্রেকিং এর সময় পেছনের চাকা লক হয়ে যাবার প্রবণতা থাকে। কাজে সতর্কভাবে ব্রেকিং করতে হবে এবং সব সময় রেকমেন্ডেড সবচাইতে কম টায়ার প্রেশার রাখতে হবে।
যখন বাইকের গতি ৮০ কিমি/ঘন্টা অতিক্রম করে তখন বাইকের সামনেটা হালকা হয়ে পড়ে এবং সাইড টার্বুলেন্স ছাড়াই এটা অনেক পরিমানে কাপে। এটা হয় মূলত বাইকের হালকা ওজনের কারণে।
UM Xtreet R 150 - ভালো দিকসমূহঃ
- ৩৬ টি এলইডি লাইট থাকার ফলে দেখতে খুবই ভালো
- ভালো ইঞ্জিন সাউন্ড
- ভালো বিল্ড কোয়ালিটি
- ভালো রিয়ার সাসপেনশোন
- হালকা হবার কারণে ঢাকা শহরে সহজেই ম্যানুভার করা যায়
UM Xtreet R 150 - খারাপ দিকসমূহঃ
- ১৫০ সিসি হিসেবে ইঞ্জিনের শক্তি অনেক কম।
- লং ডিসট্যান্স রাইডের জন্য আনকমফোর্টেবল
- সিট আরামদায়ক নয়।
- ব্রেকিং এ শার্প নয়।
- সামনে আরেকটু মোটা টায়ারের প্রয়োজন রয়েছে।
UM Xtreet R150 মূলত তাদের জন্যই যারা একটি ইউনিক স্টাইলের নেকেড স্পোর্টস বাইক কিনতে চাচ্ছেন, যারা সচরাচর এর থেকে ডিফারেন্ট একটি বাইক রাইড করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য একটি একটি অপশন হতে পারে।