Suzuki Gixxer 155 রিভিউ - টেস্ট রাইড রিভিউ টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 08-Jul-2024 07:10pm , By Ashik Mahmud Bangla
বাংলাদেশে লঞ্চ হবার প্রায় ৪ বছর পরে অবশেষে আমরা নিয়ে এসেছি Suzuki Gixxer 155 রিভিউ এর টেস্ট রাইড রিভিউ! ১৬৫ সিসির প্রিমিয়াম সেগমেন্টে অন্যান্য প্রতিযোগীদের মধ্যে সুজুকি জিক্সার বেশ ভালো একজন প্লেয়ার!
Suzuki Gixxer 155 রিভিউ
Suzuki Gixxer বাইকটি বাজাজ পালসার এনএস১৬০, ইয়ামাহা এফজেড এফআই ভি টু, হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর এবং টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৬০ ফোরভি এর সরাসরি প্রতিযোগী। আমরা উপরিউক্ত সবগুলো বাইকেরই টেস্ট রাইড করেছি, এবং অবশেষে আমরা সুযোগ পেয়েছি সুজুকি জিক্সার এর টেস্ট রাইড করে রিভিউ করার।
Suzuki Gixxer 155 রিভিউ - লুকস, ডিজাইন এবং স্টাইল
সুজুকি জিক্সারে একটি হ্যালোজেন হেডলাইট এবং ক্রিস্টাল ক্লিয়ার এলইডি টেইললাইট রয়েছে। ফুল ডিজিটাল স্পিডোমিটারের ব্যাকগ্রাউন্ডটি লাল রঙের, এবং এতে গিয়ার চেঞ্জ ইন্ডিকেটর, ঘড়ি, রেভ লিমিটার লাইট সহ আরো অনেক ফিচার রয়েছে। বাইকটি মাসকুলার, হ্যান্ডেলবারটি আপরাইট, সুইচ গিয়ারগুলো কনভেনশনাল, এবং রিয়ার ভিউ মিররগুলো পেছনে দেখার জন্য খুবই উপযোগী।
বাইকটির টুইন ব্যারেল এক্সহস্ট দেখতে এবং শুনতে খুবই চমৎকার। বাইকটির প্যাসেঞ্জার গ্র্যাব রেইল বাইকটির বডির সাথে সমন্বয় করা, যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। লুকস এর দিক দিয়ে এটি মাসকুলার একটি বাইক, এবং এটা বেশিরভাগ মানুষকেই আকৃষ্ট করবে। তবে, বর্তমানে এর কম্পিটিটররাও মাসকুলার লুকস এর, ফলে লুকস এর দিক দিয়ে এর কম্পিটিশন অনেক বেশি।
বাইকটির ডিজাইন এবং ইঞ্জিন গত ৫ বছরে কোনপ্রকার পরিবর্তন হয়নি, কেবলমাত্র বাইকটির স্টিকার এবং রঙ পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে, স্টিকার এবং কালার চেঞ্জের মধ্য দিয়েও বাইকটি এখনো অনেকের কাছেই অত্যান্ত আকর্ষনীয় একটি বাইক। বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে কোনরকম অভিযোগ করার সুযোগ নেই, তবে কিছু জায়গার প্লাস্টিক কোয়ালিটি যেমন সুইচ গিয়ার, ফুয়েল ট্যাংক মাউন্টিং – এগুলো আরেকটু উন্নত মানের হওয়া উচিত ছিলো। বাইকটির দুপাশের এয়ার স্কুপ আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। কিছু বাইকার বাইকটির হেডলাইট নিয়ে অভিযোগ জানান। হেডলাইটটি ডিসি হলেও এর প্রজ্জ্বলন ক্ষমতা সামান্য কম, বাইকটিতে আরেকটু শক্তিশালি হ্যালোজেন হেডলাইট দেয়ার দরকার ছিলো।
Suzuki Gixxer 155 রিভিউ - ইঞ্জিন
বাইকটিতে একটি ১৫৫ সিসি এয়ার কুলড ইঞ্জিন রয়েছে। সিঙ্গেল সিলিন্ডার ২ ভালভবিশিষ্ট ইঞ্জিনটি ১৪.৬ বিএইচপি শক্তি ও ১৪ নিউটন মিটার টর্ক উতপন্ন করে। পাওয়ার এবং টর্ক এর দিক থেকে এটা ১৬০ সিসির বাইকগুলোর থেকে সামান্য কম হলেও ১৫০ সিসির বাইকগুলোর থেকে বেশি। বাইকটির ইঞ্জিন থেকে বেশ ভালো পরিমানের গর্জন আসে, এবং এর রেডি পিকাপ এবং স্মুথ গিয়ারবক্স এর কারনে এটা ০-১০০ কিমি/ঘন্টা ড্রাগ রেসে সেগমেন্টের অন্যান্য কম্পিটিটরদের হারিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও বাইকটির ওজন মাত্র ১৩৫ কিলোগ্রাম হওয়ায় বাইকটি খুবই ভালো এক্সেলেরেট করে।
