TVS Stryker 125 অর্ধ লক্ষ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - ইফতেখার
This page was last updated on 01-Aug-2024 03:53pm , By Shuvo Bangla
আমি ইফতেখার হাসান। খুলনার ফুলতলা থানাতে আমার বাড়ি। আজ আমি আমার TVS Stryker 125 বাইকের সাথে অর্ধ লক্ষ কিলোমিটার চালানোর মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো ।চাকরীর প্রথম জীবন ঢাকাতে কাটানোর পর খুলনাতে ট্রান্সফার হই, তারপর অফিস যাতায়াতের জন্য প্রথমে দুলাভাই এর Honda CBF Stunner ব্যবহার করতে শুরু করলেও কিছুদিন পরেই মনে হল নিজের একটা মোটরবাইক দরকার।
Honda CBF Stunner টির অনেক বয়স হয়ে যাওয়াতে ওটা চালানোর সময় কম্ফোর্ট ও কনফিডেন্স কম লাগছিল যার কারণে প্রবল টাকা পয়সার সমস্যা থাকার পরেও নতুন বাইক কেনার সিদ্ধান্তে আসি। ইন্টারনেটে দেখতে থাকি ১০০ - ১২৫ সিসির বাইক গুলোর স্পেসিফিকেশন।
Honda Dream Neo , Livo, TVS Metro , Metro Plus , Stryker এগুলোকে প্রাথমিক তালিকাতে রেখে একবার শোরুম ঘুরে আসি, এবং Honda থেকে সবগুলোকে বাদ দিয়ে দেই শুধু পেছনের চাকা চিকন হওয়ার কারণে, TVS এর Metro plus নেব বলে ডিসিশন নিয়ে ফেলি।পরের সপ্তাহে টাকা নিয়ে চলে যাই TVS Showroom এ, কিন্তু হায়, কোথাও একটাও Metro plus (disc) খুঁজে পাই না। কি করি কি করি করতে করতে হঠাৎ চোখ যায় TVS Stryker (Blue) এর দিকে। একদম হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, Stryker নেব। এবং নিয়ে ফেলি।
এই হল আমার বাইক কেনার গল্প। হুট করে কেনা মটর সাইকেলটি ৫৫,০০০ কিলোমিটার চালানোর পরে আমি কি কি ভাল আর কি কি খারাপ জিনিস পেয়েছি সে ব্যাপারে বলবো। প্রথমেই মনে হতে পারে হয়তো আমি হয়তো হুট করে করে বাইক নিয়ে পরে পস্তাচ্ছি বা সমস্যায় আছি। আসলে ঘটনা তা নয়, আমি এরকম হুট করে মোটরসাইকেল কিনেও যে কি ভাল একটা বাইক পেয়েছি তার একটা গল্প আপনাদের বলবো।
TVS Stryker 125 কিছু ক্যাটেগরিতে ভাগ করে আমি আমার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করছি-
লুকঃ-
১২৫ সিসির বাইকে লুক খুব একটা ইম্পর্ট্যান্ট ইস্যু না। তবুও বলবো লুক হিসাবে টিভিএস স্ট্রাইকার তেমন আহামরি কোন বাইক না হলেও তার নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। আমি বাইকটি পছন্দ করি। খুব ছোট কিন্তু যথেষ্ট রিসোর্সফুল একটি ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার বাইকটাকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে। এত বড় টেইল লাইট আমার পছন্দ না হলেও এলইডি লাইটের কারণে ভাল লাগে ।
রাইডিং কম্ফোর্টঃ-
TVS Stryker এর রাইডিং কম্ফোর্ট অসাধারণ। কোন প্রকার হাত, কোমর বা পায়ে ব্যাথা হয়না। পিলিয়ন সিট খুব ভালো । অসম্ভব সুন্দর একটা সিটিং পজিশন আর তার সাথে হ্যান্ডেলবারের হাইট এবং দুরত্বের জন্য বাইকটাকে রাস্তার অন্যতম সেরা কম্ফোর্টেবল বাইক হিসাবে ধরা যায়।
আমি ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি লম্বা। সে হিসাবে আমি এভারেজ বাংলাদেশের মানুষের হাইট এর, সো এভারেজ হাইটটাকে হিসাবে ধরলে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। তবে বেশি লম্বা মানুষের জন্য টিভিএস স্ট্রাইকার পারফেক্ট নাও হতে পারে।
বাইকিংঃ-
টিভিএস স্ট্রাইকার একটি হালকা গাড়ি। ১১৩ কেজি ওজনটাও পুরোপুরি সমানভাবে ডিস্ট্রিবিউট করা হয়নি। TVS Stryker এর এই একটা দিক খুব খারাপ। গাড়িতে প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক বেশি। যার কারণে একটু বেশি বাতাসে বা ভারী পিলিয়ন নিয়ে চালাতে কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যা করে।
