TVS Apache RTR 160 2V কম দামেই সব জায়গায় পার্টস পাওয়া যায় - মঈন

This page was last updated on 18-Jul-2024 03:53am , By Raihan Opu Bangla

আমার নাম মোঃ মঈন আহমেদ। আমি ঢাকার মিরপুরে বসবাস করি । সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করতেসি পাশাপাশি একটা কোম্পানিতে চাকুরিরত আছি। আমার প্রথম বাইক TVS Apache RTR 160 2V । এখন পর্যন্ত বাইকটি ১০ হাজার কিলোমিটার রাইড করেছি। আজ আমি আমার TVS Apache RTR 160 2V বাইকটির ব্যপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

TVS Apache RTR 160 2V কম দামেই সব জায়গায় পার্টস পাওয়া যায়

tvs apache rtr 160 2v front lookসব থেকে মজার ব্যাপার হলো এই বাইক দিয়ে আমার প্রথম বাইকিং জীবন শুরু হয়, মজার ব্যাপার বলতেসি এই কারনেই যে TVS Apache RTR 160 2V দিয়েই বাইক চালানো শিখেছিলাম  আমি।


ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি একটা অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করতো আমার, লুকিয়ে লুকিয়ে বাইকের ছবি খবরের কাগজ থেকে কেটে  বই অথবা খাতার ভিতর রেখে দিতাম। লুকিয়ে রাখার কারন  ফ্যামিলির কেউ বাইক পছন্দ করতো না বিশেষ করে আমার মা। বাবা মায়ের একমাএ সন্তান হবার কারনেই বাইক চরমভাবে আমার উপর নিষেধ ছিলো। 


কিন্তু ভার্সিটিতে উঠার পর বাবা বাইক কিনে দিতে রাজি হন সে অনেক কাহিনি। বাইক চালাতে পারতাম না তখন অনেকের কাছে বলেও বাইক চালানো শিখতে পারিনি ।

tvs apache rtr 160 2v headlight

কেউ তার বাইক দিতে রাজি না আর রাজি হবেও বা কি করে যদি তাদের শখের বাইকটা ফেলে দেই, তাই নিজেই বাইক কিনে নিজের বাইক দিয়েই বাইক চালানো শিখতে থাকি, আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত ১০ হাজার কিলো চালানো শেষ তবুও বলবো এখনো আমি বাইক চালানো শিখতেসি কারন শিখার তো শেষ নেই। 


বাইকের প্রতি দিন দিন ভালোবাসা বেড়েই চলছে আর BikeBD.Com এর অবদান এর কারনে অনেক কিছু শিখেছি, বাইক আর বাইকিং এর প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়ার কারন ছিলো বাইক বিডি। প্রথমে আমার Suzuki Gixxer 155 কেনার খুব ইচ্ছা ছিলো কিন্তু বাজেট সল্পতার কারনে Hero Hunk কেনার সিদ্ধান্ত  নেই এবং সেই অনুযায়ী বাবাকে নিয়ে বাইক কিনতে চলে যাই, কিন্তু বাবার Hero Hunk পছন্দ হয়নি আর আমার বাজেট বাড়ানো সম্ভব  ছিলো না ।


TVS Apache RTR 160 2V Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD


যেহেতু আমার ভালো মাইলেজ আর গুড লুকিং বাইক দরকার সেহেতু TVS Apache RTR 160 2V বাইক ক্রয় করি । TVS Apache RTR 160 2v বাইকটি বাবার খুব পছন্দ হয়েছিল । আমার উচ্চতা ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি হওয়ার কারনে সিটিং পজিন ভালো লাগে আমার। সব থেকে বড় কথা বাবার পছন্দকে বেশি প্রাধান্য  দিয়ে কিনে ফেলি বাইকটি।


