Suzuki Gixxer SF অর্ধ লক্ষ কিলোমিটার রাইড - নয়ন
This page was last updated on 20-Nov-2023 04:45pm , By Shuvo Bangla
আমি মোঃ নয়ন মোল্লা পেশায় একজন ফ্রিল্যান্সার বয়স ২৩ আমার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার চিত্রকোট ইউনিয়নের গ্রিনগরে। বাইকের প্রতি ভালোবাসা সেই ছোটবেলা থেকে আজকে আমি রিভিউ করবো বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি বাইক Suzuki Gixxer SF নিয়ে।
Suzuki Gixxer SF বাইকে অর্ধ লক্ষ কিলোমিটার রাইড - নয়ন
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম নিজের একটা বাইক থাকবে বাইক চালানো শেখা ক্লাস টেইনে থাকতে এক পরিচিত মামার হাত ধরে । কি যে ভালো লাগছিল জীবনে ফার্স্ট টাইম যখন বাইক চালাইছিলাম এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় তারপরে ইন্টারে ভর্তি হওয়ার পরে বাসায় অনেক বুঝিয়ে সুুঝিয়ে আব্বুকে রাজি করিয়ে ফেলি বাইক কিনে দেওয়ার জন্য কিন্তু আব্বু কোনভাবেই স্পোর্টস বাইক কিনে দিতে রাজি নয় কারণ আমি তখন নতুন রাইডার ছিলাম ।
আব্বু আমাকে Tvs metro 100 cc কিনে দেয় , আমি দুই বছর পর আব্বুকে বোঝাতে শুরু করলাম একটা স্পোর্টস বাইক কিনে দেওয়ার জন্য এতদিনে রাইডিং স্কিলটা ও একটু ভালো হলো । ২০২০ সালে তখন মার্কেটে নতুন সুজুকি জিক্সার এসএফ গুলা আসছে প্রথম দেখাতেই আমি বাইকটির প্রেমে পড়ে যাই তো আমার পরিচিত এক বড় ভাই ও বাইকটি কিনে ।
তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে টেস্ট ড্রাইভ দেওয়ার সুযোগ হয় প্রথমবার বাইকটি চালিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই , রেডি পিকআপ কন্ট্রোলিং এবং আকর্ষণীয় লোক আমাকে পাগল করে দেয় তারপর থেকেই মনে মনে ভাবতাম এই বাইকটি কবে আমার হবে এর তারপর ২০২১ সালের দিকে Smart motors সুজুকির অফিসিয়াল শোরুম এ sf Fi ডাবল ডিস্ক হলুদ কালারের এই বাইকটি দেখি ।
বাইকটির কালার দেখে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায় আমি প্রথমে ভাবছিলাম এটা সুজুকি জি এক্সার বাইকটি দেখার পরের দিন চলে যাই শরমে ৩ জানুয়ারি ২০২১ দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচাইতে আনন্দের দিন ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় Smart motors থেকে ক্রয় করি আমার স্বপ্নের বাইকটি নতুন বাইক কিনার যে কি আনন্দ এটা একমাত্র বাইকাররাই বুঝবে বাইকটি যখন প্রথমবার শোরুম থেকে আমি নিজে চালিয়ে বাইর করতে ছিলাম মনের ভিতরে অসম্ভব রকমের আনন্দ লাগতেছিল প্রথমবার যখন রোডে বাইকটি চালালাম খুবই ভালো লাগতেছিল ।
আমার এই বাইকটি আনকমন হলুদ কালার হওয়াতে রাস্তায় সবাই কম বেশি তাকিয়ে ছিল , যেখানেই বাইকটি নিয়ে যেতাম সবাই ছবি তোলার জন্য পাগল হয়ে যেত। এবার আসি বাইকটির ভালো এবং খারাপ কিছু দিক আপনাদের সাথে শেয়ার করি। প্রথমে বাইকটির ভালো কিছু দিক বলি বাইকটির প্রথম ভালো দিক হচ্ছে বাইকের অসাধারণ কন্ট্রোলিং এর কর্নারিং লেভেল খুবই ভালো এবং বাইকটি এফআই হওয়াতে মাইলেজ খুবই ভালো পেয়েছি ।