পেছনের দিকে তুলনামূলক ওজনটা কম হওয়াতে স্বাভাবিক ওজনের একজন পিলিয়ন আপনাকে রাইডিং কম্ফোর্ট দিলেও ভারী পিলিয়ন সমস্যা করবে। একা চালালে বাতাসে কিছুটা ব্যালেন্স নষ্ট হয়। ব্রেকিং ভাল তবে স্কিডিং এর সমস্যা আছে। ভাগ্য ভাল স্কিডিংটা পেছনের চাকাতেই বেশি হয়, সামনে নয়।তবে বর্ষাকালে আমি খুব ভাল পারফর্মেন্স পেয়েছি যা ছিল আশাতীত। অন্য সকল ১২৫ সিসির বাইকের মতই ৬০ ক্রস করলে কিছুটা ভাইব্রেশন হয়, তবে সেটা মাত্রাতিরিক্ত নয়। ঠিকমত গিয়ার শিফট করতে পারলে বেশ ভাল এক্সিলারেশন পাওয়া যায়, যা কোন কোন সময় ১৫০-১৬০ সিসির বাইকের সাথে সমানতালে চালানোর জন্য যথেষ্ট। প্রথম গিয়ার এর রেঞ্জ খুব কম, বাকিগুলো ভাল। তবে অফরোডের জন্য একদম ভাল নয়।
পার্টস ও রিপেয়ারঃ-
টিভিএস স্ট্রাইকার এর পার্টস বাজাজ এর মত এ্যাভেইলএবেল না হলেও মোটামুটি সস্তা দামেই পাওয়া যায়। চেইন এর কাভার না থাকাতে চেইন লুজ আর ময়লা জড়ানোর সমস্যার জন্য গ্যারেজ এ নিতে হয়। সেমি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করার কারনে ৫৫,০০০ কিলোমিটার পরেও আমার বাইকের ইঞ্জিনে কোন ব্যাড সাউন্ড নেই।
একজন ইয়ামাহা এফজেড ভি-৩ ব্যবহারকারী একবার আমার বাইকটাকে কিছুক্ষণ এর জন্য চালিয়ে খুব প্রসংশা করেছিলেন এই বলে যে, তার নাকি এই বাইকটির সম্পর্কে খুব নেগেটিভ ধারনা ছিল, যা সেদিন উনি পাল্টাতে বাধ্য হন। পিলিয়ন সিটের নিচের অংশ ভাল নয়৷
আমারটায় ফাটল ধরেছিল আগে। পালটানো হয়েছে। হেডলাইটের মান আরো ভাল দেওয়া উচিত ছিল। সুইচ খুব ভাল। টায়ার ৫৫,০০০ কিলোমিটার পরে পরিবর্তন করে নিয়েছি। সামনের চাকা এখনো চলছে। আরো ১০,০০০ যাবে আশা করি। তবে টিউবলেস এর কোয়ালিটি ভাল না, আমি ২০,০০০ এর পরেই টিউব করে নিতে বাধ্য হয়েছি।
মাইলেজঃ-
১১০-১২৫ সিসির বাইক কেনার সময় লুকের থেকে মাইলেজ কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সে হিসাবে টিভিএস স্ট্রাইকার একটি পারফেক্ট চয়েজ। আমি ১০০ টাকার তেলে মিনিমাম ৬০ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি ভারী পিলিয়ন এবং কম টায়ার প্রেসার সাথে ৬০+ স্পিড এ চালিয়ে।কেউ যদি ৪৫-৫০ এর মধ্যে পিলিয়ন ছাড়া প্রোপার টায়ার প্রেসারে এই বাইকটা নিয়ে সিটিতে নিয়মিত ড্রাইভ করেন তবে লিটারে ৬০ বা ৬০ এর উপরে মাইলেজ পাবেন যা ১০০ টাকার তেলে ৭০ কিলোমিটার এর মত হবে বলেই আমার ধারণা। তবে মনে রাখা ভাল, বাইক চালানোর উপরে মাইলেজ অনেকটা নির্ভর করে৷
পরিশিষ্টঃ-
টিভিএস স্ট্রাইকার দামী কোন বাইক নয়। এটাতে মোটা চাকা নেই, এবিএস বা কোন ধরনের ব্রেকিং সিস্টেম ইন্সটল করা নেই, এটি গতিদানব নয়। টিভিএস স্ট্রাইকার একটি সাদাসিধা সাধারণ ক্যাটাগরির বাইক যা আপনার প্রতিদিনের ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইক রাইডে আপনাকে পরিচ্ছন্ন বাইক রাইডের নিশ্চয়তা দিতে পারে।
ইঞ্জিন সাউন্ড ভাল৷ আমার ৪ বছরে ৫৫,০০০ কিলোমিটার চালানোর মধ্যে কোনদিন রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায়নি। ভেজা, শুকনা দুই রাস্তাতেই সমানভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছে। সাসপেনশন খুব ভাল নয় তবে চলনসই৷ আমি প্রতিদিন মোটামুটি ৬০ কিলোমিটার এর মত কনফিডেন্টলি আপ-ডাউন করি টিভিএস স্ট্রাইকার নিয়ে।
আমি এই বাইকটি নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। তবে শেষ করার আগে কিছু কথা, বাইক চালানোর সময়ে অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করবেন, আমি ছোট বাইক চালালেও হেলমেট দামীটাই ব্যবহার করি। গতি কোন সমাধান নয়, স্বাভাবিক গতিতে ভালভাবে গিয়ার শিফট করে বাইক চালালে অনেক গতিসম্পন্ন বাইক থেকেও আপনি ভাল গতি, টাইমিং এবং কনফিডেন্স পাবেন যা আপনাকে ও আপনার শখের বাইকটাকে সুরক্ষিত রাখবে।
অকারণ গতি শুধু আপনার নয়, একজন নিরীহ পথচারী, একজন শিশু বা অন্য রাইডারদের বিপদে ফেলতে পারে৷ বাইকের যত্ন নিন, নিজে বিপদমুক্ত থাকুন, অন্যকেও বিপদমুক্ত রাখুন। রিভিউটির পাশাপাশি আপনি TVS Bike Price in Bangladesh সর্ম্পকে বিস্তারিত জানুন আমাদের ওয়েবসাইটে।ধন্যবাদ ।