বাইকটি কিনেছিলাম রয়েল অটো থেকে যার দাম পরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অনেকেই প্রশ্ন করেন কমে কিনলেন কিভাবে ব্যাপারটা হলো তখন একটা বিশেষ অফার ছিলো আর আমার বাইকটা হলুদ কালার হওয়ায় ১০ হাজার টাকা ছাড় পাই অন্য সব কালার এর দাম থেকে। 


প্রথমে এই বাইকটি চালানোর অভিজ্ঞতা একটু তিক্ত কারন আমি নতুন রাইডার তার উপর TVS Apache RTR 160 2V এর মতো রেডি পিকাপ এর একটি বাইক । প্রথমে কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে অনুশীলন এর মাধ্যমে আমি এখন খুব ভালো কন্ট্রোল করতে পারি ।tvs apache rtr 160 2v side view

এই বাইকের ফিচারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এর রেডি পিকাপ, যা আপনাকে হাইওয়েতে যে কোন পরিস্থিতিতে রাইড করতে সহায়তা করবে। ১৬০ সিসির একটি শক্তিশালী ইঞ্জিন  ব্যাবহার করা হয়েছে এই বাইকটিতে যার ফলে বাইকের স্পিড আর এক্সেলেরেশন নিয়ে ভাবতেই হবে না আপনাকে। এখন পর্যন্ত আমি TVS Apache RTR 160 2V বাইক এর টপ স্পিড পেয়েছি ১২০। 


অন্যসব ১৬০ সিসির বাইকের থেকে তুলনামূলক কম ভারি এই TVS Apache RTR 160 2V বাইকটি । ভাঙ্গাচুরা রাস্তায় বেশ ভালো কম্ফোর্ট পাওয়া যায় এই বাইকে । এর টেলিস্কোপিক সাসপেনশন খুবই দারুনভাবে কাজ করে। যথেষ্ট ভালো মাইলেজ পেয়েছি ।


TVS Apache RTR 160 2V Top Speed Test By Team BikeBD


আমি সিটি রাইডে ৪০ থেকে ৪২ আর হাইওয়েতে ৪৫+ মাইলেজ পাচ্ছি যা ১৬০ সিসি সেগমেন্ট এর বাইকের জন্য যথেষ্ট ফুয়েল সাশ্রয়ী বাইক। আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত ৮ বার সার্ভিস করিয়েছি যার প্রতিটি সার্ভিস টিভিএস এর নিজস্ব  সার্ভিস সেন্টার থেকে করিয়েছি। যেহেতু টিভিএস তাদের বাইকে মোট ৮ টি সার্ভিস দিয়েছে যার মধ্যে ৬ টা ফ্রি সার্ভিস আর ২ টা পেইড সার্ভিস। 


তাই সবগুলো সার্ভিস আমি ওইখান থেকেই করিয়েছি। একটা বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো টিভিএস তাদের বাইকে ২ বছর এর ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে এবং ৮ বার সার্ভিস এর মধ্যে সব গুলো তাদের নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার থেকেই করাতে হবে না হলে বাইকের ওয়ারেন্টি গ্রহণযোগ্য হবে না। 


যেহেতু বাইক আর বাইকিং ভালোবাসি তাই বাইকের প্রতি যত্ন নেয়াটাও আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বাইকের ব্যাটারি ভালো রাখতে সকাল বেলা বাইকের চোখ টেনে কিক দিয়ে বাইক স্টার্ট করি যাতে ব্যাটারির উপর কোন প্রেশার না পরে।


বাইকের রিকমেন্ড টায়ার প্রেশার সবসময় মেনে চলি।  বাইকের যত্ন নিতে নিয়মিত বাইকের সার্ভিস করার বিকল্প নেই। অধিক পানির প্রেশারে বাইক পরিস্কার করি না কারন এটি বাইকের জন্য ক্ষতিকর। নতুন বাইক হলে অবশ্যই ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে চলতে হবে, নির্দিষ্ট কিলোমিটার পর পর বাইকের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হবে । 