বাইকটির ইঞ্জিন সম্পূর্ন রিফাইন্ড না, এবং ৭,০০০ আরপিএম এর পরে ফুটপেগে এবং ফুয়েল ট্যাংকে সামান্য ভাইব্রেশন টের পাওয়া যায়। বাইকটিতে বিএসফোর স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিন বা এইএচও নেই। আমি বাইকটি কোন বিরতি ছাড়াই ৭০ কিমি রাইড করেও এক মুহুর্তের জন্যও আনকমফোর্টেবল বোধ করিনি। বাইকটির গিয়ারবক্স থেকে শুরুতে একটা নকিং সাউন্ড আসলেও প্রথম সার্ভিসিং এর পরে তা ঠিক হয়ে যায়, এবং এটা আরো স্মুথ হয়ে যায়। বাইকটির পেছনে ১৪০ সেকশন টায়ার এবং সামনে ৪২ মিলিমিটার এর ফ্রন্ট সাসপেনশন বাইকটিকে অসাধাওরন কর্নারিং করার ক্ষমতা দেয়। আপনি বাইকটিকে নিয়ে যতোটাই কাত হন না কেনো, টায়ারে সঠিক প্রেশার থাকা সাপেক্ষে বাইকটি আপনাকে ফুল সাপোর্ট দেবে। এছাড়াও, শহরের ট্রাফিকের মাঝে বাইকটি যেকোন মুহুর্তে ডিরেকশন পরিবর্তন করতে প্রস্তুত। বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস খুবই ভালো।
Suzuki Gixxer 155 রিভিউ - ব্রেক এবং সাসপেনশন
টুইন ডিস্ক ব্রেক থাকার কারনে বাইকটির ব্রেকিং পারফর্মেন্স খুবই ভালো। বাইকটির পেছনের ব্রেকটি খুবই শক্তিশালি, এবং জিগজ্যাগ রাইডিং এর সময় পেছনের ব্রেকটি ব্যবহারে বাইকটি আরো স্টেবল হয়। বাইকটির সামনের সাসপেনশনটি কিছুটা শক্ত ধরনের ফলে ভাঙাচোরা রাস্তায় রাইডটি কিছুটা আনকমফোর্টেবল হয়ে পারে। তবে, র্যাংকন মোটরবাইকস জানিয়েছে যে ৫০০০ কিলোমিটার রাইড করার পরে বাইকটির সাসপেনশন আরো স্মুথ হবে।
Suzuki Motorcycles At Dhaka Bike Show 2019
প্রথম সার্ভিসিং এর সময় বাইকটির পেছনের সাসপেনশনে কিছুটা এডজাস্টমেন্ট করে নেয়ার প্রয়োজন হয় কারন নতুন অবস্থায় এটা কিছুটা শক্ত থাকে। তবে, যদি বাইকে রাইডার এবং পিলিয়ন মিলে ১৫০ কিলোগ্রামের চাইতে বেশি থাকে তবে বাইকটির আন্ডারবেলি এক্সহস্ট বেশিরভাগ স্পিড ব্রেকারের সাথে ঘষা খাবে। বাইকটির পিলিয়ন সিটটি মোটামুটি আরামদায়জ, তবে এটা যথেষ্ট পরিমানে বড় নয়। গ্র্যাব রেইলটাও পিলিয়নের জন্য আরামদায়ক নয়।
Suzuki Gixxer 155 রিভিউ - ফিচার্স
বাইকটির সিঙ্গেল হর্ন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট নয়। তবে, ভালো একটা দিক হচ্ছে সুজুকি জিক্সারের এই ভার্শনটিতে ও-রিং চেইন দেয়া হয়েছে। এধরনের চেইন লম্বা সময় ধরে পারফর্ম করে ফলে বাইকের চেইন এর এডজাস্টমেন্ট নিয়ে ভাবনামুক্ত থাকা যায়। সুজুকি জিক্সার সম্পূর্নই একটি পারফর্মেন্স নির্ভর বাইক। তবে, এটা মাইলেজের দিক দিয়ে আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে। আমরা শহরে ৩৫ কিমি/লিটারের মাইলেজ পেয়েছি। এবং হাইওেয়েতে সর্বোচ্চ মাইলেজ পেয়েছি ৪০ কিমি/লিটার।
আমার মনে হয়, যেহেতু বাইকটি রেডি পিকাপ কে বেশি ফোকাস করে, কাজেই কিছু দিক দিয়ে স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে। বাইকটির ১২ লিটারের ফুয়েল ট্যাংকটা সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকগুলোর মতোই পরিমানে। আমার মনে হয় বাইকটির দাম আরেকটু কম হলে বাইকটি আরো বেটার ভ্যালু ফর মানি হিসেবে পরিচিত হতো। Lets See Suzuki Gixxer price in Bangladesh here.
Suzuki Gixxer 155 রিভিউ
ভালো দিকসমূহঃ
- ইঞ্জিনের গর্জন
- বাইকটির রেডি পিকাপ তরুন বাইকারদের আকৃষট করবে
- ভালো হ্যান্ডলিং এবং কর্নারিং ক্ষমতা
- ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক এর ব্রেকিং ফিডব্যাক খুবই ভালো
- শর্ট হাইটের বাইকারদের অন্য ভালো
খারাপ দিকসমূহঃ
- কম গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স
- পিলিয়ন সিট যথেষ্ট বড় নয়
- সামনের সাসপেনশন কিছুটা শক্ত প্রকৃতির
- প্লাস্টিক কোয়ালিটি আরেকটু ভালো হবার দরকার ছিলো
তরুন বাইকারদের কাছে Suzuki Gixxer অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি অপশন মূলত এর ফাস্ট এক্সেলেশন এবং স্টাইলিং এর জন্য, তবে এর মাইলেজ আপনাকে হতাশ করবে। তবে সবকিছু মিলিয়ে বাইকটির পারফরমেন্স এর কথা চিন্তা করলে এরটা সেগমেন্টের অন্যান্য প্রতিযোগীদের একটি কঠিন কম্পিটিশন দিচ্ছে।