বাইকটি যখন নতুন ছিল সিটিতে ৩৮-৪০ মাইলেরজ পেয়েছি হাইওয়েত ৪৫ পেয়ছি মাইলেজ এবং এই বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি খুবই ভালো বাইকটিতে সুজুকির রেকমেন্ড করা Motul 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করেছি যার পারফরমেন্স সম্পর্কে বলতে গেলে এক কথায় অসাধারণ। এইবারে আসি বাইকটির কিছু খারাপ দিকে বাইকটিতে খুব একটা খারাপ কিছু নেই আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে বাইকটির পিলিওন সিটিং পজিশন আর ইঞ্জিনের হিটিং ইস্যু তা ছাড়া এই বাইকটির আর কোন খারাপ দিক আমার চোখে পড়েনি।
বাইকটি দিয়ে আমি সাজেক গিয়েছিলাম আপনারা তো জানেন সাজেকের পাহাড় গুলা কি পরিমান উচু এবং খারা এই পাহাড়ি রাস্তায় বাইকটি আমাকে কোনভাবেই নিরাশ করেনি পাহাড়ে ওঠার সময় বাইকটি যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি পেয়েছে। এবার আসি আমি বাইকটিতে কি কি চেঞ্জ করেছি এই বিষয়ে বাইকটির স্টক টায়ার দিয়ে আমি ৩৪ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি তারপর আমি সামনে পিছনে MRF Revz নতুন একজোড়া টায়ার লাগিয়েছি এবং ৪০ হাজার কিলোমিটারে প্রথমবার আমি বাইকটির ক্লাস প্লেট চেঞ্জ করেছি সামান্য কিছু স্টিকার মডিফিকেশন করেছি আর জিক্সার নেকেড ভার্সনের লুকিং গ্লাসটা ব্যবহার করেছি।
আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত চলেছে ৬০ হাজার কিলোমিটার এখনো পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে বড় কোন সমস্যা আমি ফেস করিনি কারণ আমার বাইকটিতে আমি সুজুকির অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস করিয়েছি এবং তাদের অরিজিনাল পার্টস আমার বাইকটিতে ব্যবহার করেছি আর সুজুকির সার্ভিস সেন্টার এর সার্ভিস এক কথায় অসাধারণ।
এই ৬০ হাজার কিলোমিটারেও আমার বাইকটির মাইলেজ এখন ৩৭ পাই প্রতি লিটারে সিটিতে এবং হাইওয়েতে ৪১ এর মতো। বাইকটিকে নিয়ে ঘুরেছি অনেক জায়গায় বাইকারদের সাথে তৈরি হয়েছে সুসম্পর্ক আল্লাহর অনেক সুন্দর নিদর্শন দেখতে পেয়েছি বাইকটি দিয়ে। আসলে বাইক শুধু একটি যন্ত্র না বাইক প্রত্যেকটা বাইকারের আবেগ ।
হাজার বছর বেঁচে থাকুক এক বাইকারের প্রতি আরেক বইকারের ভালোবাসা । বাইকিং কমিউনিটিতে BikeBD এক অবিচ্ছেদ্য এবং ভালোবাসার গ্রুপ। বাইকবিডি গ্রুপের মাধ্যমেই আমরা এক বাইকার আরেক বাইকারের সমস্যা ভালোলাগা এবং মতামত এক একজন আরেকজনের সাথে শেয়ার করতে পারি।
বাইকটি ৬০ হাজার কিলোমিটার চালালেও বাইকটির প্রতি ভালবাসা আমার এক বিন্দু কমেনি এখনো বাইকটির দিকে তাকালে বাইকটির লুকস এর প্রেমে পড়ে যাই বাইকটির কমফোর্ট আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। পরিশেষে একটাই কথা আমরা বাইক চালানোর সময় সাবধানে রাইড করবো এবং সর্বদা হেলমেট ইউজ করব ট্রাফিক আইন মেনে চলার চেষ্টা করবো । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ নয়ন মোল্লা