আমার বাইকের প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত মটুল এর 10W30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি। প্রথম ৬ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত আমি 10W30 গ্রেড এর মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। মূল্য ৫০০ টাকা । ৬ হাজার কিলোমিটার পর আমি 10W30 গ্রেড এর সেমি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি । মূল্য ৮৫০ টাকা।


মটুল ইঞ্জিন অয়েল এর প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস । কারন এখন পর্যন্ত মতুল আমাকে হতাশ করেনি আর ভবিষ্যতেও করবে না এই আশায় আছি। এখন পর্যন্ত বাইকের বল রেসার, শক আপ ওয়েল এন্ড সীল, স্পার্ক প্লাগ, চেইন স্পকেট ছাড়া আর কিছুই পরিবর্তন করিনি।

tvs apache rtr 160 2v yellow colour bike

 টিভিএস যেহেতু অফিসিয়াল্লি বাংলাদেশে এসেছে তাই পার্টস নিয়ে কোন চিন্তা নেই, খুব সহজে আর কম দামেই পার্টস পাওয়া যায়।  বাইকটি দিয়ে আমার তোলা সর্বোচ্চ স্পিড ছিলো ১২০মাওয়া হাইওয়েতে। টপ স্পিড এর সময় বাইকের ভাইব্রেশন ফিল ছিলো পায়ের স্টান্ড এর দিকে এছাড়া বাকি সব কিছুই দুর্দান্ত পার্ফরমেন্স ছিলো।


TVS Apache RTR 160 2V বাইকের কিছু ভালো দিক-

  • বাইকের দুর্দান্ত রেডি পিকাপ বা এক্সেলেরেশন
  • অধিক মাইলেজ এভারেজ ৪০/৪৫ পার লিটার
  • ফ্রন্ট সাসপেনশন সফট যার কারনে অফ রোডিং এ আরামদায়ক
  • এরোডাইনামিক সেইপ এর কারনে হাইওয়েতে বাতাসের জন্য বাইক রাইডিং এ সমস্যা হয় না
  • লো হাইট রাইডারদের জন্য সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক


TVS Apache RTR 160 2V বাইকের কিছু খারাপ দিক-

  • বাইকটির ভাইব্রেশন
  • ব্রেকিং সিস্টেম দুর্বল
  • টায়ার এর গ্রিপ কম
  • হ্যালোজেন হেড লাইট
  • বাইকের ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন তেমন ভালো না

tvs apache rtr 160 2v back light

এই বাইকটি নিয়ে আমার লম্বা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা  বেশ ভালো, লম্বা ভ্রমনের মধ্যে  আমার ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ - নাটোর ভ্রমন ছিলো অন্যতম। বাইকটি আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে লম্বা ভ্রমনে। আমি রাইড করতে করতে ক্লান্ত হলেও আমার বাইকটির পার্ফরমেন্স মোটেও কমেনি। বেশ ভালো ভাবেই আমি ভ্রমন সম্পর্ন করি।

Also Read: TVS Apache RTR 160 4V ১১০০০ কিলোমিটার রাইড - মেজবাহ উদ্দিন

এর ১৬ লিটার ফুয়েল ট্যাংক আর অবিশ্বাস্য মাইলেজ আপনাকে কখনোই হতাশ করবে না। সর্বোপরি আমি বলবো যারা কম বাজেটের মধ্যে ভালো মাইলেজ, গুড লুকিং, গ্রেট রেডিপিকাপ, আর লং টুরের জন্য একটি বাইক নিতে চান তারাই বাইকটিকে আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। 


যেহেতু টিভিএস তাদের বাইকগুলোকে রেসিং ফিচার দিয়েছে তাই অবশ্যই দক্ষ চালক না হলে এই বাইকটি না নেয়ার অনুরোধ করবো। ধন্যবাদ ।


লিখেছেনঃ মোঃ মঈন আহমেদ


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।