TVS Apache RTR 160 4V ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড - খন্দকার মিজান
This page was last updated on 25-Jul-2024 05:08pm , By Raihan Opu Bangla
আমি খন্দকার মিজান । আমি ডেমরা ঢাকা এলাকায় বসবাস করি। আজ আমি আমার TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি নিয়ে ২০ হাজার কিলোমিটার চালানোর কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি ।
TVS Apache RTR 160 4V ২০,০০০ কি.মি. রাইড অভিজ্ঞতা
আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল ২০০৮ সালে। সেটা আমার ছিল নাহ আমার আব্বুর ছিল TVS Victor GLX 125cc । খুব সুন্দর একটি বাইক এবং খুবই ভাল মানের বাইক ছিল। সত্যি বলতে প্রতিটি ছেলের বাইকের প্রতি একটু অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। আমিও ঠিক তার ব্যতিক্রম নই। তবে আমার বাবাকে খুব ছোট থেকেই বাইক রাইডিং করতে দেখেছি। এই কারনেই বাইকের প্রতি ভালো লাগা ভালোবাসাটা অনেক বেশি। আমি ভ্রমন করতে পছন্দ করি।
তাই আমার কাছে বাইক সব কিছুর থেকে বেশি ভাল লাগে। মিড রেঞ্জ বাজেটের মধ্যে এই স্পোর্টস বাইকটি আমার খুব ভালো লাগে। তাই আমার এই বাইকের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। TVS বাইকের প্রতি আমার আগে থেকেই আস্থা ছিল। আমার TVS এর সব বাইক গুলোই ভালো লাগে। তবে তারা যখন বাজারে নতুন মডেলের Apache RTR 160 4v আনে তখন প্রথম দেখাতেই বাইকটি ভাল লেগে যায়। বাইকটি আমি টেস্ট রাইড দেয়ার পর বাইকটি নেয়ার সিন্ধান্ত নেই। TVS Apache RTR 160 4V বাইকটির তখন বাজার মূল্য ছিল ২,০০,৫০০/- টাকা ডুয়েল ডিস্ক। বাইকটি আমি বাদশা মটরস ১০৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা থেকে ক্রয় করি।
বাইক কিনতে যাওয়ার আগের দিন পছন্দের বাইক TVS Apache RTR 160 4V দেখে আসি। কিছু টাকা বুকিং ও দিয়ে আসি। পরের দিন বাইক আনতে কখন যাব সেই চিন্তায় খুব এক্সাইটেড ছিলাম । অনেক কষ্টে রাত শেষ হয় । ১৯/০২/২০১৯ তারিখ প্রিয় বাইকটি কিনে ফেললাম। আনন্দটা কেমন ছিল সেইটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। বাইকটি যখন হাতে পেলাম এবং প্রথম রাইড করলাম অনেক ভাল লেগেছে। আমার কাছে আমার বাইক অনেক প্রিয়। বাইক রাইড করা আমার প্যাশন । আমি মুলত ব্যবসায়িক কাজে এবং ভ্রমন করার জন্য বাইক রাইড করি। প্রতিদিন আমি যখন বাইকটি রাইড করি তখন আমার মধ্যে ভালো লাগা কাজ করে।
বাইক রাইড করলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। আমি আমার বাইকের ব্রেকিং এর উপর কনফিডেন্ট। তাই আমি বাইক চালানোর সময় খুব নির্ভয়ে বাইক চালাতে পারি। এখন পর্যন্ত আমি আমার বাইক ১০ বার সার্ভিস করিয়েছি। প্রতিবার আমি টিভিএস এর সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস করিয়েছি। যার কারনে ছোট খাট সমস্যা থাকলে তা সহজেই সমাধান হয়েছে। TVS কোম্পানী ফ্রী সার্ভিস দিয়ে থাকে। সেই ফ্রী সার্ভিস করার পর ৪৫০ টাকায় পেইড সার্ভিস করাতে হয়। যা অবশ্যই খুব ভাল এবং কম টাকায় ভাল সার্ভিস দিয়ে থাকে।
২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে আমি মাইলেজ পেয়েছি ৩০ কিলোমিটার প্রতি লিটার। ২৫০০ কিলোমিটার পরে মাইলেজ পেয়েছি ৩২/৩৪ কিলোমিটার প্রতি লিটার । ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি SPX 1200ml 10w30 ফুল সেন্থেটিক। আমি আমার বাইক খুব যত্ন করে রাখি। সপ্তাহে এক দিন বাইক ওয়াশ করে থাকি। প্রতিবার বাইক ওয়াশের পর বাইকের চেইন এবং ক্লাচ এর কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধান করি। এয়ার ফিল্টার ৪০০০/৫০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে পরিবর্তন করে ফেলি। এবং প্রতিবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময় ইঞ্জিন ফিল্টার পরিবর্তন করি । এছাড়াও প্রতি ২/৩ মাস পর পর বাইক সার্ভিস করিয়ে থাকি। আমি আমার বাইকের সামনের ও পেছনের ব্রেক পরিবর্তন করেছি । ১৯০০০+ কিলোমিটার চালানোর পর চেইন স্পোকেট ও প্লাগ পরিবর্তন করেছি। এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি ৪ বার । এছাড়া এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের জন্য তেমন কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি। আমি আমার বাইকের সর্বোচ্চ গতি পেয়েছি ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম খুব ভাল
- থ্রটল রেসপন্স অনেক ভাল
- ব্যালেন্সিং খুব ভাল
- কর্নারিং করা যায় খুভ ভাল ভাবে
- বাইকের পারফরম্যান্স খুব স্মুথ
বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- বাইকের হ্যান্ডেলটি খুব শক্ত
- বাইকের হেড লাইটের আলো খুব কম
- মাইলেজ কম
- নতুন ইউজারদের জন্য এই বাকটি ব্রেক করার সময় চাকা স্কিড করে
আমার বাইকটি ৫০০০ কিলোমিটার চালানোর পরে সাইলেন্সার পাইপ ফেটে যায়। তবে TVS কোম্পানীকে ক্লেম করলে তারা পরিবর্তন করে দেয়।
Apache RTR 160 4V বাইকটি দিয়ে আমি ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমন করেছি। যা প্রায় ৮০০ কিলোমিটার হবে। আমি আমার বাইক দিয়ে এটাই সবচেয়ে লং ট্যুর দিয়েছি। এই বাইকটি আমাকে মোটেও হতাশ করেনি। পুরাটা রাস্তায় খুব কম্ফোর্ট নিয়ে বাইক রাইড করেছি। বাইক রাইড করার সময় আমি কোন সমস্যা অনুভব করিনি। এই ভ্রমনটি আমাকে অনেক অনন্দ দিয়েছে। TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি আমার কাছে অসাধারন লেগেছে। এর পারফর্মেন্স খুব ভাল এবং ব্রেকিং কন্ট্রোলিং অসাধারন। তবে বাইকটির হেন্ডেলবার একটু টাইট যা মুভ করতে অসুবিধা হয়ে থাকে। বাইকের আলো তুলনামূলক ভাবে একটু কম। এই সমস্যা গুলো সমাধান করলে আমার মনে হয় এই বাইকটি আরো চমৎকার হয়ে উঠবে। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ খন্দকার মিজান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।